হালচাল

নজরুল ইসলাম

অগাস্ট ০৮, ২০২৪

শেষ পর্যন্ত ‘রাজাকারদের’ ছেলেমেয়ে, নাতি নাতনিদের ধাক্কা সামলাতে না পেরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েই চলে গেলেন ! বাবার দোহাই দিয়ে অহংকার এবং এক রোখা মনোভাব তাঁর এই পরিণতির কারণ। তিনি সহজ পথে না গিয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগ সব ধরণের শক্তি নিরীহ ছাত্রদের পিছনে লাগিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে ছাত্র হত্যা করলেন। এটি কোনো বিবেক সম্পন্ন নেতা বা নেত্রীর কাজ হতে পারে না; যার খেসারতে আজ তাঁকে দেশ ত্যাগ করতে হলো। শুধু কি তাই, এ এসকল কারণে তিনি তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধুর সুখ্যাতিও শেষ করেছেন।

বেগম খালেদা জিয়াকে বহু বৎসর থেকে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি দেশ থেকে চলে যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে খালেদার মুক্তি সম্ভব হলো, আগে কেন এটি সম্ভব হয়নি? তারেক রহমান আজ বহু বৎসর লন্ডনে, মামলা দিয়ে আটকিয়ে রেখেছে, এখন কি ভাবে দেশে চলে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন ? ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুস কে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি এবং জেল জরিমানা করেছেন, এখনো তাঁর মামলা শেষ হয় নি, শেখ হাসিনা দেশ থেকে চলে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে কেয়ার টেকার গভর্নমেন্টের প্রধান হলেন। এ সব কাজগুলি তাঁর এক রাখা মনোভাবের জন্য হয়েছে।

ছেলেরা এতদিন থেকে কোটা নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে, রাজাকারের নাতিপুতি বলে ওদের ক্ষেপিয়ে তুলে শেষে সেই কোটাও দেয়া হলো। কিন্তু দেশের কতখানি ক্ষতি হলো। একজন প্রধান মন্ত্রীর পিয়ন ৪০০ কোটি টাকা বানিয়েছে, এই কথা কি ভাবে প্রকাশ্যে তিনি বলতে পারেন, একবার কি চিন্তা করেন নি যে এটা তাঁর প্রশাসনের ত্রুটির জন্য হচ্ছে? তাঁর আমলে যে সব লোক দেশের ব্যাঙ্ক লুটতরাজ করেছে, তারা বিদেশে মহা সুখে আছে ; অথচ দেশের লোক কত কষ্ট করে। শুনা যাচ্ছে হাজার হাজার ভুয়া মুক্তি যোদ্ধা মাসিক ভাতা পাচ্ছে, এদের আইনের আওতায় এনে বিচার করে এ যাবৎ যে ভাতা দেয়া হয়েছে , ফেরত নেয়া উচিৎ।

১৯৭১ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে ভাবে কোনো রিজার্ভ ছাড়া টাকা ছাপিয়ে দেশ পরিচালনা করা হয়েছিল সে অবস্থা আবার ফিরে আসলে তা হবে দেশের জনগণের জন্য মারাত্বক। সে সময়কার কথাগুলি আজও আমার মনে পড়ে, সে সময় একজন পিয়ন এর মাসিক বেতন ছিল ১০০ টাকা এবং বাজারে চালের মন ছিল ৫০০ টাকা। পূর্বাণী হোটেলের ফেলে দেয়া ময়লা খাবার তুলে নিয়ে খেতে দেখেছি, টাকার অভাবে মহিলারা কাপড় কিনতে না পেরে পুরানো কাপড় জোড়াতালি দিয়ে পড়েছে। ঢাকা শহরের গুলিস্তান এলাকায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশ, বিদেশ থেকে যে সাহায্য আসতো, তাও গোপনে সরিয়ে ফেলা হতো। ৫২-৫৩ বৎসর পর আজ ও যদি সে অবস্থায় ফিরে যেতে হয়, এটা হবে দুর্ভাগ্য।

অগাস্ট ১১, ২০২৪

১৭ কোটি জনতা -হিন্দু,মুসলিম, খ্রীষ্টান,বৌদ্ধ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু লোকের এ বাংলাদেশ। এ দেশ কারো বাবার অর্জিত সম্পদ নয়। এ দেশে সকলেরই জন্মগত সূত্রে শান্তিপূর্ণ ভাবে বাস করার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া এ দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ, যে যার ধর্ম পালন করবে, বাধা দেয়ার কারো- ই কোনো অধিকার নেই। শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর যে নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা থেকে অতিক্রম করতে হলে প্রতিটি মানুষ নতুন সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে; নতুবা বিশৃঙ্খলতা দেশেকে অনেক দূর পিছিয়ে নেবে। হয়তো কিছু কিছু লোক এ বিশৃঙ্খলতার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করবে- যা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাম্য নয়। দেশে দ্রুত শান্তি ফিরে না আসলে, ব্যবসা বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আশা করি এ দেশের প্রতিটি নাগরিক ধর্ম -বর্ণ  বিবেচনা না করে  একে অপরের দিকে  সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। বাংলাদেশে দ্রুত শান্তি ফিরে আসুক এই প্রত্যাশা করছি।

অগাস্ট ১২,২০২৪

১৯৪৬-১৯৪৭  সনে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী যুক্ত বাংলার মুখ্য মন্ত্রী থাকা কালীন সময় কলকাতায় হিন্দু -মুসলিম দাঙ্গায় প্রায় ৫ হাজার মুসলমান মারা যায়। পুরো ভারতবর্ষে সে সময় হিন্দু-মুসলমান সংঘর্ষ চলছিল; কলকাতার মাড়োয়ারি ও ব্যবসায়ীরা হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীকে পছন্দ করতো না, তার একমাত্র কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে যে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা একত্রে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, তা না হলে শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক (১৯৩৭-১৯৪৩) বা পরবর্তীতে সোহ্রাওয়ার্দী মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতো না।  ১৯৪৭ সনের পর থেকে এপার বাংলায়  হিন্দু -মুসলিম এর মধ্যে বড় ধরণের কোনো দাঙ্গা হয় নি, তবে সংখ্যালঘু লোকদের জন্য কিছু না কিছু সমস্যা সব দেশেই দেখা দিয়ে থাকে ; যেমন ভারতে হিন্দুরা মুসলমানদের নিম্নমানের মর্যাদা দিয়ে থাকে। হিন্দুরা মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে দিয়ে হিন্দু মন্দির স্থাপনা আর একটা বড় ধরণের প্রমাণ। ১৯৪৭ এর পর অনেক হিন্দু স্বেচ্ছায় জমিজমা বিক্রি করে ওপারে চলে গেছে। ১৯৫০-১৯৬০ এর দিকে হিন্দুরা পূর্ব পাকিস্তানে কোনো অসুবিধায় ছিল না, ওরা মনেপ্রাণে ভারত কে পছন্দ করে; ওপারে ছেলেদের পড়াশুনার জন্য পাঠিয়ে নিজেরা আস্তে আস্তে সব কিছু গুছিয়ে চলে গেছে। আমার গ্রামের চারি পাশের অনেক হিন্দু ছেলেরা স্কুলে আমাদের সঙ্গে একত্রে পড়াশুনা করে ওপারে গিয়ে পড়াশুনা করে চাকুরী নিয়েছে।

বাংলাদেশের হিন্দুদের ৯৫% আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য কোনো দলকে সমর্থন বা নির্বাচনে ভোট দেয় না – এটার মূল কারণ হলো ওরা অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসুক, তা পছন্দ করে না ।

বর্তমান পরিস্থিতে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর সেভাবে হামলা হয়নি যে ভাবে ভারতীয় কিছু মিডিয়া বলে বেড়াচ্ছে। বরং দেখা গেছে ওদের সমর্থনে সবাই এগিয়ে এসেছে। ছাত্র জনতা হিন্দু মন্দির, হিন্দু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাহারা দিয়েছে। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কিছু লোক উস্কানিমূলক ভাবে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে থাকতে পারে বলে অনেকের ধারনা।   

বাংলাদেশের মানুষ বেশি আবেগপ্রবণ। সাউথ আফ্রিকার নেলসন মেন্ডেলার কথা আপনাদের স্মরণ থাকার কথা। নেলসন মেন্ডেলা ২৭ বৎসর জেল খেটে দেশকে শ্বেতাঙ্গদের হাত থেকে স্বাধীন করেছে। এই নেলসন মেন্ডেলা ১৯৯১-১৯৯৫ মাত্র ৫ বৎসর ক্ষমতায় ছিল এবং স্বেচ্ছায় দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় যায় নি বা তার স্ত্রী অথবা ছেলেমেয়ে বা পরিবারের কেউ ক্ষমতার জন্য লোভ দেখায় নি। তাঁর দেশের মানুষ আমাদের মতো যেখানে সেখানে মেন্ডেলার স্মৃতি সৌধ তৈরী করে নি।

অগাস্ট ১৭, ২০২৪

কানাডার শিশু :

পৃথিবীর  সমস্ত শিশু মানবিক  বিকাশের সমান অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তবে সব দেশে শিশু সমান পরিস্থিতিতে জন্মগ্রহণ করে না। শিক্ষিত ও অর্থশালী ঘরে জন্ম নেয়া শিশু পরম আহ্লাদে বেড়ে উঠে। মনে হবে যেন এই সব শিশু সোনার চামচ মুখে নিয়ে দুনিয়াতে এসেছে। আবার কেউবা অভাবী সংসারে জন্ম গ্রহণ করে এবং চরম অবহেলায় বেড়ে উঠে। অভাবী ঘরে জন্ম নেয়া শিশুর খবর কে রাখে, অনেকে নবজাত শিশুকে বোঝা মনে করে হাসপাতালে রেখে দিয়ে চলে যায়।  নবজাতকদের বিকাশের সহজাত ক্ষমতার পার্থক্যগুলি তাদের পরিবেশের প্রভাব, বৈষম্যের মুখোমুখি দ্বারা আচ্ছাদিত হয়। নীতি, কাঠামো এবং সিস্টেমের  প্রেক্ষাপটে এই পার্থক্যগুলি শিশুদের বৈষম্য এবং শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি হয়ে ওঠে। 

কানাডাতে শিশু জন্ম নেয়ার পর থেকে বেড়ে উঠার দায়িত্ব শুধু মা-বাবার উপরই বর্তায় না, সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। ছবি : গ্লোবাল নিউজ

কানাডাতে শিশু জন্ম নেয়ার পর থেকে বেড়ে উঠার দায়িত্ব শুধু মা-বাবার উপরই বর্তায় না, সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিটি শিশুকে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখে, নাম রেজিস্ট্রেশন করে। এ দেশে  প্রতি বাচ্চার জন্য মাকে চাইল্ড বেনিফিট দেয়া হয় এবং সময় সময় এই বাচ্চাকে সমাজকর্মীরা বাসায় এসে দেখাশুনা  করে। বাচ্চার বেড়ে উঠার সঙ্গে তার শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন একইভাবে পরীক্ষা করে দেখে। যদি কোনো মা-বাবা সঠিকভাবে বাচ্চার লালন পালনের দায়িত্ব নিতে অক্ষম হয়, সে ক্ষেত্রে সমাজ কল্যাণ কর্মী রিপোর্ট করে এবং এ বাচ্চাকে বিশেষ অবস্থায় ফস্টার পেরেন্টস বা পালক পিতা-মাতার দায়িত্বে দিয়ে থাকে।  

এ দেশের সামাজিক ব্যবস্থা শিশুদের বিকাশে জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি পরিবারে মাবাবা উভয়কেই কাজ করে সংসার চালাতে হয়, সে ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। মা-বাবার বাৎসরিক রোজগারের ভিত্তিতে মাসিক শিশু পরিচর্যা খরচ নির্নয় করা হয়। কাজের শেষে মা-বাবা অথবা তাদের কেউ এসে শিশুকে ডে কেয়ার থেকে বাসায় নিয়ে যায়। সারা দিন এই শিশুকে দেখাশুনার দায়িত্ব ডে কেয়ারের ব্যক্তিদের উপর বর্তায় এবং ওরা অতি যত্ন সহকারে এই শিশুকে দেখাশুনা করে।  

৪  

স্কুল সিস্টেম (বিদ্যালয় ব্যবস্থা):

স্কুলে প্রতিটি বাচ্চাকে অতি যত্ন সহকারে দেখাশুনা ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। কানাডার স্কুলগুলি তরুণ নবাগতদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদান করে, বিশেষ করে যে সব বাচ্চা বাইরের দেশ থেকে এসে স্কুলে যায়, স্কুল কতৃপক্ষ পরীক্ষা করে ওদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন মোতাবেক পড়াশুনার ব্যবস্থা করে। এ দেশের   স্কুল সিস্টেম একাধিক ভাষায় তথ্য সরবরাহ করে।

শিশু কল্যাণ কর্মসূচীঃ

কানাডায় প্রাদেশিক ও আঞ্চলিক সরকারগুলি শিশুদের নির্যাতন ও অবহেলা থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষ যত্নবান। সব শিশুকেই ওরা সমান ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। কানাডা বাংলাদেশের মতো গরিব ধনী বলে শিশুদের আলাদাভাবে দেখে না, এখানে সব মা-বাবা কাজ করে বা অবস্থাভেদে সমাজ কল্যাণ ভাতা নিয়ে সংসার পরিচালনা করে।

 ৬

প্যারেন্টিং স্টাইল :

কানাডায় প্যারেন্টিং ভালবাসা, সমর্থন এবং উৎসাহের  উপর জোর দেয়, তবে এটি অন্যান্য দেশের অনুশীলন থেকে পৃথক হতে পারে। কানাডিয়ান সমাজে সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় সংবেদনশীল এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশে শিশুদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে পিতামাতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো বাচ্চাকে ঘরে মারধর করলে, সে বাচ্চা স্কুলে গিয়ে রিপোর্ট করলে সঙ্গে সঙ্গে সমাজ কল্যাণ কর্মী বাচ্চাকে মা-বাবা থেকে আলাদা করে নিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে সমাজ কল্যাণ কর্মী মা-বাবাকে শিশু লালন পালন সংক্রান্ত ট্রেনিং দিয়ে থাকে। 

 সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা:

কানাডা সরকারের লক্ষ্য সকল পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী, উচ্চমানের, নমনীয় এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রারম্ভিক শিক্ষা এবং শিশু যত্ন পরিষেবা সরবরাহ করা। কানাডায় শিশুদের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে একসাথে কাজ করে।

আমরা ছোটকাল থেকে  দেখে বড় হয়েছি যে চৌধুরী সাহেব, মিয়া সাহেব, ভূইয়া সাহেব এবং তাদের ছেলেমেয়েরাও একটা আলাদা দাম্ভিকতা নিয়ে বেড়ে উঠে। কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে, তারা জন্ম থেকেই মা-বাবা বা তার চারিদিকের আত্মীস্বজনকে ধন দৌলত ও শিক্ষিত পরিবেশে দেখেছ। যে যেই পরিবেশে জন্ম ও বেড়ে উঠে, সে সেই পরিবেশ থেকে  কথাবার্তা বা চালচলন শিক্ষা লাভ করে। ধনী ঘরের বা শহরে শিক্ষিত পরিবেশে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়ে গরিব ঘরের ছেলেমেয়ের সঙ্গে অনেক পার্থক্য। আমাদের অবস্থাসম্পন্ন লোকজন পয়সা খরচ করে ছেলেমেয়েদেরকে টিউটর দিয়ে পড়াশুনা করিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষত করে। কিন্তু এ দেশে সব ছেলেমেয়ে নিজের চেষ্টায় পড়াশুনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক মাবাবা ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার ব্যাপারে কোনো খবরই নেয় না। স্কুল ও পারিপার্শিক পরিবেশের কারণে ওরা নিজ থেকেই সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে।  

একটি বাচ্চা যদি ঢাকা শহরের কোনো বস্তিতে জন্মগ্রহণ করে, সে জন্ম থেকেই মা-বাবার দুঃখ কষ্ট দেখে বড় হয়। সে দেখে তার মা-বাবা ভোর হলে এ বাড়ি সে বাড়ি কাজ করে বা সকালে বাবা রিক্সা নিয়ে বের হয়,  দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খায়। একটা ছেলে বা মেয়ে যে পরিবেশে জন্ম, সে পরিবেশ থেকেই শিক্ষা লাভ করে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটির জন্য ছেলেমেয়েরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। 

১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানী হানাদার, রাজাকার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মহিলাদের উপর যে পাশবিক অত্যাচার করেছে, তার ফলে অনেক শিশু জন্ম নেয়। তৎকালীন সরকার কানাডা, নেদারল্যান্ড বা যে সব দেশে এই অনাথ শিশুদের পাঠিয়েছে -সে সব দেশের রক্ষণাবেক্ষন ও পরিবেশের জন্য ওরা সুন্দর ভাবে জীবন পেয়েছে। সুযোগ পেলে সব ছেলেমেয়ে ভালোভাবে পড়াশুনা করে বেড়ে উঠতে পারে। এ সব দেশে সব ধরণের সুযোগ রয়েছে যার কারণে প্রতিটি ছেলেমেয়ে সমান সুযোগ নিয়ে বেড়ে উঠে।  

অগাস্ট ১৮, ২০২৪

মানুষ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে, আমি চোখ খুলে স্বপ্ন দেখি, আমি ছোটকালে যা কিছু দেখতাম তা নিয়েই কল্পনা করতাম।  আকাশে উড়োজাহাজ দেখলে আমি ভাবতাম যদি কোনো দিন এই উড়োজাহাজ চালাতে পারতাম, তাহলে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়াতে পারতাম। দুনিয়াটা জানি কত বড়, যদি দেখার সুযোগ হতো। আমার এক চাচা একদিন আমাকে বলে ‘মক্কা কি পৃথিবীর শেষ মাথা ?’ আমি বলি বোধ হয়, পরে স্কুলে পড়তে গিয়ে জানলাম পৃথিবী অনেক বড়।

 আমাদের স্কুলে একবার চাঁদপুর মহকুমা হাকিম কোনো একটা মামলার তদন্ত করতে এসেছেন। স্কুল মাঠ লোকে লোকারণ্য, আমিও পিছে পিছে হাটছি আর ভাবছি যদি কোনোদিন এরূপ একজন নামকরা লোক হতে পারি। আমাদের ছোটবেলায় গ্রামে হাডুডু খেলার প্রতিযোগিতা হতো, কাদঁলার হাতেম আলী অনেক শক্তিশালী  খেলোয়াড়, ওকে কেউ ধরে রাখতে পারতো না। আমি মনে করতাম ওর মতো যদি একটা শক্তিশালী খেলোয়াড় হতে পারি, সবাই আমাকে দেখে বাহবা দেবে। কিন্তু কোনোদিন আমি কোনো কিছু হতে চেষ্টা করি নি। আমি এখনো এলোমেলো চিন্তাভাবনা করতে ভালোবাসি।  

১৯৬৩-৬৪ সনের দিকে আমি মাঝে মধ্যে ইন্ডিয়ান বাংলা মুভি দেখতে যেতাম, উত্তমের অভিনয় দেখে এতটাই অভিভূত হতাম যে  প্রায়ই ভাবতাম আমি যদি এ এরকম একজন অভিনেতা হতে পারতাম।  কিন্তু আমিতো কোনোদিন চেষ্টা করি নি।

৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, আমার মতো অনেকেই স্বপ্ন দেখতো হয়তো এ দেশ একদিন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলির সারিতে দাঁড়াবে। কিন্তু সে স্বপ্ন আজ ও বাস্তবে রূপ নেয় নি। ঘুরেফিরে একজাতীয় অত্যাচারী শাসক ও দুর্নীতিবাজদের কবলে আমাদের সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় নি। 

কানাডার অন্টারিও প্রদেশের এরিয়া ৩,৫৪,৩৪২ বর্গ মাইল,যার লোক সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি; বাংলাদেশের এরিয়া ৫৭,৩২০ বর্গ মাইল এবং লোক সংখ্যা ১৭০ মিলিয়ন বা ১৭ কোটি। গড়ে কানাডার প্রতি বর্গ মাইল ৪২ জন এবং বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইল ২,৯৬৫ জন লোক বাস করে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের আয়তন প্রায় ১২৫ বর্গমাইল (৩২৫ বর্গকিলোমিটার)। এটি দেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর, প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩,২৩৪ জনেরও বেশি লোক রয়েছে। ৫৩ বৎসর পূর্বে (১৯৭০) পূর্ব পাকিস্তানের লোক সংখ্যা ছিল ৭৫ মিলিয়ন বা সাড়ে সাত কোটি এবং বর্তমানে এই লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭০ মিলিওনে বা সতেরো কোটি। বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ ; এই  দেশের জনসংখ্যার  শতকরা ৭০ জন লোক এখনও কৃষির উপর নির্ভর করে।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক কারণে ১৯৭০ সালের আগে বাংলাদেশে ঘন ঘন বন্যা দেখা দিতো। এই দেশ ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের বদ্বীপে অবস্থিত এবং অপর দিকে দক্ষিণে বিরাট বঙ্গোপসাগর যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটারেরও কম উচ্চতা। হিমালয়ের  অতিবৃষ্টির কারণে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী বৃষ্টি হয় এবং  গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনাসহ নদীর ঘন নেটওয়ার্ক রয়েছে; বর্ষা মৌসুমে এই নদীগুলি প্রায়শই তাদের তীর উপচে পড়ে এবং ভারী বৃষ্টিপাত প্রায়শই জলাবদ্ধতা এবং বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

দেশের সব কটা নদী প্রতিবেশী ভারত থেকে উৎপত্তি এবং ওই দেশ ফারাক্কার মতো বড় বড় বাঁধ  দিয়ে পানি নিজেদের  কৃষি আবাদ করার কারণে বাংলাদেশে শুস্ক মৌসমে পানির অভাব এবং বর্ষার মৌসুমে পানি ছেড়ে দিয়ে এ দেশে বন্যার সৃষ্টি করে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে।   

নজরুল ইসলাম

টরন্টো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *