কেমন ছিল এক দশক আগে কানাডার চাকরী বাজার?

জরিপের তথ্য বলছে ৩৯% বেকার চাকরি খোঁজা ছেড়ে দিয়েছিলেন সেই সময়

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : এখন থেকে প্রায় এক দশক আগে পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছিল, কানাডার প্রতি ১০জন বেকারের মধ্যে প্রায় চারজনই চাকরি খুঁজে পাওয়ার আশা পুরোপুরি ত্যাগ করেছেন। খবর সিবিসি নিউজের।

হ্যারিস পোল নামের একটি সংস্থার পরিচালিত এবং কর্মসংস্থান বিষয়ক এজেন্সির প্রকাশনা এমপ্লয়মেন্ট প্রফেশনালস-এ সেই সময় প্রকাশিত জরিপে বলা হয়, সংস্থাটি ১,৫০২ জন বেকার কানাডীয়র মধ্যে এই জরিপ চালিয়েছে। তাদের কারোরই চাকরি নেই। আবার তাদের সবাই ইআই (EI benefits) সুবিধাও পাচ্ছেন না।

এর ফলাফল ছিল চোখ খুলে দেয়ার মতো।

যাদের মধ্যে জরিপ চালানো হয়েছিল তাদের প্রায় ৩৯ শতাংশ এমন বিবৃতির সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন যে, ‘‘আমি চাকরি খোঁজা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছি’’; পাঁচ শতাংশ বলেছেন, ওই বিবৃতির সঙ্গে তারা ‘‘অনেকটাই একমত’’; ১১ শতাংশ বলেছেন, ‘‘কিছুটা একমত’’ আর ১৭ শতাংশ বলেছেন, ‘‘সামান্য পরিমাণে একমত’’।

ঐ সময় পরিচালিত ওই জরিপে সপ্তাহকাল ধরে অনলাইনে লোকেদের মতামত গ্রহণ করা হয়। এতে মতামত দেয়া লোকেদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ বলেছেন, একমাসের বেশি সময় ধরে তারা চাকরির কোন সাক্ষাৎকার দেয়ার আমন্ত্রণ পাননি। পুরো ১৩ শতাংশ জবাব দানকারী জানিয়েছেন, ২০১২ সাল বা তারও আগে থেকে তারা কোন সাক্ষাৎকার দেয়ার সুযোগ পাননি- অর্থাৎ পুরো এক বছরের বেশি সময় ধরেই তারা চাকরির সাক্ষাৎকার দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

এমপ্লয়মেন্ট প্রফেশনালস-এর ঐ সময়কার সিইও বব ফাঙ্ক বলেন, ‘‘এই জরিপের ফলাফল নীতিনির্ধারকদের প্রতি জেগে ওঠার আহবান হিসাবে কাজ করবে, কেননা তারা বুঝতে পারবেন যে, কর্মহীন কিছু কানাডীয় পিছিয়ে পড়ছেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘এটি যদি খতিয়ে দেখা না হয় তাহলে ওই কানাডীয়রা দীর্ঘমেয়াদে বেকারত্বের ফাঁদে পড়তে পারেন এবং এই ঝুঁকি পুরো শ্রমশক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে।’’

এই বিশাল পরিসংখ্যান থেকে এটা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন নয় যে, সারাদেশে কর্মসংস্থান কেন্দ্রগুলো থেকে কতটা হতাশা ছড়িয়ে পড়েছিল। টরন্টো এলাকার একটি কর্মসংস্থান কেন্দ্রে কাজের সন্ধানে আসা পাচক শার্লন মার্শাল বলেছিলেন, ‘‘আমি আর কোন চাকরির খোঁজ করতে যাচ্ছি না, কারণ, ছয় মাস ধরে খুঁজেও এখনও কোন চাকরি পাইনি।’’

চাকরির অভাব

মার্শাল ঐ সময় এক বছর ধরে বেকার ছিলেন। কিন্তু তার ভাষ্য হলো, যথেষ্ট পরিমাণ অভিজ্ঞতা এবং নগরীর জেন অ্যান্ড ফিঞ্চ এলাকার কর্মসংস্থান কেন্দ্র জেভিএস-এর পক্ষ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কিত সহায়তা পাওয়ার পরও তিনি এমনকি একটি ইন্টারভিউ দেয়ার আমন্ত্রণও পাননি।

এক সপ্তাহে অন্তত ৬০টি জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর পর মার্শাল বলেন, ‘‘আমার অভিজ্ঞতা আছে এবং এজন্য আমি শিক্ষাও নিয়েছি। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কেন আমি থালাবাসন মাজার মত কাজও পাচ্ছি না।’’ দন্ত্য চিকিৎসকের সহকারী হিসাবে কাজ খুঁজতে থাকা সি, সি হুপারও একইরকম কাহিনী শোনালেন। তিনি তার কাঙ্খিত ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু তার পর থেকে গত আট বছরে একটি খণ্ডকালীন চাকরি ছাড়া তিনি আর কিছুই পাননি। হুপার বলেছিলেন, ‘‘এটি খুবই হতাশার। চাকরি খুঁজতে খুঁজতে আমি সাধারণভাবেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তবে একইসঙ্গে আমি খোলামনের মানুষ।’’

মার্শাল ও হুপার নিশ্চিতভাবেই একা ছিলেন না। সরকারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটি যাদেরকে দীর্ঘকালীন বেকার (যাদের ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চাকরি নেই) হিসাবে চিহ্নিত করেছে তাদের সংখ্যা মন্দা পরিস্থিতি শুরুর আগের এক লাখ ৪২ হাজার থেকে এখন পর্যন্ত বেড়ে দুই লাখ ৭২ হাজারে পৌঁছেছে। এক বছর ধরে কর্মহীন রয়েছেন এমন লোকেদের সংখ্যা বেড়েছে আরও বেশি, ২০০৭ সালের ৪৬ হাজার থেকে গত বছর পর্যন্ত হয়েছে ৯৬ হাজার।

এসব পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। ব্যাংক অব কানাডা সেই সময় তার বসন্তকালীন পর্যালোচনায় উল্লেখ করেছিল যে, যখন চাকরিহীন লোকেদের হার কমে ৬.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে তখন মোট বেকারত্বের হারের দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব হলো ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

বিএমওর অর্থনীতিবিদ ডাও পোর্টার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘ওইসব লোক আর কখনই চাকরিতে নিয়োগ পাবার উপযোগী থাকবেন না বলে উদ্বেগ রয়েছে। যত বেশিদিন ধরে তারা কাজের বাইরে থাকবেন তাদের পক্ষে কাজে ফিরে আসা ততই কঠিন হবে। আর এটাই আমরা ১৯৯০-এর দশকেও দেখে এসেছি।’’

তিনি বলেছিলেন, এটি ওইসব লোকেদের জন্য খুবই খারাপ একটি ব্যাপার, কিন্তু সার্বিকভাবে তা কানাডার জন্যও খারাপ, কারণ এটি অর্থনীতিতে একটি স্থায়ী আঘাত হিসাবে আসছে।

পোর্টার বলেছিলেন, ‘বেকারত্বের হার, এই শিরোনাম প্রকৃতপক্ষে বেকারত্বের চিত্র কতটা নাজুক তার প্রতিফলন ঘটায় না’