৭ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সফল সমাপ্তি
প্রবাসী কণ্ঠ – ৩১ জুলাই, ২০২৪: বিশ্বের ২৭টি দেশের স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মোট ৬২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনি চলচ্চিত্র এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শিত প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পাঁচদিনের ৭ম টরন্টো মাল্টিাকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভাল।
উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা শবনম ফেরদৌসীর পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র ‘আজব কারখানা’। এছাড়াও উদ্বোধনী দিনে আরও ৫টি দেশের ৯টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়।
গত ২৫ জুলাই টরন্টোর স্কারবরোতে অবস্থিত ২২ লেভেবিক অ্যাভিনিউয়ের সিনেপ্লেক্স ওডেন-এ হল ভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে এই ফেস্টিভালের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ভাল লাগছে এখানে এসে। কিন্তু বাংলাদেশে যা ঘটে যাচ্ছে তার জন্য স্বাভাবিকভাবেই মনটা বিষণ্ণ। মাত্র কয়েকদিনে অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে মারা গেছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যারা নিহত হয়েছেন তাঁদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমি আশা করছি দেশটা যেন আবারও ভাল হয়ে যায়, সুন্দরভাবে সবকিছু চলে।
মোরশেদুল ইসলাম আরো বলেন, এই ফেস্টিভালটায় আমি এর আগেও এসেছি। এবং খুবই ভাল লাগে এখানে এসে। বাংলাদেশে আমরা ‘বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম’ শুরু করেছিলাম ১৯৮৬ সালে। এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যারা যুক্ত ছিলেন তাদেরই কয়েকজন পরবর্তীতে কানাডায় এসে টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফোরাম গঠন করেন। এদের মধ্যে আছেন এনায়েত করিম বাবুল, আমিনুল ইসলাম খোকন এবং মনিস রফিক। আমার কাছে খুব ভাল লাগছে যে এরা চমৎকার একটি ফেস্টিভালের আয়োজন করছে এই টরন্টোতে। এই ফেস্টিভালে অনেক ছবি দেখানো হয় বিভিন্ন দেশের।
আমি এই ফেস্টিভালের সাফল্য কামনা করি। এবং পাঁচদিনব্যাপী এই ফেস্টিভালের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
উল্লেখ্য যে, টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফোরাম এর পক্ষ থেকে জানানো হয় এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয় প্রায় এক বছর আগে থেকে। সে কারণে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে এই ফেস্টিভালটি স্থগিত করা সম্ভব হয়নি। তবে নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ‘টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ এর আয়োজন করে আসছে ২০১৭ সাল থেকে । এবারের ফেস্টিভাল শুরু হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা বলেন, “আমাদের উৎসবের অন্যতম মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বিভিন্ন ভাষা এবং সংস্কৃতির স্বাধীন ও বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। টরন্টোর ফিল্ম ফোরামের সদস্যরা মনে করে, বর্তমান বিশ্বে চলচ্চিত্র অন্যতম প্রধান এক শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে আমাদের এই সমাজকে যথোপযুক্তভাবে তুলে ধরা সম্ভব।”
তারা আরো বলেন, “যেহেতু চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন প্রক্রিয়াটা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং জটিল, সেহেতু বেশীরভাগ সৃষ্টিশীল এবং প্রতিভাবান চলচ্চিত্র নির্মাতা পূর্ণ দৈর্ঘের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে ব্যর্থ হন। তাছাড়া প্রচলিত প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের যে ব্যবস্থা বিদ্যমান, সেটা সব নির্মাতার পক্ষে মেনে নেওয়া এবং গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। ফলে অধিকাংশ নির্মাতার নির্মিত চলচ্চিত্র সাধারণ দর্শকরা দেখতে পারেন না। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম ২০১৪ সাল থেকে এমন সব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটা প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করে আসছে। এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশ থেকে প্রায় ৪০০০টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছে, সেখান থেকে ২৭টি দেশের মোট ৬২টি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
৭ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ আয়োজনে স্পন্সর করেছেন বাংলাদেশ বিমান, সার্ট্রেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জয় সরকার, রিয়েল স্টেট ব্রোকার শেখ হাসিব হোসেন, ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, ব্যারিস্টার ওমর হাসান আল জাহিদ, ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট, ব্যারিস্টার শামীম আরা, ব্যারিস্টার সাকিব আলম, রিয়েল স্টেট এজেন্ট গৌতম পাল, রিয়েল স্টেট এজেন্ট রাইয়ান চৌধুরী, ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট মণীষ পাল প্রমুখ। প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।
উদ্বোধনীর দিন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ৭ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ এর সমন্বয়ক মনিস রফিক। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিমান টরন্টোর কান্ট্রি ম্যানেজার মো. মেসবাহ উদ্দিন, বাঙ্গালী অধ্যুষিত স্ক্যারবরো সাউথওয়েস্টের পার্লামেন্ট সদস্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিল ব্লেয়ারের প্রতিনিধি এলেক্স ব্রিমহাম-সহ আরো কয়েকজন। ফেস্টিভাল উপলক্ষে মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার একটি লিখিত বার্তাও পাঠান এর সাফল্য কামনা করে।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি ও ৭ম টরন্টো মাল্টিকালচারাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ এর উৎসব পরিচালক এনায়েত করিম বাবুল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের কার্যনির্বাহী সদস্য শারমিন শর্মী।