আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী গ্রহণে সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়টি ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর বিবেচনায় নেই

প্রতারণার শিকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের রক্ষায় আরও কিছু করার আছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গ্রহণের বিষয়ে সংখ্যার সীমা আরোপ করা হলে সেটা হবে হাতুড়ি দিয়ে অপারেশন করার মত। অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মাইক মিলার শুক্রবার গ্লোবাল নিউজকে এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়টি তার বিবেচনায় নেই। তবে, ভবিষ্যতে এ ধরণের ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার তার আছে। খবর উদয় রানা –  গ্লোবাল নিউজ

মিলারের এই বক্তব্য দিলেন গত গ্রীষ্মে মিলার, গৃহায়ন মন্ত্রী সিন ফ্রেসার এবং জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডোমিনিক লিব্লাঙ্ক শিক্ষার্থীদের সীমা বেঁধে দেয়ার ইঙ্গিত দেবার পর।

গ্লোবাল নিউজের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মিলার বলেন, “আমরা সীমা আরোপ করছি না। সীমা আরোপ হবে হাতুড়ির মত, আর হাতুড়ি দিয়ে অস্ত্রোপচার করা আমাদের অগ্রাধিকার নয়, যা আমি আজ মনে করি।”

তিনি আরও যোগ করেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার আগামী বছরগুলিতে প্রাদেশিক সরকারগুলোর সঙ্গেও কাজ করবে। সেই সব আলোচনা যদি ফলপ্রসু না হয় তাহলে অটোয়া সীমা আরোপের চিন্তা করতে পারে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গ্রহণের বিষয়ে সংখ্যার সীমা আরোপ করা হবে না কানাডায়। ছবি : লার্স হ্যাগবার্গ/দি কানাডিয়ান প্রেস

তিনি বলেন, “আগামী বছরকালে বিষয়গুলি ঠিকমত কাজ না করলে আমি এটা প্রয়োগের অধিকার রাখি, কারণ, শেষ পর্যন্ত এটি হতে পারে একটি হাতিয়ার যা আমরা ব্যবহার করতে পারি অথবা সীমা আরোপ করতে পারি যদি দেখি কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচরণ ভালো নয়।”

“আমরা সত্যিই নিজেদেরকে প্রায় এক বছর সময় দিচ্ছি প্রদেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার জন্য যাতে তারা নিজেদের এখতিয়ারে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচ্ছন্ন করতে পারে।”

গত মাসের শেষদিকে মিলার গিয়েছিলেন অন্টারিওর ব্রাম্পটনে। সেখানে তিনি প্রতারণার বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে কানাডার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রত্যেক আবেদনকারীর লেটার অব এক্সেপ্টেন্স এর সত্যতা যাচাই করার জন্য সরাসরি কানাডার অভিবাসন, শরণার্থী ও সিটিজেনশিপ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

লেটার অব এক্সেপ্টেন্স নিয়ে প্রতারণা রোধের জন্য একটি নতুন “উন্নত যাচাই প্রক্রিয়া” চালু হবে। হাজার হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রতারণামূলক লেটার অব এক্সেপ্টেন্স পাচ্ছে বলে চলতি বছরের আরও আগের দিকে রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকে এই প্রতারণার বিষয়টি একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার “স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান’ বিষয়ক একটি কর্মকাঠামো তৈরি করছে যেটির কার্যকারিতা ২০২৪ সালের শরৎকাল থেকে শুরু হবে।

যেসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের “পরিষেবা, সহায়তা ও সুফল” অর্জনের ক্ষেত্রে উচ্চ মান নিশ্চিত করতে পারবে সেইসব প্রতিষ্ঠানকে আইআরসিসি ওই অভিধা দেবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সুবিধা পাবে যেমন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পারমিট দেয়ার প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার দেয়া।

গ্লোবাল নিউজকে মিলার বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মানদণ্ডে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া এবং পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সাধ্যের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করার বিষয়টিও থাকবে।

যাচাই-বাছাইয়ের নতুন উন্নততর পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়েছে মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স ফর চেঞ্জ (MWAC), তবে তারা বলেছে, প্রতারণার শিকার অভিবাসী শিক্ষার্থীদের রক্ষায় আরও কিছু করার আছে।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, “এটি একটি সরল এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা, কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে অংশীদারত্ব আছে এমন সব শিক্ষা নিয়োগকারীদেরকে বড় অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে, কিন্তু স্টাডি পারমিট বাতিল হয়ে যাবার পর জানতে পারছে তাদের চিঠি (লেটার অব এক্সেপ্টেন্স) আসল নয়, সেইসব শিক্ষার্থীর সুরক্ষার প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে; তাদের জন্য কোনও আশ্রয় নেই।” 

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্যমতে, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ফি’র মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কানাডার অভ্যন্তরীণ ছাত্রকে শিক্ষার জন্য ফি দিতে হয়েছে গড়ে ৬,৮৩৪ ডলার। এর বিপরীতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের দিতে হয়েছে প্রায় ছয়গুণ বেশি, ৩৬,১২৩ ডলার।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার এক রিপোর্টে বলা হয়, কানাডায় আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি, আবাসন ও আনুসঙ্গিক ব্যয়সহ প্রতি বছর খরচ করছে ২২.৩ বিলিয়ন ডলার। এর বাইরে কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা হলো শ্রমশক্তির প্রধানতম উৎস। কানাডা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গুরুতর শ্রমিক সঙ্কটে রয়েছে।

মিলার বলেন, তিনি এই যুক্তির সাথে একমত যে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ফি থেকে বছরে কোটি কোটি ডলার আয় করা কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়গুলির উচিৎ শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি কিছু করা।

গত জুনে তখনকার অভিবাসনমন্ত্রী সিন ফ্রেসার প্রতারণামূলক ভর্তির চিঠির বিষয়টি সুরাহার জন্য একটি টাস্কফোর্সের ঘোষণা দেন। ছাত্র অধিকারের প্রবক্তাদের মতে, এ ধরনের চিঠি পেয়ে স্টাডি পারমিট নিয়ে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কানাডায় আসা শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এই আদেশের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করেছিল, টাস্কফোর্স ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত।

শুক্রবার মিলার আইআরসিসি-সিবিএসএ-র যৌথ টাস্ক ফোর্সের কাজের ফলাফলও জানান। তিনি বলেন, টাস্কফোর্স দেখেছে যে, (বহিষ্কারাদেশ পাওয়া শিক্ষার্থীদের) ৬৩ জন “প্রকৃতই ছাত্র”।

তাদেরকে কানাডায় থাকার অস্থায়ী পারমিট দেওয়া হবে।

গত বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার ওপর বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যদি ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করার উপযুক্ত হয় তাহলে তারা ক্লাশ চালু থাকার সময়ে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারে। আর গ্রীষ্ম অথবা শীতকালীন এবং বসন্তের নির্ধারিত ছুটির সময় তারা ২০ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে পারে।

ডিসেম্বরে সেই সময়সীমা ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষিতে মিলার বলেন, এই ব্যবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হবে নাকি এটাই স্থায়ী করা হবে সেই সিদ্ধান্ত তিনি এখনও নেননি।

তিনি গ্লোবাল নিউজকে বলেন, “এ নিয়ে আমি যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করছি।”