বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস
চলতি মাসের ১০ অক্টোবর ছিল বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। আর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল, ‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’। এই দিবসটি পালনের মূখ্য উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং প্রতিটি মানুষের মনোজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষা যেমন মানুষের মৌলিক অধিকার তেমনি মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষাও একটি মৌলিক অধিকার। জগতের প্রত্যেকটা মানুষ তিনি যেই হন, যেখানেই থাকেন, তার অধিকার আছে সর্বোচ্চ সুবিধা সম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির।
কথায় বলে, মন ভাল তো সব ভাল। তাই সেই মনের যত্ন নেওয়াটা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে এই প্রবাসে কতজন মানুষ মন ভাল রাখতে পারেন?
এটি নিশ্চিতভাবেই একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের সাথে আরো আছে নতুন দেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। পেশাভিত্তিক চাকরী পাওয়ার কঠিন সংগ্রাম। ছেলে-মেয়েদের সময় দেওয়া, সঠিক পথের নির্দেশনা দেওয়া ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে প্রবাসের প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্টদের মানসিক চাপ এক দুরূহ ও কষ্টসাধ্য অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আর এই চাপ অনেকের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
গবেষণায় দেখা গেছে ইমিগ্রেন্টরা যখন কানাডায় আসেন তখন তারা মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান থাকেন। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অনেকের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। অনেক অভিবাসী কানাডায় আসার পর তার প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সম্মুখিন হন এবং যে চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করেন সেরকম চাকরি না পাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন থাকেন যা মানসিক রোগের সৃষ্টি করতে পারে। ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি গবেষক ইকবাল চৌধুরীর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গবেষণায় প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, নয় বছরের কম সময় আগে কানাডায় আসা অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য এদেশে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসকারীদের চেয়ে ভালো। কিন্তু পরে, নবাগতদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সময়ের সাথে সাথে গড় কানাডীয়দের চেয়ে দ্রুত খারাপ হতে থাকে। জনসংখ্যাগত নির্দিষ্ট গ্রুপ, যেমন নারী, অশে^তাঙ্গ, একক ব্যক্তিবিশেষ, স্বল্পশিক্ষিত এবং নিম্নআয়ের ব্যক্তিরা এসব ব্যাধির কারণে উচ্চমাত্রায় নাজুকতার মুখে পড়েন।
ইকবাল চৌধুরীর মতে, “এটি চিন্তার বিষয়। অভিবাসীরা যখন কানাডায় আসেন তখন তারা অভিবাসন পরবর্তী বিভিন্ন ধরণের চাপের মধ্যে পড়েন, যার মধ্যে রয়েছে চাকরিতে স্থির হওয়া এবং অন্য নানা পরিবেশগত চাপ। এটা যখন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে তখন মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে।”
এরকম মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে অনেক বাংলাদেশীর মধ্যেও। এদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। মানসিক চাপ, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা ইত্যাদি অনেক সমস্যা নিয়েই বাংলাদেশীরা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন। প্রধান কারণ ঐ একটাই। নিজ পেশায় চাকরী না পাওয়া। নিজ পেশায় চাকরী না পেয়ে অন্য চাকরী করতে যান যেখান থেকে পর্যাপ্ত অর্থ আসে না। ফলে সংসারও চলে না ঠিকমত। এসব মিলিয়ে তারা কি করবেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। আর তার অবস্বম্ভাবী পরিনতি মানসিক সমস্যা। টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তার আবু আরিফের মতে বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ লোক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
বিষয়টি মোটেও হেলাফেলা করার বিষয় নয়। ভালো মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের শারীরিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক ফল আনে যা এই প্রবাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই মানসিক সমস্যা দেখা দিলে যথাশীঘ্র সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হওয়া উচিৎ। যথাসময়ে এই রোগের চিকিৎসা নিলে অনেক বিপদ থেকেই রক্ষা পাওয়া যায়।