অবৈধ পথে অভিবাসনের মারাত্মক ঝুঁকি সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন
অবৈধভাবে সমুদ্র পথে স্পেন যাওয়ার পথে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ৯৫১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ৪৯ জনই শিশু। এদের সকলেরই মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে নৌকাডুবিতে। গত ৭ জুলাই অভিবাসনপ্রত্যাশী একটি মনিটরিং গ্রুপ এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, অভিবাসন প্রত্যাসীরা মূলত চারটি পথে স্পেনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, আলবোরান সাগর, আলজেরিয়ান এবং জিব্রাল্টা প্রণালী পাড়ি দেওয়ার সময় নৌকাডুবির ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ৯টি নৌকা এ পথে নিখোঁজ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যু হয়েছে। ৭৭৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই রুটে। এদিকে, আলবোরান রুটে ২১, আলজেরিয়ান রুটে ১০২ ও জিব্রাল্টা প্রণালীতে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
যে সকল দেশের নাগরিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পথে স্পেন বা পাশর্^বর্তী অন্য কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন তাদের মধ্যে আছে প্রধানত- আলজেরিয়া, ক্যামেরুন, কমোরোস, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, গিনি, আইভরি কোস্ট, মালি, মরক্কো, গাম্বিয়া, সেনেগাল, সুদান, সিরিয়া, গাম্বিয়া, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের নাগরিক। অন্যান্য আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকও আছে এই তালিকায়।
বাংলাদেশের বেসরকারি দাতব্য সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান তৃতীয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিপজ্জনক এই সাগর পথে পাড়ি জমিয়েছেন ২৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৯৪ জন বাংলাদেশী। ব্রাক জানায়, প্রতি বছর এই সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে গড়ে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশীর মৃত্যু ঘটে থাকে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী দেখা যায় গত ৯ আগস্ট রাতে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন বাংলাদেশের নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ তরুণ।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশ ফর মাইগ্রেশন এর প্রতিবেদন অনুসারে দেখা গেছে, লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক পথে ছোট ছোট নৌকায় করে ইতালিগামী বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এই পথে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিল ৫ শতাংশ। আর ২০২১ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ শতাংশে এবং ২০২২ সাল শেষে ১৪ শতাংশে।
উল্লেখ্য যে, অবৈধ মানব পাচারকারী দলের সদস্যরা প্রথমে প্রতিশ্রুতি দেন এই বলে যে, বড় জাহাজে করে অভিবাসন প্রত্যাসীদেরকে ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর এর পর তারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদেরকে ছোট ছোট নৌকায় উঠিয়ে বিপজ্জনক সাগর পথে রওনা দেন। কোন কারণে সাগর উত্তাল হলে বা নৌকায় কোন ত্রুটি থাকলে ইউরোপ যাওয়ার পথে প্রায়ই ঘটে নৌকাডুবির ঘটনা।
আমরা মনে করি বাংলাদেশের তরুণ এই অভিবাসনপ্রত্যাসীদের জন্য দেশের ভেতর মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা জরুরী। অথবা তাঁদেরকে ভাল ভাবে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে যাতে করে বৈধ পথে তাঁরা বিদেশে আসতে পারেন। এইসব পদক্ষেপগুলো না নিলে ভূমধ্যসাগরের পথে ঝুঁকিপূর্ণ ইউরোপ-যাত্রা বন্ধ হবে না। বিশেষ করে অভিভাবকদের উচিত, নিজেদের প্রিয় সন্তানকে মোটা অংকের টাকাসহ দালালদের হাতে তুলে দিয়ে বিপদের মুখে ঠেলে না দেয়া।
পাশাপাশি অবৈধ পথে অভিবাসনের যে মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে সে সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরী বলে আমরা মনে করি।