আরও বেশি আশ্রয়প্রার্থী কানাডায় আসছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : চলতি বছর এখন পর্যন্ত কানাডা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের প্রায় ৬০ হাজার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করেছে। প্রায় এক দশকের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।

এই বৃদ্ধির পেছনে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনপত্র জমে থাকাসহ বিভিন্ন কারণ থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি প্রধান কারণ দিয়ে এটিকে চিহ্নিত করা যায়: বিশ্বব্যাপী সংঘাত ও সঙ্কট বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাও বাড়বেÑ এটি শুধু কানাডায় নয়, বরং যেখানেই তারা আশ্রয় পাবে সেখানেই। খবর বানেসা বলিনটেক –  সিবিসি নিউজ। 

অটোয়ায় জাতিসংঘের উদ্বাস্তু হাইকমিশন (UNHCR) কানাডার জ্যেষ্ঠ আইনবিষয়ক কর্মকর্তা আজাদেহ তামজিদি গত জুলাই মাসে বলেন, “আমরা কানাডায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় আশ্রয়প্রার্থীদের আগমন দেখছি। আর এটি বিস্ময়ের কিছু নয়, যখন আমরা দেখি বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় লোকেরা আশ্রয় ও সুরক্ষার আবেদন জানাচ্ছে।”

“আমরা বিশ্বজুড়ে সংঘাত কয়েকগুণ বাড়তে দেখছি, আমরা দেখছি মানুষের বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলির সমাধান ও সংঘাত নিরসনে অপারগতা, সুতরাং এটি নিরাপত্তার খোঁজে অন্যত্র সরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

টরন্টোতে সম্প্রতি একদল শরনার্থী থাকার জায়গা না পেয়ে ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে স্থানীয় একটি গীর্জা তাঁদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে সাময়িকভাবে। ছবি : অ্যালেক্স লুপুল/সিবিসি

আগের বছরগুলির তুলনায় সংখ্যাটা ব্যাপকভাবে বাড়ার বিষয়ে তামজিদি বলেন, নিরাপত্তা চাওয়া মানুষের মোট সংখ্যার তুলনায় এটি বালতির মধ্যে একটি ফোঁটামাত্র, কানাডা সারা বিশে^র আশ্রয়প্রার্থীদের মাত্র দুই শতাংশকে গ্রহণ করেছে।

এর বিপরীতে, ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যমতে, ২০২২ সালের শেষ সময় পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১০ কোটি ৮৪ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত করা হয়েছে, যাদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উদ্বাস্তু হিসাবে বিবেচিত।

টরন্টোর একটি রিফিউজি সেটেলমেন্ট এজেন্সি এফসিজে রিফিউজি সেন্টারের বোর্ড চেয়ার শারি এইকেন বলেন, “চলতি বছর আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গত কয়েক বছরের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি হলেও, সারা বিশে^র উদ্বাস্তু সংখ্যার তুলনায় এটি চুইয়ে পড়া ক্ষুদ্র একটি ফোঁটা।

মানুষ কোথা থেকে পালাচ্ছে এবং কেন?

এইকেন বলেন, মানুষ নানা ধরণের বিপর্যয় থেকে পালিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি পাকিস্তানের ধ্বংসাত্মক বন্যা এবং সুদানের সহিংস সংঘাতের কথা বলেন। এইকেন অন্টারিওর কিংসটনে অবস্থিত কুইন্স ইউনিভার্সিটির আইন বিষয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরও।

একইভাবে, ২০১৮ সাল থেকে কানাডায় আসা আশ্রয়প্রার্থীরা একইরকম সমস্যা আছে এমন সব দেশ থেকে আসছেন। এর মধ্যে আছে আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকান দেশ।

এইকেন বলেন, “আমরা অন্যান্য অঞ্চলের মত এসব ক্ষতি দেখতে পাই না, কারণ যেসব স্থানে এসব ঘটছে সেগুলি কানাডা থেকে অনেক দূরে।”

কানাডায় উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সক্রিয় কানাডিয়ান কাউন্সির ফর রিফিউজিস-এর পলিসি ও অ্যাডভোকেসি বিষয়ক সহ-নির্বাহী পরিচালক গৌরী শ্রীনিবাসন বলেন, এখানে থিতু হবার পর উদ্বাস্তুরা যে সহায়তা পান সে কারণে অনেক আশ্রয়প্রার্থীর কাছে কানাডা অন্যতম গন্তব্য হলেও তাদের পক্ষে ভূমি, নৌ বা বিমানপথ কোনটিতেই এদেশে আসা সহজসাধ্য নয়।

এর অর্থ কি কানাডা আরও উদ্বাস্তু গ্রহণ করছে?

শ্রীনিবাসনের মতে, আশ্রয় প্রার্থনার পর থেকে উদ্বাস্তু হিসাবে গৃহীত হওয়া পর্যন্ত সময়ের দৈর্ঘ্য কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে। এটি নির্ভর করে আবেদনপত্র জমে থাকা এবং কানাডার স্বতন্ত্র ট্রাইব্যুনাল বা অভিবাসন ও রিফিউজি বোর্ডের প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতার ওপর। গত জুন পর্যন্ত তাদের হাতে এক লাখ তিন হাজার ৯৮৭টি উদ্বাস্তুর আবেদনপত্র অনিষ্পন্ন ছিল।

তামজিদি বলেন, এর পরও কানাডায় বেশিরভাগ আবেদনকারী- প্রায় ৭৮ শতাংশÑ সাফল্যের সঙ্গে উদ্বাস্তুর স্টেটাস পেয়েছেন।

তবে, এ বিষয়ে সক্রিয় গ্রুপগুলি বলছে, উদ্বাস্তুর সংখ্যা বৃদ্ধি ভীতির কোনও বিষয় নয়।

আন্তর্জাতিক গবেষণা, নীতি প্রণয়ন ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপ গ্লোবাল মাইগ্রেশন পলিসি অ্যাসোসিয়েটস-এর প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক তারান বলেন, এ ধরণের বৃদ্ধি কানাডার জন্য উপকারী হতে পারে, যেহেতু দেশটির শ্রমিকের চাহিদা আছে এবং ২০২৫সালের মধ্যে নতুন পাঁচ লাখ লোককে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে গ্রহণ করার পরিকল্পনা আছে।

স্থানচ্যুতদের জন্য কানাডার আর কী করা উচিৎ?

কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে কানাডার অবস্থান পেছনের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। তারা এক্ষেত্রে আশ্রয়প্রার্থীদেরকে কুইবেকের রক্সহাম রোডের মত অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত ক্রসিংয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করেন। একই সঙ্গে তারা সরকারের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন লক্ষ্যমাত্রা হ্রাসের উল্লেখ করেন, যা ২০২৩ সালের ২৩,৫৫০টি থেকে ২০২৫ সাল নাগাদ ১৫,২৫০টিতে কমে আসবে।

শ্রীনিবাসন বলেন, “নিপীড়ন ও বিপদ থেকে যারা পালিয়ে আসছেন তারা তাদের আবেদন শোনা এবং কানাডার সমাজে তাদের একীভূত করে নেয়ার মত প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন এটি নিশ্চিত করার বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখা দরকার।   

ইউএনএইচসিআর-এর তামজিদি বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য দরজা খুলে দেয়া ছাড়াও কানাডা বিশে^র সর্বাধিক সংখ্যক উদ্বাস্তু গ্রহণকারী দেশগুলোকে আরও বেশি অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

ইউএনএইচসিআর-এর তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সুরক্ষা পাওয়া জরুরী বিশে^র এমন উদ্বাস্তু ও অন্যান্য মানুষের মধ্যে ৭৬ শতাংশকেই আশ্রয় দিয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিÑ বিশেষ করে যেখান থেকে উদ্বাস্তুরা আসছেন তার প্রতিবেশি দেশ।