কানাডায় ইসলামোফোবিয়া
অন্য ধর্মের চেয়ে ইসলামের প্রতি কানাডীয়দের প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গিই স্পষ্টতর
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, জুলাই ১৫, ২০২৩ : অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যাঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউটের নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সারা দেশেই ইসলামের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান রয়েছে যা কুইবেকে সর্বোচ্চ।
প্রকৃতপক্ষে, কুইবেকের বাইরে প্রতি পাঁচজন কানাডীয়র মধ্যে দুজন (৩৯%) ইসলাম সম্পর্কে প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। কুইবেকে সংখ্যাটা দাঁড়ায় জনসংখ্যার অর্ধেকে (৫২%)। সামগ্রিকভাবে এই ধর্ম সম্পর্কে কানাডীয়দের বিরূপ মনোভাব আরও জোরালো অবয়ব নেয়। ফলে এ ধর্মের অনুসারীরা কানাডার সমাজের অনেক ক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত হবার ঝুঁকির মুখে থাকেন। সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয় গত মার্চ মাসে।
চিত্রটা আরও স্পষ্ট করার জন্য অ্যাঙ্গুশ রেইড ইন্সটিটিউট “ইসলাম সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির সূচক” (Views of Islam Index) তৈরি করে। এতে উত্তরদাতাদেরকে ইসলাম, খিস্টবাদ, শিখ, হিন্দু ও ইহুদি- এই পাঁচটি ধর্ম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করা হয়। তা থেকে যে দিকগুলো পরিমাপ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে:
– ধর্ম সম্পর্কে অনুভূতি অনুকূল নাকি প্রতিকূল
– প্রকাশ্যে কারো সুস্পষ্ট ধর্মীয় প্রতীক পরিধানের সমর্থক নাকি বিরোধী
– এসব প্রতীক পরা কারও সঙ্গে একই জায়গায় কাজ করতে কতটা সচ্ছন্দ বোধ করেন
– তাদের নেইবারহুডের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার সমর্থক নাকি বিরোধী
– আপনার সন্তান এসব ধর্মের কাউকে বিয়ে করলে গ্রহণযোগ্য কিনা।
এই বিশ্লেষণের জন্য এবং কুইবেক ও কানাডার অন্যত্র যে মাত্রায় ইসলামোফোবিয়া রয়েছে তা বিবেচনায় রেখে অ্যাঙ্গুস রেইড এর জাতীয় এই সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে সেগুলিকে উপরে উল্লেখিত পাঁচটি প্রশ্নের সবগুলির প্রেক্ষিতে মুসলমানদের প্রতি ইতিবাচকতা বা নেতিবাচকতার পরিমাণ অনুযায়ী বিশ্লেষণ করা হয়। এগুলি চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত ইতিবাচক, ইতিবাচক, নেতিবাচক এবং অত্যন্ত নেতিবাচক।
কানাডার বাকি অংশের সঙ্গে কুইবেকের তুলনা করলে বড় ধরণের পার্থক্য প্রকাশ পায়। কুইবেকের বাইরে সর্বত্র মুসলমান ও তাদের ধর্মীয় প্রতীকের ব্যাপারে অত্যন্ত ইতিবাচক ও বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় ৩৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে। আরও এক-তৃতীয়াংশ (২৭%) মানুষের মধ্যে সাধারণভাবে ইতিবাচক মনোভাব আছে বলে জানা যাচ্ছে যদিও তা গবেষণার অন্তর্ভুক্ত সব দিক সম্পর্কে নয়। চিত্রের অন্য প্রান্তে দেখা যাচ্ছে, কুইবেকের বাইরে ইসলাম ও এই ধর্মের অনুশীলন সম্পর্কে গবেষণার অন্তর্ভুক্ত প্রায় সব দিকেই ১৬ শতাংশ কানাডীয় নাগরিক চরম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।
কুইবেকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেশি অনুচ্চারিত, কিন্তু তার পরও প্রায় অর্ধেক মানুষের মনোজগতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করেন, যেখানে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন ইসলামকে (২০%) অত্যন্ত ইতিবাচক চোখে দেখেন। এছাড়া আরও এক-চতুর্থাংশ মানুষ (২৫%) সাধারণভাবে ইতিবাচকভাবে দেখেন।
এতে দেখা যাচ্ছে, কুইবেকের জনসংখ্যার বৃহত্তম অংশ (৩০%) ইসলামের প্রতি অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করেন। এই সংখ্যাটি সারা দেশের (১৬%) চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ঘাটন:
– কানাডায় ইসলামোফোবিয়া অধিকতর ব্যাপকভাবে বিদ্যমান কিনা এমন প্রশ্নে কানাডীয়রা সমভাবে বিভক্ত, ৫০ শতাংশ বলেন ইসলামোফোবিয়া ব্যাপকভাবে আছে, ৫০ শতাংশ মানুষ বলেন, নেই।
– ইসলাম সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির সূচকের ক্ষেত্রে উত্তরদাতাদের বয়স ও শিক্ষার পারস্পরিক এক ধরণের সম্পর্ক কাজ করে। তরুণদের তুলনায় বয়স্ক কানাডীয়রা অত্যন্ত নেতিবাচক গ্রুপে পড়েন বেশি। আর তরুণতর কানাডীয়দের অত্যন্ত ইতিবাচক গ্রুপে থাকার সম্ভাবনা বেশি। একই সঙ্গে অত্যন্ত নেতিবাচক গ্রুপের অর্ধেকেরই শিক্ষাস্তর হাইস্কুলের ডিপ্লোমা বা তারও কম। বিপরীতে অত্যন্ত ইতিবাচক গ্রুপের
তরুণদের শিক্ষাস্তর ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী হবার সম্ভাবনা অন্যান্য গ্রুপের চেয়ে অনেক বেশি।
– প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুইজনেরও বেশি (৪৪%) কানাডীয় মনে করেন, ইসলামোফোবিয়া দূরীকরণে একজন বিশেষ প্রতিনিধি থাকা অপ্রয়োজনীয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই পদে একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। যারা ইসলামকে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে দেখেন তাদের মধ্যে এই মনোভাব ভয়ানক প্রবল (৮২%)।
– কুইবেকের বাইরে প্রতি ১০ জনে সাতজন (৭২%) জনসমক্ষে হিজাব পরা সমর্থন করেন। আপত্তি করেন ২৮ শতাংশ কানাডীয়। কুইবেকে অর্ধেকের সামান্য বেশি সংখ্যক (৫৫%) পক্ষে এবং ৪৫ শতাংশ বিরোধী। বৃহত্তর মন্ট্রিলে হিজাবের পক্ষে মতামত ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে যখন কুইবেকের বাকি অংশে তা নেমে যায় ৪৬ শতাংশে।
কানাডীয়রা ইসলামের প্রতি বেশি নেতিবাচক
জানুয়ারির শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইসলামোফোবিয়ার মোকাবিলায় কানাডার প্রথম বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগের ঘোষণা দেন। এই পদে বেছে নেয়া হয়েছে সাংবাদিক ও মানবাধিকারের প্রবক্তা আমিরা এলগাওয়াবিকে। তার দায়িত্ব হবে, “ইসলামোফোবিয়া, পদ্ধতিগত বর্ণবাদ, জাতিগত বৈষম্য এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টায় মদদ দেয়া ও জোরদার করা।”
অ্যাঙ্গুস রেইড এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কানাডায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাক্টিভিস্ট ও সরকারি কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। দেশটিতে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে ৭১ শতাংশ বেড়ে যায়।
এই সহিংসতা সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক দৃষ্টান্ত হিসাবে সামনে আসে ২০১৭ সালে যখন কুইবেকের একটি মসজিদে ছয় মুসলিমকে হত্যা করা হয়।
মুসলিমদের ওপর বড় বড় সহিংসতার ঘটনা গণমাধ্যমের শিরোনাম দখল করতে শুরু করলে অনেক কানাডীয় ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে মৌনতা অবলম্বন করেন। সারাদেশে কানাডীয়দের অন্য পাঁচটি বড় ধর্মের চেয়ে ইসলামের প্রতি অনুকূল মনোভাব পোষণের সম্ভাবনা কম। কুইবেকে ইসলামের প্রতি অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন এক-চতুর্থাংশ (২৫%) মানুষ; তবে দেশের কোথাও এই সংখ্যাটি ৩৭ শতাংশের বেশি নয়:
কুইবেকে বেশিরভাগ ধর্মের প্রতিই প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণ ঘটনা, তবে সারাদেশও এই প্রবণতার বাইরে নয়, বিশেষ করে ইসলামের ক্ষেত্রে:
যারা প্রতিটি ধর্মকেই ইতি অথবা নেতিবাচকভাবে দেখেন তাদের ক্ষেত্রে আনুকূল্যের একটি নেট স্কোর ব্যবহার করে দেখা যায়, অন্য ধর্মের চেয়ে ইসলামের প্রতি কানাডীয়দের প্রতিকূল দৃষ্টিভঙ্গিই স্পষ্টতর।
জনসমক্ষে ও কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতীক
জনসমক্ষে ধর্মীয় প্রতীক বা পোশাক পরার বিষয়টি সাধারণভাবে কানাডীয়রা অনুমোদন করেন। সব ধর্মের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নবী দাউদের তারকা, কিপ্পা, যাজিকাদের পোশাক, ক্রস, পাগড়ি এবং হিজাব পরা সমর্থন করেন।
দুই-তৃতীয়াংশ কানাডীয় নিজ নেইবারহুডে মসজিদ থাকা নিয়ে স্বস্তি বোধ করেন
কানাডায় হাজার হাজার উপসনালয় আছে। তাই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় তার নিজ নেইবারহুডে গির্জা, সিনাগগ, মন্দির ও মসজিদের অস্তিত্ব নিয়ে স্বস্তিবোধ করবেন এতে অবাক হবার কিছু নেই।
ধর্মীয় পদ্ধতি ও বিয়ে
কানাডীয়দের জন্য অস্বস্তির এক অন্যতম ও স্পষ্টতর জায়গা হলো বিয়ে। আপনার সন্তান উল্লেখিত ধর্মগুলোর কোনও একটির অনুসারীকে বিয়ে করলে গ্রহণযোগ্য কিনা জানতে চাওয়া হলে বিভিন্ন ধরণের জবাব পাওয়া যায়। তার সন্তান কোনও মুসলিমকে বিয়ে করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে কানাডীয়দের এমনটা বলার সম্ভাবনা কম।
আঞ্চলিক পরিপ্রেক্ষিত
কুইবেকের বাইরে প্রতি পাঁচজনে দুইজনের মত কানাডীয় (৩৭%) ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। কুইবেকে সংখ্যাটি পাঁচজনের মধ্যে একজনে (২০%) নেমে আসে। সারাদেশে ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারীর (১৬%) বিপরীতে কুইবেকবাসীর মধ্যে তা দ্বিগুণ (৩০%)। নেতিবাচক মনোভাব মন্ট্রিলের বাইরে বেশি।
আলবার্টা, অন্টারিও এবং আটলান্টিক কানাডাবাসী ইসলামকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখে:
বয়স, লিঙ্গ ও শিক্ষা
কুইবেকে সব গ্রুপেই নারী ও পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান। কানাডার বাকি অংশে ইসলাম বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারীদের মধ্যে পুরুষই বেশি। নমুনার উভয় ক্ষেত্রেÑ কুইবেক ও তার বাইরেÑ বয়স একটি উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্টর। বয়স্কদের নেতিবাচকভাবে দেখার হার বেশি।
কুইবেক এবং অবশিষ্ট কানাডায় ইসলাম সম্পর্কে যারা অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষা থাকার সম্ভাবনা অত্যন্ত নেতিবাচক মনোভাবের লোকেদের চেয়ে দ্বিগুণ।
বিল ২১
কুইবেকের বিল ২১ এমন এক সংবিধিবদ্ধ বিধান যা নির্দিষ্ট কিছু কর্তৃত্বপূর্ণ সরকারি পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের কর্মস্থলে ধর্মীয় প্রতীক পরা নিষিদ্ধ করেছে। অ্যাঙ্গুস রেইড এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৯ সালে সংসদে পাশ করা এই আইন আসলে প্রদেশের মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতাবোধ ও অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
সারাদেশে কানাডীয়দেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তাদের প্রদেশে এ ধরণের আইন করা হলে তারা কেমন বোধ করবেন (কুইবেকবাসীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা এই আইনের সমর্থক নাকি বিরোধী)। যাদের অবস্থান ইসলামের প্রতি সবচেয়ে প্রতিকূল তারা বিপুলভাবে বিল ২১-এর পক্ষে মত দেন।
কুইবেকের বাইরে সার্বিকভাবে বিল ২১-এর মত আইনের চিন্তা অজনপ্রিয়। দুই-তৃতীয়াংশ কানাডীয় (৬৫%) এর বিরোধিতা, আর এক-চতুর্থাংশ (২৫%) সমর্থন করেন। কুইবেকে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় তিনজন (৫৭%) আইনটি সমর্থন করেন, যখন প্রতি তিনজনে একজন (৩৫%) বিরোধিতা করেন:
স্পষ্টত কানাডায় ইসলামই সবচেয়ে সমালোচিত ধর্ম। কিন্তু যারা এই ধর্মটিকে অপছন্দের দৃষ্টিতে দেখেন তাদের অন্য সব ধর্মকেও নেতিবাচকভাবে দেখার সম্ভাবনা বেশি। ভেবে দেখার বিষয় যে, কুইবেক এবং তার বাইরের কানাডায় ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারীদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে তিনজন শিখ ধর্মকেও পছন্দ করেন না। অবশ্য, কুইবেকে এই সূচকে যাদেরকে অত্যন্ত নেতিবাচক শ্রেণীতে রাখা হয়েছে তারা অবশিষ্ট কানাডার মানুষের চেয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টধর্ম সম্পর্কেও অনেক বেশি সমালোচনামুখর:
যারা ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক তারা প্রকাশ্যে ধর্মীয় প্রতীক পরার বিষয়ে বেশি বিরোধী। বিশেষ করে বোরকা, কিরপান পরার বিষয়ে ইতি বা নেতি উভয় শ্রেণীর মানুষেরই যথেষ্ট বিরোধিতা আছে। তবে হিজাব ও পাগড়ির মত অন্য প্রতীকগুলো নিয়ে অত্যন্ত নেতিবাচক শ্রেণীর মানুষের চেয়ে ইতি ও নেতিবাচক গ্রুপের লোকেদের শঙ্কা বা আপত্তি অনেক কম:
কুইবেক এবং অবশিষ্ট কানাডা, উভয় ক্ষেত্রে অত্যন্ত নেতিবাচক শ্রেণীর লোকেরা নিজের নেইবারহুডে উপাসনালয় থাকার বিষয়ে অন্য সব গ্রুপের লোকেদের চেয়ে বেশি বিতৃষ্ণ। যদিও ইসলাম সম্পর্কে যারা অত্যন্ত ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, তারা নিজের নেইবারহুডে কোনও ধর্মের উপাসনালয় থাকা ও ধর্মচর্চায় সামান্যই সমস্যা বোধ করেন অথবা একেবারেই করেন না:
কানাডায় কি মুসলিমবিরোধী সমস্যা আছে?
ইসলামোফোবিয়ার মোকাবিলার জন্য আমিরা এলগাওয়াবিকে বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগের পর থেকে সৃষ্ট বিতর্কের অনেকটাই কেন্দ্রিভূত রয়েছে কানাডায় এটি আদৌ কোনও সমস্যা কিনা সেই বিষয়ের মধ্যে। ২০১৭ সালে হাউজ অব কমন্সে ইসলামোফোবিয়া ও অন্যান্য ধর্মীয় বৈষম্যের নিন্দা করে বাধ্যতামূলক নয় এমন (non-binding motion) একটি প্রস্তাব পাশ করে। এনডিপি ও লিবারেল দলের প্রায় সব এমপি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও কনজারভেটিভ দলের বর্তমান নেতা পিয়েরে পয়লিভারসহ অধিকাংশ এমপি বিপক্ষে ভোট দেন।
এই বিষয়ে জনমত প্রায় সমানুপাতিক হারে বিভক্ত। অর্ধেক কানাডীয় বলেন, কানাডায় মুসলিম বিরোধিতার সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে রয়েছে যা বিবেচনায় রাখতে হবে, তবে বাকি অর্ধেক কানাডীয় বলেন, এমন কোনও সমস্যাই দেশে নেই। উল্লেখযোগ্য যে, এটিকে মোটেও কোনও ইস্যু মনে করেন না সেইসব কানাডীয় যাদের দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত নেতিবাচক।
নিখাঁদ আঞ্চলিক অবস্থান থেকে দেখা যাচ্ছে, সাসকাচুন ও ম্যানিটোবার বেশিরভাগ লোক ইস্যুটিকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য পাওয়া বলে মনে করেন। অন্যদিকে কুইবেকের লোকেরা কাছাকাছি পর্যায়ে বিভক্ত।
ইসলামোফোবিয়ার মোকাবিলা?
কানাডার অর্ধেক মানুষ নিজ দেশে মুসলিমবিরোধী বৈষম্যের সমস্যা আছে বলে মনে করলেও অপেক্ষাকৃত স্বল্প সংখ্যক মানুষই ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একজন বিশেষ প্রতিনিধির প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। এমনকি ইসলাম সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব আছে যাদের তারাও এ বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে একমত নন। প্রতি পাঁচজনে দুজন (৪৪%) বলেন, এটি একটি অদরকারি পদ।
কানাডায় ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে একজন দূতের দরকার আছে এমনটি দেশের কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয়রা মনে করেন না। কুইবেকের বাইরে জনমত সমানভাবে বিভক্ত। তবে পাঁচজনে একজন (২১%) বলেন, এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত না।