কানাডার প্রধানমন্ত্রীসহ ২৮ জন মন্ত্রীকে শিউরে ওঠার মত হুমকী দিয়েছে চরম ডানপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী দলের সদস্যরা

হত্যার হুমকীও দেয়া হয়েছে  এক মন্ত্রীকে, মৃত্যু কামনা করা হয়েছে এক বিরোধী দলের নেতার

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ২০২২ সালের মার্চে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি অনলাইনে চরম ডানপন্থী গ্রুপের হুমকি পান। চরমপন্থী সামাজিক নেটওয়ার্ক গ্যাব-এর এক পোস্টে তাকে হুমকি দেওয়া হয়। মেলানি জোলির আগেও কানাডার বেশ ক’জন কর্মকর্তা এ ধরণের হুমকি পেয়েছেন।

হুমকিতে কানাডার রাজনীতিকদের নাম ধরে বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে তাদের হত্যা করার আহবান জানানো হয়। দাবি করা হয় যে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম কানাডার সরকারকে ছিনতাই করে নিয়েছে। খবর মার্ক-আন্দ্রে কসেট – গ্লোবাল নিউজ।

(বাঁ থেকে) কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি, জননিরাপত্তা মন্ত্রী মার্কো মেন্ডিসিনো, বিরোধী কনর্জাভেটিভ পার্টির প্রধান পিয়েরে পোইলিভর, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, এনডিপি’র প্রধান জাগমিত সিং। (ছবি : সংগৃহীত)

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত ঐ রিপোর্টে বলা হয়, জননিরাপত্তা মন্ত্রী মার্কো মেন্ডিসিনো ও তার পরিবারের বিরুদ্ধেও অনলাইনে বেশ কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকার জনগণের বন্দুক ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদারের যে উদ্যোগ নিয়েছে মেন্ডিসিনোর বিরুদ্ধে হুমকির কারণ সেটাই। একটি ঘটনায় মন্ত্রীর দেওয়া একটি পোস্টের জবাব দিতে গিয়ে একজন ইনস্টাগ্রাম ইউজার মন্ত্রীকে গুলি করে মারার হমকি দেন।

আর ২০২২ সালের শুরুর দিকে বেশ কয়েকজন এমপির পাশাপাশি কনজারভেটিভ দলের নেতা পিয়েরে পোইলিভর অনলাইনে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও হুমকির লক্ষ্যবস্তু হন। পোইলিভর তখনও তার দলের নেতৃত্ব দেবার প্রত্যাশা করছিলেন। এটি ঘটে অটোয়া শহরের কেন্দ্রে ট্রাক চালকদের কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভ অবরোধের সময়। সেই বিক্ষোভ শহর অচল করে দেয় এবং সারাদেশে অবরোধ সৃষ্টি করে।

এসব হুমকির সবগুলি ঘটনাই নথিবদ্ধ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের সিনিয়র নেতাদের জন্য তৈরি করা অসংখ্য ফাইলে। অভ্যন্তরীণ হুমকি মূল্যায়নের লক্ষ্যে এসব ফাইল তৈরি করা হয়েছে এবং তথ্য পাওয়ার অধিকার সম্পর্কিত আইনে অনুরোধ করে গ্লোবাল নিউজ সেটি পেয়েছে।

যদিও সরবরাহ করা নথিগুলি ব্যাপকভাবে সংশোধিত, তবু এতে শিউরে ওঠার মত একটি প্রবণতার আভাস পাওয়া যায় যে, কীভাবে নির্বাচিত কর্মকর্তারা কোভিড-১৯ মহামারি, চরমপন্থী মতাদর্শ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বের এক জটপাকানো জালের কারণে উদ্দীপিত “হিংসাত্মক বক্তৃতা এবং ভীতি প্রদর্শনের কৌশলের” মুখোমুখি হচ্ছেন।

কানাডায় মতাদর্শে অনুপ্রাণিত সহিংস চরমপন্থী (IMVE) হুমকি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায়, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা অনলাইনে এধরণের অশিষ্টাচারের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন।

দুটি মূল্যায়নে ২০২১ সালের ফেডারেল নির্বাচন এবং গত বছর ট্রাক চালকদের বিক্ষোভ বা কথিত ফ্রিডম কনভয় প্রোটেস্টের সময় চরমপন্থী তৎপরতার উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয় যে, “অনলাইনে দূষণ ছড়াতে থাকলে তা কার্যত নিরাপত্তার ঘাটতির মত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।” গ্লোবাল নিউজ এ ধরণের হুমকি মূল্যায়নের মোট ৭১টি নথি পেয়েছে যেগুলি তৈরি করা হয় ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডন অন্টারিওতে এক নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেয়ার সময় সন্ত্রাসীরা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উপর নুড়ি পাথর নিক্ষেপ করে। এই সময় নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেয়। ছবি: নেথান ডেনেটি/কানাডিয়ান প্রেস

কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান ডিক ফ্যাডেন বলেন, “এটি বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নথি এবং এর অর্থ হলো, লোকেরা উদ্বিগ্ন।”  ফ্যাডেন একসময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাব দায়িত্ব পালন করেন।

হুমকি মূল্যায়নের এসব নথি তৈরি করেছে ইন্টিগ্রেটেড টেরোরিজম অ্যাসেসমেন্ট সেন্টার (ITAC)।

সব মিলিয়ে রিপোর্টগুলিতে মোট ৩৯ জন এপির বিরুদ্ধে আসা হুমকির ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়। হুমকি পাওয়া এমপিদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোলি, পোইলিভর, উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনীতা আনন্দ এবং আরও ২৮ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী রয়েছেন।

আইটিএসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হুমকিদাতাদের মধ্যে আছে “জেনোফোবিক চরমপন্থী” (বিদেশি সব কিছু নিয়ে যারা অহেতুক আতঙ্কিত), “উগ্র স্বাধীনতাবাদী, নব্য-নাৎসি, ইনসেলস (এমন অনলাইন গোষ্ঠীর সদস্য যারা যৌনতা পছন্দ করে না) এবং অন্যান্য ব্যক্তিবিশেষ যারা নিজেদের আদর্শ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সহিংসতা ন্যায্য মনে করে।”

গ্লোবাল নিউজ আগেও যেমন রিপোর্ট করেছে যে, সিএসআইএস এখন মতাদর্শগতভাবে উদ্বুদ্ধ সহিংস চরমপন্থার দিকে ততটাই মনোযোগ দিচ্ছে যতটা তারা দিয়ে আসছে ধর্মীয়ভাবে অনুপ্রাণিত সহিংতার (RMVE) দিকে। মতাদর্শগতভাবে উদ্বুদ্ধ সহিংস চরমপন্থা হলো সংস্থাটির একটি ব্যাপকতর পরিভাষা যার মধ্যে চরম-ডান, সরকারবিরোধী এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার মত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত।

একইভাবে আইটিসিএ তার বিশ্লেষণে এমন উপসংহারে পৌঁছেছে যে, কানাডায় মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ সহিংস চরমপন্থা ধর্মীয়ভাবে অনুপ্রাণিত চরমপন্থাকে “ছাড়িয়ে গেছে”।

সবার আগে যে মূল্যায়নটি করা হয়েছে সেটি ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারির। এতে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারি এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে আইটিএসির ভাষায় যেটি হলো, “সরকারবিরোধী হুমকির পরিবেশ”, যার লক্ষ্য সাধারণভাবে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয় এমন কর্মকর্তারা।

অনলাইনের বিভিন্ন পোস্টে প্রধানমন্ত্রীকে “অপরাধী”, “বিশ্বাসঘাতক”, “কমিউনিস্ট” অথবা “একটি ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের’ অংশ, যার লক্ষ্য অভিবাসনের মাধ্যমে জাতিগত ইউরোপীয়দের ধ্বংস করা” ইত্যাদি অভিধা দেয়ার বিষয়গুলি তুলে ধরে আইটিএসি জানায়, প্রধানমন্ত্রীই সরকারবিরোধী মনোভাবের প্রাথমিক লক্ষ্য।

২০২২-এর মার্চের মাঝামাঝি নাগাদ যেসব মূল্যায়ন করা হয়েছে সেগুলিতে সাম্প্রতিক ট্রাক চালকদের বিক্ষোভ, সংশ্লিষ্ট সীমান্ত অবরোধ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরী আইনের প্রয়োগের বিষয়গুলির উল্লেখ করে এমপিদের বিরুদ্ধে “তীব্রতর হুমকি” এবং “অনলাইনে হুমকি ও বিপজ্জনক আচরণ বেড়ে যাওয়ার” বিষয়ে সতর্ক করা হয়।

কানাডাজুড়ে সৃষ্ট এই বিষাক্ত পরিবেশ এখন ‘কমার সম্ভাবনা নেই’

কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ ও বাধ্যবাধ্যকতা এরই মধ্যে বহুলাংশে তুলে নেয়া হলেও আইটিএসি মনে করে, যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সহিংসতার পথ অবলম্বনে প্রস্তুত তারা এতে সামান্যই তুষ্ট

হবে। আইটিএসির মূল্যায়নে “সরকার ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বক্তব্য দেওয়ার” ক্ষেত্রে ইন্ধন যোগাতে পারে এমন আরও কিছু মেরুকরণের বিষয় চিহ্নিত করে, যার মধ্যে রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক অসন্তোষ, সরকারের অভিবাসন নীতি, আগ্নেয়াস্ত্র আইন, গর্ভপাত এবং কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের আর্থ-সামাজিক প্রভাব।

আইটিএসির উপসংহার এই যে, “অনলাইনে হুমকির পরিবেশ যে বিষাক্ততার সৃষ্টি করছে তা স্বল্প বা মধ্য মেয়াদে কমার কোনও সম্ভাবনা নেই।

কানাডার গুপ্তচর সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ফ্যাডেন বলেন, “এটি সত্যিই উদ্বেগজনক।”

নারী, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে অত্যধিক মাত্রায় টার্গেট করা হচ্ছে

যদিও চরমপন্থীদের ক্ষোভ উস্কে দেওয়ার মত জোরাতালি দেয়া ইস্যু আরও বাড়তে পারে, কিন্তু যেটি দৃশ্যত অপরিবর্তিত থেকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে সেটি হলো নারী ও অশে^তাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে অত্যধিক মাত্রায় লক্ষ্যবস্তু করা।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনীতা আনন্দকে দেয়া হুমকির একটি মূল্যায়ন অনুসারে, “প্রতিবেদনের একাংশ ইঙ্গিত দেয় যে, কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও পৌরসভা পর্যায়সহ রাজনৈতিক ক্ষমতার বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত নারী ও অশে^তাঙ্গ ব্যক্তিদের অনলাইনে এবং ব্যক্তিগতভাবে অব্যাহত হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও হুমকির মুখে পড়বেন। আর এটি ঘটবে পুরুষদের চেয়ে নারীদের ক্ষেত্রেই অনেক ঘন ঘন।

আরেকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলিকে সরাসরি “হুমকি বা উদ্বেগজনক ঘটনার” লক্ষ্য বানানো হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে ডাকে, ইমেলে ও টেলিফোনে দেয়া ভীতিকর মেসেজ, অনলাইনে হুমকি দেয়া কনটেন্ট ইত্যাদি; এবং ব্যক্তিগতভাবে বিরক্ত করা।

অনীতা আনন্দের মত জোলিও ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের বিষয়ে ফেডারেল সরকারের দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।

একটি রিপোর্টে হুঁশিয়ার করা হয় যে, “সংশ্লিষ্ট নথিগুলিতে ভূমিকা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে ব্যাপকভাবে জনসমক্ষে আসার কারণে এবং হতাশা দূর করার লক্ষ্যে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার স্বাভাবিক করে দেয়ার মত বিষয়গুলির কারণে মন্ত্রী জোলি সহিংস চরমপন্থীদের কাছ থেকে আরও বেশি করে অনলাইনে হুমকি, অশালীন মন্তব্য এবং আক্রমণাত্মক আচরণের মুখে পড়তে পারেন।”

উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তারাও ব্যক্তিগতভাবে হুমকির মুখে পড়েন। ২০২২ সালের আগস্টে আলবার্টার গ্র্যান্ড প্রেইরি অঞ্চলে যাবার সময় ফ্রিল্যান্ডকে মৌখিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ওই ঘটনার এক ভিডিওতে দেখা যায়, ফ্রিল্যান্ড যখন গ্র্যান্ড প্রেইরি সিটি হলের লিফটের দিকে যাচ্ছেন তখন এক ব্যক্তি তার দিকে এগিয়ে আসে এবং তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তাকে “বিশ্বাসঘাতক” বলে। আরসিএমপি পরে নিশ্চিত করেছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছেন।

পার্লামেন্ট সদস্যরা চরমপন্থার যে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখোমুখি হচ্ছেন সেটি বেশ কয়েক বছর ধরেই ফেডারেল সরকারের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের উদ্বেগের বিষয় হয়ে আছে।

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা প্রিভি কাউন্সিলের এক স্মারকে মতাদর্শিকভাবে অনুপ্রাণিত বিভিন্ন সহিংস চরমপন্থীদের “বাড়তি ঔদ্ধত্বপূর্ণ” আচরণের কথা উল্লেখ করা হয়।

ওই স্মারক অনুযায়ী, “ওইসব ব্যক্তি সাধারণত অনলাইন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলেও, তাদের তৎপরতার উত্থান ঘটেছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কানাডায় জাতিগত জাতীয়তাবাদী ক্যাডার এবং ধর্মীয় উদ্দীপনায় উজ্জীবিত ব্যক্তিদের পুনরুত্থান ঘটেছে।

বর্তমানে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদেরকে যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে, নির্বাচিত কর্মকর্তা ও অন্যান্য বিশিষ্টজনকে লক্ষ্য করে অনলাইনে দেয়া হুমকির সংখ্যাটাও সেই চ্যালেঞ্জের একটি অংশ।

যদিও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে অনলাইন হুমকি ছেঁকে নেওয়ার মত অত্যাধুনিক অ্যাপ্লিকেশন আছে, কানাডার গুপ্তচর সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ফ্যাডেন যোগ করেন যে, সরকারি সংস্থাগুলি কী করতে পারে সে বিষয়ে হুমকিদাতাদের অনেকেই সচেতন এবং তাদের অনলাইন কর্মকাণ্ড গোপন রাখার ব্যাপারে পারদর্শী হয়ে উঠেছে।

ফ্যাডেন বলেন, “এটি যেন একটি উচ্চ চাপসম্পন্ন হোস পাইপের মত, এর মধ্যে এত কিছু আছে যে, এটি প্রায় কল্পনাতীত।”

‘বাস্তব আক্রমণ পরিকল্পনার’ কোনও ইঙ্গিত নেই

যদিও আগামী দিনগুলিতে অনলাইন হুমকি বহুগুণ বাড়তে থাকবে তবু ২০২২ সালের জুনে তৈরি করা একটি মূল্যায়নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আইটিএসি “এখনই কানাডার নির্বাচিত কর্মকর্তাদের ওপর হুমকিদাতাদের সম্ভাব্য কোনও আশু হামলা বা আগাম আক্রমণের পরিকল্পনার ব্যাপারে সতর্ক নয়।”

এর দু’মাস পর তৈরি করা আরেকটি রিপোর্ট অনুসারে, “আইটিএসি এমন কোনও ইঙ্গিত পায়নি যে, কানাডার আদর্শগতভাবে উদ্বুদ্ধ সহিংস চরমপন্থী (IMVE) কোনও গ্রুপ বা ব্যক্তিবিশেষ বর্তমানে দেশের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে বাস্তব কোনও হামলার পরিকল্পনায় নিয়োজিত অথবা তাদের এমন একটি জটিল সহিংসতা ঘটানোর মত সাংগঠনিক সক্ষমতা আছে।”

তারপরও গ্লোবাল নিউজের হাতে আসা আটটি মূল্যায়নে ২০২১ সালের অক্টোবরে ব্রিটিশ এমপি ডেভিড অ্যামেসের হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়। অ্যামেস ইসলামিক স্টেটের এক সমর্থকের ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

আইটিএসি উল্লেখ করে যে, “অ্যামেসকে এমন একটি জায়গায় হত্যা করা হয় যেটি সম্পর্কে আগে থেকে প্রচারণা চালানো হয় এবং সেখানে নিরাপত্তা ছিল ন্যূনতম।”

কনাডার গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত বছর অটোয়ার স্বাধীনতা কনভয় বিক্ষোভকে সেরকম একটি “স্বল্প নিরাপত্তা পরিস্থিতি”র উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেন।

কানাডার কিছু উগ্র ডানপন্থী দল ওই বিক্ষোভকে একটি সুযোগ হিসাবে দেখছিল। আর কিছু চরমপন্থী বিক্ষোভের শুরুর দিকে এমনও আশা করছিল যে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ৬ জানুয়ারির হামলার একটি কানাডীয় সংস্করণে পরিণত হবে। 

অবশ্য, গ্লোবাল নিউজের পাওয়া মূল্যায়নগুলোতে দেখা যাচ্ছে, আইটিএসি কানাডায় চরমপন্থীদের ওইরকম কোনও হামলা চালানোর সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান।

কিন্তু একজন প্রাক্তন সিএসআইএস (CSIS) বিশ্লেষক স্টেফানি কারভিন বলেন, অনলাইনে ক্রমবর্ধমান হারে বিষাক্ত বিষয়বস্তু ছড়িয়ে দেয়া এবং সেগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদর্শিকভাবে অনুপ্রাণিত সহিংস চরমপন্থার হুমকি মোকাবেলায় কানাডা যথেষ্ট কাজ করছে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কারণ আছে। 

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে সিবিসি নিউজের এক খবরেও বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকির ঘটনা ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আরসিএমপির তথ্যে এমনটাই জানা গেছে।

পুলিশ বাহিনীর প্রোটেক্টিভ পুলিশিং ইউনিট ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ট্রুডো ও তার মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে হুমকির ১৩০টি ফাইল খুলেছিল। এইসংখ্যা তার আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০০টি। ২০১৯ সালের পুরো বছরে আরসিএমপি এধরণের ২১৫টি হুমকির ঘটনা লিপিবদ্ধ করে।

রিদাউ হলের অনুপ্রবেশকারী

ইতিপূর্বে অটোয়ার রিদাউ হলের গেট উড়িয়ে দিয়ে পিকআপ ট্রাক নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ার ঘটনায় ম্যানিটোবার বাউসম্যান-এর কোরে হুরেনকে গ্রেফতার করা হয়। এই রিদাউ হল এলাকায় গভর্নর জেনারেলের আবাসিক ভবন রয়েছে এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারেও এখানেই অবস্থান করছেন।

কোরে হুরেন কানাডার নিরাপত্তা বাহিনীর রিজার্ভিস্ট। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় সে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। তার কাছে ছিল একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, দুটি শটগান এবং চারটি ছুরি। সিবিসি নিউজ জানায়, তার কাছে বেশ কিছু পরিমাণ গুলিও ছিল।

হুরেনের বিরুদ্ধে মামলায় ২২টি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হুমকি উচ্চারণ করার অভিযোগ আছে।

কৌতুহলের বিষয় হলো, এতগুলো অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সাবেক এই রিজার্ভিস্ট রিদাউ হলে ঢুকলেও তাঁর নাকি কোন উদ্দেশ্য ছিল না কাউকে আঘাত করার। পুলিশের কাছে তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে কভিড-১৯ বিষয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করা ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। তাঁর এই ‘কাহিনী’ পুলিশ ও আদালত বিশ্বাস করেছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, ব্যক্তিটি যদি শ্বেতাঙ্গ না হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ বা বাদামাঙ্গ হতেন তবে বোধ করি পুলিশ ও আদালতের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বেশ ভালই ঘাটতি দেখা দিত।

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে  ফেডারেল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান জাগমিত সিং-ও এক বিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আক্রমণকারীরা তাঁকে অশ্রাব্যভাষায় গালাগালি করেছেন, মধ্যমাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। তাঁরা তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে গাল দিয়েছেন এবং তাঁর মৃত্যুও কামনা করেছেন। আক্রমণের সময়টাতে জাগমিত সিং শান্ত থেকেছেন। তবে পরবর্তীতে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘পিটারবরোতে আমার উপর আক্রমণের যে ঘটনা ঘটেছে তা ছিল আমার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্টকর ও যন্ত্রণাপ্রদ ঘটনা।’