২০২২ সালে গাড়ি চুরি ব্যাপক বেড়েছে, ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিশেষজ্ঞদের
সচরাচর চুরি যাওয়া গাড়ির মধ্যে রয়েছে হোন্ডা সিআর-ভি, লেক্সাস আরএক্স সিরিজ এবং ফোর্ড এফ ১৫০ সিরিজের গাড়ি
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২: টরন্টোর কেন্দ্রীয় এলাকায় ডেভ হাচিনসনের কন্ডোর আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং স্পট থেকে তার গাড়ি চুরি করতে চোরের সময় লেগেছে ৩০ সেকেন্ডের মত।
তার রেঞ্জ রোভার গাড়ি লাপাত্তা হয়ে গেছে এটা আবিষ্কারের পর ডেভ কন্ডোর কেয়ারটেকারকে নজরদারির ভিডিও দেখতে বলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি সাদা ভ্যান তার গাড়ির কাছে এগিয়ে যায়, ভ্যান থেকে কেউ একজন বেরিয়ে আসে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা গাড়িটি চালিয়ে পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে যায়।
তিনি বলেন, “বাস্তবতা হলো, কাজটি তারা করেছে খুবই সহজে, তারা কাচ ভাঙেনি, কোনও কিছুই ভঙেনি… এটি ভয়ঙ্কর।”
হাচিনসন বলেন, এ বছর তার আরও কয়েক বন্ধুর গাড়ি চুরি হয়েছে।
শুধু টরন্টোতেই ২০২২ সালে আট হাজারের বেশি গাড়ি চুরি গেছে বলে রিপোর্ট হয়েছে। ২০২১ সালে চুরি যায় ৫,৬০০ গাড়ি।
কানাডার গ্লোবাল অটোমেকার্স-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেভিড অ্যাডামস বলেন, “এটি গুরুতর সমস্যা। আমার মনে হয়, যেমনটা আমরা ক্রমশই বাড়তে দেখছি, তাতে এটি সংগঠিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের লক্ষণ।”
অ্যাডামস বলেন, গাড়িগুলোর ওপর নিশানা করা হয়, চুরি করে সেটি বিদেশে পাচার করা হয় সেখানকার বড় চাহিদার জোগান হিসাবে।
তিনি বলেন, “বাস্তবতা এই যে, গাড়ি চুরি বন্ধ করতে প্রস্তুতকারকরা যতবারই গাড়িতে নতুন কৌশল প্রয়োগ করেন, কিন্তু কার্যত চোরেরা সব সময়ই এক ধাপ এগিয়ে।”
গাড়ি চোরেরা সবচেয়ে বেশি যে উপায় ব্যবহার করে সেটি হলো, ইলেক্ট্রোনিক ডিভাইস দিয়ে গাড়ির ফ্যাক্টরি সেটিংস-এর প্রোগ্রাম জেনে নেয়াÑ গাড়ির কমপিউটার হ্যাক করে সেটিতে নতুন প্রোগ্রাম সেট করা, যাতে কমপিউটারটি তাদের সঙ্গে আনা চাবি গ্রহণ করে। হাচিনসন মনে করেন তার গাড়িও এভাবেই চুরি করা হয়েছে।
“গাড়ি প্রস্তুতকারকদের দায়িত্ব থেকে সরে না গিয়ে চুরি কমানোর প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করতে হবে, তবে আমি মনে করি, এটি হলো সরবরাহ ও চাহিদার সমস্যা।”
তিনি আশা করেন, স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বন্দরগুলি চুরি করা গাড়ি বিদেশে পাচারের বিষয়টি কঠোর করে তোলার উপায় আরও আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনায় নেবে।
গাড়ি চুরি বন্ধের উপায় উদ্ভাবনে কেবল গাড়ি নির্মাতারাই চেষ্টা করছেন এমন নয়Ñ নিরাপত্তা সম্পর্কিত কোম্পানিগুলিও চোর ঠেকাতে অথবা অন্তত তাদের সনাক্ত করতে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে।
রাভেন কানেক্টেড নামের কোম্পানি একটি ভিডিও টেলিম্যাটিকস ডিভাইস তৈরি করেছে যেটি গাড়ির অভ্যন্তরীণ কমপিউটারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ডিভাইসটি যখন কোনও নড়াচড়া টের পায় তখনই গাড়ির ড্যাসবোর্ডে বসানো একটি ক্যামেরা ছবি ও ভিডিও রেকর্ড করতে এবং গাড়ির ব্যবহারকারীর সেল ফোনের অ্যাপ্লিকেশনে পাঠাতে শুরু করে।
এটি জিএসপির সঙ্কেতও পাঠাতে থাকে যাতে ব্যবহারকারী গাড়িটি অনুসরণ করতে পারেন।
র্যাভেন কানেক্টেড-এর ব্যবসায় উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক ট্রাভিস গ্রে বলেন, “গাড়ির সামনে ও কেবিনের ভেতরে ক্যামেরার রিয়েল টাইম দৃশ্যমানতা সত্যিই বড় ধরণের পার্থক্য সৃষ্টি করে।”
তিনি বলেন, তার কিছু ক্লায়েন্টের গাড়ি চুরি যাওয়ার পর এই ডিভাইসের মাধ্যমে তারা গাড়ি ট্র্যাক করতে, ভিডিও ধারণ করতে এবং ছবি তুলতে পেরেছেন, যা স্থানীয় পুলিশকে দেয়া হয়। ফলে পুলিশ চোরদের পাকড়াও করে বিচারের মুখোমুখি করতে সক্ষম হয়।
গাড়ি নিরাপদ রাখার জন্য পুলিশের কিছু পরামর্শ আছে। এর মধ্যে রয়েছে:
– স্টিয়ারিং হুইল লক করা অথবা ইঞ্জিন বন্ধের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বসানো।
– পার্ক করা অবস্থায় গাড়ির VIN নম্বর ঢেকে দেয়া বা ব্লক করে দেয়া।
– গাড়ির চাবি বাসার দরজা বা জানালা থেকে দূরে কোথাও রাখা।
– আরেকটি গাড়ি থাকলে সেটি চুরির সম্ভাবনা যে গাড়ির বেশি সেটির পেছনে পার্ক করা।
হাচিনসন বলেন, গাড়ি যাতে চুরি না হয় তা নিশ্চিত করতে চালকেরা এতকিছু করবেন বলে তার মনে হয় না।
নতুন গাড়ি কিনতে গিয়ে তিনি এমন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেন যেটি ইকুইটির সবচেয়ে বেশি চুরি হওয়া ১০টি গাড়ির তালিকায় নেই। ইকুইটি হলো বীমা জালিয়াতির বিরোধী একটি অলাভজনক সংগঠন।
সবচেয়ে বেশি চুরি যাওয়া গাড়ির মধ্যে কয়েকটি হলো হোন্ডা সিআর-ভি, লেক্সাস আরএক্স সিরিজ এবং ফোর্ড এফ ১৫০ সিরিজের গাড়ি।
তিনি বলেন, “এটা ভয়ের ব্যাপার কারণ মানুষ তার অনেক কঠোর শ্রম ও কষ্টার্জিত অর্থ গাড়ির পেছনে বিনিয়োগ করে।”
“আমি বুঝি না, কেন লোকেরা চোরদের নিশানার গাড়ি বলে চিহ্নিত গাড়ি কেনেন।” – সূত্র সিবিসি নিউজ