পরিবারের পুনর্মিলন সহজ করতে কানাডা অভিবাসন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত পাল্টাচ্ছে
বাবা-মা এবং দাদা-দাদির জন্য প্রযোজ্য সুপার ভিসার আওতায় কানাডায় আসা লোকেরা এখন চিকিৎসা বীমার অর্থ মাসে মাসে পরিশোধ করতে পারবেন
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ : কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিষয়ক দফতর (আইআরসিসি) সুপার ভিসায় এদেশে আসা লোকেদের চিকিৎসা বীমার অর্থ পরিশোধের নতুন নিয়ম ঘোষণা করায় কানাডায় বাস করতে ইচ্ছুক হাজার হাজার বিদেশি নাগরিক উৎফুল্ল হয়েছেন। খবর সর্বমিত সিংহ – সিবিসি নিউজ।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সুপার ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় দেশের পারমানেন্ট রেসিডেন্ট ও নাগরিকদেরকে তাদের অনাবাসী বাবা-মা ও দাদা-দাদীকে নিয়ে আসার অনুমতি দেয় যারা একটানা পাঁচ বছর এদেশে অবস্থান করতে পারবেন।
তবে তা করতে হলে তাদেরকে বার্ষিক চিকিৎসা বীমার টাকা আগাম পরিশোধ করতে হতো, যা অনেকসময় বেশিরভাগ লোকের জন্যই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই অর্থ বীমাকারীর বয়স ও কভারেজের ওপর ভিত্তি করে কমবেশি হতে পারে তবে ৬৫ বছরের কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে সচরাচর এটি ছিল গড়ে দেড় হাজার ডলার। আর আবেদনকারীর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থের পরিমাণও বাড়ে।
আবেদনকারীরা আগে মাসিক কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারতেন, কিন্তু গত আগস্টে সে নিয়ম পাল্টে বছরের পুরো টাকা আগাম পরিশোধের নিয়ম করা হয়।
এতে দ্রুতই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যার মধ্যে ছিল অনলাইনে একটি আবেদন যাতে যুক্তি দেখানো হয় যে, নতুন এই ব্যবস্থা পুনর্মিলনে ইচ্ছুক পরিবারগুলোর জন্য শাস্তিমূলক। এই ব্যবস্থায় আবেদন মঞ্জুরের পরিমাণও ছিল স্বল্প।
তবে চলতি সপ্তাহে অভিবাসন দফতর নিশ্চিত করেছে যে, তাদের ওই সিদ্ধান্ত পাল্টানো হচ্ছে এবং পরিবারগুলি আবারও মাসিক ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। আবেদনকারী এবং একইসঙ্গে বীমা ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপ সাদরে গ্রহণ করে বলেছেন, এটি পরিবারগুলোর পুনর্মিলনের পথ সহজ করবে।
বহু প্রজন্মের পরিবারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার
বৃটিশ কলম্বিয়ার Surrey-তে বসবাসকারী অমৃতপাল সিংয়ের জন্য এটি ছিল স্বস্তিকর।
তিনি ভারতে বসবাসকারী তার বাবা-মাকে আগামী গ্রীষ্মে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চান।
তিনি বলেন, প্রত্যেকের জন্য পুরো বছরের চিকিৎসা বীমার অর্থ পরিশোধ করা ছিল ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তিনি কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের নতুন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানান।
পাঞ্জাবি ভাষায় নেয়া এক সাক্ষাৎকারে অমৃতপাল বলেন, “বাবা-মাকে কানাডায় আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে আমি অত্যন্ত উত্তেজিত। তারা আমার সঙ্গে কানাডা ঘুরে দেখতে পারবেন আর আমি তাদের উপস্থিতিতে আবেগগতভাবেই উপকৃত হবো।”
Surrey’র একজন অভিবাসন বিষয়ক কনসালট্যান্ট রাঘবীর সিং ভারোয়াল বলেন, সুপার ভিসা পরিবারগুলোর পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কিন্তু, তিনি বলেন, এজন্যে যে বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হতো সেজন্যে অনেক পরিবার সুপারি ভিসার আবেদন করা থেকে বিরত থাকে।
তিনি পাঞ্জাবি ভাষায় নেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী মানুষের প্রবণতা হলো একসঙ্গে থাকা। এই প্রোগ্রাম তাদেরকে কানাডায় পুনর্মিলনের সুযোগ করে দিচ্ছে। এখন আরও বেশি মানুষ এই ভিসার জন্য আবেদন করবে।”
Surrey’র একজন বীমা উপদেষ্টা জসকরন সিং বেনিপাল বলেন, অর্থ পরিশোধের নিয়ম শিথিল করার কথা জেনে এরই মধ্যে অনেক মানুষ তার কাছে অবেদনের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
“বিধি পাল্টানোর পর আমার অনেক ক্লায়েন্ট মত পরিবর্তন করেছেন। কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে পারার করণে এখন তারা বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে কানাডায় আমন্ত্রণ জানানোর আবেদন করতে পারবেন।”
এক ই-মেল বার্তায় আইআরসিসির মুখপাত্র বলেন, পরিবারগুলোর পুনর্মিলনের গুরুত্ব মেনে নিয়েই নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতি বছর ১৭ হাজারের মত সুপার ভিসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা হয়।