কানাডা উচ্চশিক্ষিত অভিবাসীদের জন্য যথেষ্ট কিছু করছে না: স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা
গবেষকরা বলেন, পছন্দের পেশা ফিরে পাবার চেষ্টায় অনেকেই বাধার মুখে পড়ছেন
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ০১ ডিসেম্বর ২০২২ : উচ্চ শিক্ষিত অভিবাসীদের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহের কারণে কানাডা জি-৭ এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারছে। কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী ওই অভিবাসীদের কারণেই কানাডার কর্মক্ষম জনশক্তির হার জি-৭-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ (৫৭.৫ শতাংশ)। এগুলো গত ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার আদমশুমারির তথ্য।
তারপরও সংস্থাটি বলছে, কানাডা তার “মেধাবি জনশক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুফল তুলছে না।” মেধাবী অভিবাসীরা এদেশে আসার পর কানাডার বাইরের দেশে নেয়া তাদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কানাডা।
স্ট্যাটক্যান বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১৩ লাখের বেশি নতুন অভিবাসী কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। এই সংখ্যা কানাডায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। খবর জেসিকা উং/সিবিসি সিবিসি নিউজ।
‘আমাদের আরও ভালো কিছু করতে হবে’
উচ্চশিক্ষা বিষয়ক গবেষক এবং টরন্টোর ইউনিভার্সিটি হেল্থ নেটওয়ার্কের মিশেনার ইন্সটিটিউট অব এজুকেশনের প্রিন্সিপাল হার্ভে ওয়েইনগার্টেন বলেন, স্ট্যাটক্যানের সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, কানাডায় উচ্চশিক্ষিত শ্রমশক্তি আসার প্রবণতা অব্যাহত আছে যা দেশের জন্য সুখবর।
তিনি অবশ্য বলেন, “অভিবাসীদের যোগ্যতার সনদের মূল্যায়ন” তাদের “স্বীকৃতি দেয়া ও পেশায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরও ভালো কিছু করতে হবে।”
“আমাদের কি গুণগত মানের বিষয়ে ভাবা দরকার? তাদের সনদের মূল্যায়নের বিষয়ে কি ভাবনা চিন্তা করা দরকার? অবশ্যই এট দরকারি।
তাদের দক্ষতা ও জ্ঞান যদি কানাডার মানের হয় তাহলে তাদের সনদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদেরকে কানাডায় কাজ করার স্বীকৃতিপত্র দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদেরকে যতটা সম্ভব বিশেষজ্ঞের দক্ষতা থাকতে হবে। যদি দেখা যায় তাদের কোনও দিকে ঘাটতি আছে তাহলে তাদেরকে কানাডার মানে তুলে আনতে বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি থাকতে হবে।”
কানাডায় শিক্ষিত অভিবাসীদের এই সমৃদ্ধ জনসংখ্যা “পরিকল্পিতভাবেই” করা হয়েছে। বলেন অন্টারিওর লন্ডনে অবস্থিত ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষা নীতি ও বৈশি^ক উন্নয়ন বিষয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর প্রাচী শ্রীবাস্তব।
তিনি বলেন, অভিবাসন নীতি পেশার ক্ষেত্রে উচ্চতর দক্ষতা অথবা প্রথাগত শিক্ষায় উচ্চ ডিগ্রিধারীদের অনুকূলে পাল্টে গেছে।
“প্রকৃত কূটাভাস এই জায়গায় যে, নিজের পেশাগত খাতে চাকরি খুঁজে পাওয়া সত্যিই খুব কঠিন। হ্যাঁ, প্রায়শ শোনা যায় এমন খাত হলো ডাক্তারী। নার্সদের ক্ষেত্রেও একই কথা। শিক্ষকদেরও।”
এটি কেবল কানাডার ক্ষেত্রেই সত্য এমন নয়। তিনি আরও যোগ করেন, ইউনেস্কোর বিচারে এটি একটি আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়।
জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ২০১৯ সালে একটি বিশ^ সম্মেলনের আয়োজন করে মাধ্যমিক-উত্তর লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে বা চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে চাচ্ছে তাদেরকে আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থনদানের জন্য তাদের যোগ্যতার স্বীকৃতি দেয়ার নীতিমালা গ্রহণ করে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্রিটেন ও জাপানসহ ১৭টি দেশ ওই নীতিমালা অনুসমর্থন করেছে। কানাডা করেনি।
শ্রীবাস্তব ইউনেস্কোর আরেকটি উদ্যোগের কথাও বলেন, সেটি হলো যোগ্যতাসম্পন্ন উদ্বাস্তু ও অন্যান্য বিপন্ন মানুষকে দেয়ার মত এক ধরণের পাসপোর্ট – যেটি থাকলে যে কোনও অ্যাক্রিডিটেশন দানকারী সংস্থা, মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং নীতিনির্ধারকরা ধরে নিতে পারেন যে, এসব অভিবাসী কানাডায় চাকরি পাবার যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টায় বছরের পর বছর পার করবে না।
তিনি বলেন, “এসব সুযোগ পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে না পারা আসলে ওইসব অভিবাসীর আত্ম-পরাজয়ের সামিল।”
গত ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার আদমশুমারির তথ্য যা তাদের ওয়েবসাইট থেকে নেয়া
একটি দেশ হিসাবে জীবনযাত্রার মান ধরে রাখা এবং একই সঙ্গে শ্রমবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের উচ্চশিক্ষিত শ্রমশক্তি দরকার। জি-৭-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কানাডারই আছে কলেজ বা বিশ^বিদ্যালয়ের সনদধারী জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ। উচ্চশিক্ষিত অভিবাসীদের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ এবং তরুণরা ডিগ্রি অর্জন করতে থাকায় স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের হার ক্রমশই বাড়ছে। অবশ্য, আমরা সম্ভবত বিদেশে শিক্ষালাভকারী কিছু মেধাবী শ্রমিককে স্বল্প ব্যবহার করার মাধ্যমে আমাদের মেধাশক্তির পুরো সুফল নিতে পারছি না।
জনসংখ্যার বড় অংশ অবসরের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় ওইসব সনদধারীদের কাজে লাগানো জরুরী। তার ওপর, কর্মসংস্থানের উচ্চহার, স্বল্পতম বেকারত্ব এবং রেকর্ড পরিমাণ চাকরি খালির এই সময়ে কানাডা শ্রমিক সঙ্কটের মুখে রয়েছে। অবসরের কারণে শূন্য হওয়া পদ পূরণে কানাডার যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত কর্মী আছে এটা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষিত জনগণকে কাজে লাগানোই মুখ্য উপায়।
শিক্ষাগত অর্জন চাকরির নিরাপত্তার সঙ্গেও জড়িত। আর কোভিড-১৯ মহামারি এ বিষয়ের ওপর নতুন আলো ফেলেছে। যারা উচ্চস্তরের শিক্ষাসম্পন্ন তারা মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কটকালে ভালোভাবে টিকে থাকতে পেরেছেন। এটি সম্ভব হয়েছে অংশত দূর থেকে কাজ করার (ঘরে বসে কাজ) সুবিধা আছে এমন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই বেশি।
শ্রমশক্তিসংক্রান্ত সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিলে প্রাথমিকভাবে যে বেকারত্বের জোয়ার শুরু হয় তা থেকে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিলো সেইসব লোকের যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। নিম্নস্তরের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০২১ সালের হেমন্তকাল পর্যন্ত মহামারির আগের পর্যায়ে ফেরেনি।
একই অবস্থা দেখা গেছে সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে থেকে কাজ করা বহুসংখ্যক স্বল্পশিক্ষিত কর্মীর ক্ষেত্রেও, যারা মহামারির প্রথম অভিঘাতের শাটডাউনের সময় কানাডাকে সচল রাখতে ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়, কারণ তারা কাজ করেন গ্রোসারি শপে, পেট্রোল পাম্পে, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং স্বাস্থ্য সহায়ক হিসাবে।
২০২১ সালের আদমশুমারির উপাত্ত ব্যবহার করে আজকের প্রকাশনায় কানাডায় শিক্ষার পরিবর্তনশীল চিত্র এবং এ দেশের শ্রমশক্তির বিবর্তনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হয়।
হাইলাইটস
কলেজ বা বিশ^বিদ্যালয়ের সনদধারী কর্মক্ষম জনশক্তির (২৫ থেকে ৬৪ বছর) হারের দিক থেকে কানাডা এখনও জি-৭-ভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে (৫৭.৫%)। এ ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে কানাডার শক্তিশালী কলেজ খাত: ২০২১ সালে কর্মক্ষম জনশক্তির প্রায় প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের (২৪.৬%) কলেজ স্তরের সনদ, ডিপ্লোমা বা অনুরূপ সনদ ছিলো, যা অন্য যে কোনও জি-৭ দেশের চেয়ে বেশি।
২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কর্মক্ষম জনশক্তিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী কর্মীর সংখ্যা প্রায় এক-পঞ্চমাংশ (+১৯.১%) বেড়েছে। এর চেয়েও বেশি বৃদ্ধি ঘটেছে স্বাস্থ্যসেবা (+২৪.১%) এবং কমপিউটার ও তথ্য বিজ্ঞান (+৪৬.৩%) খাতে।
এর বিপরীতে কর্মক্ষম বয়সের শিক্ষানবিস সনদধারীর সংখ্যা তিনটি প্রধান বাণিজ্যিক খাতে বেড়েছে অথবা কমেছেÑ নির্মাণ শিল্প (+০.৬%), কারিগরি ও মেরামত প্রযুক্তি (-৭.৮%) এবং প্রিসিশন প্রোডাকশন (কারিগরি কাজে সূক্ষè মান নিশ্চিত করার যন্ত্রপাতি বা কৌশল) (-১০.০%)। এটা ঘটেছে কারণ খুব কম সংখ্যক তরুণ কর্মীই দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর জন্মগ্রহণকারী যারা এখন অবসরে যাচ্ছেন তাদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে। এসব খাতের বাণিজ্যে, যেমন নির্মাণ ও ধাতব পণ্যসামগ্রী প্রস্তুত শিল্পে কর্মখালি ২০২২ সালে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এমনকি যারা বিদেশে শিক্ষাগ্রহণকারী যেসব অভিবাসীর স্বাস্থ্যসেবার মত বিপুল চাহিদাসম্পন্ন বিষয়ে যোগ্যতার সনদ আছে তাদেরও বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পেশাগত সামঞ্জস্যহীনতার শিকার: রেজিস্টার্ড নার্সিং বিষয়ে বিদেশের ডিগ্রি আছে এমন অভিবাসীদের মাত্র ৩৬.৫% এই পদে অথবা এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কোনও পেশায় চাকরি করেন। আর বিদেশ থেকে ডাক্তারি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এমন অভিবাসীদের মাত্র ৪১.১% ডাক্তার পদে চাকরি পেয়েছেন। অথচ কানাডায় নার্সিং বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা একই পদে চাকরি পান ৮৭.৪% এবং চিকিৎসাবিদ্যায় ডিগ্রিধারীরা নিজ পেশায় চাকরি পান ৯০.১%।
কানাডায় জন্মগ্রহণকারী তরুণের (২৪ থেকে ৩৪ বছর) সংখ্যাও বাড়ছে (২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বেড়েছে ২.৭ শতাংশের বেশি)। এদের মধ্যে আবার তরুণের চেয়ে তরুণীর হার বেশি। মেয়েদের সংখ্যা ৩.৩ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯.৭ শতাংশে। আর ছেলেদের সংখ্যা ২.২ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫.৭ শতাংশে। তবে, ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ছেলেদের বৃদ্ধির পরিমাণ ২০০৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ১০ বছরের বৃদ্ধির হারের প্রায় সমানই (+২.৩ শতাংশ)।
জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে কানাডারই আছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের বৃহত্তম অংশ
আগামী দিনে কানাডার জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চশিক্ষিত অভিবাসী এবং তরুণদের ক্রমবর্ধমান হারে কলেজ বা বিশ^বিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনের ফলে পাওয়া সুবিধার কারণে কানাডা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে শিক্ষাক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে।
২০২১ সালের আদমশুমারির নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্রকৃতপক্ষে, কানাডা ২০০৬ সাল থেকেই মাধ্যমিক-উত্তর স্নাতকদের সংখ্যায় জি-৭ এর শীর্ষে রয়েছে। কর্মক্ষম জনসংখ্যার (২৫ থেকে ৬৪ বছর) ৫৭.৫% ভাগেরই কলেজ বা বিশ^বিদ্যালয়ের সনদ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির উচ্চ অবস্থান পাবার মূলে রয়েছে কানাডার শক্তিশালী কলেজ ব্যবস্থা। উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে কানাডীয়দের সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষায় প্রতি চারজনে প্রায় একজনেরই (২৪.৬%) কলেজের সনদ বা ডিপ্লোমা অথবা অনুরূপ ক্রেডেন্সিয়াল রয়েছে, যা জি-৭ এর সব দেশের চেয়ে বেশি এবং যুক্তরাষ্ট্রের (১০.৮%) তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। স্নাতক বা উচ্চতর ডিগ্রিধারী জনসংখ্যার দিক থেকে কানাডা উত্তরণের মধ্যপর্যায়ে ছিল (৩২.৯%), যা ছিল যুক্তরাজ্য (৪১.৩%), যুক্তরাষ্ট্র (৩৯.৫%) এবং জাপানের (৩৪.২%) পর জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী জনসংখ্যায় কানাডা অন্য দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে আছে। কানাডার যেখানে আছে ৯.৩% (মাস্টার্স ৮.২% এবং ডক্টরেটধারী (১.১%), যেখানে জি-৭ দেশগুলোর হার ১৩% থেকে ১৫% পর্যন্ত।
কানাডার শিক্ষার স্তর বাড়াতে অভিবাসীরা সহায়ক, কিন্তু বিদেশি ডিগ্রিধারীদের উচ্চতর যোগ্যতার ফাঁদে পড়তে হয় কানাডার ডিগ্রিধারী জনসংখ্যা বাড়াতে অভিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। উচ্চশিক্ষিত অভিাসীদের মেধা কাজে লাগানো কানাডার জীবনযাত্রার মান ধরে রাখা এবং জনগোষ্ঠীর বয়বৃদ্ধ হয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণের মূল চাবিকাঠি।
কানাডায় মোট জনসংখ্যায় অভিবাসীর অংশ জি-৭ এর অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে বেশি। আর ২০২১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা (২০১৬ থেকে ২০২১) আগের যে কোনও শুমারির তুলনায় সর্বোচ্চ। সেইসাথে সাম্প্রতিক সময়ে আসা অভিবাসীরা আগের যে কোনও সময়ে আসা অভিবাসীদের চেয়েও উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত যদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ছয় জনই স্নাতক বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী।
এই উচ্চতর শিক্ষাস্তর সেইসঙ্গে কানাডীয় কর্মঅভিজ্ঞতার উচ্চ হার সাম্প্রতিক অভিবাসীদের শ্রমবাজারের ফলাফলে অবদান রেখেছে। শ্রম বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২১ সালের সাম্প্রতিক অভিবাসীদের (যারা ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এসেছেন) শিল্প-কারখানায় গড় কর্মঘণ্টার চেয়েও অতিরিক্ত মজুরিতে বেশি সময় কাজ করার সম্ভাবনা ২০১৬ সালের মধ্যে আসা (যারা ২০১১ থেকে২০১৬ সালের মধ্যে এসেছেন) অভিবাসীদের তুলনায় বেশি। তারপরও বিদেশি অ্যাক্রিডিটেশন নিয়ে আসা (কানাডার বাইরে থেক ডিগ্রি নেয়া) অভিবাসীরা কানাডায় তাদের দক্ষতা প্রয়োগে বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন। বিদেশি ডিগ্রিধারী সব অভিবাসীর এক-চতুর্থাংশেরও বেশি (২৫.৮%) অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছেন, কারণ সেটি এমন সব কাজের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বলে সংজ্ঞায়িত করা হয় যেখানে সচরাচর হাইস্কুল পাশ বা তার চেয়েও কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোক হলেই চলে।
বিদেশি ডিগ্রিধারী অভিবাসীদের অতিরিক্ত যোগ্যতা একটি দীর্ঘদিনের ইস্যু। বিদেশি ডিগ্রিধারী অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালে স্নাতক বা উচ্চতর ডিগ্রিধারী অভিবাসীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৩.৮%) তদের ডিগ্রি নিয়েছেন কানাডার বাইরে থেকে।
এমনকি উচ্চতর চাহিদা আছে এমন বিষয়ে, যেমন রেজিস্টার্ড নার্সিং বা চিকিৎসা শাস্ত্রে বিদেশি ডিগ্রিধারী অভিবাসীরাও পেশার সঙ্গে মিল রেখে চাকরি পাচ্ছেন না। দৃষ্টান্তস্বরূপ, রেজিস্টার্ড নার্সিংয়ে স্নাতক বা উচ্চতর বিদেশি ডিগ্রিধারী অভিবাসীদের ৩৬.৫% তাদের যোগ্য পদে অথবা তার বিষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত কোনও পেশায় যেমন, নার্সিং সুপারভাইজার বা হেল্থ কেয়ার ম্যানেজারের পেশায় কাজ করছেন। আর বিদেশ থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি নিয়ে আসা মাত্র ৪১.১% অভিবাসী ডাক্তার পদে চাকরি পেয়েছেন। এর বিপরীতে, কানাডায় নার্সিং বা মেডিক্যালে ডিগ্রি নেয়া লোকেদের ১০ জনের মধ্যে নয় জনই নার্সিংয়ে (৮৭.৪%) এবং ডাক্তারের পদে (৯০.১%) চাকরি পেয়েছেন।
অভিবাসীরা তাদের নিজের পেশায় চাকরি পেতে ক্রেডেন্সিয়ালের স্বীকৃতি এবং দাপ্তরিক ভাষায় দক্ষতার মত যেসব বাধার মুখে পড়তে পারেন আদমশুমারিতে সেটা সরাসরি জানানো না হলেও, শুমারির ফলাফলে দেখানো হয় যে, বিদেশি ডিগ্রিধারী অভিবাসীরা কানাডায় ডিগ্রি নেয়া লোকেদের মত একই হারে নিজের পেশায় চাকরি পেলে কর্মক্ষম বয়সের রেজিস্টার্ড নার্স এবং এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত পেশায় কর্মজীবীর সম্ভাব্য সংখ্যা ২৭,৩৫০ এবং চিকিৎসকের সংখ্যা ১৫,৭৩০ জন বাড়তে পারে।
উচ্চতর চাহিদা থাকার পরও নিজের পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কাজে উচ্চ হারে নিয়োজিত রয়েছেন এমন একটি গ্রুপ হলো কমপিউটার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া নারীরা। অভিবাসী এবং কানাডায় জন্মগ্রহণকারী উভয় শ্রেণীর নারীর ক্ষেত্রেই এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। কমপিউটার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়ে মাধ্যমিক-উত্তর সনদ অর্জনকারী ২০২০ বা ২০২১ সালে কর্মরত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (ঝঞঊগ) পেশার নারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশেরও (৩১.৫%) কম সংখ্যক গণিত, কমপিউটার এবং তথ্যবিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট চাকরি পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে একই পেশার পুরুষদের অর্ধেক সংখ্যক (৫০.১%) নিজের পেশায় চাকরি পেয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী শিক্ষা খাতের শ্রমশক্তিতে অবদান রাখছে
স্টাডি পারমিট প্রাপ্তদের তথ্যের ভিত্তিতে কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব দপ্তরের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে, ২০১৫ সালে যেটি ছিল আনুমানিক সাড়ে তিন লাখ সেটি ২০২১ সালে বেড়ে আনুমানিক ছয় লাখ ২০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা সাধারণত কানাডায় অভিবাসন নেয় এবং শিক্ষা খাতের শ্রমশক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা কলেজ বা মাস্টার্সের ডিগ্রি অর্জন করেন তাদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যক এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারীদের অর্ধেক শিক্ষা সমাপনর পাঁচ বচরের মধ্যে কানাডার পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হয়ে যান।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থ আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসও বটে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, হিসাব করে দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি থেকে আসা আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। এতে করে ২০১৮-২০১৮ বর্ষে কানাডার বিশ^বিদ্যালয়গুলির বার্ষিক রাজস্ব আয় হয় অন্তত ৪০০ কোটি ডলার।
নির্দিষ্ট করে বললে, কানাডার কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ে বর্ধিত সংখ্যায় পড়তে আসছে ভারতের শিক্ষার্থীরা। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কানাডার কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর শীর্ষ উৎস দেশ ছিল ভারত। কলেজের ৬৬.৮% এবং বিশ^বিদ্যালয়ের ২১.৩% আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ছিল ভারতীয়। ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল আরও অনেক বেশি। সে সময় কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয় উভয় ধরণের প্রতিষ্ঠানেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয়র সংখ্যা ছিল ৫% বা তার কিছু কম।