কানাডা তার মেধাবি অভিবাসী জনশক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুফল তুলতে পারছে না : প্রয়োজন মনোভাব পাল্টানো

কানাডা তার মেধাবি অভিবাসী জনশক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুফল তুলছে না। মেধাবী অভিবাসীরা এখানে আসার পর অন্য দেশ থেকে নিয়ে আসা তাঁদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কানাডা। স্ট্যাটিসটিকস কানাডা সম্প্রতি এই তথ্য তুলে ধরেছে।

উচ্চশিক্ষা বিষয়ক গবেষক এবং টরন্টোর ইউনিভার্সিটি হেল্থ নেটওয়ার্কের মিশেনার ইন্সটিটিউট অব এডুকেশনের প্রিন্সিপাল হার্ভে ওয়েইনগার্টেন বলেন, স্ট্যাটিসটিকস কানাডার সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, কানাডায় উচ্চশিক্ষিত শ্রমশক্তি আসার প্রবণতা অব্যাহত আছে যা দেশের জন্য সুখবর। তবে তিনি এ কথাও বলেন, ‘অভিবাসীদের যোগ্যতার সনদের মূল্যায়ন’ তাদের ‘স্বীকৃতি দেয়া ও পেশায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরও ভালো কিছু করতে হবে।’

স্ট্যাটিসটিকস কানাডা আরো জানায়, জনসংখ্যার বড় অংশ অবসরের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ায় ওইসব সনদধারীদের কাজে লাগানো জরুরী। তার ওপর, কর্মসংস্থানের উচ্চহার, স্বল্পতম বেকারত্ব এবং রেকর্ড পরিমাণ চাকরি খালির এই সময়ে কানাডা শ্রমিক সঙ্কটের মুখে রয়েছে। অবসরের কারণে শূন্য হওয়া পদ পূরণে কানাডার যথেষ্ট সংখ্যক প্রশিক্ষিত কর্মী আছে এটা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চশিক্ষিত জনগণকে কাজে লাগানোই মুখ্য উপায়।

মেধাবী অভিবাসীদের অনেকেই কম মজুরীর পেশায় যোগ দেন। ছবি: লার্স হ্যাগবার্গ /কানাডিয়ান প্রেস

উল্লেখ্য যে, কানাডায় মোট জনসংখ্যায় অভিবাসীর অংশ জি-৭ এর অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে বেশি। আর ২০২১ এর আদমশুমারি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা (২০১৬ থেকে ২০২১) আগের যে কোনও শুমারির তুলনায় সর্বোচ্চ। সেইসাথে সাম্প্রতিক সময়ে আসা অভিবাসীরা আগের যে কোনও সময়ে আসা অভিবাসীদের চেয়েও উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত যদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ছয় জনই স্নাতক বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী।

আমরা জানি কানাডার ডিগ্রিধারী জনসংখ্যা বাড়াতে অভিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। উচ্চশিক্ষিত অভিাসীদের মেধা কাজে লাগানো কানাডার জীবনযাত্রার মান ধরে রাখা এবং জনগোষ্ঠীর বয়বৃদ্ধ হয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্যি যে, মেধাবী এই অভিবাসীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুফল তুলতে পারছে না কানাডা।

এর অন্যতম কারণ হলো, কানাডার শ্রমবাজারে কাজের সন্ধানে নামা দক্ষ অভিবাসীগণ নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাদের ভাষাগত দক্ষতা নেই, কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা নেই, কানাডিয়ান ডিগ্রি নেই, কানাডিয়ান সংস্কৃতি সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই এরকম কিছু অভিযোগ তুলে তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে। যে সকল আবেদনকারীর নাম দেখে অনুমান করা যায় তার জন্ম এশিয়া বা আফ্রিকায় অর্থাৎ অ-ইউরোপীয়, সেগুলোর ব্যাপারে চাকরীদাতাদের আগ্রহ থাকেন না। শুরুতেই তারা অনুমানের উপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে যান যে, এই আবেদনকারীর যোগ্যতার অভাব রয়েছে। সুতরাং তাকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। নিয়োগ দিতে গেলে বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হবে। তাকে নতুন করে ট্রেনিং দিতে হবে। আবেদনকারীর ভাষা দুর্বল হওয়াতে তার সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা যাবে না- ইত্যাদি।

বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই দক্ষ অভিবাসীদের জন্য বিব্রতকর এবং এটি তাদের মধ্যে হতাশা ও দুর্ভাবনা সৃষ্টি করছে। কিছু সংখ্যক দক্ষ অভিবাসী যদিও ভাগ্যগুণে চাকরী পেয়ে যান, তাদের মজুরী থাকে কানাডিয়ান সমদক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মীদের তুলনায় কম। বলা যায় বেশ কম। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, সম্প্রতি আসা অভিবাসীরা কানাডায় জন্মগ্রহণকারী তাদের সমবয়সী চাকরিপ্রার্থীদের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যায় বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন। একই মানের ডিগ্রি নিয়েও অভিবাসীরা একই বয়সের স্থানীয়দের চেয়ে ৪৮ শতাংশ কম বেতন পাচ্ছেন।

কানাডায় অভিবাসীদের প্রতি এই মনোভাব পাল্টানো এখন খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। নয়তো এদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুফল কখনোই তুলে আনতে পারবে না কানাডা। মেধার অপচয় রোধ এবং কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু যা নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখতে হবে।