টরন্টোর প্রায় ২০ ভাগ পারিবারিক চিকিৎসক আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্র্যাকটিস বন্ধের কথা ভাবছেন
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, টরন্টোর প্রায় ২০ ভাগ পারিবারিক চিকিৎসক আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছেন। খবর সিন লিথং/সিটিভি নিউজ।
জনৈক স্টর্ম সোরিচেট্টি তার পাঁচ বছরের মেয়ে ইসাবেলাকে কোলে নিয়ে বলেন, “আমি খোঁজাখুজি করেছি, একজন পারিবারিক চিকিৎসক পাওয়া প্রায় অসম্ভব।”
অন্টারিওর যে ১৮ লাখ মানুষের পারিবারিক চিকিৎসক নেই সোরিচেট্টি ও তার মেয়ে হলেন তাদের অন্যতম। পারিবারিক চিকিৎসকের পরিবর্তে তারা চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসাকেন্দ্রে (ওয়াক-ইন ক্লিনিক) যান।
তিনি বলেন, “এটা খুবই হতাশাব্যঞ্জক।”
পারিবারিক চিকিৎসকদের নিয়ে ২০২১ সালের এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ‘কানাডিয়ান ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান’ সাময়িকীতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, “১৭.৫% (সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের) পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের বর্তমান ব্যবসা বা প্র্যাকটিস বন্ধের পরিকল্পনা করছেন।”
সমীক্ষার প্রধান লেখক ও পারিবারিক চিকিৎসক ডা. তারা কিরণ বলেন, “পারিবারিক চিকিৎসকের বাড়তি ঘাটতির বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের প্রস্তুতি নেয়ার এবং নিয়োগ ও ধরে রাখার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব সহায়ক উপাদান রয়েছে সেগুলি ভালোভাবে বোঝার দরকার আছে।”
প্র্যাকটিস বন্ধ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের পুরুষ ডাক্তারদের যারা নিজের পরিবারেরও চিকিৎসা করেন। অনেকেই আগেভাবে অবসরে যাবেন কিন্তু তাদের শূন্যস্থান পূরণের মত তরুণ স্নাতক কম।
কিরণ বলেন, “কেউ যদি অবসরের সময় হবার এমনকি দুই বছর বা পাঁচ বছর আগেই অবসর নিতে চান তাহলে এটি স্বাস্থ্যসেবা খাতের শ্রমশক্তির ওপর ব্যাপকভিত্তিক বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর ফলে জনগণের ওপরও প্রভাব ফেলবে যাদের সত্যিই পারিবারিক চিকিৎসকের দরকার আছে।”
ডাক্তাররা কেন প্র্যাকটিস বন্ধের কথা ভাবছেন সে বিষয়ে সমীক্ষায় আলোকপাত করা হয়নি তবে অন্টারিও মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (OMA) আরেকটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, মহামারি যে ক্ষত সৃষ্টি করেছে এক্ষেত্রে সেটির ভূমিকা থাকতে পারে।
ওএমএ প্রেসিডেন্ট ডা. রোজ জাচারিয়াস বলেন, ২০২১ সালের সমীক্ষায় “অন্টারিওর ৭৪ শতাংশেরও বেশি ডাক্তার বলেন, তারা ভষ্মস্তূপের মত অবস্থানে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।”
জাচারিয়াস বলেন, মান্ধাতার আমলের বেতন ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাজ একটি বড় বাধা এবং ফ্যামিলি মেডিসিনে ডিগ্রি নেয়া খুব কম সংখ্যক চিকিৎসকই নিজের প্র্যাকটিস শুরু করতে চান তার কারণ সম্ভবত এটাই।
তিনি বলেন, “প্রত্যেক পারিবারিক চিকিৎসককে এক ঘণ্টা সরাসরি রোগী দেখার পর মেডিক্যাল চার্টে সেসব উপাত্ত ইনপুট দেয়ার জন্য দুই ঘণ্টা কমপিউটারে কাজ করতে হয়।”
তার মতে কিছু পারিবারিক চিকিৎসক বলেন, প্রশাসনিক কাজ তার দিনের বেশিরভাগ সময় নিয়ে নেয়। তিনি বলেন, “আমি এমন কিছু ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি যারা বলেন, তাদের নিজেকে ডাক্তারের চেয়ে বরং ডাটা অ্যানালিস্ট বলেই বেশি মনে হয়।”
যেসব পারিবারিক চিকিৎসক নিজস্ব ক্লিনিক চালান মহামারি বিশেষত তাদের ওপর কঠোর প্রভাব ফেলেছে।
ওএমএ বলেছে, দুইভাবে সরকার চলমান প্রবণতা ঘুরিয়ে দিতে পারে, প্রথমত আন্তর্জাতিক বিশে^র ডাক্তারদের এদেশে কাজ করার ওপর বাধা কমিয়ে এবং দ্বিতীয়ত এখানকার বিদ্যমান বেতনভাতা সম্পর্কিত কাঠামো সংস্কার করে।