কুইবেকের হিজাবধারী মহিলারা শীঘ্রই সরকারের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না
খুরশিদ আলম
কুইবেকের বিতর্কিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা আইন’ নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর আপিল কোর্টে দুই পক্ষের বাদানুবাদ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। অভিযোগ রয়েছে এই আইনটি অন্যায়ভাবে প্রভিন্সের মুসলিম নারীদেরকে টার্গেট করে করা হয়েছে। আইনটি (বিল-২১) ২০১৯ সালে কুইবেকের পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর স্থানীয় মুসলিম নারীদের প্রতি চরম মাত্রায় বৈষম্য ও হয়রানি বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে।
ধর্মনিরপেক্ষাতার এই আইনে বলা আছে কুইবেক প্রভিন্সে সরকারী চাকরিজীবীরা বিশেষত যাঁরা কর্তৃত্বের অবস্থানে আছেন তাঁরা কর্মস্থলে কোন ধর্মীয় পোষাক বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। এঁদের মধ্যে আছেন শিক্ষক, বিচারক, পুলিশ বাহিনীর সদস্য প্রমুখ। আর পোষাকের মধ্যে আছে হিজাব, বোরখা, পাগড়ী ইত্যাদি।
বিতর্কিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা আইন’টি ২০১৯ সালে পাস হলেও গত বছর ডিসেম্বরে এর বিরুদ্ধে নতুন করে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। প্রতিবাদ শুরু হওয়ার পিছনে তখন কাজ করছিল কুইবেকের ‘চেলসি’তে অবস্থিত একটি এলিমেন্টারী স্কুলে ঘটে যাওয়া এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঐ স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের পড়াতেন ফাতেমা আনোয়ারী নামের এক মুসলিম নারী। ধর্মবিশ্বাসের কারণে তিনি মাথায় হিজাব পরতেন। আর এই হিজাব নিয়েই শুরু হয় সমস্যা। গত বছর ৩ ডিসেম্বর স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, হিজাব পরে তিনি স্কুলে ক্লাস নিতে পারবেন না। পরে তাঁকে ক্লাসরূম থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়। এরপরই ঐ স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিবাকদের একটি অংশের মধ্যে শুরু হয় ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া থেকে বিক্ষোভ। মন্ট্রিয়লের ডাউন টাউনে আয়োজন করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশের। এতে অংশ নেন অন্যান্য শিক্ষকরাও। তাঁরা বিতর্কিত এই ধর্মনিরপেক্ষতার আইন বাতিলের জোর দাবী জানান।
ঐ সময় কুইবেকের বিতর্কিত ‘ধর্মনিরপেক্ষতা আইন’ বাতিলের দাবীর পক্ষে আরো যোগ দিয়েছিলেন টরন্টোর মেয়র জন টরি, ব্র্যাম্পটনের মেয়র প্যাট্রিক ব্রাউন, মিসিসাগার মেয়র বনি ক্রম্বি, ক্যালগারীর মেয়র জ্যোতি গোন্দেক এবং লন্ডন অন্টারিও’র তৎকালীন মেয়র এডউইন অ্যান্টনি হোল্ডার। ধর্মনিরপেক্ষতার আইন বাতিলে আইনী সহায়তা করার জন্য আর্থিক অনুদানের কথাও ঘোষণা করেছিলেন ঐ মেয়রগণ।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং প্রধান বিরোধী দল কনজার্ভেটিভ পার্টি অব কানাডা’র তৎকালীন নেতা এরিন ও’টুল-ও কুইবেকের ধর্মনিরপেক্ষতার আইন বাতিলের বিষয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁরা অবশ্য সরাসরি আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে কথা বলেননি। তবে উভয় নেতাই বলেছিলেন তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে কুইবেকের এই ধর্মনিরপেক্ষতার আইনটি পছন্দ করছেন না। এই আইনটি বাতিল হোক এটাই তাঁরা চান।
কিন্তু আইনটি এখনো বাতিল হয়নি। কবে হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। গত ১৬ নভেম্বর আপিল কোর্টে আইনটির পক্ষে ও বিপক্ষে বাদানুবাদ শেষ হয়েছে। আপিল কোর্টের বিচারকগণ এখন দুই পক্ষের উত্থাপিত বক্তব্য ও যুক্তিগুলো বিচার বিবেচনা করে একটি সিদ্ধান্ত দিবেন আইনটি রাখা হবে না বাতিল করা হবে। অথবা এর কোন ধারা সংশোধন করা হবে কিনা। বিচারকদের সিদ্ধান্ত আসতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
সিবিসি নিউজের এক খবরে বলা হয়, তার আগে গত ৮ নভেম্বর আপিল কোর্টে আইনটির পক্ষে বিপক্ষে বাদানুবাদ চলা কালে ‘ইংলিশ মন্ট্রিয়ল স্কুল বোর্ড’ এর আইনজীবী পেরী রেভন যুক্তি দিয়ে বলেন, বিল ২১ পার্লামেন্টে পাস করানো হয়েছিল বিশেষ একটি গোষ্ঠিকে লক্ষ্য করে যারা হিজাব পরেন। রেভন আরো বলেন, ‘ইংলিশ মন্ট্রিয়ল স্কুল বোর্ড’ এ ৮ জন মহিলা চাকরী হারিয়েছেন বা চাকরীতে প্রবেশের সুযোগ পাননি এই বিল -২১ এর কারণে। আর এরা সবাই মুসলিম নারী। রেভন তার যুক্তিতর্ক উত্থাপনের সময় আরো বলেন, মুসলিম নারী ছাড়া কুইবেকের অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে অন্য কোন ব্যক্তিকে এই আইনের কারণে চাকরী হারাতে হয়নি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিল-২১ এর কারণে কারা চাকরী হারাচ্ছেন? কোন প্রতীক নেতিবাচক দৃষ্টি আকর্ষণ করছে? সেটি হলো হিজাব।
সিবিসি জানায়, ‘কুইবেক কমিউনিটি গ্রুপস নেটওয়ার্ক’ এবং ‘কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন’ এর পক্ষ হয়ে কাজ করা আইনজীবী জুলিয়াস গ্রে-ও এই অভিমতের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই আইনের কেন্দ্রবিন্দু এবং সরকারের প্রধান লক্ষবস্তুই হলো হিজাব।
কুইবেকের সুপরিচিত মহিলা সংগঠন Fédération des Femmes du Québec এর আইনজীবীসহ পেরী রেভন এবং জুলিয়াস গ্রে আদালতে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা আইন’ তথা বিল -২১ বাতিল করা উচিৎ। কারণ এটি স্পষ্ট যে, এই আইন লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য সৃষ্টি করে।
কিন্তু কুইবেকের সরকার পক্ষের আইনজীবী Amélie Pelletier-Desrosiers এই যুক্তি বা বক্তব্য মানতে রাজী নন। তিনি বলেন, অধিকাংশ শিক্ষকই নারী। তাই এই আইন যদি পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশী প্রভাবিত করে তবে সেটা বৈষম্যমূলক আইন হতে পারে না।
পাশাপাশি কুইবেকের একটি নারীবাদী সংগঠন Droits des femmes du Québec এর আইনজীবী ক্রিশ্চিয়ান পেলচ্যাট যুক্তি দেখান যে, লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করার পরিবর্তে এই আইনটি আসলে এই ধরণের বৈষম্য থেকে নারীদের সুরক্ষা দেয়।
সিবিসি আরো জানায় ধর্মনিরপেক্ষ একটি গ্রুপ Mouvement Laïque Québécois এর এক আইনজীবী লুক অ্যারারি দাবী করেন বিল-২১ কুইবেকে ধর্মের স্বাধীনতাকে রক্ষা করে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি পিতা-মাতার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে তাঁদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী নিজ সন্তানকে নিজ ধর্মীয় বিশ্বাসে দীক্ষিত করার। এবং এই ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার।
তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষকের আচার-আচরণ শিক্ষার্থীদের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এই কারণে কোন শিক্ষক যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন ধর্মীয় পোষাক পরেন তবে তা শিক্ষার্থীদের মনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এবং এই পরিস্থিতি ধর্মের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের পিতামাতার সাংবিধানিক অধিকারকে লংঘিত করতে পারে।
আসলে কুইবেকের এই বিল-২১ বা ধর্মনিরপেক্ষার আইনটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় সেই গোড়া থেকেই যখন তা পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয়েছিল। বিলটির খসড়া পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর থেকে স্থানীয় মুসলিম নারীদের প্রতি চরম মাত্রায় বৈষম্য ও হয়রানি বৃদ্ধি পায় বলে অভিযোগ করেছিলেন মন্ট্রিয়লের ওমেন এ্যাডভোকেসী গ্রুপ ‘Justice Femme’। এই গ্রুপটি মহিলাদেরকে আইনি ও মানসিক সহায়তা দিয়ে থাকে। অভিযোগের মধ্যে আছে আক্রমনাত্মক মন্তব্য থেকে শুরু করে শারীরিক সহিংসতাও। সিবিসি নিউজের এক খবর থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।
‘Justice Femme’ এর প্রেসিডেন্ট হানাদী সাদ ঐ সময় এক প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ করেছিলেন, সম্প্রতি কুইবেকে দুই মুসলিম মহিলা ডে কেয়ার এডুকেশন সেন্টারে চাকরীর ইন্টারভিও দিতে গেলে তাদেরকে বলা হয়, চাকরী পেলে তাঁদেরকে হিজাব পরিধান থেকে বিরত থাকতে হবে কর্মস্থলে।
হানাদী সাদ বলেছিলেন, আইনটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর থেকে তাদের সংস্থা ‘Justice Femme’ বৈষম্য ও হয়রানির বিষয়ে যে পরিমাণ অভিযোগ পেয়েছে তার মাত্রা ‘অস্বাভাবিক’। তিনি আরো বলেছিলেন, মুসলিম নারীরা বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাচ্ছেন।
উল্লেখ্য যে, শুধু হিজাব পরার কারণে ইতিপূর্বে মন্ট্রিলের এক মুসলিম নারী এল-আলোউলের মামলা শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন কুইবেকের একটি আদালতের এক বিচারক এলিয়ানা মারেঙ্গো। ঘটনার পাঁচ বছর পর অবশেষে সেই বিচারক ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এক বিবৃতিতে ঐ বিচারক বলেছিলেন, তিনি স্বীকার করছেন যে, এল-আলোউলকে হিজাব খুলতে বলে তিনি ভুল করেছিলেন। এজন্যে এল-আলোউলকে যে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে সেজন্যে তিনি দুঃখিত। তবে এল-আলোউলকে আঘাত করার বা তাঁর প্রতি কোনও রকম অশ্রদ্ধা থেকে মারেঙ্গো এটা করেননি বলে জানান।
মারেঙ্গোর বিবৃতির জবাবে তখন এল-আলোউলও এক বিবৃতি দেন এবং তাতে তিনি মারেঙ্গোর ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি মেনে নেন।
এল-আলোউল বলেন, ‘আদালত কক্ষের সেই দিনটির কথা আমার মনে এখনও এতটাই তীব্র যেন সেটি গতকালের ঘটনা। আমি কল্পনাও করতে পারছিলাম না যে, কেবল আমার হিজাবের জন্য আমাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হবে, আমার বিশ্বাসের কারণে আমার অধিকার কেড়ে নেয়া হবে।’
হিজাব পরার কারণে শুধু যে কুইবেকে মুসলিম মহিলারা লক্ষ্যবস্তুর শিকার হচ্ছেন তা নয়। কানাডার আরো কয়েকটি প্রভিন্সেও কম বেশী একই রকম অবস্থা বিরাজ করছে। গত মে মাসে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরে দুই হিজাবধারী মুসলিম তরুণীর উপর এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি হামলা চালান। দি কানাডিয়ান প্রেস এর এক খবরে বলা হয়, ঐ দুই মুসলিম তরুণী যেখানে কাজ করতো সেখানে এক ব্যক্তি তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে তাঁদের প্রতি চিৎকার করতে থাকে। লোকটি ১৫ বছর বয়সী বোনটির মাথায় সশব্দে থাপ্পড় মারে। তখন মেয়েটি প্রায় মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলো। ঐ দুই তরুণী সম্পর্কে বোন। বড় বোন ১৮ বছর বয়সী আসমাহান আল সালোম গত ৭ মে সংঘটিত ওই ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। কানাডিয়ান প্রেস সেই ভিডিও দেখেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কমলা রঙের টুপি পরা অল্প পাকা দাড়িঅলা একজন বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি ১৫ বছর বয়সী মালেক আল সালোমের মাথায় আঘাত করছেন। তার আগে তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমি জানি না তোমরা এদেশে কী করছো।’
গত বছর এডমন্টনেও বেশ কয়েবার হিজাবধারী মহিলার উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। সিবিসি নিউজ এমন একটি ঘটনা উল্লেখ করে জানায় গত বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে হিজাবধারী এক মহিলা সেঞ্চুরি পার্ক এলআরটি স্টেশনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় এক অচেনা লোক তাঁর দিকে হাত তুলে এগিয়ে আসে এবং মুষ্ঠি পাকিয়ে তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করার ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঐ মহিলা বলেন, ‘আমি আগে কখনই এধরণের সহিংসতা দেখিনি। আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমার পালানোর কোনও উপায় ছিলো না। আমি দৌড়ে তাঁর কাছ থেকে পালাতে পারতাম না। আমি নড়তে পারছিলাম না।’
খবরে বলা হয়, এটি ছিলো মাত্র ১০ সপ্তাহের মধ্যে এডমন্টনে কোনও কৃষ্ণাঙ্গ হিজাবি নারীর ওপর এধরণের আক্রমণের পঞ্চম ঘটনা। মেয়র ডন ইভেসন এবং মুসলিম কানাডীয়দের জাতীয় কাউন্সিল এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়।
তবে কুইবেকে মুসলিম হিজাবধারী মহিলাদের উপর আঘাতটা আসছে প্রতিষ্ঠানিভাবে। ঐ প্রভিন্সের ক্ষমতাসীন সরকারই হিজাবের বিরুদ্ধে আইন তৈরী করেছে। এই আইনের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে অভিযোগ উঠলে সররকার সেখানেও লড়ছে আইনটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য।
উল্লেখ্য যে, কুইবেক প্রভিন্স ধর্মীয় পোষাকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ফেডারেল লেভেলে এই ধরণের আইন নেই। রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) ২০১৬ সালে তাদের নারী অফিসারদেরকে ইউনিফর্ম হিসেবে হিজাব পরার অনুমতি দিয়েছে। উদ্দেশ্য – আরো অধিক সংখ্যক মুসলিম নারী এই পেশায় অনুপ্রানিত হবে। গ্লোবাল নিউজকে আরসিএমপির তৎকালীন মুখপাত্র স্কট বার্ডসলি বলেন, এটি কানাডার সমাজে বৈচিত্রকেও প্রতিফলিত করবে।
আরসিএমপি কর্তৃপক্ষ তিন প্রকারের হিজাব পরীক্ষা করার পর একটিকে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রয়োজনে তাৎক্ষনিকভাবে খুলে ফেলা যায় এবং ব্যবহারকারী অফিসারদের নিরাপত্তায় কোন ঝুঁকি সৃষ্টি করে না।
কিন্তু কানাডার কুইবেক প্রভিন্স সরকারী কর্মস্থলে হিজাবসহ অন্যান্য ধর্মীয় পোষাক পরার ব্যাপারে কেন নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। একে অন্যায় সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও।
ইতিপূর্বে সিটিভি নিউজের কোশ্চেন পিরিয়ড এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বিলটির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি সরাসরি একে ‘অন্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন। হিজাব পরার কারণে কুইবেকের এক স্কুল থেকে শিক্ষিকা ফাতেমাকে অপসারনের পর বিল-২১ বিষয়ে সিবিসি নিউজে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু সরকার নয়, নাগরিকদেরও মৌলিক অধিকার রক্ষার বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিল-২১ এর সাথে একমত নই, এবং আমি সর্বদাই এই বিলের সাথে একমত নই। আর এই আইনের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে হস্তক্ষেপ করার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনাকে আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায়।’
প্রধান মন্ত্রী আরো বলেন, সরকার এই মৌলিক অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসতে পারে এবং এগিয়ে আসা উচিৎ। একই সাথে আমাদের জনগণকেও একে অপরের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। এবং আমরা সেটাই দেখছি কুইবেকের ‘চেলসি’তে যেখানে কমিউনিটি, পরিবারগুলো এবং শিশুরা সবাই মিলে বলছে , একজন তরুণ শিক্ষিকা মুসলিম হওয়ার কারণে চাকরী হারাবে এটা একেবারেই ভুল সিদ্ধান্ত।
তবে ফেডারেল সরকার কেন বিল-২১ এর বিপক্ষে অনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান মন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, কুইবেকের অধিবাসীরা ইতিমধ্যেই আদালতে আইনটির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তাই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোন আইনি পদক্ষেপ নেয়ার আগে দেখতে চান ঐ চ্যালেঞ্জ কতদূর কাজ করছে।
অন্যদিকে কুইবেকের প্রিমিয়ার ফ্রাঁসোয়া লেগল্ট বিল-২১ এর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি বুঝি না প্রধানমন্ত্রী কিভাবে একটি আইনের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করবেন যে আইনটি সিংহভাগ লোক সমর্থন করেন কুইবেকে।
তিনি আরো বলেন, বিল-২১ গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে। আমি জানিনা এরকম একটি স্পর্ষকাতর বিষয়ের উপর কেন্দ্রীয় সরকার কি ভাবে হস্তক্ষেপ করবে। সিবিসি নিউজ এ তথ্য জানায়।
ফ্রাঁসোয়া লেগল্ট বলেন, ধর্মনিরপেক্ষার এই আইনটি কানাডার স্বাধীন ও মুক্ত সমাজের সঙ্গে কোন বিরোধ তৈরী করে না।
এখন অপেক্ষার সময় আপিল কোর্ট বিল-২১ এর বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত দেয় তা দেখার জন্য। আপিল কোর্ট যদি এই আইনটি বাতিল না করে অথবা প্রয়োজনীয় সংশোধন করে তাহলে এই আইনের বিরোধীতাকারীরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। অন্যদিকে আপিল কোর্ট যদি বিল -২১ বাতিল করে দেয় তবে কুইবেক সরকারও সুপ্রিম কোর্টে যাবে আপিল কোর্টের রয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। অর্থাৎ খুব শিঘ্রই বিল -২১ বা ‘ধর্মনিরপেক্ষতার এই আইনের বিষয়ে কোন ফয়সালা হচ্ছে না। এবং কুইবেকের হিজাবধারী মহিলারাও খুব শীঘ্রই সরকারের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ