জাস্টিনকে টপকে গেলেন পয়লিভার, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাকে সেরা পছন্দ হিসাবে দেখা হচ্ছে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: কনজারভেটিভ দলের নতুন নেতা পিয়েরে পয়লিভার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পছন্দের দিক থেকে জাস্টিন ট্রুডোকে টপকে গেছেন। নতুন এক জরিপে এই তথ্য জানা গেছে। জরিপটি পরিচালিত হয় একান্তভাবে গ্লোবাল নিউজের জন্য। খবর সিন বয়েনটন/গ্লোবাল নিউজ এর।
ইপসোস পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের সিইও ড্যারেল ব্রিকার ব্যাখ্যা করে বলেন, ২০১৫ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবার পর ট্রুডোর জনপ্রিয়তা ক্রমশ ফিকে হয়ে এসেছে এবং জনগণ পরিবর্তন চায়। তিনি বলেন, “পছন্দের তালিকায় লেবার নেতার ঊর্ধ্বগতি মন্থর হয়ে পড়েছে।”
এক মাসেরও কম সময় ধরে কনজারভেটিভ দলের নেতার দায়িত্বে আসা পিয়েরে পয়লিভার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে টপকে গেছেন এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সেরা পছন্দ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। নতুন এক জরিপে এই তথ্য জানা গেছে।
একান্তভাবে গ্লোবাল নিউজের জন্য পরিচালিত ওই জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৩৫ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী পদে পয়লিভার হলেন সেরা প্রার্থী, যেখানে ৩১ শতাংশ কানাডীয় ট্রুডোকে সেরা প্রার্থী মনে করেন।
এই পরিসংখ্যান ট্রুডোর লিবারেল দলের সমস্যার সর্বশেষ লক্ষণের প্রতিফলন, যে দলটি জনগণের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের সম্মুখিন হচ্ছে। জরিপে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে।
ইপসোস পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের সিইও ড্যারেল ব্রিকার বলেন, “মি. পয়লিভারের দৃশ্যপটে আসাটা তার কোনও বিশেষ কাজ বা কথার ফলশ্রুতি নয়, বরং এটি হলো অনেকটাই জনগণের পছন্দের ফল যারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় নতুন কাউকে দেখতে চায়।”
“এটা স্পষ্ট যে, কানাডার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এই মুহূর্তে বিকল্পের সন্ধান করছে।”
এমনকি যে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় ৩৮ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে ট্রুডোর অবস্থান ছিল সবচেয়ে জোরালো সেখানেও পয়লিভারের চেয়ে ট্রুডো মাত্র দুই পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। কুইবেক ও আটলান্টিক কানাডা ছাড়া অন্য প্রত্যেকটি প্রদেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়িয়ে গেছেন পয়লিভার।
এর মধ্যে আছে অন্টারিও প্রদেশও। সেখানে লিবারেল দলকে উৎখাত করার চেষ্টায় কনজারভেটিভ দল ভোটারবহুল গ্রেটার টরন্টো এলাকায় বহু বছর থেকে বড় ধরণের সাফল্য পাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেখানে পয়লিভারের ৪১ শতাংশ জনসমর্থনের বিপরীতে ট্রুডোর ৩৪ শতাংশ জনসমর্থন থাকায় ধারণা করা যায়, এবার তিনি সম্ভবত অচলাবস্থায় চিড় ধরাতে সক্ষম হবেন।
নতুন এই জরিপ এসেছে ইপসোস-এর আরেকটি আলাদা জরিপের পর পরই। আগের ওই জরিপে দেখা যায়, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন এমন ভোটারদের মধ্যে কনজারভেটিভরা সার্বিকভাবে লিবারেল দলের চেয়ে পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। পয়েন্টের এই সীমা অন্টারিওতে হয়ে যায় সাত পয়েন্ট। সেখানে এখন টোরি বা কনজারভেটিভ দলের জনসমর্থন ৩৭ শতাংশ।
ওই জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার বলেন, এখন লিবারেলদের কাছ থেকে অন্য দলের ক্ষমতা নেয়ার সময় এসেছে। কারণ, গত শরতের পর থেকে ট্রুডোর পুননির্বাচনের পক্ষে জনসমর্থন চার পয়েন্ট কমে এখন মাত্র মাত্র ৩৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
জরিপটি চালানো হয় ১৯-২০ সেপ্টেম্বর মাসে এবং এতে ১০০০ জনের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক কানাডীয়র মতামত নেওয়া হয়।
জরিপের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, ভোটাররা ট্রুডোর প্রতি সন্তুষ্ট নন এবং তাকে তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।
পয়লিভার যদিও জরিপে অংশ নেয়া কানাডীয়দের মতামতে ট্রুডোকে পেছনে ফেলেছেন – এবং ট্রুডো ও পয়লিভার উভয়েই এনডিপি নেতা জগমিত সিংকে পেছনে ফেলেছেন- তার পরও পয়লিভারকে দেখা হচ্ছে এমন একজন নেতা হিসাবে যিনি কানাডার জন্য সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন (২৪শতাংশ), কাজ সুসম্পন্ন করতে পারবেন (২৪ শতাংশ) এবং সত্যিকারের জনস্বার্থে কাজ করতে ইচ্ছুক হিসাবে কানাডার নেতৃত্ব দিতে পারবেন (২৫ শতাংশ) – এই তিনটি প্রশ্নে প্রতিটিতেই ট্রুডো মাত্র ২১ শতাংশ জনসমর্থন পেয়েছেন।
এদিকে ট্রুডোকে এখনও এমন একজন নেতা হিসাবে দেখা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যার মেজাজ সবচেয়ে ভালো এবং পরিপক্কতা আছে। এক্ষেত্রে তিনি পেয়েছেন ২৬ শতাংশ মানুষের সমর্থন, আর তিনি কানাডার ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন এই প্রশ্নে পেয়েছেন ২৪ শতাংশের সমর্থন।
উল্লেখ্য, জরিপে অংশ নেয়া কানাডীয়দের প্রতি ১০ জনের মধ্যে চার জনেরও বেশি বলেছেন, নেতাদের মধ্যে কোনও একজনও এমন নেই যার ওপরও তারা বিশ^াস রাখতে পারেন, যিনি সরকারি ব্যয়ের ওপর ভালো রকমের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন অথবা যার স্বাস্থ্য সেবা অথবা অর্থনীতির ক্ষেত্রে সেরা পরিকল্পনা আছে।
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি সামলাতে সব পার্টিই অসমর্থ বলে মনে করা হচ্ছে
এই অনুভূতি ইপসোস-এর জরিপেও প্রতিফলিত হয়েছে যাদে দেখা যায়, মোটামুটিভাবে কানাডীয়দের এক-তৃতীয়াংশই মনে করেন, জনগণের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে এমন গুরুত্বপূর্ণ
ইস্যুগুলির সমাধানে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কোনওটিই প্রস্তুত নয়।
জরিপে দেখা যায়, ভোটারদের বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার ব্যয় (৪০ শতাংশ) এবং স্বাস্থ্য সেবা (৩৫ শতাংশ), এর পরেই রয়েছে অর্থনীতি ও আবাসন। এই দুটি ইস্যুই পেয়েছে ২৩ শতাংশের মত।
এরপরও জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের ৪২ শতাংশ বলেন, আবাসন, ক্রয়ক্ষমতা অথবা প্রাপ্যতার বিষয়গুলির সমাধানে কোনও পার্টিই অন্য পার্টির চেয়ে ভালো করতে পারবে না। ৩৪ শতাংশ মানুষ একই ধরণের কথা বলেন জীবনযাত্রার ব্যয়ের প্রসঙ্গে এবং ৩০ শতাংশ একই মত দেন স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে। ব্রিকার বলেন, “জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে ভোটারদের ওপর প্রভাব ফেলে।” “আর তারা প্রধান রাজনৈতিক পার্টিগুলির দিকে তাকিয়ে আছে, তারা বলছে, আমি এমন কিছুই দেখছি না যা থেকে মনে হবে, এই বিষয়ে আপনাদের ভালো কোনও পরিকল্পনা আছে।”
অবশ্য সুনির্দিষ্ট দলের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন কানাডীয়দের ধারণা, কনজারভেটিভ পার্টিরই অর্থনীতি এবং মূল্যস্ফীতি সামলে নেয়ার মত সবচেয়ে ভালো উপায় উপকরণ আছে (যথাক্রমে ৪২ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ)। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুর সবচেয়ে ভালো সমাধান দেবার প্রশ্নে লেবার পার্টি ও এনডিপি ২৫ শতাংশের সমর্থন নিয়ে সম অবস্থায় রয়েছে।
ব্রিকার বলেন, “ট্রুডো এই মুহূর্তে যে প্রতিকূলতার মুখে রয়েছেন, তার দল ও সরকার যেসব প্রতিকূলতার মোকাবেলা করছে তা বেশ গুরুতর।”