কানাডায় নিজেদের মধ্যে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার সবারই রয়েছে
সম্প্রতি ব্রিটিশ কলম্বিয়ার রিচমন্ড স্কাই ট্রেন স্টেশনে টিকিট কাটার সময় দুইজন চীনা বংশোদ্ভূত বয়স্ক কানাডিয়ান নারী নিজেদের মধ্যে ক্যান্টনিজ (চীনা) ভাষায় কথা বলছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে তাঁদের গালাগালি করেন ইংরেজিতে কথা না বলার জন্য।
কানাডায় দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজেদের মধ্যে তাঁদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলবেন এটাইতো স্বাভাবিক। এবং এটা তাঁদের মানবিক অধিকার। কানাডার আইনও এই অধিকার এর স্বীকৃতি দেয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক শ্রেণীর বর্ণবাদী কানাডিয়ান তা সহ্য করতে পারেন না। তাঁরা মনে করেন কানাডায় দৃশ্যমান সংখ্যালঘুরা তাঁদের নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে ইংরেজি বা ফরাসী ভাষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করবেন সর্বান্তকরণে। অর্থাৎ বাড়িতে বা কোন রেস্টুরেন্টে বসে বা বাজার করতে এসে কিংবা অন্যকোন পাবলিক প্লেসে বসে ইমিগ্রেন্টরা নিজেদের মধ্যে নিজের ভাষায় কথাও বলতে পারবেন না।
এরকম ধ্যান ধারণারই এক ব্যক্তি সম্প্রতি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার রিচমন্ডে স্কাই ট্রেন স্টেশনে দুজন বয়স্ক এশীয় নারীকে প্রকাশ্যে গালাগালি করেছেন নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা না বলায়। গালাগালির ঘটনাটি একজন ভিডিও করে টিকটকে পোস্ট করেন। এরপর সেটি দ্রুত বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার সাক্ষী ডোনা ডেমাসো জানান তিনি ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার রিচমন্ডের ব্রিগহাউস স্টেশনে এই ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। তিনি বলেন, দুজন বয়স্ক এশীয় নারী টিকিট কেনার সময় নিজেদের মধ্যে চীনা ভাষায় কথা বলছিলেন। এমন সময় লোকটি তাঁদের উপর চড়াও হয়।
ডেমাসো বলেন, লোকটি ওই মহিলাদের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধান এবং বলেন, ‘তোমরা কানাডায় আছো, তোমাদের ইংরেজি বলা উচিৎ।’
ডেমাসো বলেন, তিনি ঘটনায় জড়িত কাউকে চেনেন না। কিন্তু তিনি এতটাই ক্রুদ্ধ ও বিচলিত হন যে, তিনি এর প্রতিবাদ করতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, ‘এটি ঠিক নয় এবং ঐ লোকটি একজন বর্ণবাদী।’
ভিডিওতে দেখা যায়, লোকটি নিজেকে ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা একজন আইনজীবী বলে দাবি করেন।
সিটিভির কাছে প্রেরিত এক ই-মেল বার্তায় রিচমন্ডের পুলিশ বিভাগ বলেছে, তারা এ ধরণের ‘ঘৃণাপ্রসূত ঘটনার’ শিকার বা প্রত্যক্ষদর্শী যে কাউকে এ বিষয়ে পুলিশে রিপোর্ট করতে উৎসাহিত করেন।
ঘটনার পর স্ট্যান্ড উইথ এশিয়ান কোয়ালিশন-এর ডোরিস মাহ সিটিভি নিউজকে বলেন, ‘ঘটনাটি উদ্বেগজনক তবে বিস্ময়কর নয়। এটি আমাকে হতবাক করেনি, কারণ এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। আমাদের সমাজে প্রায়ই ঘটে। এবং এমন ঘটনা বন্ধ হওয়া দরকার।’
উল্লেখ্য যে, কানাডিয়ান মিউজিয়াম ফর হিউম্যান রাইটস এর ওয়েবসাইটে স্পষ্টই বলা আছে ‘নিজ ভাষার মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার। কানাডায় আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের যার যার ভাষায় নিজেকে প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। সেটা বাড়িতে, অনলাইনে বা পাবলিক সেটিং এ যেখানেই হোক না কেন।’
তবে যখন সরকার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের কথা আসে তখন রাষ্ট্র কর্তৃক সরকারী ভাষা নির্ধারণের অধিকার আছে। তাছাড়া সরকারী বা বেসরকারী কর্মস্থলেও কর্তৃপক্ষের অধিকার রয়েছে যোগাযোগের ভাষা নির্ধারণের। কিন্তু কেউ আত্মীয় বা বন্ধুদের সঙ্গে কোন ভাষায় কথা বলবেন সেটা নির্ধারণের অধিকার শুধু সংশ্লিষ্ট ঐ ব্যক্তিদেরই আছে। এখানে কারও নাক গলানো মানবাধিকার হরণের পর্যায়ে পড়ে। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার রিচমন্ড স্কাই ট্রেন স্টেশনে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা মানবাধিকার হরণ ছাড়া আর কিছু নয়। এ জাতীয় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং আশা করছি শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীরা এরকম নিন্দনীয় আচরণ থেকে বিরত থাকবেন। পাশাপাশি সরকারও এই বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে আরো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজনে তাঁদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করবে।