তাসের আড্ডা-২৪

শুজা রশীদ

“ভাই, এ কি সময় আসলো আমেরিকায়? প্রতি সপ্তাহে অন্তত পক্ষে একটা করে হত্যাযজ্ঞ!” রাজা ভাই বিশাল এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হঠাৎ বলে উঠল।

            আজ জিতের বাসায় সবাই একত্রিত হয়েছে। তাস খেলা এবং আড্ডা একাধারে চলছে। ইউক্রেন নিয়ে আলাপ ইদানিং কমে গেছে। মানুষ কত সহজে ভয়াবহ ব্যাপারেও অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এটা হয়ত তারই উদাহরণ।

            “টেক্সাসের রব এলিমেন্টারি স্কুল শুটিঙয়ের কথা বলছেন?” জালাল হাতের তাসে চোখ বোলাতে বোলাতে বলল।

            “সত্যি কথা বলতে কি আমেরিকায় এই বছরেই ইতিমধ্যে এই নিয়ে মনে হয় ত্রিশটা স্কুল শূটিং হল,” রনি বলল।

“এখন আর এই জাতীয় ভয়ংকর সংবাদ শুনলেও তেমন অস্বাভাবিক লাগে না। মনে হয় আমেরিকানরা যেন এই ধরণের ঘটনায় আর প্রতিক্রিয়া দেখায় না। যাদের প্রিয়জন মারা যায় শুধু তারাই চোখের জল ফেলে।”

            জিত বলল, “সেকন্ড এমেন্ডমেন্টের ধুয়া দিয়ে NRA অর্থাৎ ন্যাশনাল রাইফেল এসোসিয়েশন আর তাদের রিপাবলিকান সমর্থকরা কোন অবস্থাতেই গান ল আরোও কঠিন হতে দেবে না। প্রতিটা গণহত্যা হয়, কয়েকটা দিন তাই নিয়ে খুব হৈচৈ হয়, তারপর আবার যেই কে সেই। স্যানডী হুক স্কুল হত্যাযজ্ঞের পর মনে হয়েছিল আমেরিকার কংগ্রেস এবং সিনেট কিছু একটা করবে। আর কিছু না হোক বন্দুক কেনার ব্যাপারতা তারা আরেকটু কঠিন করবে। কিন্তু কিচ্ছু হয় নি।”

            সাইদ বলল, “হবে কি করে? যখনই ডেমোক্রেটরা কোন ধরণের বিধি নিষেধ আরোপ করতে চায় রিপাবলিকানরা সাথে সাথে তার বিরোধীতা করে। তার কারণ অবশ্য পুরোটাই রাজনৈতিক। সাধারণ আমেরিকানরা, বিশেষ করে সাদা আমেরিকানরা বন্দুক ভালোবাসে। তাদের হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেয়াটা হবে এক কথায় অসম্ভব। যে কারণে রিপাবলিকানরা, যাদের সমর্থকদের মধ্যে বন্দুক প্রীতি বেশী আছে বলেই মনে হয়, কখনই গান ল কে কঠিন করবার পক্ষে সমর্থন জানাবে না। এবর্শনের বিরুদ্ধে তাদের কর্মকান্ড দেখে মনে হয় তাদের শিশুপ্রীতি বুঝি সবার উপরে। কিন্তু স্কুলে গুলি খেয়ে ডজন ডজন বাচ্চারা মারা গেলে সেই ব্যাপারে কিছু করবার মত বুকের জোর তাদের নেই।”

            জিত বলল, “এই রকম গান কালচার কি করে হল আমেরিকাতে? বুঝলাম তারা এক সময় এখানে স্থানীয় মানুষদের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থেকে আমেরিকা গড়েছে কিন্তু সেই সব দিন তো কবেই চলে গেছে। এখনও এতো গান – গান করবার কারণটা কি?”

            সাইদ বলল, “গান এক শ্রেণীর আমেরিকানদের মজ্জাগত হয়ে গেছে। যদিও অধিকাংশ মানুষই বন্দুক হাতে পেয়ে কোন অপরাধ করছে না, কিন্তু কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণহীণ হয়ে পড়ে। যারা এই জাতীয় হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত তাদের সবার যে মানসিক অসুখ ছিল তার কিন্তু কোণ প্রমান নেই। এই যে আঠারো বছরের ছেলেটা সব মিলিয়ে একুশ জনকে হত্যা করল, তার তো কোন মানসিক অসুখ ছিল বলে জানা নেই। আমার ধারণা বন্দুকই তার মাথাটা নষ্ট করেছে।”

টেক্সাসের রব এলিমেন্টারি স্কুলের ভয়ার্ত শিক্ষার্থীরা বাইরে বেরিয়ে আসছে। এক সন্ত্রাসীর গুলিতে ঐ স্কুলের ১৯ জন শিশুশিক্ষার্থী ও দুজন শিক্ষক নিহত হন। ছবি: রয়টার্স

            রাজা বলল, ‘আচ্ছা ভাই, আমেরিকানদের মুখে এতো যে সেকেন্ড এমেন্ডমেন্টের কথা শুনি, সেটা কেন তৈরী করা হয়েছিল?”

            সাইদ বলল, “১৭৮৯ সালে আরোও নয়টা এমেন্ডমেন্টের সাথে সেকেন্ড এমেন্ডমেন্টও সৃষ্টি করা হয়। সবগুলোকে একসাথে নাম দেয়া হয় বিল অফ রাইটস। সেকন্ড এমেন্ডমেন্টে আছে মাত্র একটা বাক্য। “A well regulated militia, being necessary to the security of a free State, the right of the people to keep and bear Arms shall not be infringed.” ঐতিহাসিকদের মতে এই এমেন্ডমেন্ট সৃষ্টি করবার পেছনে মূল কারণ সম্ভবত ছিল আমেরিকায় প্রফেশনাল আর্মি থাকাটা যেন জরুরী না হয়ে পড়ে সেটা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে মিলিশীয়ারা দেশ রক্ষায় অস্ত্র ধারণ করতে পারবে। সেই সময়কার পরিস্থিতি বিবেচনা করলে এটা মনে হয় না যে সাধারণ মানুষকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র রাখার অধিকার দেয়াটা এই এমেন্ডমেন্টের উদ্দ্যেশ্য ছিল। কিন্তু সুপ্রীম কোর্ট মত দিয়েছে যে এই কন্সটিটিউশন সাধারণ মানুষকে আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র রাখার অধিকার দেয়। যে কারণে কংগ্রেসের পক্ষে খুব বেশী কিছু একটা করা সম্ভব হয় না।”

            রনি বলল, “ওরা তো মরছেই এখন আমদেরকেও একই সুতায় গাঁথার চেষ্টা করছে। কয়েক বছর আগেও আমদের এখানে গোলাগুলি, খুন খারাবী এতো খানি ছিল না। শুনেছি আমেরিকা থেকে বেআইনী বন্দুক এসে ভরে গেছে কানাডা। প্রতিদিন কেউ না কেউ গুলি খাচ্ছে টরন্টোতে। খুন হচ্ছে। অল্প বয়স্ক ছেলেদের হাতে অস্ত্র এসে গেছে। ঐ স্কুল হত্যাযজ্ঞের পরপরই আমাদের এখানে স্কারবরোর পোর্ট ইউনিয়ন এলাকায় যে ঘটনাটা ঘটেছে, সেটা তো আপনারা সবাই জানেনই। এক লোক এয়ার রাইফেল হাতে একটা স্কুলের দিকে যাচ্ছিল। ভালো হয়েছে পুলিশ ব্যাটা কে গুলি করে  মেরেছে। তার মাথায় কি পরিকল্পনা ছিল কে জানে?”

            “এয়ার রাইফেল দিয়ে কি কাউকে হত্যা করা যায়?” কবীর জিজ্ঞেস করে।

            রনি বলল, “আমি তো কখনও ব্যবহার করিনি কিন্তু গুগল করে দেখলাম কাছ থেকে মারলে এয়ার রাইফেলও কাউকে মারাত্বকভাবে আহত কিংবা হত্যা করতে পারে।”

            জালাল বলল, “আমি এই আমেরিকান রিপাবলিকানদের কান্ড কারখানা ঠিক বুঝতে পারি না। তারা নিজেদেরকে প্রো লাইফ ঘোষণা দিয়ে এবর্শন বন্ধ করে দিচ্ছে অথচ স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদেরকে নিরাপদ করবার জন্য কিছুই করছে না। আজব কান্ড! আচ্ছা এই রো ভার্সাস ওয়েডের ব্যাপারটা কি বলেন তো সাইদ ভাই? এটা নিয়ে সর্বক্ষণ এতো কথা বার্তা শুনি।”

            সাইদ বলল, “১৯৭৩ সালে আমেরিকার সুপ্রীম কোর্ট রুল করে যে ইউনাইটেড স্টেটস এর কন্সটিটিউশন অন্তঃসত্ত্বা নারীর এবর্শন করবার অধিকার দেয় এবং সরকারের উচিত নয় তাতে অতিরিক্ত বাধা নিষেধ সৃষ্টি করা। যার অর্থ করলে দাঁড়ায় মেয়েদের অধিকার আছে তাদের প্রেগনেন্সি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবার। কেসটা করেছিল জনৈক মহিলা যার পরিচয় গোপন করবার জন্য তার নাম দেয়া হয়েছিল জেন রো। কেসটা করা হয়েছিল টেক্সাসের ডালাস কাউন্টির ডিসট্রিক্ট এটর্নিকে বাদী করে, যার নাম ছিল হেনরি ওয়েড। তখন এবর্শন ছিল বেআইনী। একমাত্র ব্যতিক্রম করা হত মায়ের জীবন বাঁচানোর জন্য। জেন রো কোর্টে গিয়ে দাবী করে যে স্টেট ল আনকন্সটিটিউশনাল এবং প্রথম, চতুর্থ, পঞ্চম, নবম এবং চৌদ্দতম এমেন্ডমেন্ট অনুযায়ী তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। কোর্ট জেন রো’র পক্ষে রায় দেয় ৭-২ ভাগে বিভক্ত হয়ে।”

            জিত বলল, “এখন তো ওদের সুপ্রীম কোর্টে কনজারভেটিভ জাজদেরে সংখ্যা বেশী। এই রো ভার্সাস ওয়েড আর কতদিন টিকবে কে জানে। ইতিমধেই তো বিভিন্ন স্টেটে অনেক কড়াকড়ি করা হচ্ছে। এবর্শন এক রকম বন্ধই করে দেয়া হয়েছে। ভাবতেও অবাক লাগে আমেরিকার মত দেশে এই ধরণের একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সারা দুনিয়া যেখানে পদক্ষেপ নিচ্ছে নারীদেরকে আরোও বেশো স্বাধীনতা দেবার, সেখানে আমেরিকানরা যেন আরোও পেছন দিকে যাবার জন্য সংকল্প করেছে।”

            রনি বলল, “বাংলাদেশে থাকতে ভাবতাম আমাদের দেশের মানুষ জনের শিক্ষা দীক্ষার অভাব আছে। তাদের কাছ থেকে খুব বেশী কিছু আশা করা যুক্তিযুক্ত নয়। আমেরিকা এতো উন্নত দেশ। মানুষজন অন্য রকম হবে। কিন্তু এখন দেখছি এখানেও জ্ঞানের প্রচুর অভাব। এবর্শনের উপর এখনই নানা ধরণের নিয়ম কানুন আছে। তার উপর খাড়ার ঘায়ের মত নতুন নিয়ম কানুন এনে সেটাকে আরোও কঠিন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব  করে তোলা হচ্ছে। তার কোন প্রয়োজন ছিল না।”

            জিত বলল, “এখন তো রো ভার্সাস ওয়েড ওভারটার্ণ হয়ে যেতে পারে – আমেরিকার সুপ্রীম কোর্টের জাস্টিসদের একটা লিকড ড্রাফট থেকে সেই রকমই মনে হচ্ছে। সেটা হলে সারা আমেরিকাতেই এবর্শন রাইট নিয়ে হৈ হুল্লোড় পড়ে যাবে। তখন দেখা যাবে সেখান থেকে সবাই কানাডায় আসছে। ”

            “আমাদের কানাডার নিয়ম কানুন কি?” রাজা ভাই জানতে চাইল।

            সাইদ বলল, “কানাডায় ১৯৮৮ সালে এবর্শন ডিক্রিমানালাইজ করা হয়। আমরা হচ্ছি প্রো চয়েস। কিন্তু সবার এক্সেস সমান ভাবে নেই। আমেরিকার সাথে আমাদের সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে যাবতীয় এবর্শন হাসপাতালগুলো অবস্থিত। তাও গড়ে প্রতি ছয়টা হাসপাতালের মধ্যে মাত্র একটা হাসপাতালে এবর্শন সার্ভিস আছে। যার অর্থ যারা কানাডার উত্তরে থাকে তাদের এই ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা খুবই কম।  সাধারণত প্রাইমারী কেয়ার ফিজিশিয়ানদের মাধ্যমেই এগুতে হয়। অনেক সময় ব্যক্তিগত কারণে তারা হয়ত সমানভাবে সাহায্য নাও করতে পারে এবং অকারণে দেরী করিয়ে দিতে পারে। অনেক হাসপাতাল হয়ত ফেটাসের বয়স বেশী হলে এথিকাল কারণ দেখিয়ে এবর্শন নাও করতে চাইতে পারে।  কিন্তু মোদ্দা কথা হল আমাদের এখানে ফেডারালি এটা বেআইনী নয়।”

            জিত বলল, “কানাডাতে ১৯৮৮ সালের আগে এবর্শন আমেরিকার চেয়েও অনেক কঠিন ছিল। শুধুমাত্র মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে অনুমতি দেয়া হত। সত্তরের দশকে তো পুরোপুরি বেআইনি ছিল।”

            রনি বলল, “প্রো লাইফ তো আমরা সবাই কিন্তু তার মানে এই নয় যে নারীর নিজের শরীরের উপর তার কোন অধিকার থাকবে না। সে যদি কোন কারণে তার ফেটাসকে না রাখতে চায় তাহলে সেটা নষ্ট করবার অধিকার তার থাকা উচিত। অনেক সময় ধর্ষণ এবং ইন্সেস্ট থেকে প্রেগনেন্ট হয়ে পড়তে পারে। সেই শিশুকে পৃথিবীতে আনার ব্যাপারে হতভাগ্য মায়ের নৈতিক সমস্যা থাকতে পারে। বাচ্চা শুধু জন্ম দিলেই তো হল না তার দেখভালও তো করতে হবে। সে যেন মানুষের মত মানুষ হয়ে বড় হতে পারে সেটাও তো নিশ্চিত করতে হবে। যে মাকে সরকার জোর করে প্রসব করতে বাধ্য করে সে কি মা হিসাবে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে? আমার তো মনে হয় না।”

            বেলা পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। আলাপ শুনে থামল। “কিন্তু পৃথিবীর কিছু কিছু দেশে যে ভাবে গণহারে এবর্শন করা হচ্ছে সেটাও তো ঠিক না। ভারতে যেমন কন্যা সন্তান ফেলে দেয়া হচ্ছে অতিমাত্রায়। সেই ক্ষেত্রে তো ব্যাপারটা আর নারীর স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারিবারিক চাপের মুখে পড়েই হয়ত এবর্শন করতে মেয়েরা বাধ্য হচ্ছে।”

            রনি বলল, “কথাটা তুমি ঠিকই বলেছ। আমরা কেউই সেটা সমর্থন করছি না। কিন্তু তোমার কি মনে হয় না এবর্শন অন্তত পক্ষে সরকারীভাবে বেআইনী হওয়া উচিত নয়?”

            “বে আইনী না হলেও একটা কাঠামোর মধ্যে থাকা উচিত,” বেলা বলল। “যেন অকারণে কেউ একটা জীবনকে নষ্ট না করে দিতে পারে। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে বাচ্চা না চাইলে প্রেগন্যন্ট যেন না হয় সেই ব্যবস্থা আগেই করতে হবে। এক্সিডেন্ট হতে পারে না তা নয় কিন্তু সেই জন্য থাকবে বিশেষ নিয়ম কানুন।”

            লতা এসে বেলার সঙ্গী হল। “আজকে আপনাদের কি নিয়ে আলাপ হচ্ছে?”

            “আজ আমরা কিছুক্ষণ বন্দুকবাজী করে এখন এবর্শন নিয়ে মেতেছি,” জালাল বলল। “আপনাদের মেয়ে মহলে কি আলাপ হচ্ছে?”

            “ইলন মাস্কের বিটলামী নিয়ে,” লতা বলল। “ওর কান্ডটা দেখেছেন? কত লাফ ঝাপ দিয়ে টুইটার কিনল কিন্তু এখন আবার অন হোল্ড করে রেখেছে ফেক আকাউন্টের ধোয়া তুলে।”

            সাইদ বলল, “মাস্কের সমস্যা নানাবিধ। টুইটারেরে ফেক একাউণ্ট নেই তা নয়, কিন্তু সেটা যে খুব বেশী তারও কোণ অকাট্য প্রমাণ নেই। কিন্তু সেটা মাস্কের মূল সমস্যাও না। টুইটারের ইনভেস্টরদের একটা গ্রুপ ওর বিরুদ্ধে কেস করেছে মার্কেট ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ নিয়ে। সে এপ্রিলে টুইটারের ৯.২% শেয়ার কেনে কিন্তু সবাইকে জানিয়েছে আরোও দেরীতে। ফলে ও টুইটারের শেয়ার কিনেছে বেশ কমে। ইদানিং আবার টেসলার শেয়ারের মূল্য বেশ কমে গেছে। সে তার টেসলা শেয়ারকে কোল্যাটারাল রেখেই টুইটার কেনার জন্য ঋণ পেয়েছিল।  কিন্তু এখন শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় তার টুইটার কিনবার জন্য যতখানি ঋণ দরকার সেটা নাও পেতে পারে।”

            লতা বলল, “হ্যা, টেসলার শেয়ার এক হাজার থেকে সাত শ তে নেমে এসেছে। ভাল হয়েছে। ব্যাটা বদমাশ! টুইটার হাতে পেলে সব পাগল ছাগল গুলোকে আবার এক্সেস দেবে। ট্রাম্পের ফালতু ক্যাচাল মোটেই শুনতে চাই না।”

            কবীর বলল, “তুমি যে এতো টুইটার ভক্ত সেটা তো জানতাম না।”

            “ভক্ত নই কিন্তু এখন তো সবাই দেখি টুইট করে,” লতা হাসতে হাসতে বলল। “টুইটারে না থাকলে এখন তো খুব বেইজ্জতী।”

            সাইদ বলল, “আমি তো এখনও টুইট করি না। কেউ করলেও খুব একটা দেখা হয় না। আমার ধারণা এটা এখন রাজনীতিবিদদের একটা নতুন অস্ত্র হয়ে দাড়িয়েছে।”

            বেলা বলল, “আচ্ছা, প্রভিন্সিয়াল ভোট তো এসে গেল। কে কোথায় ভোট দিচ্ছেন আপনারা?”

            জালাল বলল, “ভাবী, ভোট কাকে দেব সেটা তো অতি গোপনীয় তথ্য। সেই কথা ত কাউকে বলা যাবে না।”

            বেলা হাসতে হাসতে বলল, “আপনি যে সব সময় লিবারেলদের ভোট দেন সেটা আমরা সবাই জানি।”

            জালাল প্রতিবাদ করল। “গতবার কিন্তু ক্যাথলিনকে ভোট দেই নি। যা সব কেলেংকারী করল। এইবার অবশ্য ডেল ডুকাকে দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। কত কি লোভ দেখাচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ। না চাইতেই যা পাই তাতেই খুশী।”

            জিত হেসে বলল, “বাংলাদেশে যেমন শাড়ী-লুঙ্গী দিয়ে ভোট কেনা হয়। তারা কি আপনাকে সেই জাতীয় লোভ দেখিয়ে পটিয়ে ফেল্ল?”

            জালাল হেসে বলল, “না, না, এখনও পটে যাই নি। বাজার দেখছি। কে কি দিতে চায় দেখাই যাক না। প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভরা গাড়ির লাইসেন্সিং ফি তুলে নিল এমনকি টাকাও ফেরত দিল। হাইওয়ে, হাসপাতাল, সিনিয়র কেয়ার ইত্যাদির উপর প্রচুর অর্থ খরচ করবে। এন ডি পি দেবে ফ্রি ডেন্টাল কেয়ার…”

            রাজা ভাই বলল, “৯০ হাজারের নীচে যাদের ইনকাম শুধু তাদের জন্য…”

            জালাল বলল, “ঐ হল। কয় জন আর তার চেয়ে বেশী ইনকাম করে? ওরা বেশ কিছু নার্স হায়ার করবে। কেয়ার গিভার বেনিফিট দেবে। নর্দার্ন ওন্টারিওর জন্য ডাক্তার হায়ার করবে। ইত্যাদি ইত্যাদি। মিনিমাম ওয়েজ ২০২৬ সালের মধ্যে ঘন্টায় ২০ ডলারে উন্নীত করার ইচ্ছা তাদের।  আচ্ছা এবার দেখা যাক লিবারেলদের কি ইচ্ছা। তারা দশ হাজার শিক্ষক হায়ার করবে, ক্লাশ সাইজ হবে বিশ জন। সারা প্রভিন্স জুড়ে ট্রানজিট ফেয়ার ১ ডলার করে দেবে। মান্থলি পাস মাত্র ৪০ ডলার। পেনশনিয়ারদের গ্যারান্টিড এনুয়াল ইনকাম ১০০০ ডলার পর্যন্ত টপ আপ করবে। এলিজিবিলিটি থ্রেশহোল্ড বাড়িয়ে ২৫০০০ থেকে ৫০০০০ করবে। ১০ ডলার এ বিফোর এন্ড আফটার স্কুল ডে কেয়ার চালু করবে। ইত্যাদি ইত্যাদি…”

            সাইদ বলল, “তা কোনটা তোমার কাছে সবচেয়ে লোভনীয় মনে হচ্ছে?”

            রনি বলল, “এতো যে সব কিছু করবে বলছে টাকা পয়সা কোত্থেকে আসবে? ডাগ ফোর্ড যে লাইসেন্স প্লেট রিনিউয়াল ফি তুলে দিল সেই জন্য তো ওর প্রায় এক বিলিয়ন ডোলার গচ্ছা দিতে হয়েছে। আমাদের জন্য ভালো কিন্তু টাকাটা অন্য কোন খাত থেকে না তুল্লে যে সব ভবিষ্যত পরিকল্পনা করছে সেগুলো করবে কি করে?”

            জিত বলল, “ট্যাক্স বাড়াবে কোন না কোন খানে। সবাই হয়ত বেশী দেবে না। যারা বেশী উপার্জন করছে তাদের কাছ থেকে কিছু বেশী নেবে। আমাদের খুব বেশী চিন্তা করবার কারণ নেই। আমরা হলাম ছা পোষা মানুষ।”

            বেলা হেসে বলল, “তাই নাকি? আপনাদের কথা বার্তা আর তর্কাতর্কি শুনলে তো মনে হয় আপনারা সব বাঘের বাচ্চা!”

            সাইদ বলল, “বাচ্চাই তো, বড় তো হই নি এখনও।”

             সবাই হেসে উঠল।

            জিত বলল, “বাঘের বাচ্চার কথাই যখন উঠল তখন এই সুযোগে একটা জোক বলি।”

            একটা বাচ্চা বাঘ তার মেয়ের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করল, “মা, আমাদের পেছনের পা গুলো এতো শক্তিশালী কেন?”

            বাঘ মা বলল, “এই পাগুলো আছে বলেই তো আমরা ত্রিশ ফুট পর্যন্ত লাফিয়ে যেতে পারি, সাঁতার কাটতে পারি, তাড়া করে শিকার ধরতে পারি।”

            বাচ্চা বাঘ বলল, “আচ্ছা! আমাদের সারা শরীরে এই যে ডোরাকাটা দাগ আছে, এগুলো কেন আছে?”

            বাঘ মা হেসে বলল, “এগুলো আছে বলেই তো আমরা জংগলে গাছ পালার মধ্যে লুকিয়ে থেকে শিকারের পেছনে ধাওয়া করতে পারি।”

            বাচ্চা বাঘ সমঝদারের মত মাথা দুলিয়ে নিজের চারদিকে বার দুয়েক পাক খেয়ে বলল, “তাহলে মা, আমরা এই চিড়িয়াখানার মধ্যে কি করছি?”

শুজা রশীদ

কথা সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

টরন্টো