কানাডার অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ইমিগ্রেন্টদের গুরুত্ব অপরিসীম

কানাডা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ১৩ লাখের বেশি ইমিগ্রেন্ট নেবার পরিকল্পনা করছে। ফেডারেল ইমিগ্রেশন মন্ত্রী সিন ফ্রেসার সম্প্রতি তার নতুন পরিকল্পনায় বলেন, কানাডা ২০২২ সালে চার লাখ ৩১ হাজার ৬৪৫ জনকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি দেবে, পরের বছর দেবে চার লাখ ৪৭ হাজার ৫৫ জনকে এবং ২০২৪ সালে চার লাখ ৫১ হাজার জনকে। মন্ত্রী আরো বলেন, মহামারী প্রশমনের পর কানাডা ঘুরে দাঁড়ালেও সব খাতেই হাজার হাজার পদ এখনও শূন্য রয়েছে।

ফেডারেল ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ফ্রেসার বলেন, ‘আমরা যদি সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দেয়া আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক পরিষেবা ও সুবিধাগুলি ধরে রাখতে চাই তাহলে আমাদের আরও বেশি সংখ্যক শ্রমিক ও কম বয়সী পরিবারকে এদেশে আসার সুযোগ দিতে হবে। কারণ, মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধারের মূল চাবিকাঠি হবে বাড়তি ইমিগ্রেশন।’

কানাডা ১৩ লাখের বেশি ইমিগ্রেন্ট নেবার পরিকল্পনা করছে। ছবি : গেটিইমেজ

সন্দেহ নেই ইমিগ্রেশন মন্ত্রী ফ্রেসারের এই পরিকল্পনা যুগোপযোগী। বিশেষ করে মাহমারীর কারণে এমনিতেই কানাডায় ইমিগ্রেন্ট আসার হার কমে গেছে নানান জটিলতার কারণে। তাছাড়া অনেক আবেদনও জমা পরে আছে মহামারীর সময়ে ঠিক মত কাজ করতে না পারায়। হিসাবে দেখা গেছে, গত পহেলা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি পারমানেন্ট ও টেম্পোরারি রেসিডেন্সির আবেদন জমা পড়ে আছে। সরকার বলছে, মহামারীর সময় সৃষ্ট মন্থরতার কারণেই মূলত আবেদনের এই স্তূপ জমেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বাড়তি অভিবাসন এখন জরুরী।

আমরা জানি পাশ্চাত্য বিশ্বে জেনোফোবিয়া (xenophobia) বা বিদেশীদের সম্বন্ধে অহেতুক ভয়ের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে। আর এতে ইন্ধন যোগাচ্ছে রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু কানাডার পরিস্থিতি আমরা লক্ষ্য করছি পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশ থেকে অনেকটাই ভিন্ন। ইতিপূর্বে Environics Institute এবং Canadian Race Relations Foundation এর এক যৌথ জরিপে দেখা গেছে কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। টরন্টোতে এই মতের সমর্থকদের সংখ্যা বেশী এবং যারা উচ্চ শিক্ষিত (ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী) তারাও এই মতের পক্ষে। জরিপে আরো বলা হয়, অধিকাংশ কানাডিয়ান আগামীতেও এই বিশ্বাস ধরে রাখবেন যে, কানাডার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ভূমিকা ইতিবাচক।

এদিকে অন্য এক জরিপে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জব মার্কেটের উন্নতি ও বিকাশের জন্য কানাডা এখন সম্পূর্ণভাবে ইমিগ্রেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছে। স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার সর্বশেষ এম্পøয়মেন্ট ডাটা এই তথ্যই দিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরো জানা যায় জব মার্কেটে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের সংখ্যার চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে জব মার্কেটে কানাডায় জন্ম নেয়া নাগরিকদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

মূলত: কানাডায় জন্ম নেয়া বয়স্ক লোকেরা ক্রমশ কাজ থেকে অবসরে যাচ্ছেন এবং সেই স্থানগুলো দখল করছেন তরুন ইমিগ্রেন্টরা। তাছাড়া হিসাবে আরো দেখা যায়, কানাডায় জন্ম নেয়া বয়স্ক নাগরিকের মধ্যে অবসরে যাওয়ার সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে নতুন কর্মজীবীর সংখ্যা তাদের উত্তরসূরীর মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে একটা শূণ্যতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন এই পরিস্থিতি এমনটাই ইঙ্গিত করছে যে, কানাডার ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন একটা বিশেষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। আর এই অবস্থার কারণে এখন ইমিগ্রেন্ট কর্মীবাহিনী ছাড়া কানাডার অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয়।

কানাডার বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট গোল্ডি হাইডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে এক বিবৃতিতে বলেন, সব সময়ই শ্রমিক ঘাটতি বিদ্যমান এমন একটি অর্থনীতি তার সব সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে না।

সুতরাং এই পরিস্থিতিতে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই কানাডার। আমরা মনে করি ইমিগ্রেন্টদের কঠোর পরিশ্রম ও কানাডার প্রতি তাঁদের ভালবাসা দেশটিকে আরো অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।