ভ্যাঙ্কুভার, টরন্টো ও এডমন্টনে অভিবাসীর হার সবচেয়ে বেশি

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, ভ্যাঙ্কুভার, টরন্টো ও এডমন্টনে অভিবাসী ধারণের হার সর্বোচ্চ। সংস্থাটি সেইসব অভিবাসীদের ওপর আলোকপাত করেছে যারা ২০১৪ সালে কানাডায় এসেছেন এবং ২০১৯ সালে ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন মেডেলেইন কামিংস। 

কানাডায় আসার পাঁচ বছর পর এখানে স্থায়ী হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে ৮৬.১ শতাংশ ভ্যাঙ্কুভারে থেকে যায়। অভিবাসী ধরে রাখার হার যে কোনও মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে এখানেই সর্বোচ্চ। এর পরেই রয়েছে টরন্টো (৮৫.৫ শতাংশ) এবং এডমন্টনের (৮৪.৬ শতাংশ) অবস্থান।

স্ট্যাটসক্যান-এর হিসাবে মেট্রোপলিটন এলাকা বলতে সেইসব এলাকা বোঝানো হয় যেখানে অন্তত এক লাখ বাসিন্দা রয়েছে এবং যাদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দা কেন্দ্রীয় এলাকায় বসবাস করে।

পারিবারিক স্পন্সরশিপের আওতায় এবং উদ্বাস্তু হিসাবে আসা অভিবাসীর হারও ভ্যাঙ্কুভারে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে এডমন্টনে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী এসেছেন অর্থনৈতিক অভিবাসী হিসাবে।

এডমন্টনের ম্যানোনাইট সেন্টার ফর নিউকামারস কানাডায় অভিবাসীদের জন্য ভাষা নির্দেশনা কোর্সের আয়োজন করে। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার নতুন উপাত্ত অনুযায়ী এডমন্টন ও ক্যালগেরিতে অভিবাসীর হার ৮০ শতাংশের বেশি। (এডমন্টন ম্যানোনাইট সেন্টার ফর নিউকামারস-এর সৌজন্যে)

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ট্যাক্স দিয়েছেন এমন অভিবাসীদের বেশিরভাগই প্রথমে যে প্রদেশে ঢুকেছিলেন সেখানেই থেকে গেছেন। ২০১৪ সালে কানাডায় আসা অভিবাসীদের ৮৫ শতাংশেরও বেশি এখানে আসার পাঁচ বছর পর সেই প্রদেশ বা অঞ্চলেই বসবাস করছেন যেখানে তার প্রথম ঢুকেছিলেন।

প্রাদেশিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী ধারণের হার অন্টারিওতে (৯৩.৭ শতাংশ)। এর পর রয়েছে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (৮৯.৭ শতাংশ) এবং আলবার্টা (৮৯ শতাংশ)। সবচেয়ে কম অভিবাসী ধারণের হার আটলান্টিক কানাডা প্রদেশে। সেখানে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে বসবাস করেন মাত্র ২৮.১ শতাংশ অভিবাসী।

পারিবারিক স্পন্সরশিপের আওতায় এবং উদ্বাস্তু হিসাবে আসা অভিবাসীর হারের দিক থেকে মন্ট্রিল ছিল সবার ওপরে। কিন্তু অর্থনৈতিক অভিবাসীর সংখ্যা অনেক কম, আর উইনিপেগে পারিবারিক স্পন্সরশিপে আসা অভিবাসীর হার ৮২ শতাংশ হলেও এই নগরীতে উদ্বাস্তু হিসাবে আসা অভিবাসীর হার ৪০ শতাংশের মত।

কর্মসংস্থান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

টরন্টোর রায়ারসন ইউনিভার্সিটির গবেষক মর্শিয়া আকবর বলেন, অভিবাসীদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের প্রভাব কাজ করে। তবে কর্মসংস্থান ও কাজের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়।

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে স্টাডি পারমিট নিয়ে কানাডায় আসা অভিবাসীদের চেয়ে যারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে এসেছেন তাদের সেখানেই থেকে যাবার সম্ভাবনা বেশি যে প্রদেশে বা টেরিটোরিতে তারা প্রথম প্রবেশ করেন।

রায়ারসন ইউনিভার্সিটির কানাডা এক্সিলেন্স রিসার্চ চেয়ার ইন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন-এর সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মর্শিয়া আকবর বলেন, “তারা (অভিবাসীরা) সেখানেই কাজ করেন, একধরণের আপন করে নেয়ার বোধ তৈরি করে নেন এবং কাজের অভিজ্ঞতা অর্জিত হলে সেটি তাদের অন্য চাকরি খুঁজে নিতেও সহায়ক হয়, সুতরাং তারা অন্য কোনও প্রদেশে যাবার তাকিদ সেভাবে অনুভব করে না।”

এডমন্টনের ম্যাককুয়েগ দেসরোচার্স-এর অভিবাসন আইনজীবী নাতান পো বলেন, এডমন্টন ও ক্যালগেরিতে অভিবাসী ধারণের হার ৮০ শতাংশের বেশি দেখে তিনি অবাক হননি। ক্যালগেরিতে এই হার ৮২.৯ শতাংশ।

তিনি বলেন, “আমার খদ্দেরদের এক বৃহদাংশ এখানে বাড়ি করার কথা ভাবছেন আর বেশিরভাগ খদ্দের এখানেই বসবাস করছেন।”

তিনি আরও যোগ করেন যে, অন্য কোনও কোনও প্রদেশের চেয়ে আলবার্টায় বিদেশি শ্রমিকদের বৃহত্তর অংশের আসার সম্ভাবনা আছে, এটি এখানে অভিবাসী ধারণের হারকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা দীর্ঘকাল ধরে সংগৃহীত অভিবাসন সম্পর্কিত ডেটাবেসের (Longitudinal Immigration Database) তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছে। এতে লোকেরা কেন স্থানান্তরে না গিয়ে একটি জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে তার কোনও ব্যাখ্যা নেই। তবে মর্শিয়া আকবর ও তার সহকর্মীরা এই প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করছেন, পরীক্ষা করে দেখছেন, কী কারণে কিছু অভিবাসী অন্টারিও বা সাসকাচুনের কোনও ছোট্ট শহরে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে থেকে যাচ্ছেন।

মর্শিয়া আকবর বলেন, এ ধরণের তথ্য-উপাত্ত থেকে অভিবাসী ধারণের সফল কৌশল সম্পর্কে জানা সম্ভব।

এডমন্টনে অভিবাসী নারীদের সহায়তাকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চেঞ্জিং টুগেদার-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার জোসেফাইন অ্যালার্ড বলেন, “কোনও কমিউনিটির বন্ধুসুলভ আচরণ হলো অন্যতম বিষয় যাকে আমরা বলতে পারি, লোকেদের ধরে রাখার একটি উপায়।”

৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে ফিলিপিন্স থেকে কানাডায় আসা অ্যালার্ড বলেন, তিনি সাহায্য করেছেন এমন লোকেদের মধ্যে কিছু সংখ্যক অন্য জায়গায় চলে গেলেও অল্প কয়েক মাস পরেই ফিরে এসেছেন, তারা বলেছেন, এই শহরেই তারা বেশি বরিত বলে অনুভব করেন।

বেশিরভাগ অভিবাসী এডমন্টনে স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও অ্যালার্ড বলেন, এখান থেকে অভিবাসীদের অন্যখানে যাবার সবচেয়ে বড় কারণ হলো আলবার্টায় বিদেশি সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি না দেয়া।

তিনি বলেন, “এখানে আসা খদ্দেরদের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, ওটাই এখানকার একমাত্র বাঁধা।”

সূত্র : সিন ডেভিডসন / সিটিভি নিউজ