কানাডায় নকল মসজিদ! উদ্বিগ্ন মুসলিম সম্প্রদায়

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক ॥ ডিসেম্বর ১০, ২০২১: কানাডার আলবার্টায় সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে একটি নকল মসজিদ নির্মান করা হয়েছে। এখানে নামাজ আদায় করা হয় না। মসজিদে অন্য যে সব রীতি-নীতি পালন করা হয়ে থাকে সেগুলোও এখানে করা হয় না।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এখানে কেন মসজিদ নির্মান করা হলো? কারা নির্মান করলো এবং কি উদ্দেশ্যে? আর সেনা ঘাঁটিকেই বা কেন বেছে নেয়া হলো এরকম একটি মসজিদ নির্মান করার জন্য। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন স্টিফেন ডেভিড কুক।

রিপোর্টে বলা হয়, বিষয়টি প্রথম নজরে আসে মাহমুদ মুররা নামের এক মুসলিম ব্যক্তির নিকট। সম্প্রতি তিনি ঐ অঞ্চলে elk (এক জাতীয় হরিণ) শিকারে বেরিয়েছিলেন। শিকারের এই মৌসুমে দক্ষিণ আলবার্টায় অবস্থিত সেনাবাহিনীর ঘাঁটিটি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

নকল মসজিদ কেন নির্মান করা হলো তা জানতে চাওয়া হলে কানাডিয়ান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণের সময় আশপাশের পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব একটা বাস্তব পরিবেশের ছোঁয়া লাগানোর চেষ্টা করা হয় যেটা আসল যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে সেনা সদস্যদেরকে মোকাবেলা করতে হতে পারে।

কানাডার আলবার্টায় সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে একটি নকল মসজিদ নির্মান করা হয়েছে। ছবি : সিবিসি নিউজ

কিন্তু মাহমুদ মুররা’র কাছে বিষয়টি মোটেও পছন্দ হয়নি। প্রায় এক দশক আগে লেবানন থেকে কানাডায় আসা এই মুসলিম ব্যক্তির কাছে নকল মসজিদটি বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে হয়েছে। কারণ, তিনি বলেন, মসজিদ টেররিস্টদের সিম্বল বা প্রতীক নয়। এটি মুসলিমদের প্রতীক। আর এখানেই সমস্যা।

ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস এর প্রধান নির্বাহী মোস্তফা ফারুক বলেন মাহমুদ মুররা নকল মসজিদের একটি ভিডিও ধারণ করেছে এবং এটি ইতিমধ্যেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করি নকল এই মসজিদ নির্মানের বিষয়টি মুসলিম কমিউনিটিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে বিশেষ করে যখন আমরা দেখছি সেনাবাহিনীতে হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট বা শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের অবস্থান রয়েছে।

মোস্তফা ফারুক আরো বলেন, কোন সশস্ত্র বাহিনীর ঘাঁটিতে এ ধরণের নকল মসজিদ নির্মানের বিষয়টি সত্যিই বড় রকমের উদ্বেগের বিষয়। 

কানাডিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর Suffield (The British Army Training Unit) ঘাঁটির কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল স্টিফেন বার্ক বলেন, ‘স্থাপনাটি নির্মান করা হয়েছিল ২০০৬ সালে একটি কৃত্রিম গ্রামের অংশ হিসাবে। আর এটি ব্যবহার করা হয়েছিল সম্পূর্ণভাবে বৃটিশ সৈন্যদের দ্বারা। ‘ড্রাই’ প্রশিক্ষণ অঞ্চল হিসাবে এটির ব্যবহার হয়েছিল। অর্থাৎ এখানো সত্যিকারের কোন গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়নি। অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। তবে কোন সুটিং অর্থাৎ গুলি ছোড়া হয়নি।’

কর্নেল স্টিফেন জানান, বছর দশেক আগেও সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে আফগানিস্তানের অনুরূপ দৃশ্যকল্প তৈরী করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে অস্থায়ী কিছু স্থাপনা তৈরী করা হয়েছিল প্রশিক্ষণের জন্য। আর এগুলোর জন্য জাহাজের বড় বড় কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়।

কর্নেল স্টিফেন বলেন, ‘হাই ফাইডেলিটি এনভায়রনমেন্ট’ অর্থাৎ বাস্তব দেখায় এমন সুযোগ-সুবিধাগুলো সৈন্যদের প্রশিক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’

তবে বৃটিশরা আলবার্টার বর্তমান প্রশিক্ষণ ক্যাম্পটি ভেঙ্গে নতুন দৃশ্যের একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প তৈরীর পরিকল্পনা করছে এমনটাই জানান কর্নেল স্টিফেন।

কিন্তু ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস এর প্রধান নির্বাহী মোস্তফা ফারুক প্রশিক্ষণের নামে নকল মসজিদ নির্মান এবং সেই মসজিদকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করার  বিষয়টি মেনে নিতে রাজী নন।

তিনি বলেন নকল এই মসজিদ সশস্ত্র বাহিনীর ঘাঁটি থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত এবং কানাডিয়ান মসলিমদের জন্য ৯/১১ এর পর যে সংস্কৃতি ও আতঙ্কের জন্ম হয়েছিল তার একটি স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে এটি জনসমক্ষে প্রদর্শিত হওয়াও উচিত।

এদিকে কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অনিতা আনন্দের প্রেস সেক্রেটারী ড্যানিয়েল মিন্ডেন বলেন, তাদের অফিস নকল মসজিদের এই কাঠামো সম্পর্কে অবগত ছিল।

সিবিসি নিউজে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় তিনি বলেন, কানাডায় ইসলামোফোবিয়া, পদ্ধতিগত বর্ণবাদ বা ধর্মীয় গোঁড়ামির কোন স্থান নেই। আমরা সর্বদা সম্ভাব্য সবচেয়ে জোরালো ভাবে এর নিন্দা জানাবো।