ক্যাশ কাউন্টারে কোনও পণ্যের বাড়তি দাম নিচ্ছে?

ভুলটি ধরিয়ে দিলে আপনি হয়তো সেটি বিনামূল্যে পেতে পারেন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : আমাদেরকে নিয়মিতই বাজারে যেতে হয়। করতে হয় কেনাকাটা। কিন্তু কাউন্টারে এসে দাম পরিশোধের পর আমরা কজন বিলটা যাচাই করে নেই? অনেকেই করিনা। কিন্তু আপনি জানেন কি কোনও পণ্যের যদি বাড়তি দাম নেয়া হয়ে থাকে তাহলে আপনি হয়তো সেটি বিনামূল্যে অথবা ছাড়কৃত দামে পেতে পারেন?

সিবিসি নিউজের সোফিয়া হ্যারিস সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। আসুন দেখে নেই তাতে কি পরামর্শ দেয়া হয়েছে ক্রেতাদের উদ্দেশে।

কানাডার অনেক বৃহৎ চেনশপসহ সাত হাজারেরও বেশি খুচরা দোকান মূল্য নির্ভুলতা কোডের  স্বেচ্ছামূলক স্ক্যানার (চৎরপব অপপঁৎধপু ঝপধহহবৎ ঈড়ফব) ব্যবস্থার সদস্য।

কানাডার রিটেইল কাউন্সিলের (আরসিসি) ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত কোডে এমন নির্দেশনা আছে যে, ক্যাশ কাউন্টার বা চেকআউটে স্ক্যান করে নির্দিষ্ট কোনও পণ্যের বাড়তি দাম নেয়া হয়ে থাকলে, ওই ক্রেতা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

অন্টারিওর নিউ ক্যাসলের বাসিন্দা রোক্সেন জোশুয়া এক দশকেরও আগে এই কোড সম্পর্কে জেনেছেন। তিনি বলেন, ‘আই লাভ ইট।’ তিনি জানান, ক্যাশ কাউন্টারে পণ্যমূল্যের বিলে ভুল ধরার ফলে গত কয়েক বছরে তিনি অন্তত দেড় ’শ পণ্যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘একাধিক কারণে এটি এক দারুণ ব্যাপার।’ ‘একটি কারণ অবশ্যই এটা যে, আমি বিনামূল্যে বা ছাড় করা দামে পণ্য পাচ্ছি। তবে দ্বিতীয়ত, এটি স্টোরগুলোকে দায়বদ্ধ রাখে।’

দোকান থেকে বেরিয়ে যাবার আগে কেনাকাটার বিলটা পরীক্ষা করে দেখলে আপনার অর্থ এতটাই বেঁচে যেতে পারে যা আপনি ভাবতেও পারবেন না। এজন্যে ধন্যবাদ পেতে পারে কানাডার স্বেচ্ছামূলক স্ক্যানার মূল্য নির্ভুলতা কোড। (গেটিইমেজ)

কীভাবে মূল্যছাড় পাবেন

কানাডায়  মূল্য নির্ভুলতা কোডের স্বেচ্ছামূলক স্ক্যানার ব্যবস্থা চালু আছে প্রায় দুই ধরে, যদিও অনেক ক্রেতাই এখনও এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। স্টোরগুলো তাদের ক্যাশ কাউন্টার বা চেকআউটে স্ক্যানিং করার যন্ত্র বসানো শুরু করার পর ভোক্তাদের আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে খুচরা বিক্রেতাদের সংগঠনগুলো ২০০২ সালে এই কোড তৈরি করে।

কানাডার রিটেল কাউন্সিলের ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সরকারি সম্পর্ক বিষয়ক পরিচালক গ্রেগ উইলসন বলেন, ‘যন্ত্রের মাধ্যমে বারকোড পরীক্ষা করার বিষয়ে মানুষের মধ্যে আস্থার অভাবের একটা ব্যাপার ছিলো।’

সারা দেশে যেসব খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থার শরিক হয়েছে কোডটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শুধু কুইবেক ছাড়া। কারণ খুচরা পণ্যের দাম নেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করলে তার প্রতিকারের জন্য কুইবেকের নিজস্ব প্রাদেশিক আইন আছে। 

এই কোড কীভাবে কাজ করে

একজন ক্রেতা যখন চেকআউটে স্ক্যান করে কোনও পণ্যের দাম বেশি ধরা হয়েছে বলে বিক্রেতাকে সতর্ক করেন তখন কোড ব্যবস্থার আওতাভুক্ত বিক্রেতাকে অবশ্যই নিম্নতম দামটা মেনে নিতে হবে।

তার ওপর, যদি সেই পণ্যটির দাম ১০ ডলারের বেশি হয়, তাহলে ক্রেতা সেটির দামের ওপর ১০ ডলার ছাড় পাবেন। যদি সেটির দাম ১০ ডলারের কম হয় তাহলে ক্রেতা সেটি বিনামূল্যে পাবেন।

সম্প্রতি অন্টারিওর লিমিংটনের বাসিন্দা কারেন মেলো বেস্ট বাই থেকে একটি রোকু স্ট্রিমিং ডিভাইস কেনেন। তিনি বলেন, দোকানে পণ্যটির ঘোষিত দাম ছিলো ৪৪.৯৯ ডলার। কিন্তু কাউন্টারে ক্যাশিয়ার স্ক্যান করে তার কাছ থেকে দাম রাখে ৬৪.৯৯ ডলার।

মেলো এই ভ্রান্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কোডের কথা উল্লেখ করলে তার কাছ থেকে নিম্নতম মূল্য নেয়া হয়, সেইসঙ্গে ১০ ডলার ছাড় পান তিনি। 

তিনি বলেন, ‘৬৫ ডলারের পরিবর্তে আমি ৩৫ ডলার পরিশোধ করি। আমার কাছে এই কোড হলো একজন খুচরা বিক্রেতার সৎ থাকার নিশ্চয়তা।’

ব্যতিক্রম

উল্লেখিত  কোড প্রযোজ্য হবে সেইসব স্ক্যান করা পণ্যের ক্ষেত্রে যেগুলোর দাম তার প্যাকেটের গায়ে, দোকানের অনলাইন বিজ্ঞাপনে অথবা দোকানের ফলকÑ যেমন তাকের ওপর, লেখা আছে।

আলাদা করে দাম নির্ধারিত আছে এমন পণ্যগুলি এই কোডের আওতায় পড়ে না, আর ওজন দরে বিক্রির পণ্য, প্রেসক্রিপশনের ওষুধ এবং চিকিৎসক প্রেসক্রাইব করেন না এমন সব প্রসাধনও কোডের বাইরে।

বৃহৎ চেনশপের মধ্যে এই কোড ব্যবস্থার শরিক আছে বেস্ট বাই, কানাডিয়ান টায়ার, কস্টকো, হোম ডিপো, লবলজ, শপার্স ড্রাগ মার্ট, সোবেইস, ঞড়ুং জ টং এবং ওয়ালমার্ট কানাডা।

এই ব্যবস্থায় অংশ নেয়া বিক্রেতাদের এই কোড সম্পর্কিত একটি সাইনবোর্ড দোকানে বা এর প্রবেশমুখে লাগানোর কথা। যদিও ক্রেতারা এটি খেয়াল না-ও করতে পারেন, যদি না তারা এই কোডের কথা আগে থেকে জানেন।

জোশুয়া বলেন, তিনি এই কোডের কথা প্রথম জেনেছেন একটি অনলাইন ব্লগে এ বিষয়ক লেখা পড়ার মাধ্যমে।

তার জন্য এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা ছিলো যখন তিনি সংস্কার কাজের জন্য হোম ডিপো থেকে পানির কল ও টাইলসসহ কিছু বাথরুম সামগ্রী কিনতে যান। আটটি দ্রব্যের সবগুলোরই দাম ধরা হয়েছিলো ভুলভাবে। ফলে তিনি প্রতিটি পণ্যেই ১০ ডলার করে ছাড় পান।

তিনি বলেন, ‘আমার এমন মনে হচ্ছিলো যেন লটারি জিতেছি। এতে আমি অতিরিক্ত ৮০ ডলার  ফেরত পাই।’ 

তবে, তিনি সতর্ক করেন যে, প্রক্রিয়াটি সব সময় খুব নির্ঝঞ্ঝাট নয়। এমন কিছু পণ্য আছে যেগুলোতে কোড অনুযায়ী ছাড় পেতে তাকে দোকানকর্মীর সঙ্গে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়েছে, কারণ, সেই কর্মীটি এই কোড সম্পর্কে জানতো না। 

জোশুয়া বলেন, ‘আমার মনে হয়, দোকানকর্মীরা যদি আরেকটু বেশি শিক্ষিত হয় তাহলে আমাদেরকে আর এধরণের সমস্যায় পড়তে হবে না।’

যদিও নতুন কর্মচারীরা অনেক সময় কোড সম্পর্কে যথেষ্ট জানে না, তবু আরসিসির মি. উইলসন বলেন, ব্যবস্থাটি ভালোভাবেই কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা খুব কমই অভিযোগ পাই।’

কোড নিয়ে কোনও ক্রেতার সমস্যা যদি অমীমাংসিত থেকে যায় তাহলে তিনি অভিযোগ করতে পারেন, এই ফোন নম্বরে: ১-৮৬৬-৪৯৯-৪৫৯৯।

মেলো জানান, একবার একটি বৃহৎ খুচরা দোকানের ক্যাশিয়ার তার কেনা দুটি ছাতার ঘোষিত নিম্নতম দাম মেনে নিতে অস্বীকার করলে তিনি অভিযোগের নম্বরে যোগাযোগ করেছিলেন।

তিনি বলেন, ওই নম্বরে কল করার পর দ্রুতই তার সমস্যা মিটেছে এবং তিনি যতটা সুবিধা পাবার জন্য দরকষাকষি করছিলেন তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘একটু পরেই আমি ম্যানেজারের কাছ থেকে পাল্টা কল পাই। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভুলের মাসুল হিসাবে আপনি (বিনামূল্যেই) ছাতা দুটি নিয়ে যেতে পারেন।’

এই কোড বাধ্যতামূলক নয় কেন?

কুইবেকে প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতাকে বাধ্যতামূলকভাবে মূল্য নির্ভুলতার আইন মেনে চলতে হয়। সেই আইনও উল্লেখিত কোডের অনুরূপ। এই প্রদেশ আলাদাভাবে মূল্য নির্ধারণ করা আছে এমন  বেশিরভাগ পণ্যের জন্যও নিয়মবিধি প্রণয়ন করেছে। সেখানে এসব পণ্যের ক্ষেত্রেও দোকানের ক্যাশ কাউন্টারে বেশি দাম রাখা হলে ক্রেতার কাছ থেকে নিম্নতম মূল্য নিতে বাধ্য থাকেন দোকানি।

আলাদা করে মূল্য নির্ধারিত আছে এমন পণ্য স্ক্যানার প্রাইস অ্যাক্যুরেসি কোডের আওতায় রাখা হয়নি। এর কারণ হিসাবে উইলসন বলেন, এই বিষয়টি কানাডার প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত আইনের আওতায় পড়ে। ওই আইন অনুযায়ী বিক্রেতারা কোনও পণ্যের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর মূল্য দাবি করতে পারে না।

সুতরাং, এই আইন অনুযায়ী কোনও বিক্রেতা পণ্যের গায়ের মূল্য নিতে অস্বীকার করলে ক্রেতা কমপিটিশন ব্যুরোতে অভিযোগ করতে পারেন এবং ব্যুরো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

ভোক্তা অধিকার বিষয়ক আইনজীবী ও প্রবক্তা ডেনিয়েল সাই বলেন, তিনি মনে করেন, সব খুচরা বিক্রেতার জন্যই বাধ্যতামূলক বিধিবিধান থাকা দরকারÑ অন্ততপক্ষে বৃহৎ চেনশপের ক্ষেত্রেÑ যাতে তারা কোনও পণ্যের গায়ে লেখা বা বিজ্ঞাপিত নিম্নতম মূল্য নিতে বাধ্য থাকে।

তিনি বলেন, “সাধারণ নিয়ম হিসাবে এটাই যুক্তিযুক্ত যে, ক্রেতা হিসাবে আপনি যে মূল্যটা দেখতে পাচ্ছেন সেটাই পরিশোধ করবেন।”