টরন্টোতে ব্যস্ত সড়কের মোড়ে বাঁয়ে ঘোরা গাড়ির গতি কমিয়ে আনতে গতিরোধক বসানো হচ্ছে

পাইলট প্রকল্পের লক্ষ্য হবে পথচারী ও সাইকেল আরোহীদের বিপদ কমানো

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৯ জুলাই ২০২১: টরন্টো শহরে বাঁয়ে ঘোরা গাড়ির গতি কমিয়ে আনার একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়েছে। যানবাহন দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও জখমের ঘটনা দূর করার লক্ষ্যে নগরীর যে জিরো ভিশন সড়ক নিরাপত্তা পরিকল্পনা রয়েছে এই প্রকল্প তারই অংশ। রিপোর্ট করেছেন সিবিসি নিউজ এর মরিয়ম খাজা।

প্রকল্পের অংশ হিসাবে নগরীর সর্বত্র সড়কের মোড়গুলোতে রাবারের গতিরোধক বসানো হবে। পথচারী ও সাইকেল আরোহীদের সঙ্গে বাঁয়ে মোড় নেয়া গাড়িগুলির দুর্ঘটনায় পড়া রোধ করাই এর লক্ষ্য। নগর কর্তৃপক্ষ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এ ধরণের দুর্ঘটনা টরন্টোতে সড়ক ব্যবহারকারীদের মৃত্যু ও জখম হওয়ার জন্য দায়ী দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে।

গতিরোধক বসানো হবে এজন্যে যে, গাড়ি চালকরা যেন যাত্রী পারাপারের জায়গাগুলিতে বাঁয়ে ঘোরার সময় গতি কমিয়ে আনতে উৎসাহিত হয়। এর পেছনে এমন ধারণা কাজ করছে যে, এতে করে চালকরা মোড় নেওয়ার সময় গতি কমিয়ে আনার পাশাপাশি পথচারী ও সাইকেল আরোহীদের আরও ভালোভাবে দেখতে পারবেন।

এসব গতিরোধকের প্রথম কয়েকটি এরই মধ্যে বসানো হয়েছে। নগর কর্তৃপক্ষ জানান, গত জুলাই মাসে দুটি মোড়ে গতিরোধক বসানো হয়। এর একটি বসানো হয়েছে শেপার্ড অ্যাভিনিউ ও কেনেডি রোডের মোড়ে, আরেকটি ফিঞ্চ অ্যাভিনিউ ও স্যান্ডহার্স্ট সার্কেলে।

আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ একই রকম আরও কয়েকটি গতিরোধক বসানো হবে। আগে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর ইতিহাস ও সেগুলো কতটা গুরুতর ছিলো সেসব বিবেচনায় এবং আগের নিরাপত্তা পর্যালোচনা দেখে গতিরোধক বসানোর স্থান নিরূপণ করা হবে।

উত্তর স্কারবরো থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর সিনথিয়া লাই বলেন, তিনি মনে করেন, এই পাইলট প্রকল্প টরন্টোর সড়কগুলো বিশেষভাবে নগর উপকণ্ঠের সড়ক আরও নিরাপদ করবে। তার এলাকাতেই প্রথম গতিরোধক বসানো হয়েছে।

সিনথিয়া বলেন, ‘গতিরোধক বসানো এবং যানবাহনের গতি সীমিতকরণের জন্য আমার ওয়ার্ড থেকে অনেক অনুরোধ পেয়েছি। আমার মনে হয়, নগর উপকণ্ঠের দিকে এই উদ্যোগ আরও বেশি করে নেওয়া জরুরি, কারণ মানুষ ওখানেই গাড়িতে স্পিড তোলে এবং তেমন একটা সতর্ক থাকে না।’

যথাযথ পদক্ষেপ, বলছেন সক্রিয় প্রবক্তারা

এই পাইলট প্রকল্প সাইকেলআরোহী ও পথচারীদের নিরাপত্তায় একটি যথাযথ পদক্ষেপ। বলেন সাইকেল টরন্টোর প্রচারণা ব্যবস্থাপক কেভিন রুপাসিংঘে। সাইকেল টরন্টো হলো নগরীতে নিরাপদ সাইক্লিংয়ের পক্ষে প্রচারণা চালানো একটি সংগঠন। রুপাসিংঘে বলেন, প্রচুর পথযাত্রী থাকে এমন ব্যস্ত সড়কে বাঁয়ে মোড় ঘোরা চালকদের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে ভাবতে হবে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেয়র জন টোরি বলেন, তিনি নতুন পাইলট প্রকল্পের ফলাফল এবং ‘এই পদক্ষেপ সারা শহরে সম্প্রসারণ করা হবে কিনা সেটি দেখার’ অপেক্ষায় আছেন। নগর কর্তৃপক্ষ আলাদা এক বিবৃতিতে বলেছে, আগামী সপ্তাহগুলোতে এই পাইলট প্রকল্পের বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে।

অন্যত্র ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে

বাঁয়ে ঘোরার সময় গাড়ির গতি সীমিতকরণের একই রকম পদক্ষেপ এরই মধ্যে অন্য কিছু শহরেও কার্যকর করা হয়েছে।

নিউ ইয়র্ক শহরে ২০১৬ সাল থেকে এমনই একটি পাইলট প্রকল্প চালু আছে। নিউ ইয়র্ক শহরের পরিবহন বিভাগের নিরাপত্তা নীতি ও গবেষণা বিষয়ক পরিচালক রব ভায়োলা বলেন, এটি হলো প্রকৌশলগত সমাধান যা উদ্ভাবন করা হয়েছে সমীক্ষার মাধ্যমে। সমীক্ষায় পথচারীদের গাড়িচাপা দেবার বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়।

নিউ ইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, মোড় নেবার সময় গতি কমানোর ব্যবস্থা যেখানে নেওয়া হয়েছে সেখানে পথচারীদের আহত হবার ঘটনা ২০ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে দ্রুতগতিতে বাঁয়ে মোড় ঘোরার হার কমেছে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ।

ভায়োলা বলেন, “এটি একটি বড় সাফল্য এবং উত্তর আমেরিকার অনেক শহর এটি গ্রহণ করেছে। এটি অত্যন্ত সস্তা, সহজ এবং এর ফলাফল খুব জোরালো, তাই পরিবহনের ক্ষেত্রে এ ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণীয় হয়ে উঠবে।”