লিবারেল পার্টি আবারো ক্ষমতায়
প্রদত্ত অঙ্গীকারগুলো তারা একে একে পুরণ করবে এমনটাই জনগণের প্রত্যাশা
মহামারী সত্বেও কানাডায় জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেল গত ২০ সেপ্টেম্বর। ফলাফলও সামনে চলে এসেছে। ক্ষমতাসীনরাই ফের সরকার গঠনের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র–ডো নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেটা অধরাই থাকল। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনে যতগুলো আসন দরকার তা অর্জনে আবারও ব্যর্থ হয়েছে তার দল লিবারেল পার্টি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই জাতীয় নির্বাচনে আসলে কেউ জেতেনি। ফলাফল দুই বছর আগের (২০১৯ সালের) জাতীয় নির্বাচনের অনুরূপই হয়েছে। ফলে গতবারের মতো সংখ্যালঘু সরকার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ট্র–ডোকে।
এটা ছিল কানাডার ৪৪তম জাতীয় নির্বাচন। গত ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার সারাদিন ভোটগ্রহণ করা হয়। ঐ দিন রাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় লিবারেল পার্টির জয়। ফলাফলে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি ১৫৮টি আসন পেয়েছে। ২০১৯ সালের চেয়ে যা একটি আসন বেশি মাত্র। পপুলার ভোট পাওয়ার হার ৩২ শতাংশ। লিবারেলের চেয়ে পপুলার ভোট বেশি পেলেও (৩৪ শতাংশ) মাত্র ১১৯টি আসন পেয়েছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি। আগের নির্বাচনেও একই সংখ্যক আসন পেয়েছিল দলটি।
তৃতীয় স্থানে আছে আঞ্চলিক দল ব্লক কুইবেকউয়া। তারা পেয়েছে ৩৪টি আসন এবং ভোটের হার ৮ শতাংশ। চতুর্থ পর্যায়ে আছে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। পেয়েছে ২৫টি আসন, ভোটের হার ১৮ শতাংশ। এবং পঞ্চম স্থানে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন পার্টি। তারা পেয়েছে দুটি আসন, ভোটের হার ২ শতাংশ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রধান দলগুলোর মধ্যে দুটি দলের প্রধান নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে পিপলস পার্টি অব কানাডা (পিপিসি) দল কোনো আসনই পায়নি। কিন্তু তারা ভোট পেয়েছে ৫ শতাংশ।
কানাডার রাজনীতিতে দশকের পর দশক ধরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী দুই দল লিবারেল ও প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ। এবারের নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহের প্রচারণাকালেও দল দুটির মধ্যে যেমন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা গেছে, নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ফলাফলের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তিই ঘটেছে। ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি যে উদ্দেশ্য থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা করেছিল সে আকাঙক্ষা অর্জন করতে পারেনি, ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তাদের আবারও সংখ্যালঘু সরকার নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। যেমনটা বলছেন কানাডার নোভা স্কোশিয়ার মাউন্ট সেইন্ট ভিনসেন্ট ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল অ্যান্ড কানাডিয়ান স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক টামি ফিন্ডলে। তিনি বলেন, ‘নাগরিকরা আগের সরকার নিয়েই খুশি ছিল। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের আগের সরকারই বহাল থাকছে।’
সরকারের সমালোচক ও প্রধান বিরোধী নেতা এরিন ও’টুলে এই নির্বাচনকে সময় ও অর্থের অপচয় বলে বর্ণনা করেছেন। নির্বাচনের এই ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনরা উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে ট্র–ডো মনট্রিলে তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয় যে, কানাডার মানুষ প্রগতিশীল পরিকল্পনাকেই বেছে নিয়েছেন, যে দল আপনার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে এবং আপনাদের জন্য কিছু করবে। লিবারেল এমপি পাবলো রড্রিগুয়েজ বলেছেন, ফল যাই হোক, তার প্রতি লিবারেল পার্টির শতভাগ সমর্থন আছে। আসন অনেক কম হলেও নতুন পার্লামেন্টে বামপন্থি এনডিপিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারণ তাদের সমর্থন ছাড়া মধ্যপন্থি লিবারেল কোনো বিল সংসদের পাশ করতে পারবে না।
লিবারেল পার্টি তৃতীয়বারের ক্ষমতায়। দলটিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য ইমিগ্রেন্টদেরও বড় ভূমিকা রয়েছে।
আমরা আশা করবো জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি তাদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলো একে একে পুরণ করবে এবং দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা সবই করবে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশটির নিরপেক্ষ মর্যাদা পুনরুদ্ধার করবে।