মহামারির কারণে জিটিএ অঞ্চলে বাড়িভাড়া বহু বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে

তা সত্বেও স্বল্প আয়ের বাসিন্দারা হিমশিম খাচ্ছেন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : মহামারির শুরুর দিকে কিরি ভাদিভেলু চাকরি হারালে তার বাড়িওয়ালা যখন তাকে বড়ি ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করছিলেন তখন স্কারবরোর বাসিন্দারা তার পক্ষে লড়াই করেন।

ভাদিভেলু ও তার পরিবার ২০১২ সাল থেকে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করে আসছেন এবং তাদের অন্য জায়গায় সরে যাবার মত অবস্থা ছিল না। তাই ঘরের ক্রুটিযুক্ত হিটিং সিস্টেম এবং রক্ষণাবেক্ষণের অনেক কাজ উপেক্ষা করা সত্ত্বেও তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্টে থেকে যাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।

ভাদিভেলু এক সাক্ষাৎকারে সিবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমাদেরকে ভাড়া দিতে হবে, নাহলে উঠে যেতে হবে। কিন্তু এর কোনওটাই আমাদের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, তার মত যারা মহামারির পুরো সময়জুড়ে বাড়িভাড়া পড়ে যাবার সুবিধা নিতে পারছিল না তাদের জন্য পরিস্থিতি কেবল জটিলতরই হয়ে ওঠে।

‘ভাড়াটেরা অবহেলার শিকার, সব দিক থেকেই তারা অবহেলিত।’

টরন্টোর বাড়িভাড়া বেশ কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেলেও সাধ্যের মধ্যে বাড়িভাড়ার বিষয়ে যারা প্রবক্তা তারা বলছেন, বাড়িওয়ালারা ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্প আয়ের ভাড়াটেদের জন্য ভাড়া খুব একটা কমায়নি। তারা বলেন, স্বল্পমূল্য ও ভাড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা সম্ভবত কেবল উচ্চ-আয়ের মানুষদেরই সহায়ক হয়েছে যারা উচ্চমূল্যের কন্ডোতে ভাড়া বাড়ি খোঁজেন।

এর ফলে, এই নগরীতে বসবাস করা ক্রমবর্ধমান হারে সাধ্যের বাইরে চলে যাছে। সিবিসিকে এ কথা বলেন বেরগামট ভাড়াটে সমিতির প্রেসিডেন্ট মোনিক গর্ডন।

তিনি বলেন, ‘একজন ভাড়াটে তখনই বাড়ি ছেড়ে যায় যখন ভাড়ার পরিমাণ প্রায় ৮০০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যায়। আমি কেবল একটিই পার্থক্য দেখি, সেটা হলো, তাদেরকে সরে আসতে হয় এবং অধিকতর সাধ্যের মধ্যে বাড়ি খুঁজে নিতে হয়।’

করি ভাদিভেলু, বামে, তার স্ত্রী তুষ্যন্তিনী গুনসিলন, মেয়ে ক্যাথারিন কিরিঠারান এবং শ্বাশুড়ী রঞ্জিনী দেবীর সঙ্গে সেলফি তুলেছেন তাদের স্কারবরোর অ্যাপার্টমেন্টে। ছবি: কিরি ভাদিভেলু

উল্লেখ্য, মি. গর্ডন দারিদ্র্য নিরসন সংগঠন অ্যাকর্ন কানাডার (ACORN) ইটোবিকোক শাখারও সদস্য।

প্যাডম্যাপার-এর তথ্য অনুযায়ী, টরন্টোতে মাঝারি দামের এক বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়ার পরিমাণ ১,৮০০ ডলার।

টরন্টো আঞ্চলিক রিয়েল এস্টেট বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, সার্বিকভাবে ভাড়ার পরিমাণ ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে। মহামারির আগে এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের গড় ভাড়া ছিল ২,১৮৭ ডলার। বর্তমানে দুই বেড়রুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া যাচ্ছে মাসে গড়ে ২,৪৪৭ ডলার যা এক বছর আগে ছিল ২,৮১২ ডলার।

অন্টারিওর ভাড়াটেদের জন্য অ্যাডভোকেসি সেন্টারের অ্যাডভোকেসিন ও আইনী পরিষেবার পরিচালক ডগলাস কোয়ান-এর (Douglas Kwan) মতে, এই ভাড়া কমে যাওয়াটা স্বল্প আয়ের ভাড়াটেদের জন্য কেবল যে যথেষ্ট সহায়ক হয়নি তা-ই নয় বরং এটি মাঝারি আয়ের লোকেদের জন্য অধিকতর গ্রহণযোগ্যও করে তোলেনি।

কোয়ান বলেন, ‘ভাড়াটেদের আনুমানিক অর্ধেকই বছরে ৪০ হাজার ডলারের কম আয় করেন।’

তিনি বলেন, ‘টরন্টোর মত একটি শহরে, যেখানে খাবার, যাতায়াত, আবাসন ব্যয় এত বেশি… সেখানে আমরা হাজার হাজার পরিবারের কথা জানতে পারছি যারা কোনওক্রমে ভাড়া দিতে পারছে।’

সৌখিন কন্ডোর অতিরিক্ত সরবরাহ

কন্ডোর ক্রমবর্ধমান সরবরাহ আসছে দুটি উৎস থেকে। সিবিসি নিউজকে বললেন, রায়ারসন ইউনিভার্সিটির উপাত্ত বিজ্ঞান ও রিয়েল এস্টেট ব্যবস্থাপনা বিষয়ের প্রফেসর মুর্তাজা হায়দার। প্রথম উৎস হলো এই যে, খুব কম মানুষই নগর কেন্দ্রে বসবাস করতে চাচ্ছেন। কারণ, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঘরে বসে কাজ করছেন এবং অনেকে বসবাসের জন্য নগরীর বাইরের দিকে সরে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় উৎস হলো, ‘এয়ারবিএনবি’ নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি নতুন বিধিমালার কারণে দীর্ঘ মেয়াদের বাসায় রূপান্তর করা স্বল্প মেয়াদের ভাড়ার বাসাগুলো।

হায়দার বলেন, সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছে মহামারিকালে সম্পন্ন হওয়া হাজার হাজার কন্ডোর সংযোজন।

কণ্ডো বিক্রি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরবানেশন-এর বাজার গবেষণা বিষয়ক পরিচালক পলিন লিয়ারম্যানের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে যে ২২ হাজার কন্ডো বাজারে সংযোজিত হয়েছে তার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ভাড়া দেয়া হচ্ছে।

লিবারম্যান বলেন, গত কয়েক দশকে ভাড়ার বাড়িগুলি সম্ভবত তার কঠিনতম সময় অতিক্রম করছে।

সরবরাহ ঊর্ধ্বমুখি, চাহিদা কম

সরবরাহ যখন বেড়েছে তখন চাহিদা পড়ে গেছে। এক বছরের মহামারিকালে আরবানেশনের হিসাব মতে, টরন্টোর সদরে কয়েক বছরে

ভাড়া বাড়ির চাহিদা পড়ে গেছে ১৮ শতাংশ এবং বৃহত্তর টরন্টো অঞ্চলে ১৬ শতাংশ।

বাড়ি খালি থাকার যে হারও একই চিত্র তুলে ধরে: ২০২১ সালের প্রথম চার মাসে নগরীতে চাহিদা বাড়ে আট দশমিক ৮০ শতাংশ এবং জিটিএতে ছয় দশমিক ৬০ শতাংশ। মহামারির আগে জিটিএতে বাড়ি খালি ছিল ১.১ শতাংশ।

লিয়ারম্যান বলেন, চাহিদা ধীরগতিতে বাড়তে থাকায় বাজার এখন সমতল হয়ে আসছে এবং সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার আভাস দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো আশা করতে পারবো যে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে এবং আগামী বছরের শুরুর দিকেই মন্দা কাটিয়ে উঠবে।’

রয়াল লাপেজ কোম্পানির রিয়েলটর এবং ট্রেব-এর (TREB) প্রেসিডেন্ট লিসা পটেল সিবিসিকে বলেন, দামের বিষয়টিই মূল এবং তা মহামারির আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পটেল বলেন, ‘এর অনেক বড় অংশই দামের সঙ্গে সংবেদনশীল। যেমনটা দেখছি, স্বল্প মূল্যের ভাড়ার বাড়ি মানুষকে বেশি আকৃষ্ট করছে।’

তিনি বলেন, ভাড়ার পরিমাণ কয়েক শ’ ডলার হ্রাস পাওয়া এবং বাড়ির মালিকরা বিশেষ সুবিধা, যেমন, দুই মাসের বিনামূল্যে থাকা, বিনামূল্যে পার্কিং বা গিফট কার্ড ইত্যাদি  দেয়া শুরু করার আগে ইয়র্ক স্ট্রিট এবং লেক শোর বুলেভার্ডের কিছু ইউনিট বিরান পড়ে ছিল।

কিন্তু ভাদিভেলু বা গর্ডনের মত স্বল্প আয়ের ভাড়াটেদের জন্য এসব ছিল শীতল সান্ত্বনা।

ভাদিভেলু বলেন, ‘এটি হলো বাড়ি ভাড়া দেয়ার এক সৃজনশীল উপায়মাত্র এবং এতে করে ভাড়া থেকে বাড়তি আয় এসেছে।’

‘এ থেকে ভাড়া কমেছে এমন নয়।’