অভিবাসনের আবেদন প্রক্রিয়াকরণে গতি আনতে নতুন পদ্ধতি তৈরি করবে অটোয়া
প্অরবাসী কণ্টোঠ ডেস্য়াক : বলেছে, অভিবাসনের আবেদন প্রক্রিয়াকরণে গতি আনতে সহায়তার জন্য একটি নতুন ডিজিটাল প্লাটফরম তৈরি করা হবে। কোভিড-১৯ মহামারির পর নতুন পদ্ধতি চালু করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
প্রতিটি আবেদনভিত্তিক ব্যবস্থাপনার যে পদ্ধতি বর্তমানে চলছে তা ক্রমশ সরিয়ে ফেলে নতুন প্লাটফরম নিয়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার আগামী পাঁচ বছরে ৪২৮.৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার অঙ্গীকার করেছে ২০২১ সালের বাজেটে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন মান আলহমিডি।
সরকার বলছে, আবেদন প্রক্রিয়াকরণ ও প্রার্থীদের আরও বেশি সহায়তা দেওয়ার জন্য ২০২৩ সালে নতুন এই প্লাটফরম চালু করা হবে।
অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মার্কো মেনডিসিনোর মুখপাত্র আলেক্সান্ডার কোহেন সম্প্রতি বলেন, নতুন পদ্ধতি হলো এই বিভাগ এবং সরকারের কার্যক্রম ধীরে ধীরে ব্যাপকভাবে ডিজিটাল প্লাটফরমের দিকে সরিয়ে আনার কর্মসূচির অংশ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থা যাতে ক্রমবর্ধমান আবেদনগুলো দক্ষতার সঙ্গে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে নতুন প্লাটফরম তা নিশ্চিত করবে। এতে আবেদনের জন্য কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে। এটি হবে সরল এবং প্রার্থীদের জন্য সহজতর।’
ক্যালগরি ইউনিভার্সিটির পাবলিক পলিসি অনুষদের গবেষক রবার্ট ফ্যালকনার বলেন, পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন প্রক্রিয়াকরণের হার গত ছয় বছর ধরেই কমছে।
তিনি বলেন, সরকারি উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছর পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য যত আবেদন এসেছিল তা ছিল চূড়ান্ত করা আবেদনের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে এই হার ছিল ২১ শতাংশ।
কোহেন বলেন, গত কয়েক বছরে আবেদন গ্রহণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
‘আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে আবেদনের পরিমাণ কিন্তু বেড়েছে, আর সেজন্যেই আমরা কেবল (অভিবাসন) পরিকল্পনা অনুযায়ী যতটা সম্ভব আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করে চলেছি।’
কোহেন বলেন, অভিবাসন বিভাগ অনলাইনে আবেদন করার মত একটি পোর্টাল চালু করেছে যাতে কিছু সংখ্যক পারমানেন্ট রেসিডেন্সির প্রার্থী ডিজিটাল মাধ্যমে আবেদন করতে পারছেন।
তিনি বলেন, কার্যত পারমানেন্ট রেসিডেন্সির সব কর্মসূচিতেই ডিজিটাল প্লাটফরমটি সম্প্রসারিত হবে কিন্তু এই মুহূর্তে দৈবচয়নের ভিত্তিতে সাতটি কর্মসূচিতে এটি কার্যকর রয়েছে।
ফ্যালকনার বলেন যে, কানাডায় প্রায় ১২০টি অভিবাসন কর্মসূচি রয়েছে যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক কর্মসূচিতেই কাগজে ছাপা আবেদনপত্র পূরণ করতে হয়।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ সম্ভবত অভিবাসন কর্মকর্তাদের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াকরণের বিষয়টি আরও বেশি কঠিন করে তুলেছে। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদেরকে আবেদনপত্র আনার জন্য কেন্দ্রীয় আবেদন গ্রহণ কেন্দ্রে যেতে হয় অথবা এমন উপায় খুঁজে নিতে হয় যাতে বাড়িতে বসেই নিরাপদ ডাকযোগে সেগুলো পেতে পারেন।
ফ্যালকনার আরও বলেন, সম্প্রতি সরকার অর্থনৈতিক অভিবাসন শ্রেণিতে বেশ কিছু নতুন কর্মসূচি চালু করেছে। এর মধ্যে একটি হলো হংকংয়ের বাসিন্দাদের কানাডায় অভিবাসনের, আরেকটি হলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীসহ অস্থায়ী রেসিডেন্টদের জন্য পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হবার আবেদন করার সুযোগ।
তিনি বলেন, ‘যখন বিপুল সংখ্যক কাগুজে আবেদনপত্র এরইমধ্যে জমা হয়ে আছে তখন অর্থনৈতিক শ্রেণিকে উদাহরণ হিসাবে ধরে আমার মনে হয়, এটি এই শ্রেণির আবেদন নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তাদের ওপর অনেক বেশি চাপ ও সংশয় এবং জটিলতা চাপিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।’
‘প্রতিটি নতুন সরকারি নীতি আসার অর্থই হলো এর সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা তৈরি হওয়া, আর কর্মকর্তাদের জন্য আমরা যত চাহিদা তৈরি করে দেবো তার অর্থ হবে আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণও ততই ধীর হবে।’
ফ্যালকনার বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অভিবাসন পদ্ধতির সঙ্গে প্রদেশগুলোর বাছাই
পদ্ধতির অধিকতর সমন্বয় সাধনেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
‘আমাদের ভিন্ন ১০ প্রদেশ আছে আর প্রতিটিরই নিজস্ব কাগুজে আবেদনপত্র বা ইলেক্ট্রোনিক পদ্ধতিতে আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা আছে।’
আলবার্টায় আমার নিজের প্রদেশে দীর্ঘকাল ধরে প্রাদেশিক অভিবাসী বাছাই পদ্ধতি ছিল পুরোপুরি কাগজনির্ভর। তবে এরপর গত কয়েক বছরে তারা প্রাদেশিক বাছাই পদ্ধতিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পদ্ধতির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।”
তিনি বলেন, কানাডায় আসা অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেকই আসে প্রদেশগুলোর কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনৈতিক শ্রেণিতে।
‘আমি বলবো, এখানে প্রকৃত যে বড় বিষয়টি জড়িত সেটি হলো আসলে কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয়করণ (ভবফবৎধষরংস) আর সম্ভবত অভিবাসনের বিষয়টিপ্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারগুলোর মধ্যে সুসমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা।
অভিবাসন বিভাগের নাগরিকত্ব ও বহুসংস্কৃতিবাদ শাখার সাবেক পরিচালক এন্ড্রু গ্রিফিথ বলেন, তাদের শাখা সম্প্রতি আরও বেশি নথিপত্র অনলাইনে স্থানান্তরের সুযোগ সৃষ্টি করে প্রক্রিয়াটি সহজ করার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, ‘এসব পরিবর্তন রাতারাতি বাস্তবায়ন করা মোটেও সহজ ছিল না।’
গ্রিফিথ বলেন, আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরণের নতুন পদ্ধতি তৈরির জন্য অটোয়া প্রায় ৫০ কোটি ডলার ব্যয়ের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটি দেখা হবে উৎসাহব্যঞ্জক কারণ বিরাট আইটি প্রকল্প বাস্তবায়ন সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দেয়।
এই বিভাগকে বর্তমান অভিবাসন ব্যবস্থায় চলমান যে কোনও বিষয়ের দ্বৈততা সৃষ্টি বা কোনও বিয়কে ছাপিয়ে যাওয়ার মত ঘটনা যাতে না ঘটে সে উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
‘আমাদের কি এই সব পদক্ষেপের দরকার আছে? এসব পদক্ষেপের কিছু কিছু কি অটোমেশনের আওতায় নেয়া যায়? আমরা কি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে পারি?’
কোহেন বলেন, অনলাইনে করা কিছু আবেদন জরুরী ভিত্তিতে প্রক্রিয়াকরণে অভিবাসন কর্মকর্তাদের সহায়তার জন্য অভিবাসন বিভাগ ২০১৮ সালে কমপিউটার বিশ্লেষণ ব্যবহারের মাধ্যমে দুটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করে।
তিনি বলেন, ‘এই কমপিউটার বিশ্লেষণ প্রযুক্তি উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এবং কোনটি নিয়মিত আর কোনটি জটিল তা চিহ্নিত করতে সহায়তার জন্য আবেদনের নির্দিষ্ট ছাঁদ (ঢ়ধঃঃবৎহং) চিনতে পারে।’
‘লক্ষ্য ছিল কর্মকর্তাদেরকে নিয়মিত এবং দ্রুততর প্রক্রিয়াকরণের জন্য সহজ নথিগুলো চিহ্নিত করা এবং অধিকতর পর্যালোচনার জন্য জটিলতর নথিগুলোর বিষয়ে জরুরী অগ্রাধিকার নির্ধারণ (ঃৎরধমব) করা।
তিনি বলেন, প্রতিটি আবেদনের ওপর প্রতিটি সিদ্ধান্তই নেন একজন ভিসা অফিসার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিভাগের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত কোনও যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না।
‘আমরা কানাডীয়দের এবং যারা এখানে আসতে চায় তাদের জন্য প্রক্রিয়াগুলো উন্নততর করতে সব সময়ই প্রযুক্তির বিষয়টি তুলে ধরতে চাই।’