টরন্টোর বাসে চীনা ছাত্রীর ওপর বর্ণবাদী হামলার দায়ে গৃহান্তরীণ এক ব্যক্তি
বিচারক বলেন, এই হামলার ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, বর্ণবাদের কুৎসিত বাস্তবতার কাছে সমাজ কতটা নাজুক
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৭ মে, ২০২১: মহামারির শুরুর দিকে নগরীর বাসে একজন চীনা ছাত্রীকে অকথ্য ভাষায় তিরস্কার এবং আঁকড়ে ধরার দায়ে এক ব্যক্তিকে চার মাসের গৃহান্তরীণ থাকার দণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই আক্রমণের জন্য ৪৭ বছর বয়সের মাইকেল হেনেসিকে দণ্ড দিয়ে অন্টারিওর একটি আদালতের বিচারক বলেন, শারীরিক হামলা যদিও গুরুতর নয়, কিন্তু আক্রান্তের ওপর এর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন কলিন পার্কেল।
বিচারক হাওয়ার্ড বোরেনস্টেইন বলেন, “এই হামলার ঘটনা দেখিয়ে দিচ্ছে, বর্ণবাদের কুৎসিত বাস্তবতার কাছে সমাজ কতটা নাজুক এবং এটি কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর যারা শিকার তারা কতটা ভীত-সন্ত্রস্ত ও দুর্বল।” তিনি বলেন, “বর্ণবাদ এক ভয়ঙ্কর জিনিস যা মনুষ্যত্বহীনতার প্রভাব সৃষ্টি করে এবং প্রায়শ এটি শারীরিক সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়, যেমনটা এই ঘটনায় ঘটেছে।”
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, চীনা ছাত্রীটি গত বছর ফেব্রুয়ারির এক বিকেলে নিজের কাজে যাবার জন্য শহরের একটি বাসে বসেছিলো। এ সময় মাইকেল হেনেসি সেই বাসে ওঠে। ছাত্রীটি মুখে মাস্ক পরেছিলো।
বাসে অবস্থানের চার মিনিট সময়ের মধ্যে হেনেসি নিজেকে কানাডীয় বলে ঘোষণা করে ছাত্রীটির প্রতি অশ্লীল ও অপমানজনক কথা বলে এবং তাকে নিজের দেশে চলে যেতে বলে। ছাত্রীটি হেনেসির অপমানজনক কথাবার্তা রেকর্ড করতে শুরু করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হেনেসি মেয়েটির মোবাইল ফোন কেড়ে নেবার চেষ্টায় তার বাহু আঁকড়ে ধরে। আদালতের নথিতে দেখা যায়, এসময় মেয়েটি হেনেসির মুখে চড় মারে, চীৎকার করে এবং নিজের ফোন বাঁচানোর চেষ্টা করে। হেনেসির ছবি দেখিয়ে ঘটনাটি টেলিভিশনে সম্প্রচার হলে গত মাসে আদালতে হাজির হয়ে সে অপরাধ স্বীকার করে।
মহামারির কারণে উত্তর আমেরিকাজুড়ে এশীয় জনগোষ্ঠীর লোকেদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক আক্রমণের জোয়ার আসে। চীন ইচ্ছাকৃতভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে এমন মিথ্যা অভিযোগের মধ্যে হামলাকারীরা প্রায়ই কোভিড-১৯ এর জন্য আক্রান্তদের অভিযুক্ত করে। সাম্প্রতিক বার্ষিক রিপোর্টে টরন্টো পুলিশ বলেছে, এশীয় কমিউনিটির বিভিন্ন মানুষ আক্রমণের শিকার হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, “হামলাকারীরা আক্রান্তদের প্রতি অপমানজনক মন্তব্য করে, তাদের ঘুষি মারে, ধাক্কা দেয় বা থুতু ছিটায়।” হেনেসি প্রথম এ ধরণের অপরাধ করেছে। তাকে দণ্ড দিয়ে বোরেনস্টেইন
এশীয়বিরোধী মনোভাবের “যন্ত্রণাদায়ক বৃদ্ধির” কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ওই ছাত্রীর ওপর ঘটনার “চরম” প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অন্য অনেক বিরূপতা ছাড়াও সে তার সেমিস্টার সম্পন্ন করতে পারেনি, সারাক্ষণ কানাডা ছেড়ে যাবার তাগিদ বোধ করেছে এবং তাকে থেরাপি নিতে হয়েছে।
বিচারক শাস্তি প্রশমনের কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। হেনেসি দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্তি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এবং ঘটনার সময় সে মদ্যপ অবস্থায় ছিলো, ছাত্রীটির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে এবং চিকিৎসকের কাউন্সেলিং গ্রহণ করছে। বিচারক আরও উল্লেখ করেন, হেনেসির শৈশবের নানা সময় ছিলো অসদাচরণ ও সহিংসতায় ভরা। তার যখন বয়স পাঁচ বছর তখন তার বাবা তার মাকে হত্যা করে।
গত আট বছর ধরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে অথবা কমিউনিটির আবাসনে কাটানোর পর এখন হেনেসি তার নিজের এলাকা নিউ ফাউন্ডল্যান্ডে ফিরেছে। এ ঘটনার আগে হেনেসির মধ্যে বর্ণবাদী কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি বলে তার চিকিৎসক ও বোন সাক্ষ্য দিলেও বিচারক বোরেনস্টেইন এ বিষয়ে সন্দেহমুক্ত হতে পারেননি।
তিনি বলেন, “এই ঘটনার ক্রমবর্ধমান যে পরিণতি তা হলো এর বর্ণবাদী প্রকৃতি এবং সংশ্লিষ্ট ছাত্রীটি ও তার বাইরেও এর প্রভাব ছাড়িয়ে পড়া, বিশেষ করে এশীয় কমিউনিটির লোকেরা এ ঘটনার পর আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে।” বোরেনস্টেইন এক বছরের পরীক্ষাকালসহ চার মাসের গৃহান্তরীণ থাকার দণ্ড ছাড়াও হেনেসিকে ত্রিশ ঘণ্টা সমাজ সেবামূলক কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।