ভ্যাকসিন নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে হবে

অন্টারিও’র প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। ছবি: সিপি২৪

করোনা মহামারী গোটা পৃথিবীকেই নাড়িয়ে দিয়েছে প্রচন্ডভাবে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এবং খালিচোখে দৃশ্যমান নয় এমন এই অনুজীবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মানুষ আজ প্রায় দিশেহারা। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে ইতিমধ্যে বছরও পার হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কানাডায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৪ হাজারেরও বেশী। আক্রান্ত হয়েছেন ১২ লক্ষ ১৮ হাজারেরও বেশী। সূত্র: গ্লোবাল নিউজ। এই হিসাব ৩০ এপ্রিলের।
কানাডায় এখন চলছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, সব মহামারীতেই প্রথম ডেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউ বেশি মারাত্মক হয়ে উঠেছিল। প্রাণহানিও ঘটেছিল বেশি। কানাডাসহ গোটা পৃথিবীতে এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। আর এর পিছনে মানুষের সচেতনতার অভাব অনেকটাই দায়ী। করোনা মহামারীকে মোকাবেলা করতে হলে কি কি করতে হবে সেই বিষয়ে চিকিৎসকগণ অব্যাহতভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও জারি করা হচ্ছে একের পর এক আইন যার মধ্যে আছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, লকডাউন, কারফিউ-সহ আরো কিছু বিধিনিষেধ। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ সেই সব আইন বা বিধিনিষেধের কোন তোয়াক্কা করছেন না। গোপনে বাড়িতে বাড়িতে পাটির্র আয়োজন করছেন। বিগত কয়েকটি লং উইকএন্ডের পর এবং ক্রিসমাস, নিউইয়ার ইত্যাদি উৎসবের পরপরই দেখা গেছে হঠাৎ করে সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে কানাডায়। ফলে সরকারকে বাধ্য হয়েই লকডাউন ঘোষণা করতে হচ্ছে একের পর এক। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুলসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালগুলোর উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রচন্ডভাবে। সামাল দিতে পারছেন না চিকিৎসরা। আর পিছিয়ে যাচ্ছে করোনা নিয়ন্ত্রণের অগ্রযাত্রা। এর দায় এখন কে নিবে?
তবে আশার কথা এই যে, করোনা ভ্যাকসিনের উপকারিতা এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। এতদিন যারা ‘ওয়েট এ্যান্ড সি’র কাতারে ছিলেন তারাও ধীরে ধীরে ভ্যাকসিন নিতে শুরু করেছেন। এখন মনে হচ্ছে ভ্যাকসিনই করোনা নিয়ন্ত্রণের পথ সুগম করে দিচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। অবশ্য অক্সফোর্ডের অ্যাসট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হচ্ছে না। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে ইউরোপের কয়েকটি দেশ থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ভ্যাকসিন ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে এখনো। অবশ্য কানাডা এখনো বলছে অ্যাসট্রাজেনেকা নিরাপদ, যদিও কয়েকজনের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটছে যা অতি বিরল। কানাডায় এ পর্যন্ত রক্ত জমাট বেঁধেছে মাত্র পাঁচজনের বেলায়। এ হিসাব এপ্রিলের ৩০ তারিখের।
এর মধ্যে আবার খবর এসেছে জনসন এ্যান্ড জনসন এর ভ্যাকসিন নিয়ে। সেটিও নাকি রক্ত জমাট বাঁধাচ্ছে কোন কোন ব্যক্তির বেলায়। যদিও তার সংখ্যা অতি সামান্য। সংখ্যার বিচারে অতি বিরল বলা যায়। তবু যুক্তরাষ্ট্র জনসন এ্যান্ড জনসন এর ভ্যাকসিন ব্যবহার কয়েকদিন বন্ধ রেখেছিল। পরে আবার তা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। কানাডা এখনো জনসন এ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন পায়নি। ফলে এর ব্যবহারও শুরু হয়নি এখানে।
এদিকে অ্যাসট্রাজেনেকা বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনো বলছেন, এই ভ্যাকসিনের উপকারিতা এর সম্ভাব্য ঝুঁকির তুলনায় নিতান্তই কম। এর মানে হলো, ফাইজার, মডার্না বা অ্যাসট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আমরা দেখেছি টরন্টোর মেয়র জন টরি, অন্টারিওর প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্ট্রিন ট্রুডো অ্যাসট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, টিকা নিলেও তো করোনা হচ্ছে। উত্তর-হ্যাঁ হচ্ছে, হতে পারে। এর বিভিন্ন ব্যাখ্যাও আছে। তবে গবেষণা বলছে, ভ্যাকসিন কোভিডের মারাত্মক উপসর্গ থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা ও প্রাণহানির সম্ভাবনা একেবারেই শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনছে। যদিও করোনার ভেরিয়েন্ট বা রূপান্তরিত রূপ এর বিরুদ্ধে বর্তমানে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনসমূহ কতটা কার্যকরী তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবু কভিড-১৯ থেকে তো সুরক্ষা দিচ্ছে। সেই দিক বিবেচনায় ভ্যাকসিন নেওয়াই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে।