কাহিনী বিচিত্রা

জানুয়ারী ৫, ২০২১

সাইদুল হোসেন

Unhappy Grandmas

আটজন নাতনি ও ওদের আনহ্যাপী গ্র্যান্ডমা

গত সপ্তাহে একদিন আমার বড় ছেলে ও আমি একই সংগে আমাদের কমিউনিটি বিল্ডিংয়ের এলিভেটরে চড়ে আমাদের এপার্টমেন্টে যাচ্ছিলাম। এলিভেটরের ভেতরে ছিল হুইলচেয়ারে বসা বয়স্কা এক জ্যামাইকান কালো মহিলা। আমাদের দিকে তাকিয়ে বুড়ি আমাকে প্রশ্ন করলো ঃ

He your son, sir?

হেসে বললাম ঃ Yes, ma’m.

দ্বিতীয় প্রশ্ন ঃ     How old is your son, sir?

বললাম ঃ         He is 54.

তৃতীয় প্রশ্ন ঃ     How many children?

বললাম ঃ         Two granddaughters.

Only two? God bless you, বললো বুড়ি। কিন্তু তার পর যা বললো সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। বুড়ি তখন অত্যন্ত অসন্তুষ্ট স্বরে বললো- My son is only 40, yet he has already produced 8 children—all girls. I am tired of seeing only girls’ faces around me 24/7. Depressing.
I have already told my son to make a last try; if she still produces a girl again, he has to do something about it. I am not going to take it anymore!

আগষ্ট ২৩, ২০১৪

১৯টি নাতি-নাতনির আনহ্যাপী গ্র্যান্ডমা

আমাদের হসপিটালে কাজ করে আমার পরিচিত এক কালো যুবক এক আফ্রিকান বৃদ্ধাকে হুইলচেয়ারে ঠেলেঠেলে আমাদের ক্লিনিকে ঢুকে তাকে আমার পাশে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল সে পরে এসে তাকে নিয়ে যাবে, আমি যেন তাকে সাহায্য করি।

আমি বৃদ্ধাকে বললাম ঃ দুশ্চিন্তা করো না, আমি তোমাকে সাহায্য করবো। সময় হলে আমি তোমাকে ৎবমরংঃৎধঃরড়হ-এর এবং ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবো। নাও রিলাক্স্।

বুড়ি বললো ঃ থ্যাংক ইউ, স্যার!

একটু পর বুড়িকে জিজ্ঞাসা করলাম ঃ এই যে ছেলেটা এসে তোমাকে রেখে গেল এখানে ও তোমার কে হয়?

– নাতি, বললো বুড়ি।

– তোমার নাতি-নাতনির সংখ্যা কত?

– ১৯ জন। ৬ ছেলেমেয়ের সন্তান ওরা।

তারপর খুব বিরক্তির সঙ্গে যোগ করলো ঃPlease don’t ask to know more. I have no count of how many children produced by who. I am fed up!

স্পষ্টতঃই বিপুল সংখ্যক নাতি-নাতনি তার কাছে আনন্দদায়ক কিছু নয়, বরং মস্ত বিরক্তির কারণ।

জানুয়ারী ১৩, ২০১৬

আমার ৭টি সন্তান, আমাকে Congratulate কর!

আজ সকালে যে Wheel-Trans taxi driver আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেল ওর নাম Musse (সাধারণ পরিচয় Musa (Moses). ওর দেশ ঝড়সধষরধ. আমার মুসলিম নাম দেখে বলল ঃ আসসালামু আলাইকুম। জবাবে বললাম ঃ ওয়ালাইকুম সালাম। তারপর প্রশ্ন করল ঃ আপনার সন্তান কটি? বললাম ঃ আমার দুই ছেলে।

শুনে বলল ঃ আমার সাতটি ছেলেমেয়ে। ওর বয়স তেমন বেশী বলে মনে হলো না, তাই একটু বিষ্মিত হয়ে বললাম ঃ সা-তটি সন্তান? তোমার বয়স কত?

বলল ঃ চল্লি­শ বছর। আমি ৭টি সস্তানের পিতা। Congratulate me!

জিজ্ঞাসা করলাম ঃ এত কম বয়সে তোমার ৭টি সন্তান, এতে তোমাকে congratulate করার মত কি হলো?

সে তখন বেশ জোর দিয়ে বলল ঃ More children blessing from Allah, you don’t know? Congratulate me! And say  মাশাআল্ল­াহ!

কি আর করি, অগত্যা বললাম ঃ মাশাআল্ল­াহ! সে বলল ঃ শোকরান।

তখন আমার মনে পড়ে গেল ইতিপূর্বে বর্ণিত অধিক সংখ্যক নাতি-নাতনিদের দুই grandmai চরম অসন্তোষের কথা। ভাবলাম ঃ এই Musse-এর মায়ের দেখা পেলে জিজ্ঞেস করে দেখতাম তার কি প্রতিক্রিয়া।

আগষ্ট ৩১, ২০১৬

ZIMBABWE (Africa)

আফ্রিকা মহাদেশের একটি State বা দেশের নাম। বর্তমান নাম জিম্বাবুই, রাজধানী হারারে। অতীতে দেশটি যখন বৃটিশদের অধীনে ছিল তখন এর নাম ছিল Rhodesia, রাজধানী Salisbury. ১৯৬৫ সনে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি বর্তমান নাম গ্রহণ করে।

আজ সকালে TTC Wheel-Trans-এর যে ড্রাইভার তার ট্যাকসিতে করে আমাকে হসপিটালে ভলানটিয়ারিং করতে নিয়ে গেল সে ছিল ঐ Zimbabwe রাষ্ট্রের বাসিন্দা, বর্তমানে Canadian citizen. ওর নাম Osmino (আরবী Osman). ওর মুখ থেকে শুনলাম যে-

১)   Zimbabwe রাষ্ট্রের লোকেরা যে ভাষায় কথা  বলে সেটার নাম Shona.

২)   সেই ভাষায় Zimbabwe কথাটার অর্থ দাঁড়ায়  a country of large stone houses.

৩)   Zimba অর্থ a large house; আর bwe   অর্থ stone. দুয়ে মিলে Zimbabwe.

৪)   ওদেশের রাজধানী Harare (হারারে), অর্থ  a city that does not sleep.

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৪

ইন্টারনেটে chatting তারপর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত

মোনা নামের একটা সোমালী যুবতী বেশ কিছু বছর ধরে হসপিটালের Dialysis Clinic-এ কাজ করে। দৈনন্দিন দেখা হয়, তাই কিছুটা পরিচয়ও আছে। আমাকে দেখলেই সালাম দেয়, নিজের দেশের কথা, ব্যক্তিগত আশা-আকাক্সক্ষার কথাও বলে কখনো কখনো। ওর নানীকে সপ্তাহে চারদিন dialysis করাতে হয়, মোনাই ওর দেখাশুনা করে। মা বেঁচে নেই।

একদিন মোনা এসে খবর দিল যে সে একটা বড় ধরনের cheating-এর হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে ওর বড় বোনের বুদ্ধিমত্তার কারণে। আলহামদুলিল্ল­াহ! ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ মোনার ভাষায়-

মাত্র তিন মাস ইন্টারনেটে একটা লোকের সংগে chatting করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম যে he is the right guy for me. I’ll marry him. আমি প্রস্তাব দিলাম, লোকটাও রাজি হলো। তখন তাকে বললাম ঃ আমরা দু’জন তো রাজি, এবার আমাদের পরিবারের কাছে তুমি আমাকে বিয়ে করার formal proposal নিয়ে এসে দেখা কর, propose কর। কিন্তু লোকটা আসার আগেই আমার বড় বোন- সে আমাদের এই chatting-এর ব্যাপারটা জানতো- কোন এক সূত্র ধরে investigate করে জানতে পারলো যে লোকটা একটা cheat, একটা criminal, একটা vagabond, ওর চাল-চুলো-ঠিকানা, আয়-রোজগার কিছুই নেই। সে হচ্ছে নাম-ঠিকানা-পরিচয়বিহীন একটা floating guy.

বড় বোনের কথায় আমার সম্বিত ফিরে এলো, I came to my senses-   এবং instantly তাকে ফোন করে আমার প্রস্তাবটা বাতিল করে দিলাম। বড় বাঁচা বেঁচে গেছি আমার এই বড় বোনটার কারণে। May Allah bless her, protect her as she has protected me. ইন্টারনেট একটা সম্পূর্ণ অন্ধকার জগৎ, সেখানে chatting করে convinced হয়ে জীবনের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া নিতান্তই বোকামি। আর নয়, চরম শিক্ষা হয়েছে!

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৪

গালিব ইসলাম- বাংলাদেশী

ইংরেজী ভাষায় উপন্যাস লেখক

আমার এক বন্ধুর বড় ছেলে গালিব ইসলাম, বয়স ৩২। Toronto University থেকে English Creative Writing-এ Masters; McMaster University  থেকে Graduate.

সে একটা বই লিখেছে। নাম FIRE IN THE UNNAMEABLE COUNTRY. ৪৫১ পৃষ্ঠার বই। প্রকাশক Penguin Canada, সন ২০১৪.

আমার বন্ধুটি জানালেন যে- এই একটি মাত্র ইংরেজী উপন্যাস লিখে গালিব ক্যানাডার সাহিত্য জগতে দারুণ হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। Print media, electronic media ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। Canada National Post, Toronto Star, Globe and Mail ইত্যাদি জাতীয় পত্রিকায় গালিবের লেখা উপন্যাসের প্রশংসা ছাপা হয়েছে। ক্যানাডার সেরা সাহিত্যিক Margaret Atwood বইটির দারুণ প্রশংসা করেছেন। টরোন্টো থেকে প্রকাশিত সব বাংলা পত্রিকাতেও গালিবের এই সাফল্যের প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে।

খবরটা জানার পর গালিবের পিতামাতা দু’জনকেই Congratulations জানিয়েছি। গালিব ইসলাম আমাদের বাংলাদেশের গৌরব।

জুন ০১, ২০১৪

I am a God-fearing guy, but I don’t understand His ways

কথাগুলো বলেছিল আমার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে অল্প শিক্ষিত ৮১ বছর বয়ষ্ক বৃদ্ধ এক ইটালিয়ান।

আমার ডেস্কে মাথা নীচু করে একটা কিছু লিখছিলাম, এমন সময়ে শুনলাম কেউ যেন বলছে ঃ গুড মর্নিং!

মাথা তুলে এক বৃদ্ধকে দেখে আমিও বললাম ঃ

গুড মর্নিং। হাউ আর ইউ? এভরিথিং ওকে?

বুড়ো তখন বলল ঃ আমি ভালোই আছি, তবে আরো ভালো থাকতে চাই। কিন্তু পারছি না ওয়াইফের অসুস্থতার কারণে। Knee replacement surgery করিয়েছে, তোমার পেছনের রূমের একটা বেডেই আছে সে। অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও right knee replacement করা হয়েছিল তিন বছর আগে। আমিও অবশ্য বাদ যাইনি, তবে আমার হয়েছিল hip replacement -দু’টোই। এর আগেও একবার ডাক্তারের ভুলের জন্য আমি প্রায় মরেই গিয়েছিলাম। এখন ভালো আছি। God is pleased with me.

জিজ্ঞাসা করলাম ঃ গড যে তোমার উপর প্ল­ীজ্ড সেটা তুমি জানলে কি করে?

বুড়ো বলল ঃ জানি, কারণ তা না হলে আমার মত এক অল্পশিক্ষিত ইটালিয়ান কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কারের চার ছেলে এই ক্যানাডাতে উচ্চশিক্ষা লাভ করে বড় বড় দায়িত্বশীল পদে কাজ করতে পারতো না।

জীবনের শুরু থেকেই আমি ছিলাম একজন সৎলোক (আমার স্ত্রীও আমাকে কোনদিন কোন

কুমন্ত্রণা দেয়নি)। সুযোগ থাকা সত্বেও অসততার ধারেকাছেও যাইনি- কি কাজে, কি অন্যান্য ব্যাপারে। কাজ আর কাজ, দিন রাত কাজ। অমানুষিক পরিশ্রম করেছি ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত, তারপর রিটায়ারমেন্টে গেছি। আমার বয়স এখন ৮১ বছর। স্বাস্থ্য ভালো আছে। আর্থিক কোন অনটন নেই।

ছেলেদের শিক্ষার প্রতি স্বামীস্ত্রী আমরা দু’জনেই খুব মনোযোগী ছিলাম, সর্বদা যথাসাধ্য খোঁজ-খবর নিতাম ওদের পড়াশোনার প্রোগ্রেস সম্পর্কে। ছেলেরা আমাদের নিরাশ করেনি, অশিক্ষিত বলে অবহেলাও করেনি। মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছে, ডিগ্রি অর্জন করেছে। উঁচু পদে কাজ করে আমাদের চার ছেলেই। তাদের মনোযোগের, পরিশ্রমের সুফল ওরাই ভোগ করছে, সংগে আমরাও ভোগ করছি, যদিও ওদের আর্থিক সাহায্য আমাদের প্রয়োজন নেই। চার ছেলে, চার বৌমা, নাতি-নাতনি- সবার সংগেই আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। কোন জটিলতা নেই। তাই বলছিলাম ঃ God is pleased with me. But I don’t understand God’s ways. My wife is suffering so much. Still I am a God-fearing guy.
.

দীর্ঘ কথাবার্তা, সহজসরল বুড়োর তৃপ্তিময় জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। বললাম ঃ তোমার অকপট বর্ণনায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। তোমাকে ধন্যবাদ। God bless you all.
.

বুড়ো হয়ে গেছি, কথা বেশী বলি। আমার বকবক দীর্ঘক্ষণ ধৈর্য ধরে শোনার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ। এই বলে ডান হাতটা কপালে ঠেকিয়ে স্যালিউটের ভংগীতে আমাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ধীর পায়ে বিদায় নিলো সেই সরলপ্রাণ বৃদ্ধ। মনটা আমার প্রসন্ন হয়ে গেল বুড়োর জীবনের achievements -এর কথা শুনে, ওর ছেলেদের success-এর কথা শুনে, এবং গডের প্রতি ওর অকপট ভক্তি লক্ষ্য করে।

মানুষের জীবন কতইনা আনন্দ ও বেদনায় ভরা।

নভেম্বর ০৮, ২০১৪

I am a comfort services provider for the guys

গিয়েছিলাম স্কারবরোতে কোন এক কাজে। ফেরার সময় এলিভেটরের সামনে এসে দেখি একটি কালো মহিলা অপেক্ষমাণ। মহিলা বেশ সুন্দরী, আকর্ষণীয়া, সাজপোশাক প্রশংসনীয়। এলিভেটর আসতে দেরী হচ্ছে, দু’জনে দাঁড়িয়ে আছি। এমনি সময় সেই মহিলা আমাকে বলল ঃ হাউ আর ইউ, স্যার? বললাম ঃ আই এম ফাইন, থ্যাংক ইউ।

শুনে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে যোগ করল ঃI run a business to make guys happy, sir.

জিজ্ঞাসা করলাম ঃ What kind of business?

মুখের হাসিটা আরো বড় করে বলল ঃ I am a comfort services provider for the guys of all ages. Guys have different kinds of needs, I satisfy them. At a fee of course.

ইংগিতটা বুঝতে কোন কষ্ট হলো না। বললাম ঃ Thank you. But I am fine.
.

As you wish, sir, বলে সে চুপ করে গেল।

অক্টোম্বর ২৫, ২০১২

ভলানটিয়ারিংয়ের বয়স ১০ বছর

২০০৪ সনে টরোন্টোর Humber River Hospital-G Volunteer হিসাবে যোগ দিয়েছিলাম। আজ Volunteers Association-এর Annual General Meeting-G attend করে আমার এতদিনের service- এর recognition স্বরূপ 10 years Pin গ্রহণ করলাম আরো অনেক Volunteer-এর সংগে যাদের মাঝে দীর্ঘ ৪৫ বছরের সেবা দানকারী একজন মহিলা ভলানটিয়ারও ছিলেন। ২০, ২৫, ৩০ বছরের সার্ভিস recognition আরো অনেকেই পেয়েছে।

এটা আমার জন্য একটা বড় ধরনের ধপযরবাবসবহঃ. ইচ্ছা আছে শারীরিক-মানসিক সুস্থতা যতদিন থাকবে এই ভলানটিয়ারিংয়ের কাজটা আমি চালিয়ে যাবো। বড়ই তৃপ্তি এবং আনন্দদায়ক কাজ এই ভলানটিয়ারিং।

প্রসংগটা শেষ করার আগে উল্লে­খ করা প্রয়োজন যে দীর্ঘ দিন ভলানটিয়ারিং করার জন্য অন্য যারা চরহ গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন এক মহিলা যিনি একটানা ৫০ (পঞ্চাশ) বছর ধরে ভলানটিয়ারিং করেছেন! তিনি এই হসপিটালে তার চাকরি জীবনের শুরু থেকেই কাজটা শুরু করেছিলেন এবং কাজ থেকে অবসর গ্রহণ করার পরও চালিয়ে যাচ্ছেন! ধন্য তার একাগ্রচিত্ততা, dedication! মহিলার সংগে দেখা করে হাত মিলিয়ে   আন্তরিকভাবে তাকে Congratulations জানালাম।

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা