প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সূর্যকরোজ্জ্বল দিন ও তার নির্বাচনি বৈতরণী
অক্টোবর ৯, ২০১৯
মোহাম্মদ আলী বোখারী
২০১৫ সালে এক রাজনৈতিক অমানিশায় জাস্টিন ট্রুডো হয়ে ওঠেন শেষতক জনপ্রিয় এবং তার সূর্যকরোজ্জ্বল দিনের প্রতিশ্রুতি তাকে জয়যুক্ত করে তোলে, এমনকী তার দল, লিবারেল পার্টি ভূমিধস বিজয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে তিনি হন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। পরবর্তীতে সেই জনপ্রিয়তা তিনি প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধীতা করেই অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হন, যা বিশ্ব দেখেছে।
কিন্তু গত ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নৈতিক অনুসন্ধানীরা জানিয়েছেন, গত বছর তিনি প্রকৌশল সংস্থা এসএনসি-লাভালিনকে ফৌজদারী অপরাধে দোষী হওয়ার প্রক্রিয়া থেকে রক্ষায় তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচার মন্ত্রী জোডি উইলসন-রেবল্ডের উপর অযাচিত চাপ সৃষ্টি করে আইন অমান্য করেছেন, যা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতকে জটিলতর করবে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
সেই ধারণা কতখানি বাস্তবতায় পাখা মেলবে সেটা সময়ই বলবে, তবে রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নৈতিক অনুসন্ধানীদের ক্ষেত্রে এমন স্বাধীন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়াস বোধ করি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পাওয়া দুরাশাতুল্য; অন্তত বাংলাদেশে, যেখানে দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, যিনি সম্প্রতি কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে টরন্টো স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন যে, ‘সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা না শোনায় তাকে উৎখাত করা হয়েছে, যে সংশোধনীটি বাস্তবে ভিন্নমতের বিচারকদের সহজেই অপসারণ করতে পারবে।’
সহজেই বোধগম্য, সেটি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতির দাবি! কিন্তু কানাডার রাষ্ট্রীয় পুলিশ, আরসিএমপি ট্রুডোর বিষয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের ক্ষেত্রে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির আহবানে মতামত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আরসিএমপি’র জনসংযোগ দপ্তর কেবল জানিয়েছে, তারা ‘প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অতি সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করছে এবং যথাসময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপটি গ্রহণ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় নৈতিক কমিশনার মারিও ডিওন সর্বশেষ রিপোর্টে লিখেছেন, ‘প্রভূত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। অবশ্য ইতিপূর্বে তার প্রকাশিত রিপোর্টে যা প্রকাশ পায়, তা সুনির্দিষ্টভাবে বিস্তারিত কোনো কিছু তুলে না ধরলেও ফেব্রুয়ারী মাসে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও অপরাপর মন্ত্রীদের জড়িয়ে এক সরব আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।
তদুপরি সর্বশেষ ওই অভিমতের কারণে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাৎক্ষণিক জনসমক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমি নৈতিক কমিশনারকে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাই। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি কানাডার জনগণের প্রাতিষ্ঠানিক নির্ভশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের সংসদীয় কমিটির ভূমিকা অপরিসীম। আমরা নৈতিক কমিশনারকে সে কাজে পুরোপুরি সহযোগিতা জুগিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সকল প্রকার সংযোগের বিষয়ে কমিশনার তার দৃঢ় অবস্থানটি গ্রহণ করেছেন। আমি সেই সারমর্মপূর্ণ অভিমতের ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষন করি, কেননা যেখানে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। আমার দৃষ্টিভঙ্গী ছিল এবং সব সময়ই থাকবে, আইনের শাসন ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে জনগণের কর্মসংস্থানের পক্ষে অবস্থান ও দেশব্যাপি জীবিকা নিশ্চিতকরণ। যেখানে সহস্রাধিক কর্মসংস্থান জড়িত এবং কমিউনিটি হবে দুর্দশাগ্রস্থ, সেখানে সহযোগিতা জোগানোটাই সরকারের দায়িত্ব।’
তবে এ মুহুর্তে বলা মুস্কিল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ওই বক্তব্য কতখানি পরিস্থিতি সামাল দেবে কিংবা ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় তার পুর্ননির্বাচনে ফলপ্রসূতা বয়ে আনবে। তা সত্বেও এ কথাটি ঠিক তার সূর্যকরোজ্জ্বল দিনের প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় অবশ্যই জনগণ তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অবকাঠামো নির্মাণ ও সর্বোপরি কানাডার আপামর জনতার উন্নততর জীবনযাত্রাটিকেই বিবেচনা করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ই-মেইল: bukhari.toronto@gmail.com