প্রবাসে পরহিতকর্ম – ৫৫

জানুয়ারী ৭, ২০১৯

রীনা গুলশান

সব ছা-পোষা মানুষ। গত তিন বছর ধরে এরা একটা সুন্দর স্বপ্নের জন্য অনেকগুলো টাকা লগ্নি করেছে। একটা বড়ি হবে।  নিজের বাড়ি। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের কোনে এই স্বপ্নটা লুকিয়ে থাকে তার নিজের একটা বাড়ি হবে। একদিন ঘুমিয়ে থাকা স্বপ্নটাই মাথা চড়া দিয়ে উঠে। এরাও সেই স্বপ্ন বিলাসী। কিন্তু তারা আজ পথে নেমেছে। তাদের রক্ত পানি করা টাকা!!

লেমাইন গ্র“প বললো, আমাদের কোন দোষ নাই। হঠাৎ করে এজাক্স মিউনিসিপালিটি আমাদের সাথে অসহযোগিতা করছে। সবাই জিজ্ঞাসা করলো কেন করছে? ওরা বললো, আমরা ঠিক জানিনা। এরপর ক্রেতাদের সাথে নিয়ে লেমাইন গ্র“পের চেয়ারম্যান একদিন মিউনিসিপালিটিতে একত্রিত হলো। ক্রেতাদের দাবীর মুখে ওরা বললো যে, লেমাইন গ্র“প সময়ের বরখেলাপ করেছে। তারা যে সময়ের মধ্যে আরম্ভ করতে চেয়েছিল, সেটা তারা করেনি। অতএব আমরা ওদেরকে আর অনুমতি দিব না। লেমাইন গ্র“প বললো, আসলে মিউনিসিপালিটি চাপ দিয়ে আরো বেশী টাকা নেবার পায়তারা করছে।

অতএব বাদ-প্রতিবাদ চলতেই থাকলো। মিউনিসিপালিটি একেবারে অনড় রইল। লেমাইনকে আর দেবে না। অতএব, সবাই অত্যন্ত বিমর্ষ চিত্ত্বে যার যার গন্তব্যে প্রস্তান করলো। তারপরও ওরা বেশ কিছুকাল চুপচাপ রইল। অতপর : তারা ঘোষণা করলো যে, তারা টাকা ফেরত দিবে।

ক্রেতারা সবাই খুবই মনমরা হয়ে পড়লো। এটা কি হলো? টাকা দেবে ঠিক আছে। কিন্তু টাকাতো আর কেউ ফেরত চাইছে না। তারা চেয়েছিল বাড়ি বা কন্ডো। সবাই স্বপ্ন দেখেছিল যার যার নিজস্ব অনুভূতি নিয়ে। এটা কি হলো? কত কষ্ট করে এই সব ক্রেতারা গত তিন বছর ধরে সাইনিং মানি থেকে ডাউনপেমেন্টের ৫% এর টাকা যোগাড় করেছে। আজ বলছে টাকা ফেরত দেবে।

৩১৮টা ইউনিটের ক্রেতাদের কাছ থেকে কি পরিমাণ সাইনিং মানি পেয়েছে লেমাইন গ্র“প? উপরন্তু গত তিন বছরের ৫% হারে ডাউনপেমেন্টের টাকা। পাহাড় পরিমাণ টাকা ব্যাংকে খাটিয়েছে। এখন মিউনিসিপালিটির সাথে গন্ডগোলের ধূয়া তুলে ক্রেতাদেরকে পথে বসিয়ে দিল। শুধু যে এজাক্সে এই ঘটনা তা নয়। সুন্নাতুল জামাত মসজিদের সামনে আর একটা – এইরকম  হাইরাইজ বিল্ডিং এর পরিকল্পনা এবং যথারীতি সাইনিং মানি এবং ৫% হারে ডাউনপেমেন্ট এর টাকা নিয়েছিল। ওখানে আমার এক ভাই দিয়েছিল ১০% টাকা। ২০১৪ এর শেষে এটার সাইনিং মানি নিয়েছিল। আজ পর্যন্ত ক্রেতারা বছর বছর টাকা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনই নড়চড় নাই।

ভন এলাকাতে এক বিগ বাজেটের প্রজেক্টে আমার কলিগ কিমি-ও টাকা ঢেলেছিল, তারাতো বাধ্যতামূলক ভাবে ১০% টাকা দিয়েছিল। ওখানে ছিল কন্ডো এবং টাউনহাউস, ওটাও ২০১৪ এ। অনেক বড় পরিসরে। কিছু ছিল ডিটাচ হাউস। ৩ বেডরুম ২ ওয়াশরুম। কিছু ছিল ৫ বেডরুম ৪টা ওয়াশরুম। আমার কলিগ নিয়েছিল ৫ বেডরুমেরটা। কারণ ওর সাথে ওর মেয়ে জামাইও থাকবে। এদিকে তার হাসবেন্ড অলরেডী রিটায়ার্ড করেছে গত বছর। আমার কলিগ করবে আর দুই বছর পর। তারা যেহেতু ঐ এলাকাতেই থাকে ১৫/২০ বছর ধরে, তাই ওখানেই ওরা টাকা জমা দিয়েছিল। প্রায় ৫/৬ বছর ধরে আশায় আশায় চেয়ে আছে। সারাজীবন ছোট্ট পরিসরে থেকেছে। এবারে একটু বড় পরিসরে থাকবে। ব্যাকইয়ার্ডে কি কি গাছ লাগাবে, আমাকে রোজ তার পরিকল্পনা বলে। রিটায়ার্ড লাইফে মানুষের অন্যরকম স্বপ্ন থাকে। প্রায় ৪২ বছর কানাডাতে হার্ড জব করেছে কিমি। তার হাসবেন্ড তারও আগে এসেছে। দুজনের সব স্বপ্নের এই বাড়ি।

ক্রমশই কিমি হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। প্রায় আমাকে বাড়ির ব্যাপারে বলতে থাকে। তার বক্তব্য থাকে নৈরাশ্যে ভরপুর।

বাংলাদেশে আমরা এই সব প্রতারণায় একবারেই অভ্যস্থ। তারা খাদ্যে  এমনকি শিশুর জন্য দুধেও দুধের বদলে ছাতু মিশিয়ে দেয়। মরা মুরগী বিক্রি করে। এমন কোন খারাপ কাজ নাই যা তারা করে না। সব থেকে বড় কথা বাংলাদেশে ওষুধে  এমনকি ইনজেকশনেও প্রতারণা করে।

কানাডা পৃথিবীর সব থেকে একটি সভ্য দেশ সর্বক্ষেত্রে। সেখানে আজ থেকে ৫০ বছর আগেও দোকানে বা কোন খানে সিসি ক্যামেরার কথা ভাবতেও পারতো না। এখন এই মাল্টিকালচার জনগণ এসে এই দেশটাকেও কি নরকে পরিনত করবে?

তাহলে আমরা কোথায় গিয়ে স্বপ্ন দেখবো? মানুষের একমাত্র মৃত্যু না হলেতো স্বপ্নরা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যায় না। তবে কি আমরা বেঁচে থেকেও মৃত্যুর সামিল হয়ে যাবো। স্বপ্নরা কি ক্যাবলই মরিচিকা প্রবাহ হয়ে পালিয়ে বেড়াবে? কোথায় তাহলে শান্তি খুঁজবো?? এই সব প্রতারকের অনুপ্রবেশ যে সর্বত্রই। অবারিত দ্বার!! (সমাপ্ত)

রীনা গুলশান, টরন্টো

gulshanararina@gmail.com