প্রবাসে পরহিতকর্ম – ৫৪

ডিসেম্বর ৫, ২০১৮

রীনা গুলশান

সামনাসামনি মিটিংটা ডাকলো এক শনিবার সকাল ১০টার দিকে। আমার ছেলের সাথে ওর বাবাও গেলো। কারণ আমার ছেলেটা আসলে কথাই বলে না। যেখানে দরকার সেখানেও বলতে চায় না। তবে মিটিং থেকে ফিরে এসে ওর বাবা খুব খুশী ছিলো। আমাকে বললো, যে ‘লেমাইন গ্র“প’ এর চেয়াম্যানও উপস্থিত ছিল। অতি ভদ্র মানুষ। সবার মতামত সাগ্রহে শ্রবণ করেছে। এবং কিছু ওদের থেকে নোট লিখে নিয়েছে। এবং ওদের লাঞ্চও করিয়েছে।

যাইহোক, এখন অপেক্ষা শুধুমাত্র কন্ডো পাবার। শুধু সেটাই নয়। হাতে পেতে গেলে ২০১৯ এর মধ্যের বছর গুলোতে যে কড়ি গুলো গুনতে হবে, সেটাও এদের জন্য খুবই চিন্তার বিষয়।

এইসব ইয়ং জেনারেশন এর ছেলেরা পাঁচ হাজার/ দশ হাজার ডলার যাই-ই ইনকাম করুক না কেন, সবই খরচা করে ফেলে। আর সেই জন্যই আমার হাসবেন্ড সুচিন্তিত ভাবে এই কাজটি করলো। অন্তত পক্ষে, বাড়ির জন্য হলেও তাদের টাকাটা জমাতে হবে। আর সেই জন্যই আমার ছেলের আক্ষেপের অন্ত নাই। এত্ত্বগুলো ডলার বছল শেষে কই পাবে। মূল টাকার ৫%। যাইহোক প্রথম বছর দিয়ে দিল। যে জমিটাতে করবে, ওখানে অনেক আগে থেকেই অনেকটা আউটলেট মলের মত ছিল। ঠিক ঐ ধরণের দোকান। এলোমেলোসব দোকান পাট। ওখানে ‘আল -নূর’ নামক একটা রেস্টুরেন্ট আছে, আফগানী ওরা। খুব ভাল কাবাব, নানরুটি আর বিরিয়ানী বানায়। আমরা প্রায়ই অফিস ফেরত অথবা ছুটির দিনে ওখান থেকে খাবার ‘টেকআউট’ করতাম। এক বছর হয়ে গেলে ঐ সব দোকান পাটও উঠার নাম নাই। এক রবিবার ‘আল-নূর’ এ ক্যাসেট আনতে গেলাম। এটা ওদের সাইড বিজনেস। বেশ ভাল ভাল ইংরেজী এবং হিন্দী বই পাওয়া যায়। কথা বললাম আলনূরের মালিকের সঙ্গে। সরাসরিই জিজ্ঞাসা করলাম যে তোমাদেরকে লেসাইন গ্র“প কোন নোটিশ দিয়েছে কি? লোকটা হাসি দিল একটা। হাসিটার অর্থ ঠিক ধরতে পারলাম না। তাৎপর্যপূর্ণ হাসি। তার মানে অনেক কিছু হয়। বেশী বোঝার চেষ্টা করলাম না। ওর পাশের দোকানে দোকানে গেলাম। গ্রোসারির দোকান ওটা। ওরা আবার সিগারেট বিক্রি করে। ওটাই কিনতে গিয়েছিল আমার উনি। তো কথা প্রসঙ্গে একেও জিজ্ঞাসা করাতে জানালো, ৬ মাসের নোটিশ পেয়েছে।

এরপর ৬ মাসও চলে গেল। ২০১৬ ও যাব যাব করছে। না দোকান-পাট উঠছে না। না লেমাইন গ্র“পের কোন নড়াচড়া। আমি অসম্ভব ধৈর্যশীল একজন মানুষ। তবে এই ব্যাপারটিতে কেন যে বেশ উতলা হয়ে পড়েছিলাম নিজেও জানিনা । বারবার আমার ছেলেকে উত্যক্ত করছিলাম যে, ওদের অফিসে যেয়ে একটা খবর নে। আমার ছেলের এক কথা- অফিসে কেন যেতে হবে। আপগ্রেড তো অনলাইনেই দেখা যায়।

সত্যি বলতে আমার ছেলেও এখন অফিস থেকে আসবার সময়ে ঐ পথ দিয়েই আসে। ইদানিং তাকে যথেষ্ট উতলাই মনে হয়। এর মধ্যে ২০১৫ বাদে সাইনিং মানি বাদেও ২০১৬ তে ৫% দিয়েছে। ২০১৭ ও চলে এলো। এবারও তার ৫% টাকা দিয়ে দিল।

২০১৭ সালে অনলাইনে বেশ কিছু মানুষের কৌতুহলি চিঠি পত্র আমরা পড়লাম। তাদের সবাই মোটামুটি একই প্রশ্ন- কাজের কোনই অগ্রগতি নাই কেন?

অথচ, আমরা যে বাড়িটাতে থাকি এই বাড়িটাও এক বিল্ডার কে দিয়ে বানানো হয়েছিল। সাইনিং মানি দেবার পর এক বছর এক বছর পরই তারা একটা ডেট দিয়েছিল। সেই ডেটেই বিকাল ৫টায় তারা আমাদেরকে চাবি প্রদান করেছিল। আমি নিজেও বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিলাম। ভাবতেই পারিনি এত বড় বাড়িটা মাত্র এক বছরের মধ্যে দিতে পারবে!

অথচ এটাতো কন্ডো। তবু এত দেরী কেন হচ্ছে? অতপর ২০১৭ তেও এরা ৫% টাকা দিয়ে দিল। অথচ তখন পর্যন্তও বাড়ি ঘর বানাবার কোন আলামতই নাই। শুধু তাই নয়, ওখানে যাদের ব্যবসা ছিল তাদের উঠবার কোনই নাম গন্ধও নাই। এবারে ক্রেতারা নড়াচড়া শুরু করে দিল। সবাই একবার ‘লেমাইন গ্র“প’ এর সাথে ইমেইলে বা কেউ কেউ তাদের অফিসেও হানা দেওয়া শুরু করলো।

ইতবসরে ২০১৭ এক সময় শেষ হলো। ২০১৮ ও চলে এলো। এবার সবাই বেশ রাগাম্বিত হয়ে পড়লো। অনলাইনে সবাই খুব লেখালেখি শুরু করে দিয়েছে।

এরমধ্যে আমরা সকলেই দেখলাম অনলাইনে একজন লিখেছে (যারা ঐ কন্ডো বা টাউন হাউস গুলো কিনবে এবং টাকা জমা দিয়েছিল, তারা আনলাইনে একটা গ্র“প করেছিল) যে আমাদের কন্ডোগুলো হচ্ছে না। এবং এটা পাকা খবর। এবারে সবাই মোটামুটিভাবে লেমাইন গ্র“পের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। এরা এপয়েন্টমেন্ট করে এক রবিবার লেমাইন গ্র“পের সাথে দেখা করলো। সবাই চার্জ করা শুরু করলো। সবাই খুবই উত্তেজিত। (চলবে)

রীনা গুলশান, টরন্টো

gulshanararina@gmail.com