কানাডার রাজনীতির নতুন দিগন্ত
জানুয়ারী ৮, ২০১৮
মোয়াজ্জেম খান মনসুর
কানাডার ফেডারেল রাজনীতিতে তিনটি প্রধান দল। এর মধ্যে (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি) এন ডি পি তৃতীয় সারিতে অবস্থান করছে। এন ডি পি’র ইতিহাসে গত ২০১১ নির্বাচনে Jack Layton এর নেতৃত্বে দলটি এক অভুতপূর্ব দুর্দান্ত জয় কেড়ে নেয় এবং ১০৩টি আসন জিতে নিয়ে অফিশিয়াল বিরোধী দলের মর্যাদায় উঠে আসে। জেক লেইটনের পূর্বসুরী পার্লামেন্টে মাত্র ৩৬টি আসন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন গত ২০০৭ সালের নির্বাচনে। জেক লেইটনের জীর্ণ শীর্ণ দেহে ক্যান্সার রোগের যন্ত্রনা বয়ে নিয়ে লাঠি ভর করে করে তিনি তার নির্বাচনী প্রচারনা করতে গিয়ে পুরো কানাডা চষে বেড়িয়েছিলেন। একজন অত্যন্ত সফল নেতা হিসেবে তিনি যে অভূতপূর্ব জয় এন ডি পি’র ঘরে তুলেছিলেন সেটাকে মিডিয়া ‘অরেঞ্জ ক্রাস’ বলে আখ্যায়িত করেছিল (দলটির রং অরেঞ্জ)। কিন্তু দলটির দুর্ভাগ্য- জেক লেইটন (মিউনিসিপাল পলিটিক্স থেকে উঠে আসা ) তার নিজস্ব ক্যারিসমায় যে ফসল ঘরে তুলে এনেছিলেন তার ফল তিনি ভোগ করে যেতে পারে নি। প্রস্টেট কেনসার ব্যধির কাছে পরাজিত হয়ে আকালে চলে যেতে হয়েছিল পৃথিবী থেকে এই দীপ্তিমান ক্যারিসমাটিক নেতাকে।
তার পর মন্ট্রিয়ালের ফরাসী কানাডিয়ান এম পি Tom mulcair দলীয় ভোটে নেতা নির্বাচিত হন। মলকেয়ার কুইবেকের ডাকসাইটে জাদরেল উকিল এবং একজন দুর্দান্ত সফল পার্লামেন্টিরিয়ান হয়েও তার দল শোচনীয় পরাজয়ের কাছে মাথা নত করেন গত ২০১৫ সালের নির্বাচনে। জেক লেইটনের ২০১১ সালে গড়ে তোলা এন ডি পি’র নতুন দুর্গ কুইবেকে (শ্বেতাঙ্গ ফরাসী অধ্যুষিত প্রভিন্স) মল কেয়ারের দলের প্রচন্ড ধস নামে। গত নির্বাচনে কুইবেকের ৫৯ আসনের মধ্যে মাত্র ১৬ টি আসন ধরে রাখতে সমর্থ হয় মলকেয়ারের দল। পুরো কানাডায় তাদের আসন সংখা ১০৩ থেকে ৪৪টা’য় নেমে আসে। কুইবেকে তাদের ধস নামার অন্যতম প্রধান একটি কারণ ছিল প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী (কনজারভেটিভ দলের) স্টিফান হারপারের তোলা Hot Button নিকাব ইস্যুটি। উদারনৈতিক রাজনীতির প্লাটফরম এন ডি পি’র ছিল নিকাবের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান। তারা মুসলমানদের ধর্মীয় পোষাকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। এখানে তিনি ইসলামোফবিয়ার বিরুদ্ধে একজন সৎ সরব সাহসী নীতিবান উদার নেতার মতন তার বিশ্বাসে অনড় ছিলেন। শুধুমাত্র ভোটযুদ্ধে জেতার জন্য প্রতারনার বাককৌশল অবলম্বন করেন নি। কিন্তু কুইবেকের ব্যাপক সংখ্যক ফরাসী ভাষাভাষীর লোকেরা তাদের নিজস্ব রক্ষণশীল রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ও জাতিসত্বার দর্শনের আলোকে মল কেয়ারের বিশ্বাসের প্রতি বুড়ো আংগুল দেখিয়ে তাকে নির্বাচনে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করে এবং তার রাজনৈতিক জীবনের সমাধী তৈরী করে দেয়। এখানে বলে রাখা দরকার যে, কুইবেকে হোয়াইট এক্ট্রিমিস্ট কয়েকটা সংঘটন এবং সেনাবাহীনির বর্তমান সদস্য ও সাবেক সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটা সংগঠন সোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে অতন্ত সক্রিয়। এমকি সেনাবাহিনীর বর্তমান সদস্যদের কারো কারো ছবি সেই সংগঠনের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে। গত ৫ই অক্টোবর (২০১৭) সিবিসি-তে প্রচারিত এক খবর থেকে জানা যায় যে, সেনাবাহীনিতে কর্মরত যে সকল সদস্য এই এক্ট্রিমিস্ট দলের সাথে জড়িত তাদের প্রতি হুশিয়ারী বার্তা পাঠানো হয়েছে সেনা অধিদপ্তর থেকে। হুসিয়ারী বার্তায় বলা হয়, এই সকল কর্মকান্ড সেনা বাহিনীর code of conduct এর লংঘন। এখানে উল্লেখ্য যে, গত বছর ২৯শে জানুয়ারী কানাডার ইতিহাসে প্রথম বারের মতন কুবেক সিটির এক মসজিদে রোজার মাসের এক সন্ধ্যায় নামজরত মুসুল্লীদের উপর বন্দুক হামলা চালিয়ে ৬ জনকে হত্যা করা হয়। ঐ হামলায় আহত হন ৩৯জন। হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছেন কুইবেকের একজন শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী ।
এ দেশের রাজনীতির প্রথা অনুযায়ী নির্বাচনে হেরে গেলে নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে হয়। Tom Mulcair বেলাতেও সেটাই হয়েছিল যদিও দলনেতা নির্বাচন করতে এবার এন ডি পি দীর্ঘ দুই বছর সময় নিয়েছে। এতদিন তিনিই দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন । গত পহেলা অক্টোবর,২০১৭ এন ডি পি’র নতুন দলনেতা নির্বাচিত হন এদেশের ভিজিবল মাইনোরিটি’র একজন সদস্য। ভারতীয় শিখ দম্পতীর পাগড়ী পরা এক তরুন শিখ সন্তান Jagmeet singh. তিনি গ্রেটার টরন্টোর স্কারবরোতে জন্ম নেয়া একজন তরুন লইয়ার। বয়স ৩৮। জাগমিত সিং এন ডি পি’র কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হলেও তার কোন এমপি (মেম্বার অব পার্লামেন্ট) পদ নেই। বহুভাষিক আইনজীবী ব্যাচেলর জাগমিত সিং এর আগে অন্টারিও প্রভিন্সের এন ডি পি দলের একজন এম পি পি (মেম্বার অফ প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) ছিলেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর এমপিপি পদ থেকে তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
জাগমিত সিংয়ের ক্যারিশমা ছিল- তিনি এবার প্রচুর সংখ্যক তরুনকে তার দলের সদস্য বানিয়েছেন। ৪৭ হাজার নতুন সদস্য সংগ্রহ করেছেন তিনি। নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ৫৩.৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি যা নিঃসন্দেহে তার উঠতি তরুন নেতা হিসেবে সাফল্যের ঝলকানি এবং সেতুবন্ধন। টরন্টোর উপশহর মিসিসাগা, ব্রামটন, ওকভিল সাউথ ইস্ট এশিয়ার এক বিরাট জনগোষ্ঠির বসবাস। এই তিনটি শহরে খুব অল্প সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ বা অন্য কমিউনিটির লোকের বসবাস। ফলে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কারো পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহন এবং জয়ী হবার মোক্ষম জায়গা বলা যেতে পারে ঐ অঞ্চলগুলো। জাগমিত সিং উজ্জল দীপ্ত তরুণ গোষ্ঠিকে সাথে নিয়ে বিপর্যস্ত এন ডি পি-কে জনসাধারনের কাছে আবারো গ্রহনযোগ্য করে তুলতে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। এন ডি পি উপরতলার নেতা এবং নীতি নির্ধারক ব্যক্তিগণ জাগমিত সিং এর তারুন্য দীপ্ত নেতৃত্বকে আগামী নির্বাচনে একটি জয় যাত্রার কাহিনী মঞ্চস্থ হবার আওয়াজ পাচ্ছেন। এখানে বলে রাখা ভাল, বারাবরই দেখা যায় যে তরুন ভোটারা নির্বাচনের সব হিসাব নিকাশ মিডিয়ার নিয়মিত বিশ্লেষন গ্রাফ টেলিভিশনের আতেলিয় তত্বকথার মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং কোন দলের পক্ষে নিঃশর্ত নিবেদিত থাকে না। এরা ক্ষমতাশীন দলের ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি কতখানি বাস্তবায়ন করেছে তা মুল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয় কোন দলকে তারা ভোট দেবে । এবং এরা শিক্ষিত প্রফেসনাল অর্গানাইজড তরুন গোষ্ঠি। সোসাল মিডিয়াতে একচ্ছত্র আধিপত্য তাদের।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে গত ২০১৫ নির্বাচনে লিবারেল দলের Justin Trudue তরুনদের ভোট পেয়েছিলেন ৪৫ শতাংশ আর এন ডি পি ২৫ শতাংশ। সর্বনিম্নে ছিল স্টিফেন হারপারের কনজারভেটিভ দল। তারা ভোট পেয়েছিল ২০ শতাংশ। জাস্টিন ট্রুডো ছিলেন ৪৩ বয়সের সবচেয়ে তরুন প্রার্থী। এবাকাস ডেটা এবং স্টুডেন্ট এলায়েন্স এসোসিয়েশনের এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে যে তরুন ভোটারদের vote casting বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৮ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশ যেটা জাস্টিনের ব্যলট বাক্স ভারী করেছিল এবং মজার ব্যপার হলো যে, কখনো সরব কখনো নীরব এই ভোটব্যাংক কিন্তু লিবারেল বা এন ডি পি’র পক্ষেই ভোট দেয়। এই সুইং ভোটার গোষ্ঠিই হচ্ছে কিং মেকার । গতবার লিবারেল দলের নেতা জাস্টিন ৮ শতাংশ তরুনদের নির্বাচন মুখী করতে সর্মথ হয়েছিলেন। বলা যেতে পারে সেটা ছিল তার বিজয়ের অন্যতম একটি কারণ।
কানাডাতে ভারতীয় শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনদের বসবাস বেশ কয়েক জেনারেশন ধরে। বৃটিশ কলম্বিয়ার ভেঙ্কুবারে শিখদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং বিশাল প্রতিপত্তি রয়েছ বর্তমানে। লিবারেল দলের সাথে তাদের রাজনৈতিক সর্ম্পক অর্ধ শতাব্দিরও বেশি পুরানো। লিবারেল দলের অতি উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন এই শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন। Jean Cretien এর প্রধান মন্ত্রীত্বের (১৯৯৩-২০০৩) আমলে বৃটিশ কলম্বিয়ার প্রথম Indo Canadian মুখ্য মন্ত্রী ছিলেন Ujjal singh Dosangh যিনি পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদও (২০০৪-২০০৬) অলংকৃত করেছিলেন। উজ্জল দোসানহ প্রথমে এন ডি পি দলের সদস্য ছিলেন এবং বি সি’র এটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৫-২০০০ সাল পর্যন্ত। পরে জ্যন ক্রেতিয়ের আমনন্ত্রনে লিবারেল দলে যোগ দেন। লিবারেল সরকারের বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী Harjit singh Sajjan ভেঙ্কুবার সাউথ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ২০০১৫ সালে। এদের দু’জনেই ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ জন্ম। উজ্জল দোসআ (৭০) পেশায় একজন অইনজীবী । কানাডার বিস্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রী নেন । আর হারজিৎ তার নির্বাচিত এলাকায় বড় হয়ে হয়েছেন । হারজিৎ সাজ্জান (৪৭) কানাডার সেনাবাহিনীর একজন অত্যন্ত সফল ডেকোরেটেড লেফটেনেন্ট কর্নেল। তিনি ভেঙ্কুবার পুলিশের ডিটেক্টভ বিভাগে এবং আফগানিস্তানেও সেনাবাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত ছিলেন । তিনিই প্রথম ভিজিবল মাইনোরিটির সদস্য যিনি মাথায় ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিকচিহ্ন নিয়ে ফেডারেল সরকারের মন্ত্রিত্বের পদ অলংকৃত করেছেন ২০১৫ সাল থেকে।
এন ডি পির নতুন দলনেতা জাগমিত সিং আগামী ২০১৯ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন কুইবেকে এটা নিশ্চিত করে বলতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়। কারণ ধর্ম এবং বর্ণবৈষম্যের প্রচন্ড উত্তাপে উত্তপ্ত এই প্রভিন্সের শ্বেতাঙ্গ কুইবেকুয়ারা মল কেয়ের’কে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে গত দু’বছর আগে। এখানে জাগমিত সিংয়ে’র গায়ের বাদামী রং, অরিজিন আর মাথার পাগড়ী হবে কুইবেকুয়াদের জন্যে তার বিরুদ্ধে নির্বাচন যুদ্ধে এক অন্যতম ভয়াভহ হাতিয়ার। আর পশ্চিম কানাডায় কনজারভেটিভ দুর্গে তার গ্রহনযোগ্যতার সাফল্যের গল্প তৈরী করতে পারা হবে অত্যন্ত দূুরহ কষ্টসাধ্য এক আপহিল ব্যাটেল। জাগমিত সিংয়ের তারুন্য দীপ্ত ক্যারিশমার রঙ্গধনুর ঝলসানিতে কানাডার কোস্ট টু কোস্ট কতখানি এবং কেমন আলোর উৎসব সৃষ্টি করবে সেটা দেখতে আমাদের আরও দু’বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে আগামী নির্বাচনের সময় গত বারের তরুন জাস্টিন ট্রুডোর বয়স হবে ৪৮, আর জাগমিত সিং এর ৪০ এবং কনজারভেটিভ দলের নব নির্বাচিত দলনেতা এন্ড্রু শিয়ারের বয়সও হবে ৪০। এই ত্রয়ী তরুন নেতাদের নির্বাচনী প্রতিদ্ধন্দ্বিতা যে টানটান উতপ্ত উত্তেজনায় মুখরিত থাকবে সেটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় । একথা নিঃসন্দেহে বলার সময় হয়েছে যে কানাডার জাতীয় রাজনীতির খেলাঘরে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির প্রচেষ্টার পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সবশেষে – কানাডার বর্ণবৈষম্য ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে শিখ দম্পতির ঘরে জন্ম নেয়া দলপতি জাগমিত সিংয়ের সময়ের চাকায় ভর করে রাজনীতির স্বর্নালী অধ্যায় সৃষ্টি করার প্রয়াসের সাথে কতুটুকু সামঞ্জস্য রয়েছে তা ভেবে দেখার আমন্ত্রন রইল। এস এস কামাগাতা মারু নামের একটি জাহাজ ১৯১৪ সালের ২৩ শে মে ভেঙ্কুবারের বন্দরে ৩৭৬ জন যাত্রী নিয়ে এসে ভীড়ে। যাত্রীদের সবাই ভারতের পাঞ্জাবের অধিবাসী। জাহাজটি হংকং থেকে চীন জাপান হয়ে কানাডার ভেঙ্কুবারে এসে নোঙ্গর করে। তখনকার ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী যেহেতু জাহাজের যাত্রীরা তাদের জন্মভূমি থেকে সরাসরি (অন্য দ্বিতীয় কোন দেশের সিমানা ছোঁয়া যাবেনা) কানাডায় এসে পৌছেনি সে কারনে তারা এদেশে ঢুকার অধিকার পাবে না। কিন্তু সে সময় কোলকাতা বন্দর থেকে সরাসরি ভেঙ্কুবারে আসার পথ ছিল না। ১৯০৮ সালে ভারতীয় ইমিগ্রেন্টদের এদেশে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেবার জন্যে এই এক্ট পাশ করানো হয়। কিন্তু জাহাজের যাত্রীদের পক্ষ থেকে বলা হয় যেহেতু তারা সবাই বৃটিশ এম্পায়ারের নাগরিক এবং কানাডাও রানীর কমনওয়েলথের অর্ন্তভুক্ত সেহেতু তাদের এদেশে ইমিগেন্ট হবার অধিকার রয়েছে। কানাডা ইমিগ্রেশনের সাথে বহু বাক বিতন্ডা শেষে বৃটিশ কলম্বিয়ার কোর্টে মামলা উঠে। সেখানে বিচারপতি কানাডা সরকারের পক্ষে রায় ঘোষনা করেন। ফলে জাহাজটি শিখদের নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয় কলকাতায়। দুইমাস জাহাজটি বন্দরে থাকার সময় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের খাদ্যদ্রব্য সাপ্লাই বন্ধ করে দেয় এবং তাদের শিখ কমউনিটির সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সবশেষে জাহাজটি কলকাতা বন্দরে পৌঁছালে সেখানে আর্ম বেটেলিয়ান কামাগাতা মারুর ১৯ জন শিখকে হত্যা করে এবং বহুজনকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আজ শতবর্ষ পরে এই কানাডায় সেই শিখদের উত্তর পুরুষ এন ডি পি দলনেতা ব্যাচেলার জাগমিত সিং শতাব্দী পুরানো বর্নবৈষম্যের ভয়ংকর নোংরা পথ দিয়ে মাথায় পাগড়ী বেধে যদি অটোয়ার মসনদে গিয়ে বসতে পারেন তাহলে কামাগাতা মারুর ভুলে যাওয়া লুপ্তপ্রায় ইতিহাস একবার আমাদের সামনে এসে দাড়িয়ে বলবে ‘ ইতিহাস কথা কও’।
মোয়াজ্জেম খান মনসুর
টরন্টো, কানাডা