কানাডীয় হওয়ার কারণে অভিবাসীরাই আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গর্বিত
আগস্ট ৫, ২০১৭
ক্যামিলো জাচিলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা সম্পর্কে এরই মধ্যে যাকিছু বলা হয়েছে তার চেয়ে বেশি আর কী বলা যেতে পারে?
এটি সুনির্দিষ্ট করে আসলে তার সম্পর্কে বলা নয়। এটি আসলে হলো তার মানসিকতা সম্পর্কিত। অনেক মানুষই তার চিন্তা-ভাবনা লালন করে যা অস্বস্তিকর।
আমার বাবা-মা ছিলেন অশিক্ষিত অভিবাসী। তারা কখনই এখানকার ভাষাটা রপ্ত করতে পারেননি। তারা রেলপথের পাশে একটি অস্থায়ী বাগান চাষ করতেন, তারা কোল্ড স্টোরেজে সসেজ ঝুলিয়ে রাখতেন এবং নিজেদের গ্যারাজে মদ তৈরি করতেন। এক প্রজন্মের পর তাদের তিনটি সন্তানের সবাই পেশাজীবীÑ দুজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং একজন সাইকোলজিস্ট। কানাডীয় সমাজের সঙ্গে পুরোপুরি একাত্ম হয়ে ওঠা নাগরিক সৃষ্টির জন্য জন্য প্রয়োজন হয়েছে মাত্র একটি প্রজন্মের। তাদের নাতি-নাতনিদের জীবন হলো কানাডীয় পদ্ধতির: প্রকৌশলী, গবেষক, ওয়েব কনটেন্ট স্পেশালিস্ট, এইচভিএসি টেকনিশিয়ান ও সামরিক বাহিনীর সদস্য।
“তাদেরকে” পুরোপুরি গ্রহণ করার মাধ্যমে তারা দ্রুতই “আমাদের” হয়ে উঠেছেন
তাদের গল্পটা একান্তই অভিবাসীদের চিরন্তন গল্পের মতো: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের একটি মেসে বাস করতো দুজন তরুণ বয়সী মানুষ। তারা কপর্দকশূন্য অবস্থায় নৌকায় করে এসেছে শুধু এই আশা ও ইচ্ছাশক্তি নিয়ে যে তারা কটোর পরিশ্রম করবে।
আপনার বাড়ির মেঝে মোছা এবং আপনার অন্তর্বাস সেলাই করা থেকে শুরু করে একটি অভিন্ন চরিত্রের কানাডীয়দের ক্রমবর্ধমান একটি গ্র“পের বীজ বপন করতে এই দুজন অশিক্ষিত অভিবাসীর জন্য খুব বেশি সময় লাগেনি। এরা আমাদেরই অংশ।
নবাগতদের জন্য একাত্ম হতে কিছুটা সময় লাগেই। নিজেদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা এবং নতুন একটি ভাষা শিখে নেয়া সহজ নয়, তবে আমাদেরকে আরও বেশি স্বাগত জানানোর মানসিকতাসম্পন্ন হতে হবে। “তাদেরকে” পুরোপুরি গ্রহণ করার মাধ্যমে তারা দ্রুতই “আমাদের” একজন হয়ে উঠবে।
আর তাদের জন্য কাজ খুঁজে পাওয়াও আমরা যতটা ভাবছি সম্ভবত তত কঠিন নয়। যদিও আমরা প্রায়শ শিক্ষিত অভিবাসীদের অগ্রাধিকার দিই যারা আমাদের ভাষা জানে এবং যারা দক্ষ। তাদের জন্য অনেক ধরণের কাজ আছে যেগুলো আমরা করতে চাই না। আমার বাবা-মার মতো অভিবাসীরা অবশ্য মেঝে পরিষ্কার করা, ট্যাক্সি চালানো বা অন্তর্বাস সেলাই করার মতো কাজ করেও বেশ খুশি ছিলেন। পরে তাদের সন্তানরা, তাদের কানাডীয় সন্তানরা, হয়তো দক্ষতাসম্পন্ন কাজগুলো বেছে নেবে।
আমি নিয়মিত একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যাই যেটি চালান খেমার রুজদের বর্বর হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি। সম্প্রতি আমি নিশ্চিতভাবে অনুপ্রেরণাদানকারী লেখক কিম থায়-এর সঙ্গে দেখা করেছি যিনি নৌকায় করে পালিয়ে আসা বহুসংখ্যক ভিয়েতনামীর একজন; আর আমি একটি সার্বিয়ান মালিকানাধীন রেস্টুরেন্ট থেকে পিৎসা কিনি। এই সবগুলো মানুষ আমাদের অংশ হয়ে গেছেনÑ আমাদের চির বিকাশমান সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন।
তাহলে অভিবাসীদেরকে প্রায়ই সমস্যা হিসাবে দেখা হয় কেন? সিরীয় উদ্বাস্তুদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে আমি বিশেষভাবে হতাশাগ্রস্ত। একজন ক্ষুধার্ত মানুষ যদি আপনার সামনে এসে কিছু খাবার চায় তাহলে আপনি কীভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবেন এবং সেখান থেকে চলে যাবেন? তারপরও দৃশ্যত এটিই ট্রাম্প ও তার সমর্থকদের মতো অভিবাসীবিরোধী অতিউৎসাহী লোকেদের মানসিকতা। সিরীয় উদ্বাস্তুদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার অর্থ হলো আপনি যে চিকেন নাগেটটা খেয়ে শেষ করেননি তা ফেলতে গার্বেজে যাওয়ার সময় একটি ক্ষুধার্ত শিশুকে পা দিয়ে মাড়িয়ে যাওয়া।
অভিবাসীরা হুমকি নয়
নিরাপত্তাজনিত কারণে কোনও কমতি নেই। “হতভাগ্য বাস্তুহীন”দের দিক থেকে নিরাপত্তার ওপর কোনও হুমকি আসে না। হুমকি আসে তাদের দিক থেকে যাদেরকে আমরা অবাঞ্ছিত বহিরাগত বলে অভিহিত করে বিচ্ছিন্ন করে রাখি। আর অবশ্যই আমরা যেমনটা দেখেছি চলতি সপ্তাহে কুইবেক সিটির ঘটনা থেকে যেটা ঘটিয়েছে উপজাতীয়দের নিয়ে আমাদের বক্তৃতাবাজির মাধ্যমে উত্তেজিত ধর্মান্ধরা।
আমরা যাদেরকে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিই তারাই আমাদের একজন হয়ে ওঠার কারণে সবচেয়ে বেশি গর্বিত বোধ করে। কানাডা দিবসের কোন প্যারেডে যান এবং দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের চেহারাগুলো গণনা করুন। আর শ্বেতাঙ্গদের মধ্যেও কারা অভিবাসী তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে। দেখবেন আমাদের জাতীয় পতাকা কারা সবচেয়ে বেশি উৎসাহের সঙ্গে দোলাচ্ছে।
অভিবাসীরা হুমকি নয়। তারা তো আমাদেরই একজন হয়ে ওঠে। যদি না আমরা তাদেরকে “তারা” হিসাবে চিহ্নিত করি।
ক্যামিলো জাচিলা, পিএইচডি
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, বক্তা ও কলামিস্ট – হাফিংটন পোস্ট