বাবা দিবসের গিফ্ট
জুলাই ৮, ২০১৭
মোয়াজ্জেম খান মনসুর
আমার ছোট মেয়ে -নয় বছরের সানাইয়া -তার মা’কে বলে মাম্মা ‘ডেডি ইজ উইয়ার্ড ‘ ডেডি রান্না করার সময় রক গান শুনে । সানাইয়া আমাকে বলে ডেডি ‘ হো লিসেনস রক মিউজিক হোয়াইল কুকিং ‘। আমি বলি আই ডু। ও বলে ডেডি ইউ আর ক্রেইজি! ইউ আর সামথিং । আমি মাঝে মাঝে নিতান্ত বিপদে পড়লে ঘরে রান্না করি। তবে সুখবর হল যে, গিন্নী আমার রান্না পছন্দ করে না। আমি অবশ্য প্রায়ই ছেলে আলভি আর মেয়ে সানাইয়ার ডিনার (সেন্ডুইচ/পাছটা) করে দেই। কারণ সানাইয়া এমনিতেই একদম খাওয়া দাওয়া করেনা। আমাকে এসে বলে ‘ মাম্মা ইজ এ ওরস্ট কোক , ডেডি সেন্ডুইচ বানাবে ডিনারে। আমি কোন বাহানা না করে কিচেনে চলে যাই। রান্না করার সময় এন্ড্রয়েড ফোনে ইউটুবে প্রিয় ইংরেজি গান শুনি। পুরানদিনের গান। বহু বছর থেকে রয়েছে আমার ইংরেজি গানের প্রতি অসম্ভব প্রীতি ভালবাসা। ইংরেজি গানের সাথে জড়িয়ে আছে আমার অনেক মধুমাখা স্মৃতি। এখনো শিহরিত হয়ে উঠি গানের তালে তালে গিটারের সুরে সুরে , শরীরে জাগে দোল এক অনাবিল আনন্দের ।
আমার পছন্দের গান গুলো হচ্ছে যেমন ঃ রক,ফাঙ্ক ,জেজ ,ব্লোজ ,রকেন রোল, ফোক, রেগে। যেমন শিল্পী হিসেবে, রড স্টুয়ার্ড, এলটন জন, স্টিং, ফিল কলিন্স, এরিক ক্লেপটন , ব্রুস স্প্রংিস্টন ,পল মেকাটর্নি ,জর্জ হেরিসন ,বিলি জো ডোনা সামার ,এরিতা ফ্রেঙ্কলিন,প্রিন্স ,মাইকেল জেকসন ,বব মারলী, লেড জেপলিন। কার্লোস সানতানা, লুইস আমস্ট্রং ,স্টিভি ওয়ান্ডার আর প্রিয় বেন্ড গুলোর মধ্যে হচ্ছে, পিঙ্ক ফ্লয়েড, ইগেলস ,Super Trumph, বিজিস ,বিটেলস,ডোরস, মেন এট ওর্য়াক, টেন সি সি, ইউ বি ফরটি, ইউ টু, ফরেনার্স, ইউরোপ, ইত্যাদি ।
আপনারা যারা আমার সমবয়সী বা প্রায় সমবয়সী তারা যদি ইংরাজি গানের জগতের সাথে পরিচিত থাকেন তবে পিংক ফ্লয়েডের নাম অবশ্যই জানার কথা । মনে থাকার কথা তাদের পৃথিবী কাপানো কালজয়ী গান ‘এনেদার ব্রিক অন দা ওয়াল ‘we don’t nee no education ‘
প্রায় দুই যুগ আগে মন্ট্রিয়ালে পিঙ্ক ফ্লয়েডের কনসার্ট দেখতে গিয়েছিলাম মন্ট্রিয়াল অলম্পিক স্টেডিয়ামে। সেদিন যখন স্টেজ থেকে ভেসে ভেসে আসল ‘ we don’t nee no education ‘ তখন প্রায় ৪০ হাজার দর্শকে ভরাট স্টেডিয়ামের ছিল সে এক অবর্ননীয় দৃশ্য ।
সবাই শুনছে সেই কিংবদন্তি গান মন্ত্রমুগদ্ধ হয়ে। অনবদ্য গিটারের মাতাল করা সুরে সুরে যেন আনন্দ প্রপাতের ঢল নামছে সমস্ত স্টেডিয়াম জুড়ে।
রজারস ওয়াটারের কন্ঠে যখন ভেসে ভেসে এসেছিল ‘ মানি গেট এয়ে গেট এ গুড জব উইথ পে ,ইউ আর ওকে’।
এক অর্পূব অনুপম সুরের মুর্ছনায় ৪০ হাজার দর্শক হারিয়ে গিয়েছিল এক অন্য আনন্দলোকে।
এবার বাবা দিবসে আমার ছেলে সারভীর জন্ম দিন ছিল। আমরা বাইরে ডিনার করলাম। ছেলেকে ঃৎবধঃ করলাম আমি আর বাবাকে করল শার্লীন।
ডিনার শেষে বাসায় ফেরার পর গিন্নী ওদের জিজ্ঞাস করছে, তোমরা ডেডি’কে গিফট দিলা না। সারভী গত সপ্তাহে আমার জন্য সার্ট কিনে এনেছে। শার্লীন কথা বলে না। কিছুক্ষন পর উপর থেকে এসে বলে ,ডেডি তোমার প্রিয় singer জানি কে ? তারা জানে আমি বৃটিশ রক সিংগার রড স্টুয়ার্ডের প্রচন্ড ভক্ত । প্রায়ই তার গান ইউটুবে শুনি স্পেসিয়ালি যখন আমি রান্নাটান্না করি। সারভী বলে ডেডি এবার রড স্টুয়ার্ড আসছেনা ,ইগেলস ও ব্রুস স্প্রনিস্টিংও আসছে না টরন্টোতে ,তবে পিঙ্ক ফ্লয়েড আসছে অক্টবরে ।
তখন শার্লীন বলে ডেডি তোমার জন্যে আমরা কনসার্টের একটা টিকেট কেটে রেখেছি। এই নাও পিঙ্ক ফ্লয়েডের টিকেট। এটা তোমার জন্য ফাদার’স ডে গিফট। দুইশত পঞ্চাশ ডলার দিয়ে কেনা এই একখানা টিকেট হাতে পেয়ে আমি তখন সত্যিই বাকরুদ্ধ, খুশিতে আত্মহারা। Boy I am excited ever !
ফুটনোট ঃ টরন্টোতে আমার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে শুধুমাত্র হাতে গুনা দুই একজন ছাড়া কেউ ইংরেজি গানের সাথে পরিচিত না। আমার কাছে ব্যপারটা কেমন যেন অদ্ভুত লাগে। এত বছর কানাডা থেকেও তাদের পশ্চিমের গানের সাথে কোন ভাব সখ্যতা নেই ,পরিচয় নেই। তাদের সাথে বলা যায় না ইগেলসে ‘র ‘হোটেল কেলিফোর্নিয়ার ‘অনবদ্য গানের কথা অথবা কার্লোস সান্তানার ‘আই গট এ ব্লেক মেজিক উইমেনের ‘গল্প । তারা জীবনে কখনো শুনেইনি কালো চশমা পরা অন্ধ স্টিভ ওয়ান্ডারের পিয়ানোতে ঝড় তোলা ‘ পার্ট টাইম লাভার’ গানটি । তবে গত কয়েক মাস আগে আমার বন্ধু আসগর তার পুরানো এক বন্ধু মাহবুব রেজার এপার্টমেন্টে নিয়ে গেল আড্ডা দিতে। তার বাসায় আড্ডায় ইংরেজি গান বাজনার কথা উঠলে তিনি বেশ পুলকিত হয়ে জেগে উঠেন। আমি জেনে বিস্মিত হলাম যে ,তার পশ্চিমের গানের সাথে খুব নিবিড় সখ্যতা পরিচয় রয়েছে। তাকে বললাম গ্রেগরি এবটের ‘সেক্সুয়াল হিলিং’ গানটা বের করেন। রেজা ভাই চোখের পলকে ইউটুবে সে গানটা বের করল। কম্পিউটারে ভেসে ভেসে আসল সেই জাদুকরী বিখ্যাত গান । গানের তালে তালে আমাদের শরীর দোলে উঠল ,নেচে উঠল স্মৃতির পুরানো পথঘাট ফেলে আসা আরেক ভিন্ন একসময় ।