কানাডায় বাংলাদেশী পুরুষগণ কতটা সুখী?
“কানাডায় বাংলাদেশী নারীগণ সুখী : কেউ কেউ শতভাগের চেয়েও বেশী”
এপ্রিল ১৫, ২০১৭
॥ খুরশিদ আলম ॥
খুব কঠিন প্রশ্ন, কিছুটা বিব্রতকরও বটে। আমাদের গত সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘কানাডায় বাংলাদেশী নারীগণ সুখী : কেউ কেউ শতভাগের চেয়েও বেশী’। ম্যাগাজিনটি বাজারে যাওয়ার পর বেশ কিছু প্রতিক্রিয়া পেয়েছি প্রবাসের বাংলাদেশী পুরুষদের কাছ থেকে। কেউ টেলিফোনে কেউ সাক্ষাতে তাদের এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফেসবুকেও কেউ কেউ তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর চেষ্টা করেছেন, তবে খুবই সতর্কভাবে। কারণ, ফেসবুকে কেউ কিছু প্রতিক্রিয়া জানালে তার প্রমাণ থেকে যায়। টেলিফোনে বা ব্যক্তিগতভাবে কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানালে সাধারণত প্রমাণ থাকে না।
টেলিফোনে বা ব্যক্তিগতভাবে যারা এই বিষয়টির উপর তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন প্রবাসে বাংলাদেশী নারীগণ বাস্তবিক অর্থেই সুখে আছেন। স্বাধীনতাও ভোগ করছেন পুরোমাত্রায়। কারো কারো মতে ‘অতিমাত্রায়’।
কিন্তু স্বীকারোক্তি ও মতামত প্রকাশের পর প্রশ্নও ছিল তাদের। তারা প্রশ্ন করেছেন, নারীগণ এই সুখ ও স্বাধীনতা পেয়েছেন কিসের বিনিময়ে? এবং এর জন্য কাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ তাদের?
যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের কারো কারো এমনো প্রশ্ন ছিল যে, ‘তাহলে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের সুখের মাত্রা বা স্বাধীনতার মাত্রা কতটুকু এই কানাডায়? তারা কি আদৌও সুখে আছেন?’
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পরিবারে স্ত্রী সুখে থাকলে স্বামীরও সুখে থাকার কথা বা স্বামী সুখে থাকলে স্ত্রীরও সুখে থাকার কথা। একজনের জীবন হবে দুঃখের আরেকজন থাকবেন সুখে এটা কোন সুস্থ পরিবারের সংজ্ঞা হতে পারে না। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা বলা যাবে না।
যারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তদেরই একজন বলেছেন, “ভাই, সকালে ঘুম ভাঙ্গে রাজ্যের উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা নিয়ে। বাড়ির মর্টগেজ পেমেন্ট, ক্রেডিড কার্ডের বিল, প্রপার্টি টেক্স, ইন্সুরেন্স, বাজার খরচ, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আনা-নেয়া, দেশে অসুস্থ বাবা মায়ের চিন্তা, তাদের চিকিৎসার খরচসহ আরো হাজারো চিন্তা মাথায় নিয়ে আমার প্রতিদিনের সকাল শুরু হয়। এর সঙ্গে অপরিহার্যভাবে যুক্ত আছে কর্মস্থলের চিন্তা। চিন্তা না বলে উৎকণ্ঠা বলাই ভাল। কারণ, চাকরীর তো কোন গ্যারান্টি নেই এ দেশে। সকালে হায়ার তো বিকালে ফায়ার। এত উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে থেকে সুখ কোথায় পাব? তার মধ্যে আবার হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার – উনারাও এসে স্থায়ী বাসা বেধেছেন আমার দেহে।”
কি ভয়াবহ অবস্থা! ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। বললেন, এত দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা নিয়ে যে জীবন সে জীবন তো নরক বাসের সমান। এটি একটি জীবন হলো? এ দেশে কুকুর বিড়ালের জীবনও আমার চেয়ে ঢের বেশী সুখের।
ভদ্রলোকের এই অবস্থার কথা শুনে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিল তিনি যে দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠার কথাগুলো বললেন, সেগুলো প্রশমনের ব্যাপারে তার স্ত্রী কোন রকম সহযোগিতা করেন কি না। কিন্তু কৌতুহলের সীমা অতিক্রম হয়ে যেতে পারে মনে করে সে প্রশ্ন আর করা হয়নি। ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার তেমন জানাশুনা নেই। অল্প পরিচিত। সেই জন্য বেশীদূর এগুনো হয়নি।
এই ভদ্রলোক যে দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠার কথা বললেন তার সঙ্গে প্রবাসী অনেক পুরুষই হয়তো নিজেদের মিল খুঁজে পাবেন। ষোল আনা না হোক, কিছু কিছু অংশেতো অবশ্যই মিল খুঁজে পাবেন। কারো কারো হয়তো এর বাইরেও আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো প্রতিনিয়তই দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে কারো কারো প্রবাস জীবনকে নারকীয় করে তুলছে। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি বলেন যে প্রবাসে নারীগণ সুখে আছেন কিন্তু পুরুষেরা সুখে নেই তখন তার জবাবে কি বলা যায়?
আসলে আমাদের প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের তুলনায় প্রবাসে বাংলাদেশী নারীগণ কতটা সুখ, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করছেন তা নিয়ে। বাড়ির মর্টগেজ পেমেন্ট, ক্রেডিড কার্ডের বিল, প্রপার্টি টেক্স, ইন্সুরেন্স, বাজার খরচ, দেশে অসুস্থ বাবা মায়ের চিন্তা, তাদের চিকিৎসার খরচসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কার কতটা উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বা হতাশা এই বিষয়গুলো আলোচনায় আসেনি। আলোচনায় আসলে হয়তো এই বিষয়গুলোতে নারীদের উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা কতটুকু তা প্রকাশ পেত। অথবা এই বিষয়গুলো মোকাবেলায় নারীদের অংশগ্রহণ কতটা তাও প্রকাশ পেত।
বাংলাদেশের নারীগণ কানাডায় এসে ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাচ্ছেন, নিজের মত করে চলাফেরা করতে পারছেন, স্বামী সন্তানদের নিয়ে সুখে আছেন এবং পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে নিরাপত্তা পাচ্ছেন এই বিষয়গুলোই উঠে এসেছে গত সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে। বাংলাদেশের পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশের কারণে অধিকাংশ নারী যে অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেই অধিকারগুলো তারা কানাডায় এসে পাচ্ছেন। এটি প্রবাসী বাংলাদেশী নারীদের জন্য একটি বড় প্রাপ্যের বিষয়।
এখন সেই দৃষ্টিকোন থেকে যদি বিচার করা হয় তবে প্রবাসে বাংলাদেশী পুরুষগণ কতটা সুখী ও স্বাধীন সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনুসন্ধান করা যেতে পারে। বাংলাদেশের তুলনায় তারা এদেশে কতটা নিরাপত্তা অনুভব করেন সেটিও অনুসন্ধান করা যেতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন গবেষণা। তাছাড়া কলামের এই স্বল্প পরিসরে তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা সম্ভবও নয়।
তবে অতি সংক্ষেপে এইটুকু হয়তো বলা যেতে পারে যে, প্রবাসে বাংলাদেশী পুরুষগণও কম বেশী স্বাধীনতা ভোগ করছেন পারিবারিক বিষয়ে মত প্রকাশসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে যেখানে তারা স্বাধীনতা ভোগ করতেন শতভাগ, এখানে হয়তো চেয়ে কিছুটা কম। আর নারীদের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে হয়তো বলা যায় সমান সমান। কিংবা কিছুটা কম-বেশী।
আসলে এটি নির্ভর করে প্রতিটি পরিবারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের উপর। সম্পর্ক যদি হয় সুমধুর তবে স্বাধীনতাও হবে সুবিস্তৃত, আর সম্পর্ক যদি হয় দা-কুমড়ার তবে স্বাধীনতাও হবে অবিস্তৃত। এটি কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশী কোন দম্পতির ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি বাংলাদেশে অবস্থানরত কোন দম্পতির ক্ষেত্রেও।
এখানে পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নটিও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর বিশ্বাস না থাকলে প্রতি পদে পদে স্ত্রীর স্বাধীনতা বিঘিœত হবে সন্দেহ নেই। তেমনি স্বাধীনতা বিঘিœত হবে স্বামীরও যদি তার প্রতি স্ত্রীর বিশ্বাস না থাকে। তাছাড়া বিশ্বাসের ঘাটতি থাকলে সংসারইতো হয়ে উঠে বিষময়। সেখানে স্বাধীনতা আছে কি নেই সেই প্রশ্নতো পরে আসে। আর এসকল ক্ষেত্রে চূড়ান্ত যে পরিণতি ঘটে তা হলো বিচ্ছেদ। আর সেই বিচ্ছেদের পরিনতি হলো সুখ শান্তির সলিল সমাধি।
স্বাধীনতার বিষয়ে এখানে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। আর সেটি হলো, পুরুষদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এমন একটি বিষয় যা না থাকলে অন্য সব স্বাধীনতাই অর্থহীন হয়ে পড়ে।
গত পনের বা বিশ বছরের মধ্য যে সকল বাংলাদেশী বিভিন্ন ক্যাটারগীর ইমিগ্রেশন নিয়ে কানাডা এসেছেন তাদের বেশীরভাগেরই মোটামুটিভাবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছিল বাংলাদেশে। কারো কারো হয়তো বেশী ছিল আর কারো কারো ছিল কম। তবে এই স্বাধীনতাটুকু ছিল। কিন্তু কানাডায় আসার পর সিংহভাগ পুরুষের সেই স্বাধীনতায় ছন্দ পতন ঘটে। অন্তত প্রথম কয়েক বছর বেশ ভালভাবেই ঘটে সেই ছন্দপতন। দেশে যাদের স্বচ্ছলতা বেশী থাকে তারা হয়তো হাতে করে বেশী পরিমানে অর্থ নিয়ে আসেন। কিন্তু কানাডায় বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুই ব্যয়বহুল। সে কারণে সঙ্গে করে নিয়ে আসা অর্থ ব্যয় হতে বেশী সময় লাগে না। অন্যদিকে এখানে আসা প্রায় প্রায় নব্বুই ভাগ বা তারো বেশী লোকের কপালে প্রফেশনাল জব না জুটাতে আয়ও কমে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে। আর তখনই দেখা দেয় অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় বড় রকমের আঘাত। সেই আঘাত গিয়ে লাগে সংসার জীবনে। সেই আঘাত গিয়ে লাগে দাম্পত্য জীবনে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছ, “অভাব যখন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে, সুখ তখন জানালা দিয়ে পালায়”।
এখন প্রবাসী পুরুষদের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যদি বিবেচনায় আনা হয় তবে হয়তো বলা যেতে পারে যে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যাদের নেই কানাডায় তারা সুখী নয়। তাদের সুখ জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে।
কিন্তু প্রবাসে এই অসুখী পুরুষদের সংখ্যা কত? আমরা জানি, প্রবাসে বাংলাদেশী প্রফেশনালদের মধ্যে শতকরা ৫/৭ জন নিজ নিজ লাইনে চাকরী পান। বাকি যারা প্রফেশনাল জব পান না তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছোটখাট ব্যবসা করে বা অন্য কোন সাধারণ জব করে মোটামুটি ভাবে সংসার চালিয়ে নেবার মত আয় করতে পারেন। তবে এদের সংখ্যা যে আবার খুব বেশী তাও নয়। অর্থাৎ বেশীরভাগ পুরুষের আয়ই এমন নয় যে তারা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করছেন। আর এর ফলে পুরুষদের মধ্যে দেখা দেয় মানসিক চাপ এবং সেই সাথে হতাশা ও জটিলতা। এক পর্যায়ে মানসিক রোগ। কারো কারো মানসিক রোগ প্রকাশ পায়, কারো কারো মানসিক রোগ মাত্রা কম বলে হয়তো প্রকাশ পায় না। কিংবা লজ্জার কারণে অনেকে তা প্রকাশ করেন না। ফলে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হন না তারা। আর এতে করে জটিলতা ক্রমশ বাড়তেই থাকে।
পুরুষদের এরকম একটি জটিল পরিস্থিতে তাদের স্ত্রীরা কতটা এগিয়ে আসেন সহযোগিতার হাত নিয়ে? বলা মুসকিল। আমরা জানি, প্রবাসে পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা বজায় রাখতে স্ত্রীদের একটি ভূমিকা থাকে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কটি পরিবারে স্ত্রীরা এরকম ভূমিকা নিয়ে থাকেন?
এর উত্তর পাওয়া খুব কঠিন কাজ। কারণ, এ বিষয়ে কেউই স্পষ্ট করে কিছু বলবেন না। না স্বামী, না স্ত্রী। ফলে এর কোন সঠিক চিত্রও পাওয়া যাবে না।
আর প্রবাসে পুরুষদের নিরাপত্তা? সেটি ষোলআনাই আছে যেমনটা আছে নারীদের ক্ষেত্রে। এখানে নারী পুরুষ শিশু সবারই নিরাপত্তা রয়েছে। কানাডার পুলিশ আর বাংলাদেশের পুলিশের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। সবকিছুই এখানে নিয়মমাফিক চলে। গুন্ডামী, বদমায়সী, চাঁদাবাজী, মাস্তানী ইত্যাদি থেকে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীরা মুক্ত। কোন ধরণের আপদ-বিপদ হলে এখানে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা ও আশ্রয় পাওয়া যায়।
কেউ কেউ অবশ্য কৌতুক করে বলেন যে, পুরুষরা এদেশে ঘরের বাইরে যতক্ষণ থাকেন ততক্ষণ নিরাপদেই থাকেন। কিন্তু ঘরে আসলেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন।
কেন? ঘরে কি বাঘ ভাল্লুক থাকে নাকি? ঘর হলো নিরাপদ জায়গা, শান্তির জায়গা। এখানে আবার ভয় কিসের?
কৌতুককারীদের জবাব – কেন, ৯১১ এর ভয়?
আমি টরন্টোতে এক ব্যক্তিকে জানি যার নাম …। নামটা উল্লেখ করলাম না সঙ্গত কারণেই। ঐ ব্যক্তিটি সবসময়ই তার স্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন। তার প্রশংসার বহর দেখে মাঝে মধ্যে মনে হতো উনি বোধ হয় স্ত্রৈণ টাইপের ব্যক্তি। পরিচিত মহলে তাকে নিয়ে হাস্যকৌতুকও হতো কম নয়। একদিন হঠাৎ এক খবরে স্তম্বিত হয়ে গেলাম। সেই ব্যক্তিটিকে নাকি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তার স্ত্রী ৯১১ এ কল করে তাকে ধরিয়ে দিয়েছেন!
পাঠক, আমাদের কমিউনিটিতে ৯১১ এ কল করার কাহিনী কম নয়। সে কারণেই হয়তো কৌতুকপ্রিয় ব্যক্তিগণ বলে থাকেন পুরুষেরা ঘরে আসলেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কিছু কিছু পুরুষ আছেন যারা সত্যিকার অর্থেই ৯১১ এ কল করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। উপরে যে ব্যক্তিটির কথা বলছিলাম, তিনি তার স্ত্রীর প্রশংসা বাইরের লোকের কাছে করলেও ঘরে ছিল তার অন্যমূর্তি। তিনি স্ত্রীকে সন্দেহ করতেন। কর্মস্থলে তার স্ত্রী পরপুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন কি না তা নিয়ে তিনি সর্বক্ষণ সন্ত্রস্ত থাকতেন। মাঝে মধ্যে কর্মস্থলে গিয়ে গোপনে পর্যবেক্ষণও করতেন। ধরা পরে গেলে বলতেন, ‘এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, তোমার সঙ্গে একটু দেখা করে যাই।’ সন্দেহ করা ছাড়াও ঐ ব্যক্তিটি বাড়িতে স্ত্রীকে মারধোরও করতেন। সন্তানদের সামনেই। দীর্ঘদিন সহ্য করেছেন তার স্ত্রী এই অমানবিক পরিস্থিতি। পরে এক পর্যায়ে বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। আর চূড়ান্ত পরিনতি হয় ডিভোর্সের মাধ্যমে।
আবার অনেক পুরুষকে অভিযোগ করতে শুনা যায় যে, প্রবাসে কিছু কিছু নারী আছেন যারা এই ৯১১ সিস্টেমের অপব্যবহার করেন। অল্পতেই বা তুচ্ছ কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি হলেও স্বামীকে শায়েস্তা করার জন্য ৯১১ এ কল করে পুলিশ ডাকেন। একবারও ভাবেন না যে কাকে পুলিশে ধরিয়ে দিচ্ছেন এবং এতে করে পরিবারের সুখ, শান্তি ও মর্যাদা কতটা বিঘিœত হতে পারে। সন্তানদের উপর এর প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে সে নিয়েও ভাবেন না। সাময়িক উত্তেজনাবশে একটা বড় ধরণের ভাঙ্গণ ধরিয়ে বসেন পরিবারে। দেখা গেছে স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগকারী এই নারীদের অনেকেই আবার স্বামীকে কাছে ফিরে পেতে চান।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে এই বলে যে, ‘এক হাতে তালি বাজে না’। পরিবারে অশান্তি সৃষ্টির পিছনেও কথাটি খাটে অনেক ক্ষেত্রে। সুতরাং প্রবাসে সুখ ও শান্তি চাইলে এবং নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করতে চাইলে উভয় পক্ষকেই সংযমের পরিচয় দিতে হবে। তাহলে হয়তো নারীদের সুখ দেখে আর প্রশ্ন উঠবে না এই বলে যে, প্রবাসে পুরুষরা কতটা সুখী?
এক পক্ষ অসুখে থাকলে অন্যপক্ষ সুখে থাকে কি করে?
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবাসী কণ্ঠ