“ট্রাম্প হবেন কানাডার জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি”

ডিসেম্বর ১০, ২০১৬

খুরশিদ আলম ॥

আগামী ২০ জানুয়ারী আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিতে যাচ্ছেন এই পদের জন্য এযাবতকালের সর্বাধিক বিতর্কিত ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বিতর্কিত শুধু আমেরিকায়ই নন, বিতর্কিত তিনি গোটা বিশ্বেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হবার পর বিতর্কের ঝড় বয়ে গেছে কানাডায়ও। আমেরিকার বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি টরন্টো ও ভেঙ্কুভারে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে। কারণ তারা মনে করছেন এই ব্যক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্য নন। তিনি একাধারে বর্ণবাদী, নারী বিদ্বেষী, ইমিগ্রেন্ট বিরোধী, মুসলিম বিরোধী এবং রক্ষণশীল ও সংকীর্ণ চিন্তাভাবনার লোক। আচার আচরণেও তিনি অত্যন্ত উদ্ধত ও কর্কশ প্রকৃতির লোক। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই তিনি অশোভন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। নারীদের সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন অনবরত। তাই প্রশ্ন উঠেছে এরকম একটি বিতর্কিত ব্যক্তি কি করে আমেরিকার মত একটি দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন?

এদিকে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি হোয়াইট হাউজে তার চিফ অব স্টাফ হিসাবে যার নাম ঘোষণা করেছেন তিনি আরেক চিহ্নিত চরম বর্ণবাদী ব্যক্তি যিনি আমেরিকায় হোয়াইট সুপ্রিমেসীরও সমর্থক। এই ব্যক্তির নাম রাইনস প্রিবাস। তিনি রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির সভাপতি।

ট্রাম্প ইতিমধ্যে আরো যাদের নিয়োগ দিয়েছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে তারাও একই ঘরাণার লোক। বেফাঁস কথাবার্তায় বিতর্কিত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিন হচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। কানসাসের কংগ্রেসম্যান মাইক পম্পিও হচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইয়ের পরিচালক। আলাবামার সিনেটর জেফ সেশন্সকে করা হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। এই তিনজনই কট্টরপন্থী এবং যুদ্ধবাজ বলে পরিচিত। সেশন্সকে বেশ কয়েকবার বর্ণবাদী আখ্যা দেয়া হয়েছে। বর্ণবাদী মন্তব্য করায় ১৯৮৬ সালে তিনি ফেডারেল জাজ পদ হারান। মাইকেল ফ্লিন বহুবার মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য রেখেছেন। তিনি ইসলাম ধর্মকে ‘ক্ষতিকর ক্যান্সার’ বলে অভিহিত করেছিলেন। অন্যদিকে মাইক পম্পেও বলেছিলেন, ‘আমেরিকার সব ইসলামী নেতারা সন্ত্রাসী হামলায় সমর্থন করে। কারণ তারা জোরগলায় এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখে না।’

ট্রাম্প তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বর্ণবাদী, চরমপন্থী ও যুদ্ধবাজ লোকদের নিয়োগ দিয়ে আগে থেকেই পথ নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি কোন পথে এগুবেন।

কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে যে, আমেরিকায় কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন বা  আমেরিকানরা কাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করলেন তা নিয়ে তা নিয়ে অন্যদেশের লোকদের কেন এত মাথা ব্যথা? আর কানাডিয়ান হিসাবে আমাদেরই বা মাথা ব্যথার কি কারণ থাকতে পারে? বিশ্বের অন্য কোন দেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তো এমনটা হতে দেখা যায় না!

এর সোজা উত্তর – আমেরিকা বিশ্ব মোড়ল। কেউ মানুক বা না মানুক, আমেরিকা গায়ের জোরে হলেও সবজায়গায়ই তার মোড়লগিড়ি দেখায়। ফলে আমেরিকার রাজনীতি অন্য অর্থে বিশ্ব রাজনীতিরই অংশ। তার প্রভাব পৃথিবীর সব দেশেই পড়ে। আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে অন্য দেশের লোকদের মাথা ব্যথার কারণ ওখানটাতেই। আর এবার মাথা ব্যথার বাড়তি কারণ হয়ে দাড়িয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প যিনি চরমভাবে আত্মঅংকারী, বর্ণবাদী, নারী বিদ্বেষী এবং ইমিগ্রেন্ট বিরোধী একজন খেপাটে বা উন্মত্ত প্রকৃতির ব্যক্তি।

এই উন্মত্ত প্রকৃতির ব্যক্তিটিকে নিয়ে কানাডার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতিকদেরও উদ্বেগ উৎকণ্ঠার শেষ নেই। নির্বাচনের পর পরিচালিত এক জরীপে দেখা গেছে অধিকাংশ কানাডিয়ানই ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়াটাকে একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি। তারা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কারণে তারা খুব অসন্তুষ্ট। কানাডায় চরম ভাবে এই অসন্তুষ্ট লোকের সংখ্যা শতকরা ৫৩ ভাগ। ফোরাম রিসার্স পুল এর জরীপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। জরীপে আরো দেখা গেছে শতকরা ৫৫ ভাগ কানাডিয়ান মনে করেন ট্রাম্প কানাডার জন্য ক্ষতির কারণ হবে। আর শতকরা ৭৩ ভাগ কানাডিয়ান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে অনুমোদন করেন না। অবশ্য প্রাপ্ত তথ্য থেকে এও জানা যায় যে কানাডিয়ানদের মধ্যে শতকরা ৪০ জন হিলারী ক্লিনটনকেও ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিসাবে সমর্থন করেন না। ফোরাম রিসার্সের প্রেসিডেন্ট লরনে বজিনফ নিজেও কিছুটা বিস্মিত হয়েছেন হিলারী সম্পর্কে কানাডিয়ানদের এই মনোভাবের কথা জানতে পেরে।

তবে কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ভাল সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকদের মধ্যে শতকরা ৪৫ জনের সমর্থন রয়েছে ট্রাম্পের প্রতি। আর লিবারেল পার্টির সমর্থকদের মধ্যে এই হার শতকরা ৯। অন্যদিকে কানাডায় আঞ্চলভেদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন বিভিন্ন রকম লক্ষ্য করা গেছে। যেমন আলবার্টায় শতকরা ৩৩ জন তার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। এই সমর্থনের হার অন্টারিওতে শতকরা ২০ জন, কুইবেকে শতকরা ১৩ জন এবং আটলান্টিক কানাডায় শতকরা ১১ জন। উল্লেখ্য যে, আলবার্টায় কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকও বেশী।

আর সার্বিকভাবে কানাডায় মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৮০ জনই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পছন্দ করছেন না। পুরুষদের মধ্যে এই হার শতকরা ৬৫ জন।

উল্লেখ্য যে, আমেরিকায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই কয়েকজন মহিলা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন। মহিলাদের প্রতি অশ্লীল বাক্যবান নিক্ষেপ ও আপত্তিকর মন্তব্য করার অনেক ঘটনা ঘটিয়েছেন আমেরিকার নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তারপরও তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন একজন মহিলা প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে। বিষয়টি প্রমাণ করে যে, আমেরিকায় এখনো এই সভ্যতার যুগেও পুরুষ প্রাধান্য বিরজমান। নারী নেতৃত্ব মেনে নেয়ার ব্যাপারে আমেরিকার সমাজ এখনো মানসিকভাবে তৈরী হয়নি। বিষয়টির সঙ্গে কানাডিয়ান মহিলারা একমত কি না তা জানতে চাওয়া হলে শতকরা ৫২ জন হ্যা সূচক জবাব দেন। Angus Reid Institute   এর জরীপে সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে।

কানাডার গত নির্বাচনে যারা লিবারেল পার্টি ও নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে ভোট দিয়েছেন তাদের সিংহভাগই ক্ষুব্ধ হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায়। Angus Reid Institute   এর জরীপে দেখা গেছে ৭৫ % লিবারেল সমর্থক ও ৭৮% এনডিপি সমর্থক ডোনাল্ড ট্রাম্প এর ব্যাপারে মর্মাহত। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থকদের মধ্যেও ৩৬% মর্মাহত। তবে ৩৯ % কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক খুশী ট্রাম্প জয়ী হওয়াতে। আর ২৫% বলেছেন তারা খুশীও নন বেজারও নন। অর্থাৎ নিরপেক্ষ।

অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় কানাডার প্রস্তাবিত Keystone XL pipeline এর ব্যাপারে কিছুটা আশাবাদ দেখা দিয়েছে। প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের এই পাইপ লাইনের মাধ্যমে কানাডার আলবার্টা থেকে আমেরিকার টেক্সাসে তেল নিয়ে যাওয়া হবে রিফাইন করার জন্য। এটি বিগত কনজারভেটিভ সরকারের প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। কারণ এটি পরিবেশ বান্ধব নয় বলে মত দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত এর সঙ্গে। তাছাড়া এটি কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও কোন অবদান রাখবে না। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় পাইপ লাইন তৈরীতে সময় লাগবে দুই বছর। আর এতে ৪২ হাজার লোকের অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ দুই বছর পর এই ৪২ হাজার লোক চাকরী হারাবে। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই প্রকল্পের বিষয়ে অনুমোদন দেননি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পাইপ লাইন প্রকল্পে যদি অনুমোদন দেয়ও, তাতে কানাডার তেমন কোন লাভ হবে না বলে মত দিয়েছেন এই প্রকল্পের বিরোধীরা। তারা বলেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাময়িক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি  হলেও অদতে তা কানাডার অর্থনীতিতে কোন  অবদান রাখবে না বরং কর্মসংস্থান আরো কমে যাবে।

এদিকে কানাডার শতকরা ৫২ ভাগ নাগরিক মনে করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কারণে এই দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পরবে। আমেরিকার নির্বাচনের পর  Angus Reid Institute  পরিচালিত জরীপে এই তথ্য পাওয়া যায়। কানাডার বাণিজ্যিক খাতগুলোও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করছেন শতকরা ৫৭ ভাগ নাগরিক।

গত নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বার বার বলে আসছিলেন নির্বাচিত হলে তিনি আমেরিকা থেকে অবৈধ ইমিগ্রেন্টদেকের বহিস্কার করবেন। এই অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের অনেকেই আমেরিকার পাশ্ববর্তী দেশ মেক্সিকো থেকে আসা। মুসলমানদেরকে তিনি আমেরিকায় প্রবেশ করতে দিবেন না এমন কথাও বলেছিলেন। অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মুসলিম বিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলে বলা হচ্ছে। কিন্তুু তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর বাস্তব অবস্থা কি দাড়াবে তা সময়ই বলে দিবে। কারণ, আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলোতে মুসলিম বিরোধী ও বর্ণবাদী ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন। আর তার ফল ইতিমধ্যেই ফলতে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, গত ২৭ নভেম্বর প্রকাশিত লস্ এ্যাঞ্জেলস টাইমস এর এক খবর থেকে জানা যায় যে, আমেরিকায় মুসলিমদেরকে গণহারে হত্যা করা হবে এই মর্মে হুমকি দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার তিনটি মসজিদে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করে চিঠিতে এই হুমকি দেয়া হয়। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, হিটলার ইহুদীদের যা করেছিলেন, আমেরিকায় মুসলিমদেরও তা করা হবে। মুসলিমরা হলো শয়তানের সন্তান।

এদিকে নির্বাচত হওয়ার কয়েকদিন পরই তিনি আমেরিকার সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন প্রাথমিকভাবে তিনি ৩০ লাখের বেশী অবৈধ ইমিগ্রেন্টকে কারাগারে পাঠাবেন অথবা দেশে থেকে বিতাড়িত করবেন। উল্লেখ্য যে, মানবিক বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের জন্য যে সাধারণ ক্ষমা বা সুযোগ দিয়েছিলেন সেটিকে নাকচ করে দেয়ার কথা নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই বলে আসছিলেন ট্রাম্প।

আশংকা করা হচ্ছে, অবৈধ ইমিগ্রেন্টদেরকে আমেরিকা থেকে বহিস্কার প্রক্রিয়া শুরু হলে তার প্রথম ধাক্কাটা এসে লাগবে কানাডার বর্ডারে। কারণ এই অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের অনেকেই চাইবেন নিজ নিজ দেশে ফেরৎ না গিয়ে কানাডায় প্রবেশ করতে। উল্লেখ্য যে, নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় যখন দেখা গেল ট্রাম্পই নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তখন আমেরিকা থেকে বিপুল সংখ্যক লোক কানাডায় চলে আসার জন্য চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দেন এবং কি ভাবে কানাডায় আসা যাবে তার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশন কানাডার ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন। ভিজিটরের সংখ্যা এক পর্যায়ে এত বেশী হয়ে গিয়েছিল যে, পরিনতিতে ওয়েবসাইটটি সাময়িকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত এমন একজন বর্ণবাদী ব্যক্তি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মাল্টিকালচারালইম নীতির উপরও ব্যাপক ভাবে বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ঢেউ এসে আঘাত হানতে পারে কানাডায়ও। যদিও সম্ভাবনা কম, তবে এই আশংকার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কানাডীয় সাংবাদিক ও কলামিস্ট স্টিফেন মার্শ সম্প্রতি তার এক কলামে লিখেছেন, ট্রাম্পের জয় কানাডাকে পশ্চিমা বিশ্বে মাল্টিকালচারালইজমের একমাত্র রক্ষক হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। আমরা ক্রমবর্ধমানভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছি এই নীতিতে। পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র দেশ যারা মাল্টিকালচারালইজমে বিশ্বাস ধরে রাখবে। স্টিফেন মার্শ উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০১৫ সালে কানাডায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় কনজারভেটিভ পার্টি মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব তৈরী করে নির্বাচনে জীয় হওয়ার সমস্ত কূটকৌশলেরই আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু কানাডার জনগণ সেই কূটকৌশলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর এর মধ্য দিয়ে কানাডা পৃথিবীতে একটি স্বতন্ত্র আসনে আসীন হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর  প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অবশ্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কৌশলগত কারণে এবং কানাডা সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের ব্যাপারে তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি নীরবতা পালন করে আসছেন শুরু থেকেই।  সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রুডো বলেন, “এটি গুরুত্বপূর্ণ যে প্রেসিডেন্ট যে ব্যক্তিই হোক, তার সাথে গঠনমূলকভাবে কাজ করা। কানাডিয়ানরা সেটাই আশা করেন। কানাডিয়ানরা আশা করেন আমি কানাডিয়ানদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে, তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে, তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে এবং কানাডিয়ান ভ্যালুউজ এর বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিব। আর আমি তা করব কানাডার স্বার্থ রক্ষার জন্য, বিশ্বসভায় কানাডার মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য।”

তবে কানাডার সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী লয়েড এক্সওয়ার্দী সিবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পক্ষে আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মোকাবেলা করাটা বা তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করাটা হবে সম্ভত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। তিনি আরো বলেন, ট্রাম্প সম্পূর্ণভাবে একটি স্ববিরোধী চরিত্রকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং এ কারণে অধিকাংশ কানাডিয়ান মনে করেন তার সঙ্গে কাজ করাটা নবীন প্রধানন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পক্ষে খুবই কঠিন কাজ হবে। লয়েড এক্সওয়ার্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী জিন ক্রিত্বিয়েনের সময় কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি উইনিপেগ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও ভাইস চ্যান্সেলর এর দায়িত্বও পালন করেন।

আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিষয় কানাডার প্রধানন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কৌশলী বক্তব্য রাখলেও অন্টারিওর প্রিমিয়ার ক্যাথেলীন উইন সে পথে পা বাড়াননি। তিনি স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় তিনি খুবই আঘাত পেয়েছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি একেবারেই বিষ্ময়কর ব্যাপার এবং হতাশাব্যঞ্জকও বটে। মেট্রো’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

উল্লেখ্য যে, উইন আগে থেকেই ট্রাম্পের বিষয়ে সমালোচনামূখর ছিলেন। নারী-বিদ্বেষ, বর্ণবাদ ও সমতা বিষয়ে ট্রাম্পের মনোভাব উইনীর পছন্দনীয় নয়। তিনি বলেন, “নাফটা (North American Free Trade Agreement ) চুক্তি বাদ দিলে তার তাৎক্ষণিক আঘাতটা এসে লাগবে অন্টারিওতে। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন।”

উইন ইতিপূর্বে ষ্পষ্ট করেই বলেছেন, “ট্রাম্প হবে কানাডার জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি এবং তার কারণে উত্তর আমেরিকায় অস্থিতিশীলতাও দেখা দিতে পারে।”

কানাডার অর্থনীতিবিদগণও আশংকা করছেন ট্রাম্পের কারণে কানাডার অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে। টিডি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ বিয়াদ্দা কারান্সী এবং লেসলী প্রেস্টন সিবিসি নিউজকে বলেন, প্রাক নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প যে সকল বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলেছেন তা সরাসরি কানাডাকে উদ্দেশ্য করে ছিল না। তবে তিনি যদি এখন নাফটা চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করার উদ্যোগ নেন তাহলে তা কানাডাকে বিরাট রকমের অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিবে। কারণ, প্রতি মাসে প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের পন্য সীমান্ত পার হয়।

উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে দুই দেশের মধ্যে ৬১৬.৬ বিলিয়ন ডলারের পন্য বিনিময় হয়েছে। আমেরিকা থেকে কানাডায় আমদানী হয়েছে ৩২৪.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং কানাডা থেকে রফতানী হয়েছে ২৯২.৪ বিলিয়ন ডলারের পন্য। (সূত্র -উইকিপিডিয়া।)

কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে খুবই হতাশ হয়েছেন। অনেকে ভীতও। অনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের পর মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প কি পদক্ষেপ নিবেন তা দেখার অপেক্ষায় এখন আমেরিকার মুসলিম সহ কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়ও। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে

ট্রাম্প মুসলিম বিদ্বেষী। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই তার প্রশাসনে যুদ্ধবাজ ও কট্টরপন্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস ও গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন এই কট্টরপন্থীদের নিয়োগের কারণে দেশটিতে বর্ণবাদ, মুসলিম নিপীড়ন ও বিদ্বেষমূলক অপরাধ (হেইট ক্রাইম) বৃদ্ধি পেতে পারে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলিমসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বৈষম্য, সহিংসতা ও বিতাড়ন এবং নির্বিচারে আটকের ভয়ে রয়েছেন। পত্রিকা দুটির খবরে আরো বলা হয়, এমন অবস্থায় ব্যক্তি স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারসহ উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের অর্জন ব্যর্থ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।

আমেরিকায় বর্ণবাদ ও ইমিগ্রেন্ট বিরোধী মনোভাব এবং একই সাথে মুসলিম বিরোধী মনোভাবের যে বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে তার ঢেউ এসে আঘাত হেনেছে কানাডাতেও। তার প্রমাণ নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মাত্র কয়েকদিনে ব্যবধানেই অটোয়া, টরন্টো ও হ্যামিলটনের তিনটি ঘটনা। অটোয়াতে পুলিশ এক কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। এই কিশোর স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বর্ণবাদী দেয়ালচিত্র অঙ্কন করেছিল। টরন্টোতে এক তরুন স্ট্রিট কারের ভিতর উচ্চস্বরে বর্ণবাদী বাক্য উচ্চারণ করে এবং একজন সহযাত্রীকে হুমকিও দেয়। পুরো বিষয়টিই স্ট্রিটকার ভর্তি লোকের সামনে ঘটে এবং ভিডিও ক্যামেরাতেও তা ধরা পড়ে। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে হ্যামিলটনে। সেখানে একটি স্টোরে এক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমান এক কালো মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী বক্তব্য উচ্চারণ করেন। শ্বেতাঙ্গ ঐ ব্যক্তিটি কাউন্টারের পাশে রাখা নিউজপেপার স্ট্যান্ডে একটি পত্রিকার প্রথম পাতার (যেখানে পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে ট্রাম্পের ছবি ছিল) প্রতি অঙ্গুলী নির্দেশ করে বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন। আমি আশা করি তিনি গোটা নর্থ আমেরিকাকে পরিচ্ছন্ন করবেন।

কানাডার মুসলিম সম্প্রদায় আশংকা করছেন নব নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্টের কারণে কানাডায় আরো বেশী বিদ্বেষ দেখা দিতে পারে ও বর্ণবাদী আপরাধ বৃদ্ধি পেতে পারে। কানাডার ইসলামিক সোস্যাল সার্ভিসেস এসোশিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট শাহীনা সিদ্দিকী সিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছেন। এখন কানাডায় যারা বর্ণবাদী আছেন তারা কি আরো উৎসাহিত হয়ে উঠবেন? যারা রক্ষণশীল ও ধর্মান্ধ তারাও কি ট্রাম্পের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উঠবেন এই কানাডায়? আমি প্রত্যাশা করবো এটি হবে না এ দেশে। এটাই আমার উদ্বেগের বিষয় এই মুহুর্তে।”

কানাডায় সফররত বিশ্ব আহমেদীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা হজরত মীর্জা মশরুর আহমেদ অবশ্য মনে করেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলেও মুসলিমদের ভয় পাবার কিছু নেই। তিনি বলেন, “মুসলিমদের সম্পর্কে ট্রাম্প যা বলেছেন নির্বাচনের আগে তা ছিল নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল মাত্র। আমি নিশ্চিত যে, ট্রাম্প মুসলিমদের নিয়ে যা বলেছেন তা তিনি কখনোই বাস্তবায়িত করবেন না।” অবশ্য তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বে সিবিসি নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ট্রাম্প যদি জয় লাভ করেন এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে সকল বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা-বার্তা বলছেন তা যদি সত্যি সত্যি বাস্তাবায়িত করতে যান তবে আমেরিকা গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে।”

এদিকে আমেরিকায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা বিদ্বেষ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায়। আর এই বিদ্বেষপ্রসূত আপরাধ বৃদ্ধি পাবার কারণে মার্কিন এটর্নী জেনারেল লরেটা লিঞ্চ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এফবিআই এর ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানের উদ্ধিৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এই সময়ে আমেরিকায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৭ শতাংশ। তিনি নির্বাচন উত্তর বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ বৃদ্ধির দিকেও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গত ২২ নভেম্বর সিএনএন এর হাই-প্রোফাইল রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও হোয়াইট হাউসের সাবেক পলিসি এ্যাডভাইজার ভেন জনস টরন্টো সফরে এসেছিলেন এক সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসাবে। তার বক্তব্যের বিষয়বস্তু ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় আমেরিকায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর কি কি প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, আমেরিকায় বিভেদ সৃষ্টিকারী যে উপাদানগুলো কাজ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জয়ী করার ক্ষেত্রে, সেই বিষয়গুলো কানাডার ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারে রক্ষণশীল রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। তিনি আরো বলেন, ঘৃণা বা বিদ্বেষের যে তরঙ্গ নাড়া দিয়েছে এবং দৃশ্যমান নাত্সি বা ফ্যাশিবাদী গ্রুপগুলোর যে পুনরুজ্জীবন লক্ষ্য করা যাচ্ছে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে তা থেকে কানাডা মুক্ত নয়।

উল্লেখ্য যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হবার পর আমেরিকার কুখ্যাত বর্ণবাদী হোয়াইট সুপ্রিমেসী গ্রুপ  Ku Klux Klan (KKK stands for Knights of the Ku Klux Klan, a group of white, Christian supremists) বিজয় উল্লাস করার পরিকল্পনা করছে কিছুদিনের মধ্যেই। অতীতে আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত ভীতিজনক এক সংগঠনের নাম ছিল এই ককক। স্মরণ করা যেতে পারে যে এই শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীরা শশশ  নামের বর্ণবাদী সংগঠনের অধীনে অতীতেও ভয়াবহসব নৃসংশতা চালিয়েছে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে। সেই সময় তাদের টার্গেট ছিল কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠি। কৃষ্ণাঙ্গদেরকে গুলি করে হত্যা করার পাশাপাশি ঘরের ভিতর আটকে রেখে পুড়িয়ে মারার ঘটনাও ঘটিয়েছে এরা। আজকে তারা নর্থ আমেরিকায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে দিলে আশ্চর্য হবার মত কোন ঘটনা হবে না সেটি।

এদিকে রয়টার্স এর খবরে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদ আরো বেশী করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলেও আশংকা করছেন কেউ কেউ। যেমন ইরাকের শিয়া মতাবলম্বী ধর্মীয় নেতা মুক্তাদা আল সদর বলেছেন, “ ট্রাম্প উগ্র ও মধ্যপন্থার ইসলামের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেন না। তিনি অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে তাঁর উগ্র পদক্ষেপ আরও উগ্রবাদের জন্ম দেবে। এই শিয়া নেতার দৃষ্টিভঙ্গি আইএস ও আল-কায়দার কট্টর সুন্নি মতাদর্শের বিপরীত। তিনি পাশ্চাত্যের বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণকে সমর্থন করেন না।”

রয়টার্সের খবরে আরো বলা হয়, ট্রাম্প মুসলিম বিরোধী কথা বললেও জঙ্গী সংগঠন আল-কায়দা, তালেবান বা আইএস এর মোকাবেলায় কি পদক্ষেপ নিবেন বা কি তার পরিকল্পনা তা কখনো খোলাসা করে বলেননি। আফগানিস্তানে আইএসের অন্যতম কমান্ডার আবু ওমর খোরাসানি রয়টার্সকে বলেন, “ট্রাম্প পুরোই পাগল। মুসলমানদের প্রতি তাঁর বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য আমাদের কাজকে আরও সহজ করে দেবে। আমরা হাজারো সদস্য নিয়োগ করতে পারব।”

কানাডা ও আমেরিকা পাশাপাশি দুটি দেশ। এক বছরের ব্যবধানে দুটি দেশে দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে কানাডায়, পরে আমেরিকায়। কানাডার জনগণ ক্ষমতার শীর্ষে এমন একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেছেন যার গ্রহণযোগ্যতা শুধু কানাডায়ই নয়, বিশ্বব্যাপী। অন্যদিকে আমেরিকার জনগণ ক্ষমতার শীর্ষে এমন একজন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেছেন যিনি একাধারে বর্ণবাদী, নারী বিদ্বেষী, ক্ষেপাটে স্বভাবের, ইমিগ্রেন্ট বিরোধী এবং মুসলিম বিরোধী। নির্বাচনের আগে এবং পরেও তিনি ভীতি ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছেন যা হিংস্রতাকে উস্কে দিচ্ছে। ট্রাম্প নির্বাচিত হলেও আমেরিকার ৬৬% লোক মনে করছেন তিনি এই পদের জন্য সম্পূর্ণ অযোগ্য ব্যক্তি। টরন্টো স্টারের এক সম্পাদকীয়তেও ট্রাম্পকে উল্লেখ করা হয় একজন অনুপযুক্ত এবং গভীরভাবে অযোগ্য ব্যক্তি হিসাবে।

কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে, এই অনুপযুক্ত ও অযোগ্য ব্যক্তিটিকেই আমেরিকার জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচত করেছেন। খোদ রিপাবলিকান পার্টির প্রভাশালী নেতারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধীতা করলেও কোন ফল লাভ হয়নি।

আগামী ২০ জানুয়ারী ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। এর পর তিনি কি কি পদক্ষেপ নিবেন এবং ঐ সকল পদক্ষেপের কারণে কানাডার অর্থনীতি, জীবনযাত্রা ও রাজনীতিতে বাস্তবিক অর্থে কি ধরণের প্রভাব পড়বে তা দেখার জন্য এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রবাসী কণ্ঠ