টরন্টো মিউনিসিপালিটির আসন্ন নির্বাচন
জুলাই ২৭, ২০১৪
খুরশিদ আলম
কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বাংলাদেশী কানাডিয়ানদের জয়ী হবার সম্ভাবনা কতটুক ? ু
আগামী ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টরন্টো মিউনিসিপালিটির নির্বাচন। একজন মেয়র ও ৪৪ জন কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রার্থীরা। আর আসন্ন এই নির্বাচনে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন কয়েকজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান। আমাদের আগ্রহের বিষয়টি তাদেরকে নিয়েই।
কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন পেপার দাখিল করেছেন যে কয়জন বাংলাদেশী কানাডিয়ান তাদের মধ্যে আছেন রাসেল রহমান, শহীদ উদ্দিন এবং এম. উদ্দিন। কবীর নামে আরেকজন বাংলাদেশী কানাডিয়ানের নাম শুনা যাচ্ছে। তবে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সালাম শরীফসহ আরো কয়েকজনের নাম শুনা যাচ্ছে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহী। তবে এখনো নমিনেশন পেপার জমা দেননি তারা।
শহীদ উদ্দিন গত ১৫ জুন টরন্টোর ৮১ পিয়ার্ড রোডে অবস্থিত রয়েল লিজিয়ন হলে আয়োজিত এক সমাবেশের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বি হচ্ছেন ওয়ার্ড ৩৫ থেকে। এটি অবস্থিত স্কারবরো সাউথ-ওয়েস্ট এ। এম. উদ্দিন এবং রাসেল রহমান সেরকম আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু না করলেও তাদের প্রচারণা আরো আগে থেকেই শুরু হয়েছে। রাসেল রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ওয়ার্ড ৩১ থেকে। ওয়ার্ড ৩১ অবস্থিত বিচেস ইস্ট ইয়র্ক রাইডিং-এ। আর এম. উদ্দিন যে এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সেটি হলো ওয়ার্ড ১৮। এটি টরন্টোর ডাউনটাউনে অবস্থিত।
আসন্ন নির্বাচনে নমিনেশন পেপার জমাদানকারী এই তিনজনের সঙ্গেই কথা বলার সুযোগ হয়েছে। জানতে চেষ্টা করেছি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পিছনে কি অনুপ্রেরণা কাজ করেছে তাদের বেলায়। নির্বাচনে জেতার ব্যাপারে তারা কতটুকু আশাবাদী সে কথাও জিজ্ঞেস করেছি তাদের। তার আগে আসুন একটু দেখে নেই টরন্টো মিউনিসিপালিটির নির্বাচনে বিভিন্ন এথনিক গ্র“পের সদস্যদের অংশগ্রহনের সার্বিক পরিস্থিতিটা কি।
পরিস্থিতিটা আসলে মোটেও সন্তোষজনক নয়, অথবা বলা ভালো ‘একেবারেই হতাশাব্যঞ্জক’। আমরা জানি কানাডার অন্যান্য বড় শহরগুলোর মতো টরন্টোতেও ভিজিবল মাইনরিটি বা বিভিন্ন এথনিক গ্র“্রপের লোকদের সংখ্যা অনেক বেশী এবং এই শহরগুলোতে তাদের অবস্থানও খুবই সৃদৃঢ়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, টরন্টো ও তার আশপাশের বিভিন্ন মিউনিসিপালিটিগুলোর কাউন্সিলর পদে এই এথনিক গ্র“পের সদস্যদদের উপস্থিতি একেবারেই কম যা প্রায় গননায় ধরার মত নয়। মিসিসাগার মিউনিসিপালিটিতে কাউন্সিলরের সংখ্যা সর্বমোট ১২ জন। এর মধ্যেএকজনও ভিজিবল মাইনরিটির লোক নেই। অথচ ঐ সিটিতে শতকরা ৪৯ জন অধিবাসীই ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য। ব্রাম্পটনের অবস্থাও প্রায় একই রকম। প্রায় পাঁচ লাখ লোকের এই শহরটিতে শতকরা ৫৭ ভাগই ভিজিবল মাইনরিটির সদস্য। কিন্তু ১১জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র একজন ভিজিবল মাইনরিটির সদস্য। আর টরন্টোর অবস্থাটা হলো, এখানকার শতকরা ৪৯.৯৯ ভাগ অধিবাসীই ভিজিবল মাইনরিটির সদস্য। এই শহরের নীতিসূচক বাণী-ই হলো, “ডাইভারসিটি ইজ আওয়ার স্ট্রেংথ।” অথচ এই শহরেই ৪৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য সংখ্যা মাত্র ৫ জন। (সূত্র: উরাবৎংবঈরঃু: ঃযব এৎবধঃবৎ ঞড়ৎড়হঃড় খবধফবৎংযরঢ় চৎড়লবপঃ.)
মন্ট্রিয়লের চিত্রও তথৈবচ। বা বলা যায় আরো খারাপ। সেখানে ৬৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র তিনজন ভিজিবল মাইনরিটির সদস্য। তবে ভ্যাংকুভারের অবস্থা টরন্টো ও মন্ট্রিয়লের চেয়ে যতসামান্য ভাল। সেখানে ৪৬ কাউন্সিলরের মধ্যে ১০ ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য।
অন্যদিকে ক্যালগারির মেয়র নাহিদ ন্যানজি একজন ভিজিবল মাইনরিটির সদস্য হলেও সেখানকার ১৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র একজন ভিজিবল মাইনরিটির সদস্য।
উপরের চিত্রটি থেকে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো, কানাডার বিভিন্ন শহরের মিউনিসিপালিটিগুলোতে ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্যদের অংশগ্রহন বা প্রতিনিধিত্ব খুবই কম যা এক কথায় হতাশাব্যাঞ্জক। ইমিগ্রেন্টরা কানাডার বড় বড় শহরের ডেমোগ্রাফিক চেহারা পাল্টে দিয়েছে তাদের অধিকতর উপস্থিতির মাধ্যমে অথচ সিটি কাউন্সিলদের যে চেম্বার, সেই চেম্বারের চেহারা তারা পাল্টে দিতে পারেনি। সেখানে এখনো শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য চলছে ব্যাপকভাবে।
তবে প্রভিন্সিয়াল ও ফেডারেল পর্যায়ের রাজনীতিতে ভিজিবল মাইনরিটির সদস্যরা মিউনিসিপালিটির তুলনায় অধিকতর সক্রিয়। এষড়নব ধহফ গধরষ এর এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় গ্রেটার টরন্টো এলাকায় ৪৭ জন এমপিপি’র (প্রভিন্সিয়াল) মধ্যে শতকরা ২৬ ভাগ ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য। অন্যদিকে একই এলাকায় ফেডারেলের ৪৭ জন এমপি’র মধ্যে শতকরা ১৭ ভাগ ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য। কিন্তু গ্রেটার টরন্টোতে সব মিলিয়ে ২৫৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য শতকরা ৭ ভাগ। সংখ্যার হিসাবে তা মোটে ১৮ জন।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরো দেখা যায় যে, গ্রেটার টরন্টো এলাকায় কয়েকটি এথনিক গ্র“পের সদস্যদের কোন অংশগ্রহনই নেই মিউনিসিপাল, প্রভিন্সিয়াল বা ফেডারেল সরকার লেভেলে। এর মধ্যে আছে ফিলিপিনো, অশ্বেতাঙ্গ ল্যাটিন আমেরিকান, আরবীয় ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গ্র“প। ফিলিপিনোরা সংখ্যায় প্রায় পৌনে দুই লাখ। তারপরও তাদের কোন অংশগ্রহন নেই। আর বাংলাদেশীদের তো আরো নেই। অবশ্য তাদের সংখ্যা ফিলিপিনোদের চেয়ে অনেক কম। সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশী থাকেন টরন্টোর যে দুই রাইডিং-এ, সেখানে সব মিলিয়ে বাংলাদেশী কানাডিয়ান ভোটারের সংখ্যা দশ হাজারের মত।
প্রাপ্ত তথ্যে আরো দেখা যায়, গ্রেটার টরন্টো এলাকায় মিউনিসিপাল, প্রভিন্সিয়াল ও ফেডারেল সরকার লেভেলে বিভিন্ন এথনিক গ্র“পের ৩৮ জন সদস্য রয়েছেন যার মধ্যে ১৫ জন চাইনিজ ও ১৫ জন দক্ষিন এশিয়। এই হিসাব ২০১১ সালের। এদের মধ্যে ফেডারেল এমপি ৪ জন ও প্রভিন্সিয়াল এমপিপি ৭ জন যারা দক্ষিণ এশিয়। তবে এর কৃতিত্ব কিন্তু এককভাবে ঐ এথনিক গ্র“পের সদস্যরা দাবী করতে পারেন না। কারণ, এথনিক গ্র“পের ভোট পাওয়ার জন্য কানাডার ফেডারেল ও প্রভিন্সিয়াল দলগুলো এথনিক গ্র“পের সদস্যদেরকে নির্বাচনে দাড় করিয়েছিল। দলের ভোট ও এথনিক গ্র“পের ভোট এই দুয়ে মিলে তারা নির্বাচনে জয়ী হন। শুধু এথনিক গ্র“পের ভোট পেয়ে জয়ী হবার সম্ভাবনা তাদের অধিকাংশেরই ছিল না।
ভয়টা এখানেই। দেখা গেছে অতীতেও গ্রেটার টরন্টো এলাকায় কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এথনিক গ্র“পের সদস্যরা মোটেও সুবিধা করতে পারেননি। মিউনিসিপালিটির নির্বাচন যেহেতু নির্দলীয়, সে কারণে দলীয় ভোট পাওয়ার কোনই সম্ভাবনা থাকেনা এখানে। ওয়ার্ডে নিজের পরিচিতি না থাকলে এবং এথনিক গ্র“পের ভোটার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য না হলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সে কারণে দেখা গেছে গ্রেটার টরন্টোতে ২৫৩ কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র ৪ জন হলেন দক্ষিন এশিয় এবং ১০ জন চাইনিজ। আর শুধু টরন্টোর দিকে তাকালে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয় গ্র“পের একজনও নেই।
টরন্টোতে দেখা গেছে ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে সিটি কাউন্সিলর পদে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য ছিলেন শতকরা ১২ ভাগ, ২০০০ সালে এই হিসাব ছিল শতকরা ১১ ভাগ, ২০০৩ সালেও ছিল শতকরা ১১ ভাগ, ২০০৬ সালে তা কমে এসে তা দাড়ায় শতকরা ৯ ভাগে এবং ২০১০ সালে তা আবার ১১ ভাগে এসে দাড়ায়।
এরকম একটি জটিল ও বৈরী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশী কানাডিয়ানসহ ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের কোন সদস্য যদি কাউন্সিলর পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন তবে তাকে নিঃসন্দেহে কঠিন পরিস্থিতির মুখমুখি হতে হবে। কারণ, তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন পাবেন না। নিজ এথনিক গ্র“পের বাইরে পরিচিতি না থাকলে তাদের সমর্থনও না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তথাকথিত মেইনস্ট্রিম কানাডিয়ানদের সমর্থন পাবেন এমন ভরসাও নেই। আর একটি ব্যাপার লক্ষ্য করা যায় যে, একবার কেউ কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হলে বার বার তিনিই নির্বাচিত হতে থাকেন। কারণ, পরিচিতি। একবার পরিচিতি পেয়ে গেলে লোকজন বারবার তাকে সমর্থন দিতে থাকে। সে ক্ষেত্রে নতুনদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি আরো কঠিন হয়ে দাড়ায়।
উপরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে টরন্টোর আসন্ন মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে যে কজন বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন তাদের ব্যাপারে আমরা কতটা আশাবাদী হতে পারি? এর উত্তরে আমরা বলবো, আশাবাদী হতে তো দোষ নেই। আর আশাবাদী হওয়ার পক্ষে কিছু কারণও রয়েছে। আগেই উল্লেখ করেছি, বিসেচ ইস্ট ইয়র্ক ও স্কারবরো সাউথ ওয়েস্ট রাইডিং এ প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী ভোটার রয়েছেন যাদের ভোট আগামী নির্বাচনে একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাড়াতে পারে। তবে তার জন্য বাংলাদেশীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে স্বতস্ফূর্ত মন নিয়ে। এই নির্বাচনে যেহেতু দলীয় সমর্থন নেই, তাই বাংলাদেশীদেরকেই স্বপ্রনোদিত হয়ে এবং স্বতস্ফূর্তভাবে ক্যাম্পেইন করতে হবে এই প্রার্থীদের পক্ষে। আর এক রাইডিং তথা ওয়ার্ড থেকে যদি একাধিক বাংলাদেশী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন তবে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে কারোরই জয়ী হবার সম্ভাবনা থাকবে না। কারণ ভোট ভাগ হবে।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশী কানাডিয়ান যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন পেপার জমা দিয়েছেন তাদের জয়ী হবার সম্ভাবনা কতটুকু তা সময়ই বলে দিবে। তবে নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আমরা দেখেছি ক্যালগারিতে মেয়র পদে জয়ী হয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন নাহিদ নেনজি। একে তিনি ভিজিবল মাইনরিটির সদস্য, তাতে আবার মুসলিম। কিন্তু এর কোনটাই তাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। কারণ তিনি সংগ্রাম করেছেন সত্যিকার যোদ্ধার মত। ভাগ্যও সহায় ছিল। সব মিলিয়ে তিনি ইতিহাস রচনা করেছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইতিপূর্বে তিনি নিজেই বলেছেন, ভিজিবল মাইনরিটির সদস্যদের পক্ষে মিউনিসিপাল নির্বাচনে জয়ী হওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কারণ তারা দলীয় সমর্থন পান না, নির্বাচন করতে হয় এককভাবে এবং নিজের পরিচয়ে। কিন্তু তারপরও নিরুৎসাহিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আমি নিজেই তার প্রমান।
আমরাও মনে করি বাংলাদেশী কমিউনিটির সকলের সহযোগিতা ও সমর্থন থাকলে আর প্রতি ওয়ার্ড থেকে একক বাংলাদেশী প্রার্থী থাকলে এবং সর্বোপরি প্রার্থীরা নিজেরা যদি কঠিন সংগ্রামী হন, আর শুধু নিজ কমিউনিটির ভোটের উপর নির্ভরশীল না হন তবে টরন্টোর আসন্ন নির্বাচনে বাঙ্গালীদের বিপ্লব ঘটেও যেতে পারে।
এবার দেখা যাক, আমাদের বাংলাদেশী কমিউনিটি থেকে যারা নমিনেশন পেপার জমা দিয়েছেন তারা কে কি বলেন। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ছিল:
১.সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পিছনে কি অনুপ্রেরণা কাজ করেছে আপনার বেলায়?
২.জয়ী হবার ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
৩.কেন জয়ী হবেন বলে আপনি মনে করছেন?
এর উত্তরে তারা যা বলেন নিচে তা তুলে ধরা হলো:
এম উদ্দিন: আমি সিটি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ কারণে যে, আমি মনে করি এর মাধ্যমে আমরা আমাদের কমিউনিটির ম্যাসেজগুলো সঠিকস্থানে পৌঁছে দিতে পারবো। আর আমাদেরকে দেখে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও যাতে উৎসাহিত হয় মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে সেটিও একটি কারণ। আর আমি নির্বাচনে জয়ী হবার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। কারণ আমি হার্ডওয়ার্ক করছি, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নক করছি, পৌঁছে দিচ্ছি আমার পজিটিভ নির্বাচনী বার্তা।
শহীদ উদ্দিন : আমি মূলত নির্বাচনে অংশগ্রহনের অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমাদের কমিউনিটির লোকদের কাছ থেকেই। আমি দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য করছি কানাডায় যে তিন স্তরের সরকার আছে অর্থাৎ মিউনিসিপাল, প্রভিন্সিয়াল ও ফেডারেল- এর কোনটাতেই আমাদের বাঙ্গালী বা বাংলাদেশীদের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফোরামে ও সভায় আলোচনা করেছি প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে। তারাও আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন এ ব্যাপারে এবং আমাকে উৎসাহ যুুগিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। কারণ,আমি মনে করি আমরা বাংলাদেশীরা যদি এক হয়ে কাজ করতে পারি এখানে তবে জয়ী হব আমরা। আর আমার যে এলাকা এখানে সিংহভাগই ইমিগ্রেন্ট অধিবাসী। একজন ইমিগ্রেন্ট আরেকজন ইমিগ্রেন্ট এর প্রতি স্বভাবতই সহানভূতিশীল। তাছাড়া প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী ভোটার রয়েছে এই এলাকায়। আমি যতদুর জানতে পেরেছি, এই এলাকায় দ্বিতীয় বৃহত্তম এথনিক জনগোষ্ঠিই বাংলাদেশী। তাই আমি মনে করি আমি যদি বাংলাদেশী ও অন্যান্য এথনিক গোষ্ঠির লোকদেরকে বুঝাতে পারি যে তাদের দাবিদাওয়া নিয়েও আমি সিটিতে লড়বো তবে স্বাভাবিকভাবেই তাদের সহযোগিতা পাব বলে আমি মনে করি। সে ক্ষেত্রে জয়ী হবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
রাসেল রহমান: আমি লক্ষ্য করেছি যে, টরন্টোতে অর্ধেক লোক ভিজিবল মাইনরিটি গ্র“পের সদস্য হলেও তাদের হয়ে কথা বলার লোকের অভাব রয়েছে। ভিজিবল মাইনরিটিদের কি যে কষ্ট এগুলো কেউ বুঝতে চায় না, মেইনস্ট্রিম কানাডিয়ানদের কোন ধারণাই নেই এ সম্পর্কে। ফলে ভিজিবল মাইনরিটিদের আশা-আকাংখা, তাদের দাবী-দাওয়া এগুলো বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়। তাই আমি মনে করি, ভিজিবল মাইনরিটির হয়ে কথা বলার জন্য আমাদেরকে নির্বাচনে লড়তে হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আমার অনুপ্রেরণা আসে মূলত এই চিন্তা থেকেই।
আর নির্বাচনে জয়ী হবার ব্যাপারে আমি খুবই আশাবাদী। এটি আমার দ্বিতীয় দফার চেষ্টা। এর আগেও আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার আরো অরগানাইজড ওয়েতে আমি নির্বাচনী যুদ্ধে নেমেছি। তাছাড়া এই এলাকায় বাংলাদেশী ভোটার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে আগের তুলনায় অনেক। এর সঙ্গে আরো রয়েছে অন্যান্য এথনিক কমিউনিটির লোকদের সহযোগিতা। আর মূলত মানুষও চায় একটা পরিবর্তন আসুক। এ সব মিলিয়েই আমি খুব আশাবাদী এবার নির্বাচনে জয়ী হবার ব্যাপারে।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কন্ঠ