করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে কানাডায়ও : সতর্ক হতে হবে সবাইকে

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০

করোনা (কভিড-১৯) নিয়ন্ত্রণে কানাডার সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল। কানাডার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত সাত জন বিশিষ্ট মহামারী বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি সিটিভি নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই মত দিয়েছেন। এটি প্রায় এক মাস আগের খবর। ইতিমধ্যে টরন্টো, ভেঙ্কুভার, মন্ট্রিয়লসহ অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। খুলে দেয়া হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। সিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্টারিওতে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও গত প্রায় একমাসে নতুন করে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অন্টারিওতে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ১০০ এর কাছাকাছি ছিল।

এটি ভাল খবর সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্তুষ্ট হওয়ার মত পরিস্থিতি এখনো হয়নি। কারণ গত কয়েকদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, অন্টারিওতে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা উর্ধমূখী। গত ৪ সেপ্টেম্বর নতুন সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬৯ জন। মেনিটোবায়ও নতুন সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেঙ্কুভারেও বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন রোগীর সংখ্যা। অর্থাৎ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আলামত দেখা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

আমরা লক্ষ্য করেছি স্পেনে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরো আগেই শুরু হয়েছে। সেখানে একদিনেই আক্রান্ত ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। গত ২১ আগস্টের খবর এটি। সংবাদ সংস্থা ‘আনাদোলু’ জানায়, গত দুই সপ্তাহের বেশি সময়ে স্পেনের প্রায় ৬৭ হাজার মানুষের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্পেনের প্রধান মহামারি বিশেষজ্ঞ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দ্বিধান্বিত হবেন না। পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না।

কানাডায় গত কয়েক সপ্তাহে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন তার প্রায় ৬০% বা তারো বেশী হলো তরুণ সম্প্রদায়ের লোক। ছবি : টুইটার

ফ্রান্সের অবস্থাও উদ্বেগজনক। আগস্টের শেষের দিকের হিসাব অনুযায়ী দেখা গেছে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার লোক নতুন করে সংক্রামিত হচ্ছেন করোনা ভাইরাসে।

অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রভিন্সে গত জুলাই মাসে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছিল সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য। এর পর থেকেই কভিড-১৯-এ সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যায় সেখানে। আগস্ট মাসের প্রথম দিকে রাজ্যটি এক দিনেই ৬৭১টি নতুন সংক্রমণের খবর জানায়। ঐ সময় ভিক্টোরিয়া প্রভিন্সের প্রিমিয়ার ডেনিয়েল অ্যান্ড্রু এই পরিস্থিতিকে ‘স্টেট অব ডিজাস্টার’ বলে জানান।

জাপানও প্রথম দিকে বেশ ভালোভাবেই করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে মনে করে লকডাউন আইন শিথিল করা হয়েছিল। আর এর পরই আবার বাড়তে শুরু করে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা।

এখন কানাডার পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটি দেখার বিষয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, তরুণরা এখন বেশী করে আক্রান্ত হচ্ছেন। গত কয়েক সপ্তাহে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন কানাডায় তার প্রায় ৬০%  বা তারো বেশী হলো তরুণ সম্প্রদায়ের লোক। কারণ, এদের অনেকেই সামাজিক দূরত্ব বা অন্যান্য আইন তেমনটা মানছেন না। এদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে। ফলে করোনা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে পরামর্শ দিয়েছেন তা সবাইকে যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া এগুলো কঠিনভাবে মেনে চলতে হবে। তা না হলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কানাডায়ও আঘাত হানবে তাতে সন্দেহ নেই। আর তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন সকলেই যা আমাদের কারোরই কাম্য হতে পারে না।