এডমন্টনে হিজাব পরিহিতা নারীর উপর হামলা চরমভাবে নিন্দনীয়

জানুয়ারী ৫, ২০২১

গত ৮ ডিসেম্বর বিকেলে এডমন্টনের একটি শপিং মলের বাইরে দুজন হিজাব পরিহিতা মুসলিম নারীর ওপর হামলার দায়ে রিচার্ড ব্রাডলি স্টিভেন্স নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণাপ্রসূত হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঘটনার পর এডমন্টন পুলিশ সার্ভিস এক বিবৃতিতে বলেছে, হেট ক্রাইম অ্যান্ড ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম ইউনিট হামলার ঘটনার তদন্ত করছে। ৪১ বছর বয়সী রিচার্ড এর বিরুদ্ধে দুটি হামলা এবং একটি দুষ্কর্মের অভিযোগ এনেছে পুলিশ।

ঘটনার দিন বিকেলে মলের পার্কিং লটে এক ব্যক্তি গাড়িতে বসে থাকা দুজন হিজাব পরা সোমালীয় বংশোদ্ভূত নারীর দিকে এগিয়ে যায় এবং তাদের প্রতি জাতিগত বিদ্বেষপ্রসূত অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, লোকটি গাড়ির পেছনের দিকের জানালায় আঘাত করে গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেন। তখন নিরাপত্তার ভয়ে ঐ দুই নারীর একজন গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে শুরু করলে লোকটিও তাকে ধাওয়া করেন এবং একপর্যায়ে ঐ নারীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। এই সময় দ্বিতীয় নারীটি প্রথমজনকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে হামলাকারী তাকেও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর আশেপাশে দাঁড়ানো কয়েকজন লোক এগিয়ে এসে হামলাকারীকে থামান।

হেট ক্রাইম ইউনিটের সার্জেন্ট গ্যারি উইলিট্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “এই নারীদের ওপর হামলা ছিল ভয়ঙ্কর। আমরা তাদের প্রতি সহমর্মিতা বোধ করছি। ব্যক্তিগতভাবে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে তাদের জাতিগত পরিচয়ের কারণে। আর সেজন্যেই এটি ঘৃণাজনিত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।”

২০১৬ সালে লন্ডন অন্টারিওতে এক গ্রোসারী স্টোরে হিজাব পরিহিতা এক মহিলার উপর আক্রমণ চালিয়েছিলেন এই মহিলা। ছবি: লন্ডন পুলিশ সার্ভিস

এদিকে এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এক সপ্তাহের মাথায় একই স্থানে আবারো হামলা চালানো হয় হিজাব পরা আরেক নারীর উপর। এবার এই হামলা চালান এক নারী। তিনি বার বার হিজাব পরিহিতা ঐ কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেন শপিং ব্যাগ দিয়ে এবং একই সঙ্গে জাতিগত বিদ্বেষপ্রসূত মন্তব্য করতে থাকেন । কৃষ্ণাঙ্গ ঐ নারী হামলার স্থান থেকে সরে পড়ার চেষ্টা করলে হামলাকারী তাকে বাধা দেন।

আলবার্টার প্রিমিয়ার জেসন কেনী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, এই ধরণের হামলা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আলবার্টার রাজধানী এডমন্টনের মেয়র ডন আইভসন এই হামলার ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে নিন্দা করেছেন এবং বলেছেন, “জাতিগতভাবে অনুপ্রাণিত আচরণের নিন্দা করার দায়িত্ব আমাদের সবার উপর বর্তায়।”

উল্লেখ্য যে, শুধু এডমন্টনেই নয়, কানাডার অন্যান্য প্রদেশেও ইতিপূর্বে আরো বহুবার হিজাব পরিহিতা নারীদেরকে আক্রমণ অথবা অপমানের শিকার হতে হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, শুধু হিজাব পরার কারণে মন্ট্রিলের এক নারীর মামলা শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন কুইবেকের একটি আদালতের এক বিচারক। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন এল-আলোউল নামের এক মুসলিম নারী তার বাজেয়াপ্ত করা গাড়ি ফিরে পাবার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হন। বিচারক এলিয়ানা মারেঙ্গো তখন এল-আলোউলকে বলেছিলেন, “আমার বিবেচনায় আপনার পোশাক যথাযথ নয়।”

বিচারক মারেঙ্গো বলেন, আদালত হলো একটি ধর্মনিরপেক্ষ জায়গা। তাই আদালতের সামনে কেউ ধর্মীয় প্রতীক পরতে পারেন না। পরে অবশ্য সেই বিচারক তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং স্বীকার করেন যে তিনি আলোইলকে হিজাব খুলতে বলে ভুল করেছিলেন।  সেই দিনের সেই ভুলের জন্য পাঁচ বছর পর ঐ নারীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

আমরা মনে করি, অন্যের প্রতি বিদ্বেষী আচরণ সর্বদাই নিন্দনীয়। কারো গায়ের রং, ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে কটাক্ষ করা, হুমকী প্রদান করা, ঘৃণা প্রকাশ করা বিদ্বেষী অপরাধের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কানাডার মত একটি সুসভ্য ও আধুনিক দেশেও এগুলো ঘটছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এবং আশা করছি বিচারক এলিয়ানা মারেঙ্গো’র মতো অন্যেরাও তাদের ভুল বুঝতে পারবেন।