জো বাইডেনের অভিষেক বিশ্বের জন্য এক বড় সুখবর
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেন। গত ২০ জানুয়ারী বুধবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শপথ নিয়েছেন তিনি। তার আগে শপথ নিয়েছেন নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তবে এবারের শপথ অনুষ্ঠানটি ছিল ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। আর শপথ নিয়েই জো বাইডেন বলেন, আমরা সবাই মিলেই নতুন আমেরিকা গড়ে তুলব।
এ মুহূর্তে দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারির সংক্রমণ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের রেখে যাওয়া নানান ধরণের অপকর্ম বড় সংকট হিসাবে রয়েছে। শুধু দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও মার্কিন প্রভাব ক্ষয়িষ্ণু করেছেন ট্রাম্প। সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছেন নিকটতম প্রতিবেশী ও বহুকালের বন্ধু রাষ্ট্র কানাডার সঙ্গেও।
প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার আগ মুহূর্তে এক টুইটে বাইডেন নিজেই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন দিনের শুরু হলো। আর শপথ নেওয়ার পর সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় আমাদের এক মুহূর্ত নষ্ট করার সময় নেই। তিনি আরো বলেন, ‘আজ আমেরিকার বিজয় দিবস, আজ গণতন্ত্রের বিজয় দিবস। এ মুহূর্তে আমরা বলতে পারি, গণতন্ত্র জয়ী হয়েছে।’
শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপস্থিত ছিলেন না। শপথ অনুষ্ঠানের তিন ঘণ্টা আগে স্ত্রী মেলানিয়াসহ তিনি ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যান। ১৮৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনের পর এবারই প্রথম বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার উত্তরসূরির অনুষ্ঠানে থাকলেন না। আমেরিকার জনগণের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন ক্ষমতাকালে এবং ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবার সময় শেষবারের মত আবারো চরম অবজ্ঞা দেখিয়ে গেলেন তিনি।
জো বাইডেন এমন এক সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, যখন সেখানে বিরাজ করছে এক বিভক্ত সমাজ। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী নীতি আমেরিকাকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, যা গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাইডেনও উপলব্ধি করেছেন এই সত্য। আর তাই তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেছেন, “কঠিন ও সমস্যাসংকুল সময়ে আমরা বাস করছি।” করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কথা উল্লেখ করে বাইডেন শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীলতা, বর্ণ বিদ্বেষ ও সহিংসতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার আহ্বানও জানান। তিনি আরো বলেন, “চলুন নতুন করে শুরু করি। আমরা একে অন্যকে শুনি, শ্রদ্ধা করা শুরু করি।”
বাইডেনের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ হলো করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা। করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চার লাখ মানুষ ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির অর্থনীতি। সেখানে বেড়েছে বেকারত্ব। এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে জো বাইডেনের প্রশাসনকে। সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে হবে প্রতিবেশী কানাডা, মেক্সিকো-সহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে। কানাডার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে সুবিশাল অংকের অর্থনৈতিক সম্পর্ক। এই সম্পর্কের অবনিত ঘটিয়ে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন সময় এসেছে সেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় উন্নয়নের। জো বাইডেন ও জাস্টিন ট্রুডো মিলে এই দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করবেন এটাই দুই দেশের জনগণের আশা। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাংলাদেশের জন্যও মঙ্গল বয়ে আনবে আশা করা যায়। কারণ তিনি অভিবাসন নীতিতে যে পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন, তাতে কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা বৈধতা লাভ করবেন। এর মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি অভিবাসীর জীবনেও স্বস্তি ফিরে আসবে, যা বাংলাদেশের রেমিটেন্সের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্তির প্রশ্নেও বাইডেনের উপর আস্থা রাখা যায়।