রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯

Leger Marketing পরিচালিত নতুন এক জরীপে দেখা গেছে যে, এক-তৃতীয়াংশ কানাডীয় তাদের নির্বাচিত রাজনীতিকদের ধর্মীয় প্রতীক পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চায়। কানাডার বেশীরভাগ নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকারের সনদের প্রতি দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল এবং মাল্টিকালচারাল ধারণার জোরালো সমর্থক হলেও জাতীয় নেতাদের ধর্মীয় পোষাক পরিধানের ব্যাপারে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। জরিপে অংশ নেওয়া কুইবেকবাসীর বেশিরভাগই একমত যে, কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিকদের দায়িত্বে থাকার সময় হিজাব, ক্রুসিফিক্স বা পাগড়ির মত ধর্মীয় প্রতীক পরতে দেওয়া উচিৎ নয়।

ধর্মীয় পোষাক বা প্রতীক পরিধানের বিষয়টি আলোচনায় আসার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে এনডিপি নেতা জাগমিত সিং এর পাগড়ি। তিনি নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে সর্বত্রই ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন তার চোখ ধাধানো বর্ণালী পাগড়ি পরে। অন্যদিকে কুইবেকে পাশ হওয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ আইনের কারণেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ঐ আইনে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই আইন অবশ্য নির্বাচিত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

কানাডার জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আর মাত্র চার মাস পর। ঠিক এমন সময় Leger Marketing পরিচালিত জরীপের এই ফলাফল নিশ্চিতভাবেই গরুত্ব বহন করে। আর গুরুত্ব বহন করার আরেকটি কারণ, কানাডা একটি আধুনিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও রাজনীতিতে এখানে ধর্মকে ব্যবহারের প্রবণতা অতীতে লক্ষ্য করা গেছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার কর্তৃক ইফতার পার্টির আয়োজন। ছবি : সালামটরন্টো.নেট

আমরা দেখেছি কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার কি ভাবে করতে হয় সেটি বেশ ভাল করেই রপ্ত করেছিলেন।

তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বিভিন্ন খ্রীস্টান ননপ্রফিট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সরকারী চাঁদা প্রদানের হার বৃদ্ধি পেয়েছিল বেশ ভাল মাত্রায়ই। ইউনিভারসিটি অব কুইবেক এর পলিটিক্যাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের হিসাব অনুযায়ী দেখা যায় ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে এই চাঁদার পরিমান ৪২% বৃদ্ধি পেয়েছিল। অন্যদিকে সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ এনজিও গুলোতে চাঁদার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল মাত্র ৫%।

সিবিসি’র সাংবাদিক ইরা বেসিন তার এক প্রতিবেদনে লিখেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি ২০১১ সালে নিরঙ্কুশ আসন পেয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পর পরবর্তী দুই বছরে ধর্ম ভিত্তিক নীতিমালা ও রাজনীতির বর্ধিত প্রভাব সুষ্পষ্টভাবেই বিরাজ করছে অটোয়াতে যেটি আগে এত অধিক মাত্রায় ছিল না।

অন্যদিকে অতি অল্পসংখ্যক মুসলিম নারীদের ‘নিকাব’ ব্যবহার নিয়েও গত ফেডারেল নির্বাচনের আগে রাজনীতি কম হয়নি। কনজার্ভেটিভ পার্টির পাশাপাশি লিবারেল এবং এনডিপি-ও এই নিকাব রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল। অথচ নিকাব ইসলামের অংশ নয়। এ কথা অনেক পন্ডিত ব্যক্তিই বলে আসছেন বারবার। কনজার্ভেটিভ পার্টি চেয়েছিল নিকাবের মতো চরম কুসংস্কারাপন্ন একটি বিষয়কে ধর্মীয় ইস্যুতে পরিনত করে কানাডায় মুসলিম বিদ্ধেষ তৈরী করা। অন্যদিকে লিবারেল পার্টি ও এনডিপি নিকাবের প্রতি সমর্থন দিয়েছিল এই উদ্দেশ্যে যে, মুসলিমদের ভোট যেন তাদের পক্ষে যায়। মূলত নিকাব কি এবং কেন তা ভাল করে না জেনেই এর প্রতি সমর্থন দিয়ে বসেছিলেন তারা।

উল্লে­খ্য যে, যে নিকাব নিয়ে কানায় রাজনীতিবিদগন রাজনীতি শুরু করেছিলেন সেই নিকাব কিন্তু খোদ ইসলামী রাষ্ট্রসমূহেই সকল স্থানে বৈধ নয়। এমনকি, নিকাব হজের সময়ও অনুমোদিত নয়।

কানাডায় আসন্ন ফেডারেল নির্বাচন উপলক্ষে অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ইমিগ্রেশন ও রিফিউজি গ্রহণ এর বিষয়টি হয়তো অন্যতম ইস্যু হয়ে দাড়াতে পারে। তবে পাশাপাশি ধর্মীয় ইস্যুকে আবারো টেনে আনা হতে পারে। পাগড়ী, হিজাব, নিকাব বা ইসলামোফোবিয়া নিয়ে নির্বাচনের মাঠ গরম করার চেষ্টা করা হতে পারে। যা একটি গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের দেশে কোনভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।