শিশু ও তরুণদের কল্যাণের বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে
অক্টোবর ৯, ২০১৯
কানাডায় তরুণদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল বর্ষের প্রথম দিনে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। রিপোর্টে আরো বলা হয়, অন্টারিওতে শিশু ও তরুণদের প্রতি পাঁচজনে একজন বিশেষ কোনও ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ প্রয়োজনীয় সহায়তা লাভ করে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘চিলড্রেন ফার্স্ট’ এই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো দুর্ঘটনা এবং প্রতিরোধযোগ্য জখম। এর পরই রয়েছে আত্মহত্যা। শিশুদের কল্যাণের প্রতি হুমকিস্বরূপ অন্যান্য কারণগুলি হলো নিপীড়ন, দারিদ্র্য, স্থুলতা, খাদ্য নিরাপত্তা, রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম, বৈষম্য ও গালমন্দ করা।
উল্লেখ্য যে, কানাডায় মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ থেকে ২৪ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা গত এক দশকে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। চিলড্রেন ফার্স্ট-এর প্রধান পরিচালক ডা. অস্টিন ইতিপূর্বে বলেন, মানসিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠার মত কোনও উপায় নিজের সমাজ থেকে না পাওয়ার কারণে শিশুরা ক্রমবর্ধমান হারে হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছে। পরিসংখ্যান থেকে আরো দেখা যাচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি আরও জানান, শিশুদের আত্মহত্যার হারের দিক থেকে কানাডা বিশ্বে পঞ্চম শীর্ষস্থানে রয়েছে। কানাডিয়ান প্রেস এর এক রিপোর্টে এই তথ্য পরিবেশিত হয় ইতিপূর্বে।
সারা অস্টিন আরো বলেন, “আমরা শিশু মৃত্যুর হার বা দুর্ঘটনা বা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে বিষয় নিয়েই কথা বলি না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যানগুলো গভীরভাবে উদ্বেগজনক।” তিনি বলেন, “কানাডা বিশ্বের পঞ্চম সমৃদ্ধিশালী দেশ কিন্তু যখন শিশুদের কল্যাণের প্রসঙ্গ আসে তখন আমরা অনেক পেছনে পড়ে যাই।”
শিশুদের এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি কেবল যে কানাডীয় পরিবারের শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়। অনেক ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশুরাও এই সমস্যায় ভুগছে। সা¤প্রতিক অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কানাডায় বর্তমান সময়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা নজীরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিষয়টি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। টরন্টো স্টার এবং রায়ারসন স্কুল অব জার্নালিজম এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।
অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ২৫ হাজার ১৬৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমেরিকান কলেজ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালিত একটি বড় ধরণের জরিপে দেখা গেছে যে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে উদ্বিগ্নতায় ভোগার সংখ্যা ৫০ শতাংশ, বিসন্নতায় ভোগার সংখ্যা ৪৭ শতাংশ এবং মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই তথ্য প্রকাশিত হয় টরন্টো স্টারে।
আমরা মনে করি উপরের তথ্যসমূহ যে কোন বিবেচনায়ই উদ্বেগজনক। এই উদ্বেগ শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, তাদের পিতা-মাতা ও ভাই-বোনদের জন্যও উদ্বেগজনক। কারণ একটি অমূল্য জীবন ঝরে পড়লে তার শোক সারা জীবন ধরে বয়ে বেড়াতে হয় যারা বেঁচে থাকেন তাদেরকে।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান চিলড্রেন ফার্স্ট রিপোর্টের লেখকরা দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে আহবান জানিয়েছেন যাতে তারা আগামী নির্বাচনে শিশুদের কল্যাণের বিষয়ে মনোযোগী হন। তাদের সুপারিশের মধ্যে আছে, জাতীয় পর্যায়ে একটি ‘শিশুদের জন্য বাজেট’ প্রণয়ন যাতে করে শিশুদের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ সংরক্ষণের মতো একটি ন্যূনতম মান নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে এই শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত। রাষ্ট্রের ভবিষ্যত। এদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যদি সঠিকভাবে নির্নয় করা না যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা যদি দেয়া না যায় তবে তার পরিণতি হবে সবার জন্যই দুর্ভাগ্যজনক। আমরাও আশা করি দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।