স্কুলে বুলিং বন্ধ করার জন্য জোরালো পদক্ষেপ জরুরী
নভেম্বর ৯, ২০১৯
বুলিং এর শিকার হয়ে টরন্টোতে ১২ বছর বয়সী এক বাঙ্গালী বালক অর্ক চক্রবর্তী আত্মহত্যা করেছে গত ২১ জুন। ঘটনার পর পুলিশ টরন্টোর মিডটাউন এলাকার একটি এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর পাশে অবস্থিত এক ঝোপ থেকে বালকটির লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, সে ঐ বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ঝাপিয়ে পড়ে। আর এটি যে আত্মহত্যা ছিল সেই খবর পুলিশ নিশ্চিত করে প্রায় চার মাস পর। গত ২৯ অক্টোবর গ্লোবাল নিউজ তাদের এক খবরে এই তথ্য প্রকাশ করে। তবে এই আত্মহত্যার পিছনে বুলিং এর ভ‚মিকা ছিল এমন দাবীই করেন বালকটির মা দূর্বা মুখপাধ্যায়।
এদিকে অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে হ্যামিলটনে অবস্থিত স্যার উইনস্টন চার্চিল সেকেন্ডারী স্কুলের ব্যাকইয়ার্ডে ডেভেন ব্র্যাকি-সেল্ভি নামে ১৪ বছরের এক ছাত্র তার মায়ের সামনেই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এই ঘটনাও স্কুল বুলিং-এরই পরিনতি। ডেভেন-কে পিছন থেকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। তার মা শত চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। বুলিং এর এই বিষয়টি চরম উত্তেজনা ও শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে হ্যামিলটনসহ সারা কানাডায়। সিবিসি নিউজ জানায়, পুলিশ এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে। এদের মধ্যে একজন ছাত্রীও আছে। হত্যাকান্ডের সময় ধারণ করা একটি ভিডিও এসেছে পুলিশের হাতে। তারা এটি রিভিউ করে দেখছে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে রিটেয়া পারসনস্ নামে এক কানাডিয়ান টিনএজ ছাত্রী সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে গত ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। ঐ সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল এটি। সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়ার আগে সেই মেয়েটি তার এক বন্ধু ও সেই বন্ধুর আরো তিন সহযোগী কর্তৃক গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল। পরে সেই ধর্ষণের চিত্র অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
কানাডার স্কুলগুলোতে বুলিং আসলে একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতি তিনজন শিশু-কিশোরের মধ্যে একজন বুলিং এর শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কানাডার বিভিন্ন স্কুলে বুলিং এর শিকার হচ্ছে অনেক বাঙ্গালী শিশু-কিশোরও। বুলিং এর শিকার হয়ে অনেক শিশু-কিশোর শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছে। আত্মহত্যার চেষ্টাও করে কেউ কেউ। তার সাক্ষাৎ প্রমাণ পাওয়া গেল দূর্বা মুখপাধ্যায়ের ছেল অর্ক চক্রবর্তির আত্মহত্যার ঘটনায়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় কানাডায় বুলিং রেট অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় অনেক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ৩৫টি শিল্পোন্নত দেশের মধ্যে কানাডার অবস্থান ২৬ তম!
ইতিপূর্বে হাফিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়, দুঃখজন হলেও সত্যি যে গত কয়েক বছর ধরেই বিরাজ করছে বুলিং এর এই অবস্থা যদিও বিভিন্ন মহল থেকে ক্রমাগত দাবী উঠেছে এ পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
বুলিং এর শিকার অর্ক চক্রবর্তির আত্মহত্যার বিষয়টি কানাডার পত্রপত্রিকায় তেমন কোন গুরুত্ব পায়নি। এর একটি কারণ হতে পারে সে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য। তবে ডেভেন এর মর্মান্তিক মৃত্যুতে বুলিং এর বিষয়টি নতুন করে হ্যামিলটনে এবং একই সাথে সারা কানাডায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বুলিং আজকে কেবল মাত্র একটি সমস্যা নয়। বুলিং এর যে মাত্রা আমরা দেখতে পাচ্ছি সে হিসাবে এই পরিস্থিতিকে জাতীয় জরুরী অবস্থা হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ। আমরাও এই বক্তব্যের সাথে একমত।
বুলিং একটি মানবাধিকার ইস্যু। যারা বুলিং এর শিকার হয় তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। জাতি সংঘের শিশু অধিকার সনদে কানাডা স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর একটি। সুতরাং আমরা মনে করি বুলিং এর কারণে কোন শিশুর মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেটি দেখার দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। একই সাথে বুলিং এর শিকার সব শিশুর ব্যাপারেই সমান গুরুত্ব দেয়া উচিৎ বলে আমরা মনে করি।