টিনএজারদের মধ্যে নগ্ন ছবি শেয়ার করার প্রবণতা : বৃদ্ধি করতে হবে নজরদারি
জানুয়ারী 7, 2020
কানাডায় টিনএজারদের মধ্যে নগ্ন ছবি শেয়ার করার প্রবণতা এতটাই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বর্তমানে জুনিয়র হাইস্কুলে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এটি তাদের সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। সম্প্রতি সিবিসি নিউজে প্রকাশিত এক খবরে এ কথা বলা হয়। প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডের শার্ললেটাউন পুলিশ সার্ভিসের ইয়থ জাস্টিস সার্ভিসে কর্মরত জেন উড বলেন, কিছু ছেলেমেয়ে এটা করছে এমনকি পরস্পরের প্রতি ভালোলাগার বোধে জড়িয়ে পড়ারও আগে। শার্ললেটাউনের কর্নেল গ্রে হাই স্কুলের রিসোর্স অফিসার টিম কাইজার বলেন, জুনিয়র হাইস্কুল লেভেলে এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রেড-সিক্সে পড়া ছেলেমেয়ের মধ্যেও এই ছবি লেনদেনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর যে হারে তারা ছবি লেনদেন করছে তা সিনিয়র হাইস্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেই। তিনি আরো বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মের শিশুরা অনেক খোলামেলা হয়ে পড়ছে এবং তাদেরকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, ছবি পাঠাতে বলা হয়। আমরা আগে যেমনটা ভাবতাম তারও চেয়ে অনেক কম বয়সে এটা ঘটছে।
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে কানাডিয়ান প্রেস এর এক খবরেও বলা হয়েছিল, দেশটিতে আট বছর বয়সের শিশুরাও অনলাইনে নগ্ন ছবি শেয়ার করছে! সম্প্রতি নিউ ব্রান্সউইকের চারটি শিশু স্বেচ্ছায় অনলাইনে নিজের নগ্ন ছবি শেয়ার করার পর পুলিশ তাদের বাবা-মাকে সতর্ক করেছে। আরসিএমপি (রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ) বলেছে, আট থেকে ১২ বছর বয়সের ওই শিশুরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওয়েবসাইটে নগ্ন ছবি অথবা ভিডিও শেয়ার করেছে। পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরণের ছবি শেয়ার করার ঘটনা বাড়ছে।
শিশুরা টেলিফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে যে সকল নগ্ন ছবি আদান প্রদান করছে তার সবচেয়ে বিপদের দিকটি হলো এসব ছবি বিভিন্ন পর্নো সাইটে চলে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। এসব ছবি দিয়ে শিশুদেরকে বø্যাকমেইল করা হতে পারে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগও উঠতে পারে। শিশুরা আসলে এর পরিণতিটা ভালোভাবে বুঝতে পারছে না।
ইন্টারনেট বিষয়ক সচেতনতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে ইউনিসেফ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আছে, অনলাইনে সব ধরনের ক্ষতিকর দিক থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে হবে। এসব ক্ষতিকর দিকের মধ্যে রয়েছে অনলাইনের অপব্যবহার, সাইবার উৎপীড়ন, স্প্যামিং, ফিশিং, অশ্লীল তথ্য ও ছবির আদান-প্রদান প্রভৃতি। তাছাড়া অনলাইন ব্যবহারকারী শিশুদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও পরিচয় সুরক্ষিত রাখতে হবে। অনলাইনে শিশুদের সম্পৃক্ত ও নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
এ কথা সত্যি যে, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আজকের যুগে সবার জন্য অসীম তথ্যভান্ডার এবং বিনোদনের সীমাহীন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এর মধ্যে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে শিশুরাও। কিন্তু মনে রাখতে হবে, শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য ইন্টারনেটের যেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে, তেমন ভাবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তবে সামান্য সচেতন হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব।
অবশ্য সব শিশুই যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার বা টেলিফোনের মাধ্যমে নগ্ন ছবি শেয়ার করছে তা নয়। কিন্তু কেউ কেউ তা করছে। তাই শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বিশেষ ভাবে সতর্ক হতে হবে। শিশুর নিরাপত্তা ও মঙ্গলের জন্য এই কাজগুলো করা জরুরী। ইন্টারনেট হলো অপরিচিত এক সীমাহীন জগৎ। সেখানে আমাদের শিশুদের বিনা তদারকীতে চলতে ফিরতে দিলে নিশ্চিতভাবেই বিপদের আশংকা রয়েছে।