কানাডায় তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে
ডিসেম্বর 1, 2017
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কানাডায় বর্তমান সময়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা নজীরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিষয়টি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। টরন্টো স্টার এবং রায়ারসন স্কুল অব জার্নালিজম এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।
ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্যাথরিন মান বলেন, “আমাদের দরোজার বাইরে এবং ঘরের ভেতরে দীর্ঘ লাইন পড়ছে। আমরা বেশি সংখ্যক পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পরও কুলিয়ে উঠতে পারছি না।”
অন্যদিকে অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ২৫ হাজার ১৬৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমেরিকান কলেজ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালিত একটি বড় ধরণের জরিপে দেখা গেছে যে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে উদ্বিগ্নতায় ভোগার সংখ্যা ৫০ শতাংশ, বিষণœতায় ভোগার সংখ্যা ৪৭ শতাংশ এবং মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই তথ্য প্রকাশিত হয় টরন্টো স্টারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমস্যাটি প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। অন্টারিও ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জ্যানাইন রব বলেন ‘আমাদের মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে, এই বয়সের ছেলেমেয়েরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। কিন্তু কথাটি সম্পূর্ণ সত্যি নয়। আমাদেরকে তাদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের সাহায্য করতে হবে।’
উদ্বিগ্নতা বলি আর বিষন্নতা বলি এই উভয় বিষয়ে আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই জ্ঞান সীমিত। বিষন্নতা যে একটি গুরুতর ব্যাধি এই ধারণাই অধিকাংশ মানুষের নেই। যাদের কিছুটা ধারণা আছে তারা একে আমলে নিতে চান না। বা লোক লজ্জার ভয়ে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চাই না। এই প্রবণতাটি তুলনামূলকভাবে বেশী লক্ষ্য করা যায় ছেলেদের মধ্যে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় কানাডায় শতকরা পঞ্চাশ ভাগ লোক বিষন্নতায় ভুগেও চিকিৎসা করান না। ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটিতেও একই প্রবণতা। বিশেষ করে যারা এশিয়া বা সাউথ এশিয়া থেকে কানাডায় এসেছেন তাদের মধ্যে যারা বিষন্নতায় ভুগেন তাদের নিয়ে তামাশাও করতে দেখা যায় যা চূড়ান্তভাবেই আপত্তিকর।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা একটি গুরুতর মানসিক ব্যাধি। এই রোগকে আজ আর অহবেলা করার উপায় নেই। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অচিরেই এই বিষন্নতা রোগটি বিশ্বের এক নম্বর কিলার ডিজিজ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। বর্তমানে বিশ্বে মোট আত্মহত্যার ৬০ ভাগই বিষন্নতার কারণে হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিশ্বে বর্তমানে ৩০ কোটি মানুষ বিষন্নতায় ভুগছেন। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিষন্ন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ শতাংশ। এই রোগের কারণে আত্মহননের প্রবণতা, নেশাগ্রস্ত হওয়া, ডায়াবেটিস ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই একে অবহেলা করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
চলতি মাসে অন্টারিও সরকার অন্টারিওর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে সহায়তার জন্য বার্ষিক অর্থ বরাদ্দ অতিরিক্ত ৬০ লাখ ডলার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে গত তিন বছরে এই খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ সাড়ে চার কোটি ডলারে পৌঁছলো।
কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, সরকারের এই ব্যয় যথেষ্ট নয়। অন্টারিও আন্ডারগ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্সের গবেষক ডেনিয়েলি পিয়েরে বলেন, “আত্মহত্যাই যদি আমাদের তরুণ ও টিনএজারদের প্রধানতম ঘাতক হয় তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে নিজেদেরকে সুসজ্জিত করবো না কেন? আমার মনে হয়, মানসিক অসুস্থতার প্রভাবের ভয়াবহতার প্রতি এটি গুরুতর উপেক্ষা।”
আমরাও মনে করি এই উপেক্ষা সত্যিকার অর্থেই গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। আমাদের মনে রাখতে হবে এরাই আমাদের ভবিষ্যত। এদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যদি অর্থাভাবে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পায় তবে তার পরিণতি হবে গোটা জাতির জন্যই দুর্ভাগ্যজনক।