কোভিড-১৯-এর কারণে কানাডায় শত বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সর্বনিম্ন হার

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অভিবাসনের নিম্ন হার এবং মৃত্যুহার লাফিয়ে বাড়ার কারণে কানাডায় ১৯১৬ সালের পর গত বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সর্বনিম্ন হার দেখা গেছে। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

গত মার্চে প্রকাশিত রিপোর্টে ধারণা দেয়া হয় যে, ২০২০ সালে কানাডায় জনসংখ্যা বেড়েছে ০.৪ শতাংশ হারে। এটি হলো ২০১৯ সালের জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার ছিল তার আনুমানিক এক-চতুর্থাংশমাত্র। আর ১৯১৬ সালে যখন কানাডা যুদ্ধে জড়িত ছিলো সেই বছরের পর এটিই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সর্বনিম্ন হার। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন স্টেফানি লিউ ও জেসি তাহির আলি।

সিটিভি নিউজ কানাডাকে দেয়া এক বিবৃতিতে স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা বলেছে, “যেহেতু কানাডায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির বৃহদংশই আসে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের মাধ্যমে (২০১৯ সালে যেটি ছিলো ৮৬%), তাই আন্তর্জাতিক বিশ্বে ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করায় এদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বড় ধরণের প্রভাব পড়ে।” এতে আরও বলা হয়, “মহামারির প্রাদুর্ভাব না হলে সাম্প্রতিক অতীতের মতই কানাডার প্রত্যাশিত বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকতো বলে আশা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”

কানাডায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির বৃহদংশই আসে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের মাধ্যমে। ছবি : কানাডিয়ান জিওগ্রাফিক

সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, একমাত্র নুনাভাট-এর ব্যতিক্রম ছাড়া অন্য প্রায় সব প্রদেশ ও টেরিটোরিতে গত বছর জনসংখ্যা কিঞ্চিৎ বেড়েছে। ২০২০ সালে অন্টারিও এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এই উভয় প্রদেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ০.৪ শতাংশ হারে। অবশ্য অন্টারিওতে এটিই হলো ১৯১৭ সালের পর সর্বনিম্ন বৃদ্ধির হার। আর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় এটি হলো ১৮৭৪ সালের পর সর্বনিম্ন হার। নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরে জনসংখ্যা ০.৬ শতাংশ কমে গেছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন

স্ট্যাটক্যান-এর হিসাবে গত বছর কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বনিম্নে পৌঁছার মূল কারণ আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ওপর মহামারির প্রভাব। সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, “২০১৬ সাল থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি হয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের মাধ্যমে, যা ২০১৯ সালে ৮৫.৭ শতাংশে পৌঁছে। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রোধের জন্য ২০২০ সালের মার্চে সীমান্ত ও ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ করা হলে এই হার ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।”

কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, মহামারির আগে প্রায় তিন লাখ ৪১ হাজার ব্যক্তি কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসে। গত বছর এদেশে অভিবাসী এসেছে মাত্র এক লাখ ৮৭ হাজার মানুষ, যা সংখ্যায় ১৯৯৮ সালের পর সর্বনিম্ন। আর ২০১৯ সালে যত মানুষ কানাডায় এসেছে এটি হলো তারও প্রায় অর্ধেক।

কানাডা এক্সেলেন্স রিসার্চ-এর অভিবাসন ও একীভূতকরণ বিষয়ক বিভাগের চেয়ারপারসন অ্যানা ত্রিয়ান্দাফাইলিদউ গত বৃহস্পতিবার সিটিভি নিউজ.সিএ-কে বলেন, “অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এবং মহামারি থেকে বেরিয়ে আসার পরও তা অব্যাহত থাকবে। আর আমি স্পষ্টভাবেই মনে করি অভিবাসন হলো আমাদের জনমিতির চিত্রের অংশ।”

নন-পারমানেন্ট রেসিডেন্ট

২০২০ সালে যত সংখ্যক নন-পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট কানাডায় এসেছে, কানাডা ছেড়ে গেছে তার চেয়ে বেশি। চলতি বছর নন-পার্মানেন্ট রেসিডেন্টের সংখ্যা কমেছে ৮৬,৫৩৫ জন। অথচ ২০১৯ সালে তাদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল এক লাখ ৯০ হাজার ৯৫১জনে। স্ট্যাটক্যান বলছে, এই পরিসংখ্যান হলো, গত বছর কেবল প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ ছাড়া অন্য সব প্রদেশ ও টেরিটোরির নন-পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট কমে যাবার প্রতিফলন। 

অ্যানা ত্রিয়ান্দাফাইলিদউ বলেন, অনেক মানুষ কাজের জন্য কানাডায় আসেন ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে, যেমন পর্যটন ও পরিবহন শিল্পে। কোভিড-১৯জনিত বিধিনিষেধের মধ্যে এসব শিল্পের যেসব কোম্পানি কর্মরত ছিলো তাদের অনেক কর্মীকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে লে-অফ বা পারমিট সম্পর্কিত বিধিনিষেধের কারণে।

ত্রিয়ান্দাফাইলিদউ বলেন, “অনেককে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে যে, তারা চাকরির প্রস্তাব পাবার পরও নতুন চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। কারণ তাদের ওয়ার্ক পারমিট সীমিত; নির্দিষ্ট নিয়োগদাতার অধীনে নির্দিষ্ট কাজ করার অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাকে। সুতরাং যারা সাময়িক ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করতে আসেন তারা দেখতে পান যে তারা নিছক পর্যটকে পরিণত হয়েছেন।”

মৃতের সংখ্যা গত বছর কানাডা কোনও একক বছরে মৃত্যুর রেকর্ড ছুঁয়েছে। ২০২০ সালে দেশটিতে  তিন লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে জানান হয়েছে। কানাডার জনস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কানাডায় যত মৃত্যু হয়েছে তার প্রতি ২০টির মধ্যে একটি ছিল কোভিড-১৯ রোগে।