টরন্টোর স্কুলবোর্ডে ‘বর্ণবাদ সমস্যা গুরুতর’, প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ

রিপোর্টে যে ফলাফল এসেছে তা “গভীর উদ্বেগের কারণ”

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক রিপোর্টে টরন্টোর ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের মধ্যে “গুরুতর বর্ণবাদের সমস্যা” বিদ্যমান বলে উল্লেখ করেছে। এটি হলো এধরণের প্রথম রিপোর্ট। এতে বলা হয়েছে, কৃষ্ণাঙ্গ-বিরোধী বর্ণবাদ গত স্কুলবর্ষে নথিভুক্ত করা সব ধরণের ঘৃণাপ্রসূত ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে।

স্কুল বোর্ডের মানবাধিকার দপ্তরের বার্ষিক রিপোর্ট প্রণয়নের জন্য ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দুই বছর ধরে বোর্ডের অধীন দুই লাখ ৪৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবং ৪০ হাজার স্টাফের মধ্যে ঘৃণাজনিত কর্মকাণ্ডের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়। খবর সিবিসি নিউজের।

এতে বলা হয়, রিপোর্টে যে ফলাফল এসেছে তা “গভীর উদ্বেগের কারণ।”

“তথ্য উপাত্তে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে যে, স্কুলবোর্ডে এখনও বর্ণবাদের সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে রয়ে গেছে। বর্ণবাদী ঘটনা ও ঘৃণার প্রকাশ টিডিএসবির স্কুলগুলিতে নৈমিত্তিক এবং সংখ্যায়ও উল্লেখযোগ্য।”

রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০১৯-২০২০ স্কুলবর্ষে সংঘটিত সব ধরণের ঘৃণাপ্রসূত ঘটনার মধ্যে ৬৯ শতাংশই বর্ণবাদসংশ্লিষ্ট অভিযোগ। এর মধ্যে বৃহৎ অংশ হলো কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদ। কোনও ব্যক্তির যৌন প্রবণতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘটনা ঘটে ১৭ শতাংশ এবং ধর্মমত বা ধর্মসংশ্লিষ্ট ঘটনার পরিমাণ ১৪ শতাংশ।

২০১৯ সালের জুনের মধ্যে ঘৃণাপ্রসূত ঘটনার রিপোর্ট করা হয়েছে ৬৪টি অথচ পরের বছর সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩১২টিতে।

উপাত্তে এশীয়-বিরোধী মনোভাবের সঙ্গে জড়িত ঘটনার রিপোর্টের “উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি”র তথ্যও প্রকাশ পেয়েছে। এধরণের ঘটনা দুই বছরের মধ্যে শূন্য থেকে বেড়ে চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

হোমোফোবিয়া বা সমকামিতার বিরুদ্ধে বিরূপতাও বেড়েছে সাত শতাংশ।

এদিকে, ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা বেড়েছে “উদ্বেগজনক হারে”, ১৫ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশে। তবে আগের বছরের চেয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে এর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। যেটি ছিলো ঘৃণাপ্রসূত মোট ঘটনার ২৩ শতাংশ, সেটি হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ১১ শতাংশে।

গত বছরের পুরো সময়ে ইসলামোফোবিয়া থেকে সংঘটিত ঘটনার রিপোর্ট হয়েছে মাত্র দুই শতাংশ যেখানে “অন্যান্য” বর্ণবিদ্বেষজনিত ঘটনা ছিলো ২১ শতাংশ।

“এটি সময় সম্পর্কিত”

ব্ল্যাক মম্স কানেকশন নামের একটি গ্রুপের সদস্য তানিয়া হেলেস বলেন, এই রিপোর্ট কেবল সেই বিষয়টিই নিশ্চিত করছে কৃষ্ণাঙ্গ বাবা-মায়েরা যেসব বর্ণবাদী ঘটনার রিপোর্ট করেন এবং এগুলি অনেক কাল ধরেই জানা। তিনি বলেন, “আমার কাছে প্রথমে মনে হয়েছিলো, এটি হলো সময় সম্পর্কিত।”

তিনি বলেন, কৃষ্ণাঙ্গ বাবা-মার উদ্বেগের বিষয়গুলিতে  প্রায়শ এমন মন্তব্য করা হয় যে, “‘ওহ, তুমি বর্ণবাদের তাস চালছো, তোমাকে তো মনে হচ্ছে ঠিক যেন বিকারগ্রস্ত’ অথবা ‘তুমি কি নিশ্চিত? এই লোকটির কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু আছে।”

কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী যত ঘটনার রিপোর্ট হয়েছে তার অসামঞ্জস্য সম্পর্কে হেলেস বলেন, এটাও অবাক হবার মত কিছু নয়, কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদ বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যেই আছে।

তিনি বলেন, “এটি কেবল শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গের ব্যাপার নয়, অশ্বেতাঙ্গদের মধ্যেও কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদ বিদ্যমান।”

প্যারেন্টস অব ব্ল্যাক চিলড্রেন নামের একটি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড সদস্য কিয়ারি ডেনিয়েল একমত যে, এই রিপোর্টের উদ্ঘাটন বিস্ময়কর কিছু নয়।

প্যারেন্টস অব ব্ল্যাক চিলড্রেন নামের গ্রুপটি সারা প্রদেশে কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারগুলোকে সাহায্য করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ব্যক্তিবিশেষ বহুভাবে কৃষ্ণাঙ্গ-বিরোধী বর্ণবাদের মুখোমুখি হতে পারে।

তিনি বলেন, কৃষ্ণাঙ্গ বাবা-মা হিসাবে আমরা জানি যে, আমরা আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাই অরক্ষিত অবস্থায়। তাদের রক্ষা করার জন্য আমরা সেখানে উপস্থিত থাকতে পারি না।

“প্রায়শই তারা এধরণের ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে, তারা এত ছোট যে, এ বিষয়ে তাদের কোনও ধারণাই নেই। তারা ভাষা খুঁজে পায় না, যে বিষয়টির অভিজ্ঞতা অর্জন করছে সেটি স্পষ্ট করে বলতেও তারা সক্ষম নয়। এই অপারগতা তাদের মধ্যে ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়, তাদের প্রতিক্রিয়ায়, স্কুলের প্রতি তাদের আগ্রহের পরিমাণে।”

ডেনিয়েলের কাছে এই রিপোর্ট স্কুল বোর্ডের জন্য একটি সুযোগ যাতে করে তারা কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী পদ্ধতিগত বর্ণবাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।

বোর্ড বলছে, ‘আমাদেরকে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে’

সাম্প্রতিক এই রিপোর্ট হলো ২০১৯ সালে টিডিএসবি ট্রাস্টিবোর্ডের সর্বসম্মত ভোটের ফল। ওই ভোটের মাধ্যমে সদস্যরা স্কুল শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রভাব সৃষ্টিকারী বর্ণবাদ বা ঘৃণাপ্রসূত ঘটনাবলির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ বা সাড়াদানের লক্ষ্যে রিপোর্ট প্রকাশের আনুষ্ঠানিক নীতি প্রণয়ন করেন। নীতিমালায় বলা হয়, টিডিএসবির কর্মচারীরা এ ধরণের যে কোনও ঘটনার মুখোমুখি হলে  সে বিষয়ে ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত স্টাফদের কাছে রিপোর্ট করবেন।

প্রাপ্ত তথ্যের প্রেক্ষিতে রিপোর্টে বহুমুখি উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেছে যার মধ্যে রয়েছে, বোর্ডের মানবাধিকার দপ্তর সক্রিয় করে তোলা; গৃহীত নীতি ও প্রক্রিয়াগুলোর পক্ষপাতশূন্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে এগুলোর অব্যাহতভাবে পর্যালোচনা করা; মানবধিকার সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং ব্যক্তিবিশেষকে জবাবদিহির আওতায় আনার পরিকল্পনা প্রণয়ন; স্কুলগুলোর জন্য পালনীয় একটি “মানবাধিকার সনদ” তৈরি করা; এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি প্রাথমিক সমাধান পদ্ধতি তৈরি করা।

২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে বাস্তবায়িত অনলাইনে রিপোর্ট করার একটি পোর্টাল চালু করা হলে আগামী বছর বিদ্বেষজনিত ঘটনার পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ৮ নং ওয়ার্ডের ট্রাস্টি শেলী লাস্কিন বৃহস্পতিবার এক টুইটে এমন আশাবাদের কথা জানান।

রিপোর্টে বলা হয়, “এ ধরণের প্রতিটি ঘটনার নিষ্পত্তি করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। এসব বিষয়ে সবিশেষ গুরুত্বারোপের ফলে এগুলি সামনে এসেছে যাতে এগুলির ব্যাপারে পরিপূর্ণভাবে ব্যবস্থা নেয়া যায় এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য যথাযথভাবে অনুসরণ করা যায়।”