বর্ণবাদী হামলার শিকার মুসলিম নারী বললেন, এডমন্টন পুলিশকে জানানো তার জন্য দ্বিগুণ আঘাত হিসাবে দেখা দিয়েছে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক , মার্চ , ৩১, ২০২১: দক্ষিণ এডমন্টনের এলআরটি স্টেশনে হুমকি ও বর্ণবাদী গালমন্দের শিকার একজন কৃষ্ণাঙ্গ মুসলিম তরুণী বলেছেন, তার ওপর চড়াও হওয়া ব্যক্তি এবং নগর পুলিশের দ্বারা তিনি দ্বিগুণ মানসিক আঘাত পেয়েছেন।
মেয়েটির বয়স ২০-এর কোটায় এবং তিনি একজন ছাত্রী। তিনি হিজাব পরেন। তিনি বলেন, চলতি মাসের আরও আগের দিকে জাতিগত বিদ্বেষপ্রসূত ওই হামলার পর থেকে তিনি চরম শঙ্কার মধ্যে আছেন।
তিনি বলেন, এডমন্টন পুলিশ সার্ভিসের (ইপিএস) একজন সদস্য তাকে এই হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেন। এই তরুণী মনে করছেন, এটি ঘটেছে তার জাতিগত পরিচয় ও তার ধর্মের প্রতি অনীহার কারণে। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন ওয়ালিস স্নোডান।
সম্প্রতি সিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওই তরুণী বলেন, “আমাকে এখন দুই ধরনের মানসিক আঘাত সইতে হচ্ছে। বর্ণবাদী হামলার কারণে সৃষ্ট মানসিক আঘাত এবং ওইদিন ইপিএস অফিসারের কাছে ফোন করার পর তার প্রত্যাখ্যানের কারণে সৃষ্ট আঘাত।”
ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগের কারণে সিবিসি নিউজ তার পরিচয় গোপন রাখতে সম্মত হয় এবং তাকে কেবল এম. ডব্লিউ বলে উল্লেখ করে।
তিনি বলেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি সেঞ্চুরি পার্ক এলআরটি স্টেশনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় এক অচেনা লোক তার দিকে হাত তুলে এগিয়ে আসে এবং মুষ্ঠি পাকিয়ে তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করার ও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, “আমি আগে কখনই এধরণের সহিংসতা দেখিনি। আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমার পালানোর কোনও উপায় ছিলো না। আমি দৌড়ে তার কাছ থেকে পালাতে পারতাম না। আমি নড়তে পারছিলাম না।”
ইপিএস-এর হেট ক্রাইম ও চরমপন্থা বিষয়ক ইউনিট এই তরুণীর অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে। পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, নগর পুলিশ সহিংস বর্ণবাদের বারবার নিন্দা জানিয়েছে এবং সম্ভাব্য এই “গ্রাহক পরিষেবার বিষয়টি” তদন্ত করে দেখছে।
এটি ছিলো মাত্র ১০ সপ্তাহের মধ্যে এডমন্টনে কোনও কৃষ্ণাঙ্গ হিজাবি নারীর ওপর এধরণের আক্রমণের পঞ্চম ঘটনা। মেয়র ডন ইভেসন এবং মুসলিম কানাডীয়দের জাতীয় কাউন্সিল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
তরুণীটি বলেন, তার মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, হিজাব পরার কারণেই তার ওপর এই আক্রমণ এসেছে। “এটি সত্যি দুঃখজনক। আমি কখনও ভাবিনি, আমার বাইরের চেহারা আমাকে দুর্বল মানুষে পরিণত করবে।”
তিনি বলেন, ঘটনার সময় সেখানে কোনও নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না তবে অন্যরা ঘটনাটি দেখেছে। তিনি বলেন, “প্রকাশ্যে ঘটনা ঘটলেও কেউই আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। অপরাধী আমাকে হুমকি দেবার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছিলো। আল্লাহর রহমত, আমাকে অন্য নারীদের মত অতটা ভুগতে হয়নি।”
তরুণীটি পরে ইটিএস-এর একজন বাস চালক ও শান্তি কর্মকর্তাদের (পিস অফিসার) সাহায্য পান।
‘তিনি আমার প্রতি উপহাসের হাসি হাসেন’
ঘটনার দু’ঘণ্টা পর Ñ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, দ্বিধান্বিত ও পরামর্শ প্রত্যাশী তরুণীটি ইএসপির নন-এমার্জেন্সি লাইনে ফোন করেন।
তিনি বলেন, একজন কর্মকর্তা তাকে বলেন যে, এ বিষয়ে রিপোর্ট করার কোনও “অর্থ” নেই। কথা শেষ করে তিনি আমার প্রতি উপহাসের হাসি হাসেন।
“সেই ফোন কল রিসিভকারী আমাকে বলেন যে, পিস অফিসাররা যা করেছেন তাতেই আমার সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ এবং তিনি আমাকে কোনওরকম সাহায্য করতে ইচ্ছুক নন।”
“আমি কেবল ঠিক কাজটিই করার চেষ্টা করছিলাম এবং নাগরিক সেবার আওতায় থাকি বলে রিপোর্ট পেশ করতে চেয়েছি। এটাই আমাদের করা উচিৎ, যদি সম্ভব হয়। কিন্তু তিনি আমার প্রতি উপহাসের হাসি হাসেন।”
তরুণীটি বলেন, এলআরটি স্টেশনের পিস অফিসাররা তাকে বলেছেন যে, পুলিশ তার ঘটনাটি হয়রানির ঘটনা হিসাবে তদন্ত করতে পারে। কিন্তু “তিনি আমাকে রিপোর্ট পেশ করার সুযোগ দেননি”। অভিযোগ দায়েরের ফোন লাইনে ইপিএস-এর যে সদস্য তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি তাকে রিপোর্ট পেশের ব্যাপারে “নিরুৎসাহিত” করেন।
তিনি বলেন, “আমি তাকে বলেছি যে, পিস অফিসাররা শুধু হয়রানির অভিযোগ নিতে পারেন, কিন্তু সেটুকুতে আমি সন্তুষ্ট নই। আমি তাকে বলি, এটি হয়রানির চেয়েও গুরুতর। আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার নিরাপত্তা নস্যাতের উপক্রম হয়েছে। আর সেটা কোনওভাবেই যথার্থ নয়।”
তিনি বলেন, এই কথোপকথন থেকে এটাই প্রতিফলিত হয় যে, বর্ণবাদের শিকার জনগণের প্রতি সহানুভূতির অভাব আছে এবং এটি এডমন্টন থেকে ইসলামোফোবিয়া নির্মূলের প্রয়াসকে নস্যাৎ করছে।
তিনি চান, সংশ্লিষ্ট ইপিএস সদস্যকে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে হবে এবং মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে বর্ণবাদী হামলার ধারা চলছে পুলিশকে প্রকাশ্যে তার নিন্দা করতে হবে। তিনি যানবাহনে আরও বেশি নিরাপত্তা টহলের ব্যবস্থা করারও অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, “ইসলামোফোবিয়া এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এ বিষয়ের একটি নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।”
তিনি বলেন, “ইপিএস যে বিবৃতি দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। মুসলিম সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক সারিয়ে তোলার জন্য তাদেরকে সত্যি সত্যি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে কারণ এটি সামাজিক সংহতি ধ্বংস করে দিচ্ছে।”
তিনি বলেন, নগর কাউন্সিলরের ওয়ার্ড অফিসে ই-মেল পাঠানোর পর তিনি প্রয়োজনীয় সমর্থন পেয়েছেন।
মেল পাঠানোর পর মেয়রের দপ্তর তাকে ইপিএসের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন যিনি তাকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রিপোর্ট দায়ের করতে সাহায্য করেছেন। এর পর থেকেই তদন্তকারীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং তিনি অনুভব করছেন যে তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “হামলাকারীর প্রতি আমার করুণা হয়, কিন্তু আমি আমার নিজের জন্য লড়তে চাই, লড়তে চাই সেইসব নারীদের জন্য যারা আমার মত একই ধরণের ঘটনার শিকার হয়েছেন।”