কানাডায় মহামারির মধ্যে আয়ের বৈষম্য ‘নাটকীয়ভাবে বাড়ছে’: সিআইবিসি

স্বল্পতম মজুরির কাজে নিয়োজিতদের এক-পঞ্চমাংশের বেশি চাকরি হারিয়েছেন, কিন্তু উচ্চ আয়ের চাকরি ব্যাপকভাবে বাড়ছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ফেব্রুয়ারি, ২০২১ : নতুন এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কানাডায় কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে মানুষের আয়ের বৈষম্য দ্রুত বাড়ছেÑ কিন্তু এটি কেবল এজন্যে নয় যে, বহু স্বল্পআয়ের কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, বরং এর অন্যতম কারণ হলো, উচ্চবেতনের চাকরির অপ্রত্যাশিত বিস্তৃতি।

২০২০ সালের শুরুতে কানাডায় যতো সংখ্যক চাকরি ছিলো বছর শেষে তার চেয়ে ছয় লাখ ৪০ হাজার চাকরি কম ছিলো। কিন্তু এই চাকরি হারানোর পরিমাণ সমানুপাতিক হারে হয়নি।

সিআইবিসি’র (ঈধহধফরধহ ওসঢ়বৎরধষ ইধহশ ড়ভ ঈড়সসবৎপব) অর্থনীতিবিদ বেঞ্জামিন তাল গত মঙ্গলবার এক রিপোর্টে লেখেন, “উচ্চবেতনের চাকুরেরা কেবল যে চাকরি হারাননি তা-ই নয়, বরং প্রকৃতপক্ষে গত এক বছরে তাদের চাকরির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ।

তাল-এর বিশ্লেষণে বলা হয়, অন্যদিকে, গত এক বছরে স্বল্পতম বেতনের চাকরির প্রায় ২০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়েছে। খবর হাফিংটন পোস্ট এর। রিপোর্ট করেছেন ডেনিয়েল টেনসার।

বয়সভেদে চাকরি পাল্টানো

তাল লিখেছেন, প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে “কোভিডের কারণে আয়ের ব্যবধানে যে নাটকীয় বিস্তৃতি ঘটছে তার অনেকটাই স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়।”

একইসঙ্গে লৈঙ্গিক বৈষম্যের বিস্তারের ক্ষেত্রেও বেতনের এই ব্যবধানের প্রতিফলন ঘটতে পারে। নিম্ন বেতনের পরিষেবার কাজে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ, মহামারিকালে সেই নারীদের চাকরি হারানোর হার পুরুষের চেয়ে বৃহত্তর।

যেমন, ডিসেম্বর মাসে ২৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের নারীদের কর্মসংস্থান কমে যায় ২.৩ শতাংশ যেখানে পুরুষদের কমেছে ১.৮ শতাংশ।

হাফপোস্ট কানাডাকে তাল বলেন, তার প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো, লকডাউনের সময় শিশুদের দূরশিক্ষণের মাধ্যমে লেখাপড়া করানো হয়েছে “যা নারীদের অংশগ্রহণের হারের ওপর পুরুষের চেয়ে বেশি প্রভাব সৃষ্টি করছে (যেমনটা আমরা এই সঙ্কটের শুরুর দিকে দেখেছি)। আশার কথা এই যে, সঙ্কট কেটে যাবার পর আর এটি করতে হবে না।”

ব্লুমবার্গ নিউজ-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিআইবিসির অর্থনীতিবিদ এমন ধারণা ব্যক্ত করেন যে, উচ্চবেতনের চাকরিজীবীরা যখন উন্নত সৌভাগ্যের দেখা পাচ্ছে এবং সরকারগুলো ফুলেফেঁপে ওঠা বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে তখন আগামীতে কানাডায় ট্যাক্স বাড়ানো হতে পারে।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা বাইরে থেকে এই নগদ অর্থের প্রয়োজনের কথা বলছি, আমরা একটি দমিত চাহিদার কথা বলছি। এই অর্থ কোথায় আছে আমরা জানি আর আমরা এটাও জানি যে, যে পরিমাণ অর্থের কথা আমরা ধারণা করি সেখানে তার চেয়েও বেশি অর্থ আছে। বেশি অর্থ আছে উচ্চবেতনের চাকরির বিপুল বৃদ্ধির কারণে।”

“এখানে আমরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামঞ্জস্যহীনতার চিত্র লক্ষ্য করি, আর আমরা যখন নিরাপদে সঙ্কট উৎরে যাবো তখন সরকারগুলোর জন্য ট্যাক্সের দিকে মনোযোগী হওয়া বেশ প্রলুব্ধকর হবে, আমার মনে হয়, তখন তারা এটা বাড়াবে।”

হাফপোস্ট কানাডাকে ই-মেল বার্তায় তাল বলেন, তিনি ট্যাক্স বাড়ানোর ‘সুপারিশ’ করছেন না, কিন্তু মনে করছেন যে, সরকারগুলো পুঁজি আহরণের বিষয়ে মনোযোগী হতে পারে এবং রাজস্বের উৎস হিসাবে ট্যাক্সকেই অবলম্বন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, “চাকরি খোয়ানোর বিষয়টি ভালোভাবে কাটিয়ে ওঠা এবং অস্থায়ী চাকরির বাজার সুরক্ষার প্রয়োজন আছে। আর আমার ধারণা, সরকারগুলোর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ তারই প্রস্তুতি।”